মাঝরাতে চা খাওয়ার বাজে অভ্যেসটা রয়ে গেছে সুচন্দার। সে ইচ্ছে করলেই পারত এখান থেকে বেরিয়ে আসতে, কিন্তু বেরোয়নি। এক কাপ চায়ের অভ্যেসটা থেকেই যাক নাহয়, এটা তো কারুর জীবনে থেকে যাবার মতন বাজে অভ্যেস না।
রাতে চা বানাতে গেলেই সুচন্দার মনে পড়ে কান্তা আর শোভনের কথা। সুচন্দা, কান্তা আর শোভন, এই তিন জন মিলে ইউনিভার্সিটি লাইফে প্রতিযোগিতা দিয়ে দিয়ে চা খেত। দিনে ২০/২২ কাপ চা খাওয়ার রেকর্ড আছে কান্তার। সেই কান্তার সাথে এখন আর যোগাযোগ নেই সুচন্দার। দু-জনে একই ঢাকা শহরে থেকেও কেউ আর কারুর দিকে এগিয়ে যায় না, যেন দু-জনই ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকে সবসময়, এই রে... এই বুঝি দেখা হয়ে গেল... পালাই... পালাই...
ঢাকাটা এমনই এক ক্ষুধার্ত শহর, কত শত পরিচিতরা যে এর পেটে ঢুকে লুকিয়ে আছে, শহরটা সে খবরই রাখে না।
আচ্ছা, কান্তার সাথে নাহয় ভুল বোঝাবোঝি হয়েছিল সুচন্দার, কিন্তু শোভন? সে কেন হঠাৎ করে হারিয়ে গেল? এই হারানোর কারণটা কী ছিল? কান্তা কি আসলেই ভালোবাসত শোভনকে? যদি তা-ই হতো, তাহলে সে কেন শেষপর্যন্ত শোভনের হাতটা ধরল না? সুচন্দাকে "তুই শোভনকে কেড়েই নিলি আমার কাছ থেকে!?"... এই ছয় শব্দের একটা চিঠি দিয়ে কান্তা কেন হারিয়ে গেল?
আর শোভন? ওর মুখে তো ইউনিভার্সিটির চার বছরে এক বারও শোনেনি যে সে সুচন্দাকে ভালোবাসে! কেন বলেনি? সুচন্দার ধর্ম আলাদা বলে? কেন কিছু কিছু মানুষ কিছু না বলেই হারিয়ে যায়?
এসব পুরোনো কথা ভাবতে ভাবতে সুচন্দার হঠাৎ খেয়াল হলো, চা পুড়ে কালো হয়ে গেছে। সেই চা ফেলে দিল সে। আর কেন যেন চায়ের প্রতি বিরক্তি, বিতৃষ্ণা আর ঘেন্না হতে লাগল। সুচন্দা খুব বুঝতে পারল, তার এই বদভ্যেসটা আজ থেকেই যেন ছুটে গেল!
মাত্র ছয়টি শব্দ-লেখা একটি চিঠি তিনটি মানুষের জীবনকে কেমন এলোমেলো করে দিল, ঢাকা নামের শহরটার সেই তালই নেই, সে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।