আপনি যেখানে যে-অবস্থানেই থাকুন না কেন, আপনার হাতে দু-চার মুঠো দুঃখ মজুত থাকবেই। একদিন আপনার দুঃখ থাকবে এইজন্য যে, আপনার কেন একটা ঘর নেই; সেই দুঃখ প্রতিনিয়ত আপনাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে। তারপর একদিন একটা বাড়ি হলো আপনার। এরপর একটা কালো রঙের গাড়ির অভাব আপনাকে দিনরাত তাড়িয়ে বেড়াবে। এক অভাবের পূরণ অন্তত নতুন দুই অভাবের জন্ম দেয়। একদিন প্রিয় মানুষটার সাথে একটু কথা বলতে না পারার আক্ষেপে ঘুমোতে পারবেন না। তারপর মানুষটিকে ভাগ্যের জোরে পেয়ে যাবেন। পাবার পর মনে হবে, আপনি মানুষটাকে নয়, বরং সুখ চেয়েছিলেন। এক প্রাপ্তি মানুষের জীবনে নতুন দশ অপ্রাপ্তির সূচনা করে দেয়। এভাবে ন্যাশনালে পড়ুয়া ছেলেটা ঢাবিতে পড়তে না পারার আক্ষেপে ভোগে, ঢাবির ছেলেটা বুয়েটে পড়তে না পারার অসুখে পড়ে ডিপ্রেশনে ভুগবে। বড় ব্যবসায়ী লোকটা সরকারি বড়ো অফিসার হতে না পারার যন্ত্রণায় ভুগবে, আবার সরকারি বড়ো অফিসার লোকটা দেশের বড়ো কোনো এমপি-মন্ত্রী কিংবা বড়ো কোনো ব্যবসায়ী হতে না পারার অনুশোচনায় ভুগবে। এভাবে দেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিটি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী হতে না পারার দুঃখে ডুবে থাকবে। আদতে, মানুষের জীবনে অভাবপূরণ বলে কিছু হয় না। এক অভাব পূরণ হবার পর নতুন আরও দশটা অভাবের জন্ম হয়ে যাবে। আমরা মানুষেরা এমনই। যার যত বেশি পরিমাণে আছে, তার তত বেশি পরিমাণে অভাব। কারও সম্পদের, কারও সুখের, আর কারওবা শান্তির। পৃথিবীর সবাই-ই কোনো-না-কোনো অসুখ নিয়ে বেঁচে আছে। রাস্তার ধারে শুয়ে-থাকা নেই-ঘর লোকটার শুধুই একটা ঘরের অভাব, সেই অভাব পূরণ হয়ে গেলেই তার ঘরের উঠোনের অভাব তৈরি হবে, ঠিক যেভাবে পৃথিবীর সবচাইতে সম্পদশালী মানুষটার একটা ব্যাবসাপ্রতিষ্ঠান সফল হবার পর আরও দশটা ব্যাবসার অভাব তৈরি হয়। তার চেয়ে বরং কিছু নির্দিষ্ট পুরোনো অভাবই জীবনে থাকুক। কিছু পুরোনো দুঃখই নাহয় ঘুরে-ফিরে জীবন ঘেঁষে পড়ে থাকুক। জীবনে সব কিছু কখনও পেতে নেই, সব পেলে যে নষ্ট জীবন!