বলে গেলাম, খুব কাঁদব; তেমন কাঁদতে তো তবু পারলাম না! কবে যে বললাম, তাতেও আমার অহংকার ছিল। কাঁদার শক্তিই-বা আমার কই? তোমায় ছেড়ে থাকি, আর তাতে আমার এমন অভ্যাস হয়ে গেছে যে খুব একটা কষ্ট হয় না। শুষ্কতা ও অপ্রেম আমার আত্মার হাওয়া হয়ে গেছে, আমি অধিকাংশ সময়ই এভাবে থাকি। তোমার জন্যে ব্যাকুল হওয়া, তোমার কাছে থাকা আমার পক্ষে একটা সাময়িক আমোদ মাত্র। অথচ প্রাণের মধ্যে কী-একটা আকাঙ্ক্ষা দিয়ে যাও... সেটাকে আকাঙ্ক্ষা বলব? না আদর্শ বলব?... যাতে তোমায় ছেড়ে স্থির থাকতে পারিনে।
যতক্ষণ তোমায় ছেড়ে থাকি, ততক্ষণ বার বারই মনে হয়, বড্ড দুর্গতিতে রয়েছি, এই দুর্গতি চলে যাক। এটাও কি তোমার টান? তুমি যে ইচ্ছা করো, আমি তোমাতেই ডুবি, তারই বুঝি এক আভাস এই যে আমি তোমায় ছেড়ে সুখী নই? এই টানটা যদি খুব বুঝতাম, তবে আর দুঃখ ছিল কি? বুঝি আর না-ই বুঝি, এই টানের জোরে আমি একদিন তোমার হবই হব।
তোমার সৃষ্টির পরাকাষ্ঠা তো এ-ই যে, মানুষ তোমায় চিনে তোমায় ভালোবাসবে, তোমার প্রতি ভালোবাসা তার নিঃশ্বাসবায়ু হবে। তবে আমি এই টানের উপরেই নির্ভর করি। টানটা একটু একটু অনুভব করছি, ক্রমশ ভালো করে অনুভব করব। তারপর একদিন এমনভাবে তোমার ভেতর গিয়ে পড়ব যে আর বের হয়ে আসতে পারব না। আমার চেষ্টায়, আমার কান্নায়, আমি তোমার হব না; তোমার ইচ্ছায়, তোমার চেষ্টায়ই, আমি তোমার হব।
বুকের ভেতর থেকে বের করে যখন একরকম আলাদাই করেছ, সৃষ্টির আগেকার সেই অভেদ আর নেই, ভেদ দাঁড়িয়েছে, তখন এই ভেদের মধ্যে অভেদ আনতে বুঝি কিছু সময় লাগবে? অদ্ভুত তোমার লীলা--- অভেদ থেকে ভেদ, আবার ভেদ থেকে অভেদ! তোমার লীলার উপরই আমি নির্ভর করি।
আমি যতই তোমায় ছেড়ে থাকি, ভুলে থাকি, আমার এ ছাড়া আর ভোলার মধ্যেও তুমি আছ, তুমি ছাড়োও না, ভোলোও না, আর আমার ছাড়া-ভোলা'কে অসম্ভব করে দেবার জন্যেই তুমি চেষ্টা করছ। আমি তোমার কৃপার উপর নির্ভর করি, আমাকে নির্ভরতা দাও।