ভোর সকালে আলো ফোটার ঠিক আগে আগে বাতাস যে ঘ্রাণটা ছড়ায়, তার জন্যই একটা দিন বেশি বাঁচতে ইচ্ছে করে। যখন-তখন খাতা-কলম হাতে লিখতে বসে যাওয়ার মতন সৌভাগ্য নিয়ে জন্মানোর জন্যই তো আমার বাঁচতে ভালো লাগে। নিজের লেখাগুলোকে যে তীব্র গরমে ঝুমবৃষ্টির মতোই শান্তিময় লাগে!
ছোটো বোনটাকে সাদা জামায় সবুজ রঙের চেইন সেলাই করে দেবার জন্য বাঁচতে আমার খুব ইচ্ছে করে। চিঠি লিখে লিখে একসাথে স্তূপ করে একদিন প্রিয় মানুষটাকে চমকে দেবো বলেই তো বেঁচে থাকাটা আমার কাছে এত উপভোগ্য। চৌঠা নভেম্বর, লোকটার জন্মদিনে কী কী করা যায়, সেটা ভাবতেও তো ওই তারিখ পর্যন্ত বেঁচে থাকাটা আজও প্রাসঙ্গিক মনে হয়। কবিতার বইগুলো থেকে প্রিয় পঙ্ক্তিমালা শুষে নিয়ে নিয়ে আত্মাটাকে স্বর্গের স্বাদ পাইয়ে দেবার জন্যই এই জীবনটাকে আমি আমার মতন করে কাটাচ্ছি।
একটা জলপাইরঙা কোটাশাড়ি আর লাল হাইহিল পরে আনাড়িভাবে স্টেজে উঠে ‘তেজ’ কবিতাটি আবৃত্তি করতে পারাই আজ আমার জীবনের অনন্য উদ্দেশ্য। মাকে নিয়ে প্যারিস ঘুরতে যাব বলেই তো জোর করে করে নিজেকে এরকম বাঁচিয়ে রাখা।
গ্রামীণ জীবনের টানাপড়েন, অভাব-অনটন; যেখান থেকে আবার কচুপাতায় জমা পানির মতন টলমল-করা প্রেমও উঁকি দেয়, এমন একটা গল্প লেখার জন্যই তো এই অহেতুক আমি’টা জন্মের পর থেকে বেঁচে আছি আজও।
হ্যাঁ, এতসব ছোটো ছোটো অনুভূতির জন্যই আমি বেঁচে আছি! কী আশ্চর্য! বেঁচে থাকতে কষ্ট হয় না কার! তবু মানুষ বাঁচে প্রিয় কিছু পিছুটান আছে বলেই।