১. আপনার খারাপ সময়গুলোতে নিজেকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন? # বই পড়ি, মুভি দেখি, গান শুনি, লেখালেখি করি। এতেও কাজ না হলে চুপ করে থাকি, খুব কষ্ট হলেও রিঅ্যাক্ট করি না কোনও কিছু নিয়েই। আমি বিশ্বাস করি, অপেক্ষা করলে মেঘ ঠিক কেটে যায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। নিয়ন্ত্রণে না এলেও পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে মানুষ শিখে যায়। কখনও কখনও, খারাপ সময় কাটাতে হলে যা যা করা দরকার, তা তা করি। যদি তবুও কাজ না হয়, তবে ধরে নিই, আমি যা চাইছি, তা আর হবে না। যা আমার নিয়ন্ত্রণে নেই, তা নিয়ে টেনশন করে করে মাথা খারাপ করার কোনও মানেই নেই। আমরা যা চাই, তা আমরা না-ও পেতে পারি। তবে আমাদের যা দরকার, তা আমরা কোনও-না-কোনও উপায়ে পেয়েই যাই। আর সত্যি বলতে কী, জীবনে খারাপ সময় না এলে জীবনটাকে কখনও চেনা যায় না। খারাপ সময় জীবনের জন্য আশীর্বাদ, এটা পরবর্তীতে খুব ভালো করে বোঝা যায়। দুর্দিনের চাইতে ভালো শিক্ষক আর হয় না। আর মানুষ খুব একটা ভালো জিনিস না। মানুষ চিনতে ধাক্কা খেতেই হয়। অতীতে ধাক্কা খেলেই বোঝা যায়, আশেপাশে যাদের দেখি, আমার বিপদের সময় তাদের প্রায় সবাই-ই নিরাপদ দূরত্বে পালিয়ে যাবে! হা হা হা… ২. কেউ যখন ডিপ্রেশনে ভোগে, আর তাকে একা ছেড়ে দিতে বলে, সেই মুহূর্তে তাকে একা থাকতে দেওয়া কি উচিত? # ডিপ্রেশনে যারা ভোগে, ওরা সচরাচর একা থাকতে চায়। তবে এই একাকিত্বটা ওদের ডিপ্রেশনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে বিভিন্ন ধরনের খারাপ চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে। এরকম একা থাকতে থাকতেই সে একসময় যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে সুইসাইড অথবা ওরকম একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, যেটা অন্যরা আঁচই করতে পারে না। তাই আমি মনে করি, ডিপ্রেসড মানুষকে একাকিত্ব অনুভব করতে দেওয়া একেবারেই অনুচিত। আমি একসময় ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষদের কাউন্সেলিং করতাম। এ পর্যন্ত ৭৬ জনকে সুইসাইডের পথ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছি। দীর্ঘসময় ধরে ওদের সাথে নিবিড়ভাবে মেশার ফলে ওদের মনস্তত্ত্ব কিছুটা হলেও আমি বুঝতে পারি। প্রায়ই দেখেছি, ওদের সাথে মিশতে গেলে প্রথমেই ওদের পক্ষ থেকে প্রবল বাধার ও দুর্ব্যবহারের সম্মুখীন হতে হয়। এরকমই হওয়ার কথা, কেননা ওরা তো তখন আপনার আমার মতো স্বাভাবিক মানসিক অবস্থায় থাকে না! ওটা সহ্য করে ওদের মনে এই বিশ্বাসটা তৈরি করতে হয় যে আমি ওদের বন্ধু, আমি ওদের সাহায্য করতে চাই। ওরা চাইলে আমার সাথে মন খুলে কথা বলতে পারে। ওরা এতে খুশি হয়। ওদের প্রধান সমস্যা হলো, মনের কথাগুলি বলার জন্য ওরা কাউকে পাশে পায় না। সবাই শুধু পরামর্শ দিতেই ব্যস্ত। মনের মধ্যে কথা জমতে জমতে একসময় তা বিস্ফোরিত হয়! তখন মানুষ আর সহ্য করতে না পেরে নিজেকেই শেষ করে দিতে চায়। তাই ভালো হয়, যদি ওরা মনের কথাগুলি শেয়ার করার মতো কাউকে পায়। এতে ভারী মনটা হালকা হয়। মন হালকা হয়ে গেলে বাঁচাটা অনেক সহজ। বিষণ্ণ মানুষ পাশে চায় একজন বন্ধুকে, অথচ প্রায়ই দেখা যায়, সে পাশে পায় একাধিক মাস্টারমশাইকে! কথা শোনানোর লোকের অভাব নেই, কথা শোনার লোকের বড়ো অভাব। বিষণ্ণতা কোনও উপদেশ নেওয়ার মুহূর্ত নয়, কিছু যন্ত্রণা উগরে দেওয়ার মুহূর্ত। যন্ত্রণা দেওয়ার মানুষ তো রাস্তাঘাটে না চাইতেই পাওয়া যায়, কিন্তু যন্ত্রণা নেওয়ার মানুষ কোথায়? ৩. কেউ যদি একপাক্ষিক ভালোবাসার ফলে ডিপ্রেশনে ভোগে, তবে তারা কীভাবে সেটা ওভারকাম করবে? # ভালোবাসা জিনিসটা চাইলেই বাসা যায় না কিংবা চাইলেই না বেসে থাকা যায় না। যদি যেত, তবে ভালোবাসার জন্য পৃথিবীতে এত কিছু হয়ে যেত না। একপাক্ষিক ভালোবাসার উত্তরে ভালোবাসা আশা করাটা বোকামি। এক্ষেত্রে ভালোবাসা যাবে, তবে তার বিনিময়ে ভালোবাসা প্রত্যাশা করা যাবে না। আমরা তো কারও মন নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, তাই না? আমাদের উচিত, যে যেভাবে থাকতে চায়, তাকে ওভাবেই তার জায়গায় থাকতে দেওয়া। আমি এমন মানুষকেও চিনি, যে গত আঠারো বছর ধরে একজনকে ভালোবেসেই যাচ্ছে, অথচ এখন পর্যন্ত ভালোবাসার মানুষটাকে তার ভালোবাসার কথা জানাতে পর্যন্ত পারেনি। অবশ্য ওরকম বোকামি করে যারা, ওদের মাথায় এত লজিক কাজ করে না। কাজ করে না বলেই ওরা কষ্ট পায়। এই ভালোবাসা জিনিসটা খুব একটা সুবিধার জিনিস না। যে বাসে, সে-ও পেইন খায়; যাকে বাসে, সে-ও পেইন খায়। ভালোবাসা ব্যাপারটা নরমাল ডেলিভারির মতো---এখানে পেইন ছাড়া কিছু হয় না; ভালো কিছুও হয় না, খারাপ কিছুও হয় না। একপাক্ষিক ভালোবাসার বেলায়, নিজের মনকে অন্য কাউকে ভালোবাসার জন্য তৈরি করার চেষ্টাটা করে যাওয়া উচিত। সচেতন চেষ্টায় ভালোবাসা হয় না, কেবল অবচেতনভাবেই হয়, এই কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেলতে আমি অনেক দেখেছি। আর জানেনই তো, মানুষ বার বার প্রেমে পড়ে। একজন মানুষ সারাজীবনে অন্তত সাত থেকে আট বার সত্যিকার অর্থেই প্রেমে পড়ে। প্রতিটি প্রেমকেই মনে হয় প্রথম প্রেম। প্রতিটি প্রেমের সময়ই মনে হয়, আমি বোধ হয় ওকে ছাড়া বাঁচব না। প্রেম শেষ হয় ব্রেকআপে, আর জীবন শেষ হয় আয়ুতে! হা হা হা…! ‘আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না।’ এটা অনেক বড়ো একটা মিথ্যা কথা। এই ভুয়া কথাটা কেবল বাংলা সিনেমার ডায়লগেই মানায়। নায়ক-নায়িকা কম্পিটিশন দিয়ে কাঁদবে আর ওই কথাটা বলবে! সত্যিটা হচ্ছে, মরে যাওয়া আসলে অত সহজ না। উঠতে বসতে কয়েক বার করে মরে যায়, এরকম পাবলিক তো আর কম না! যে কিনা আমাকেই ভালোবাসতেই পারছে না, তার জন্য দিনের পর দিন পড়ে না থেকে মনকে অন্য দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করতে হবে। সাড়ে সাত-শো কোটি মানুষের ভিড়ে ওই একজন ছাড়া কি আপনার জন্য আর কেউই নেই? এটা তো সম্ভব নয়। কেউ-না-কেউ তো আছেই! মনে হতে পারে, অনেকেই আছে, তবে তার মতন কেউ নেই। মানলাম আপনার কথা। এখন আসল কথা হলো, আপনি যেরকম, সেরকমটা মেনে নিয়ে সে যদি আপনাকে গ্রহণ করতে না পারে, তবে সে যেরকম, সেরকমটা মেনে না নিয়ে অন্য কাউকে গ্রহণ করার কথা আপনি যদি মাথায়ই আনতে না পারেন, তাহলে বাঁচবেন কী করে? লজ্জাশরম বলে একটা ব্যাপার আছে কিন্তু! পৃথিবীতে ভালোবাসা পাওয়ার চাইতেও বেঁচে থাকাটা অনেক বেশি জরুরি। এক্ষেত্রে তার কাছ থেকে দূরে সরে যেতে হবে। আউট অব সাইট, আউট অব মাইন্ড! এই কথাটা প্রায় মানুষের ক্ষেত্রেই খাটে। সময়কে সময় দিন, সময়ই সবকিছু ঠিক করে দেয়। যতই তার কাছে থাকবেন, মায়া ততই বাড়বে। জীবন বাংলা সিনেমা নয় যে পুকুরে ডুব মেরে উঠেই দেখবেন, পৃথিবীটা সুন্দর! কেউ হৃদয় ভাঙে বলেই তো অন্য কেউ তা গড়ার সুযোগ পায়। কেউ না ভাঙলে অন্য কেউ তা গড়বে কী করে? ৪. জীবনে ব্যর্থতা আসেই! কিন্তু সে ব্যর্থতা নিয়ে অনেকেই এতটা আপসেট হয়ে পরে যে, নতুন কিছু করার আগ্রহ, ইচ্ছে আর আসে না। জীবনটাকে অর্থহীন মনে হয়। নিজেকে অথর্ব মনে হয়। তখন কী করা উচিত? # প্রতিটি সাফল্যের পেছনেই ব্যর্থতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আমরা সফল মানুষের মুখ দেখে খুশি হয়ে উঠি, একই মানুষের ব্যর্থ মুখটি দেখে হয়তো ততটা খুশি হতে পারতাম না, যদিও দু-ক্ষেত্রেই মানুষ একই। আপসেট হয় না কে? সবাই-ই তো হয়। আপনি একটা কাজ করতে চাইলেন, পারলেন না। আপনি যা করছেন, তা বাকিদের চোখে কোনও কাজের মধ্যেই পড়ে না! আপনি জীবনে এমন কিছু চাইছেন, যা কিনা অনেক দিন ধরে পাওয়ার চেষ্টা করেও পাচ্ছেন না কিছুতেই। এরকম নানান পরিস্থিতিতে মানুষ তো আপসেট হবেই, স্বাভাবিক! মানুষ তো আর রোবট না যে বানানো কোনও প্রোগ্রামে চলে! আপসেট সবাই-ই হয়, পৃথিবী শুধু তাদেরকেই চেনে যারা ওই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে। মানুষকে কখনও শেষ করে দেওয়া যায় না যদি না সে নিজ থেকেই হার মেনে নেয়। আমি এমন মানুষ দেখেছি, দিনের পর দিন চাকরির পেছনে ছুটে ছুটে মনের মতো চাকরি কখনওই পায়নি। মাঝখান থেকে কিছু বছর খরচ হয়ে গেছে। সেই ব্যর্থ মানুষটাই যখন ব্যবসায় নামল, তখন প্রথম দুইটা ব্যবসায় ধরা খেয়েও তৃতীয় ব্যবসায় এতটাই ভালো করল যে নিজের পরিবারের বাইরে সে এখন আরও ছয়টা গরিব পরিবারের সব খরচ চালায়। আপনি কী করতে চাইছেন, তা বোঝার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনি কী করতে পারেন, তা বুঝতে পারা। সবাই সবকিছু পারে না। সবাই এক রাস্তায় হাঁটে না। কে কী পারে, তা এক সে বাদে আর কেউই জানে না। এসব মেনে নিলে ভালো। টেন্ডুলকারকে ফুটবল মাঠে নামিয়ে দিয়ে তাঁর গায়ে ব্যর্থতার সিল মেরে দিলে তো হবে না, তাই না? ৫. এই যে করোনা প্যান্ডেমিকে প্রতিদিন এত মানুষ মারা যাচ্ছে, অনেকের হয়তো বাড়ির ঠিক আশেপাশেরই কেউ মারা যাচ্ছে, সর্বোপরি একটা ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় কীভাবে মানসিকভাবে শক্ত থাকা যায়? # দেখুন, কোভিডে যত জন মারা যাচ্ছে, তার চাইতে অনেক অনেক বেশি লোক সুস্থ হচ্ছে। এখন ভয় পাওয়ার চাইতে সচেতন হওয়া জরুরি। কার মৃত্যু কখন আসে, তা কেউ জানে না। মৃত্যু নিয়ে টেনশন করলেও মরব, টেনশন না করলেও মরব। বরং টেনশন করলে মনের অসুখ বাড়বে এবং বেঁচে থাকার সময়ে যা করা দরকার, ঠিকভাবে তা করতে পারব না। অবশ্য টেনশন জিনিসটা ভূতের মতো। ভূতে অবিশ্বাস করলেই যেমনি ভূতের ভয় সহজে কাটে না, তেমনি টেনশন দূরে রাখতে চাইলেও সহজে তা দূরে রাখা যায় না। এইটুকু মেনে নিতে হবে। তবে এটা ঠিক, এই সময়ে যারা অন্যদের চাইতে টেনশন একটু হলেও কম করতে পারবেন, তারা অনেকটা ভালো থাকতে পারবেন। অতি দুশ্চিন্তা মানুষের সুস্থ থাকার শক্তি কমিয়ে দেয়। মনকে শক্ত রাখলে মনের শক্তি এমনিতেই অনেক বেড়ে যায়। নেগেটিভ খবর যতটা রাখি, পজিটিভ খবরও তার সাথে রাখতে হবে। আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে থাকলেই কোভিডের সংক্রমণ কমে যাবে না। এতে বরং নিজেরই ক্ষতি হবে। যা-যা করলে আনন্দ পান, তা-তা করতে পারেন। আঁকাআঁকি, বইপড়া, গানশোনা, মুভিদেখা, লেখালেখি, নাচানাচি, সংগীতসাধনা। যা ইচ্ছা তা-ই করুন। এমন অখণ্ড অবসর জীবনে আর কখনও পাবেন বলে মনে হয় না। একেকটা মানুষ একেকটা গুণ নিয়ে জন্মায়। এই সময় সেগুলির চর্চা করতে পারেন। চর্চায় গুণ বিকশিত হয়। নিজের বেসিক শক্ত করার জন্য চেষ্টা করতে পারেন। অঙ্ক শিখুন, ইংরেজি শিখুন। ভালো কিছু বাংলা-ইংরেজি গল্প-উপন্যাস পড়ে ফেলুন। বিভিন্ন টপিক নিয়ে বাংলায় ও ইংরেজিতে লেখার চেষ্টা করুন। প্রথমে ছোটো ছোটো লেখা, এরপর বড়ো বড়ো লেখা। এত সময় পাওয়ার পরেও যদি নিজের স্কিল ডেভেলাপ করতে না পারেন, তবে আপনার মতন দুর্ভাগা আর একটাও নেই। মৃত্যু ও মৃত্যুহার নিয়ে বেশি গবেষণা করলে তো আর আপনি নোবেল পুরস্কার পাবেন না, তাই না? আপনার টেনশনে মৃত্যুসংখ্যা কমে যাবে না। যা পাবেন, তা হচ্ছে কেবলই দুশ্চিন্তা। নিজেও পাবেন, অন্যকেও দেবেন। আমি দেখেছি, যারা এই দলের, তারা যতটা সচেতনতা ছড়ায়, তার চাইতে অনেক বেশি প্যানিক ছড়ায়। কী লাভ? এখন পরিবারকে দেওয়ার জন্য হাতে যতটা সময় পাচ্ছেন, পরে এর অর্ধেক সময়ও আর কখনও পাবেন না। পরিবারকে এই সময়টা দিন। যে যত যা-ই কিছু বলুক না কেন, পুরো পৃথিবীতে পরিবারের চাইতে বিশ্বস্ত আশ্রয় আর একটাও নেই। সবাই মিলে টিভি দেখুন, আড্ডা দিন, ডাইনিং টেবিলে বেশি সময় কাটান। বাবা-মা’য়ের সাথে গল্প করুন, এটাই সুযোগ! ওঁদের বয়স হয়েছে, ওঁরা কথা বলার তেমন কাউকে পাশে পান না। সন্তান হিসেবে এইটুকু করা আমাদের দায়িত্ব। পরে এ সুযোগ আর না-ও পেতে পারেন। বাসার বিভিন্ন কাজে হাত লাগাতে পারেন। ঘরদোর গোছানো ও পরিষ্কার করা, বাগান করা, বাজার করা, কাপড় ধোয়া, ইউটিউব দেখে নতুন আইটেম রান্না করা। আরও কত-কী আছে! আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী, পরিচিত লোকজন, এরকম যাদের সাথে যোগাযোগ রাখা হয় না সময়ের অভাবে, তাদের সাথে হাই-হ্যালো করতে পারেন। নতুন কোনও বিজনেস প্ল্যান করতে পারেন। আমি অনেককে চিনি, যারা গত লকডাউনে ব্যবসা শুরু করে এই দেড়-দুই বছরে ব্যবসা দাঁড় করিয়ে ফেলেছে। আমার নিজের ছোটো ভাই ও তার স্ত্রী মিলে ফেইসবুকে রৌপ্যরূপ নামে একটা বিজনেস পেইজ খুলেছিল গত লকডাউনে। আজ রৌপ্যরূপ, বাংলাদেশে অনলাইনে যারা রুপার গয়না বিক্রি করে, তাদের মধ্যে সর্ববৃহৎ! কালেকশন, কোয়ালিটি, কাস্টমার স্যাটিসফেকশন ইত্যাদি বিচারে এই মুহূর্তে রৌপ্যরূপ-এর ধারেকাছেও আর কেউ নেই। সততা, মান, কমিটমেন্ট ও পরিশ্রমের জোরে আমার চোখের সামনেই এই প্রতিষ্ঠান শূন্য থেকে আজকের অবস্থানে উঠে গেছে! ফেইসবুকে রৌপ্যরূপ-এর মতো এত জমজমাট বিজনেস পেইজ আর খুব একটা নেই। ভেবে দেখুন, জাস্ট একটা আইডিয়া আপনার জীবনটা কীভাবে পালটে দিতে পারে! এই অবসরে অন্যের পেছনে না লেগে নিজের পেছনে লাগুন। জীবন বদলাবেই! যার পেছনে লাগবেন, সারাজীবনই তার পেছনেই থাকবেন। আর এভাবে লোকের পেছনে লাগেন কেন? আপনি কি কুকুর? এই অবসরে নিজের ভেতরের মানুষটার সাথে গল্প করুন। আমরা এতই বিজি যে, নিজের সাথে কথা বলার সময়ই পাই না, অথচ বেচে থাকার জন্য এই কাজটাই সবচাইতে জরুরি। নিজেকে অনেক সময় দিন। দেখবেন, আপনার মধ্যে এমন অনেক কিছু করার ক্ষমতা আছে, যার খোঁজ আপনি কখনওই জানতেন না! জীবনে ভালো কিছু করতে চাইলে নিজেকে জানার দরকার আছে। অন্যের সম্পর্কে কৌতূহলী হয়ে কোনও লাভ নেই, এই কৌতূহলটা নিজের সম্পর্কেই দেখান। নানান সৃষ্টিশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলুন। তখন বিষণ্ণ হয়ে থাকার সময়ই পাবেন না! ৬. এই যে দীর্ঘ একটা ছুটি, অনেকেই হয়তো প্রপারলি কাজে লাগাতে পারছে না, কেউ কেউ শুয়ে-বসে থাকতে থাকতে আনপ্রোডাকটিভ হয়ে পড়ছে, ফলে ডিপ্রেশনে পড়ে যাচ্ছে। তারা কীভাবে এই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারে বলে মনে হয়? # শুয়ে-বসে থাকা কিন্তু কোনও অন্যায় কিছু নয়। যদি কেউ আলস্যবিলাসকে ইজিলি অ্যাফোর্ড করতে পারে, তবে সময় কাটানোর জন্য আলস্যের চাইতে আরামের কিছু আর নেই। আপনি শুয়ে-বসে থাকলে যা হবে, তা হলো, বাকিরা যে সময়ে কিছু-না-কিছু করে ফেলছে, সে সময়ে আপনার আউটপুট একদম জিরো! নিজেকে ডেভেলাপ করার পেছনে সময় না দিলে তার ফলাফল হাতে হাতেই পেতে হয়। যার বাবার অগাধ সম্পত্তি, তার অত পরিশ্রম করার তো কোনও কারণ দেখি না। কিংবা অনেকেই আছে যারা শ্বশুরের সম্পত্তিলাভ করে। তারা জীবনটা শুয়ে-বসে কাটালে অসুবিধে কোথায়? একইসাথে বড়োলোক ও ভালোমানুষ গোছের স্বামীর স্ত্রীরা পায়ের উপর পা তুলে সারাদিনই জি-বাংলা দেখলে সেখানে আমি কোনও বিপদ তো দেখি না। এমনও তো হতে পারে, কেউ একজন অমলকান্তির মতো কেবল রোদ্দুর হতে চায়, অত উচ্চাকাঙ্ক্ষা তার নেই। সে এই লকডাউনে বসে বসে রোদ পোহাক! অসুবিধে কী? বাকিরাও যদি ওদের পথ অনুসরণ করে, তবে তার জন্য চড়ামূল্য দিতেও যেন তারা তৈরি থাকে। আলস্যের আনন্দও উঁচু, দামও উঁচু। এই অফুরন্ত অবসরটা যারা নিজেকে ঘষেমেজে তৈরি করছে, নিজেকে খাটিয়ে মারছে, নিজের দুর্বলতাগুলি দূর করে ফেলছে, তারা নিশ্চয়ই পুরস্কৃত হবে। শুধু ফেইসবুকিং করে জীবনটা সাজানো যাবে না, তবে জীবনটা সাজানো গেলে টেনশন ছাড়াই ইচ্ছেমতো ফেইসবুকিং করা যাবে। এমন সুযোগ আর পাবেন না। সুযোগটা হেলায় হারালে তার দামটা আপনাকেই পরিশোধ করতে হবে। এ সময়ে যারা নিজেকে ক্যারিয়ারের জন্য প্রস্তুত করে নিতে পারবেন, তাদের আত্মবিশ্বাসটা অন্যদের চাইতে নিশ্চয়ই বেশি হবে। চাকরি, ব্যবসা, রাজনীতি কিংবা অন্য যেখানেই আপনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান, তা নিয়ে ভাবার ও কাজ করার এখনই উপযুক্ত সময়। আপনি মিলিয়ে দেখুন, এমন অনেক কাজ করা এখনও বাকি, যা আপনি সময়ের অভাবে এতদিন ধরে ফেলে রেখেছেন। সেগুলিতে হাত দিন। শুরু করলে কাজ একসময় শেষ হয়ে যায়। এই শুরু করাটাই বড়ো কথা। কাজের মধ্যে সময় কাটালে দেখবেন, দিনগুলি ভালো কাটছে। কিচ্ছু হচ্ছে না, কত কাজ বাকি, কিছুই করতে পারলাম না, পুরো সময়টাই নষ্ট করলাম, এসব ভেবে ভেবে সময় আরও নষ্ট করে লাভ নেই। আজকেই কাজ করা শুরু করুন। আপনি যতক্ষণ বেঁচে আছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি কিছুতেই ব্যর্থ নন। অনলি ডেথ ইজ দি এন্ড অব এভরিথিং! এই কোভিডের সময়ে সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকাটাই তো সবচাইতে বড়ো কথা! এর চাইতে বড়ো আর কোনও প্রাপ্তি বা সাফল্য নেই। আজ বেঁচে আছেন বলেই তো কালকের সূর্যটা দেখার স্বপ্ন নিয়ে ঘুমোতে যেতে পারছেন, তাই না? অত টেনশন করতে হবে না, কাজের কাজ করতে শুরু করুন। সময় এখনও আছে, বেঁচে থাকলে সময় থাকেই! (চলবে…)