১৫০ টাকার ডেটিং

 (জানি, মুজতবার শবনম, সুনীল-শঙ্খের মার্গারিট শুধু কালো অক্ষরগুলোতেই বন্দিনী চিরকাল। লেখকগোষ্ঠীর আজন্ম অধিকার ওই অনন্যা অপরূপাদের ওপরে। হায়! চারুলতার দেখা মেলে কেবল সত্যজিতেই। আমি শতবার মরতে রাজী আছি শুধু একটিবার বাঁচবার তরে---তৃষিত হিয়ার এই চিরন্তন আকুতি শুধুই হাওয়ায় মিলায়। মন ভুল মীমাংসায়ই পৌঁছয় সবসময়। বিধাতার অনধিকার যেখানে, সেখানে লেখক-ফিল্মমেকারের একক অধিকার। তবুও ভাল আছি, ভাল থাকব---এভাবে করে ভাবতে ইচ্ছে করে, ভাল লাগে; তাই ভাবি। এই লেখাটা সাজিয়েছি আমার দেখা বাংলা-হিন্দি বাদে কিছু ভাললাগা মুভির গল্প দিয়ে; লেখার সময় যতটুকু মনে করতে পেরেছি। এই লেখায় প্রেম যতটা হৃদয়ে, ততধিক সেলুলয়েডের ফিতেয়।)
: দিস টাইম ডোন্ট টেল মি দ্যাট আপনি এটাও দেখসেন।
: ইজ ইট অ্যা রিকোয়েস্ট, বাই দ্য ওয়ে? ওকে, আমি ইউজিম্বো দেখি নাই। নাও, স্টপ। স্টপ ক্রাইং। ইটস প্যাথেটিক। ....... আই হেট প্যাথেটিক পিপল। আই’ল হ্যাভ টু কিল ইউ।
: উফফ! ডিসগাস্টিং! ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল! যান, আপনি সব দেখসেন! এবার খুশি?
: অ্যাতো ক্ষেপলেন কেনো, বলেন তো? যদি আমি একটু আগে বলতাম, দ্য লাস্ট সামুরাই আমার ভাল লাগে নাই, আপনিও তো খুশি হতেন, না? আমিও সেম ওয়েতে খুশি।
: ভাই, আপনার তো ভাল লাগবেই। আপনার ভাল লাগার ক্ষমতা অসীম। সেভেন সামুরাই, দ্য হিডেন ফোরট্রিস, র্যান, হারিকিরি, উজেতসু, সাঞ্জুরো, থ্রৌন অব্‌ ব্লাড এইগুলার কথা বলে-বলে তো আমাকে পাগল করে ফেলসেন। আপনার সামুরাইঅলা সবই ভাল লাগে। বুঝসি। যান!
: এই খালি মুভি ভাল লাগানোর জন্যে আমাকে ভাই বানায়ে দিলেন? ভাল, ভাল। এখন তো মনে হচ্ছে, আমার ভাল লাগানোর ক্ষমতাও অসীম। আপনার থিঙ্কিংয়ের সেলফ-সারভিং কন্ট্রাডিকশনের কাছে রশোমনের প্লটও নির্ঘাত ফেল মারবে!
: মনে হচ্ছে, আমরা লাভ স্টোরি মুভির কাহিনি খেলতেসি। আপনি কি ঠিক করসেন আজকে আমাকে শুধু খোঁচাই মারবেন? মারেন, মারেন। যত খুশি মারেন।
: তাহলে তো আর লাভ স্টোরি হল না, ওই নায়িকার সেন্স অব হিউমারের কথা ভুলে গ্যাসেন? আপনার সাথে যায় না, ম্যাম। আপনার সাথে থেকে এই চমৎকার বিকেলে ওটার থিম সংটা বড়জোর ভাবতে পারি। আর কিছু না। আমাদের ডেটিংটা হচ্ছে বিফোর সানরাইজ কিংবা বিফোর সানসেট টাইপ, খুব জোরটোর করে আপনি অ্যানি হল’কে টেনে আনতে পারেন; যদি আদৌ আজকের ডেটিংটা ফিল্মি কিছু বলে আপনি দাবি করেন আরকি! ভাল কথা, এই হলটা........
: বুঝসি। এই যে কথার যাদুকর, শোনেন, এটা অমর একুশে হল। এখানে ছেলেরা উপরে আর মেয়েরা নিচে থাকে।
: স্বাভাবিক। বাঙালি বলে কথা! ওই এক স্টাইলেই তো সারাজীবন কাটিয়ে দেয়, বোকারা!
: মানে কী! শাট আপ ননসেন্স! জাস্ট শাট আপ! আমি কিন্তু বয়সে আপনার বড়; ২ বছর ৩ মাস ১৭ দিন সাড়ে ৩ ঘণ্টার। মানে, বড় বোন। একটু রেখেঢেকে কথা বলেন প্লিজ!
: আপনি বড়, তো কী হইসে? দ্য রিডার, ম্যালেনা’র কথা ভুলে গেলেন! আপনি বড়, আপনি উপরে থাকতে চাচ্ছেন, এই তো? উপ্পস্‌! আই হ্যাভ জাস্ট রেট ইওর রোম্যান্টিক মাইন্ড। সরি ফর দ্যাট!
: উফফ্‌! মাথায় তো আর ভাল কিসু আসে না। একটা মানুষ অ্যাতো খারাপ ক্যামনে হয়! সব ছেলেগুলাই বেশি খারাপ! আপনাকে কাস্ট অ্যাওয়ে’র দ্বীপে পাঠায়ে দিতে পারলে শান্তি লাগত। সারাদিন খালি একটা বলের সাথে যত খুশি উল্টাপাল্টা কথা বলতে পারতেন। বেচারা উইলসন!
: ক্যান? আপনি নিজেই দ্য ব্লু লেগুন’এর নায়িকা হয়ে যান। চলেন, যাই। আই ডোন্ট মাইন্ড। সিরিয়াসলি!
: আমার কোনো দরকার নাই। অত শখ নাই। আমি এমনিতেই যথেষ্ট ভাল আছি। আমি যাব না, অন্য কাউকে দেখেন। সেদিন তো ফেসবুকে ইনটু দ্য ওয়াইল্ড ইনটু দ্য ওয়াইল্ড করতেসিলেন। আপনি যে জংলি, এটা আমার আগেই মনে হইসিল। যান, যান, জংগলেই চলে যান। বন্যেরা বনেই সুন্দর। দেখবেন, ব্যোদলেয়ারের মত আপনার কলম দিয়েও দুনিয়ার অশ্লীল সব কবিতা বের হবে।
: হে পৃথিবীর মানুষ! আমাকে তাহিতির সুন্দর ললনাদের সাথে দাও, আমি তোমাদের অশ্লীল সব কবিতা উপহার দেবো। আহহ্‌! থ্যাঙ্কস্‌! সাচ অ্যা লেডি মাই ডার্টি মাইন্ড লংস্‌ টু বি উইথ! রাইট নাও আই ফিল লাইক ওয়াচিং ইরিভারসিবল, অরিজিনাল সিন, আইস ওয়াইড শাট, দ্য ড্রিমারস, কেন পার্ক, বেসিক ইন্সটিঙ্কট, লোলিতা, মুলহোল্যান্ড ড্রাইভ, জ্যামন জ্যামন, অ্যা ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ, দ্য গ্রাজুয়েট, ইন দ্য রিয়েল্ম অব্‌ সেন্সেস্‌..………
: স্টপ! জাস্ট স্টপ ইট! ইউ প্যাথেটিক পার্ভার্ট!!
: ডিড ইউ থিংক, আই জাস্ট স্টার্টেড? স্টার্টেড হোয়াট? গড ব্লেস ইওর পুওর ফিলিংস! বাই দ্য ওয়ে, আপনার মত ড্রিমারসের নায়িকাও কিন্তু অনেক মুভি দেখত। আই ইমাজিন ইউ অ্যাজ ইভা। অ্যানি প্রবলেম?
: চুপ থাকেন। যত্তোসব! এইসব ফাউল জিনিসপত্র ফেসবুকে লিইখেন, আবাল পাব্লিক লাইক দিবে।
: জেলাসি। অ্যা টিপিক্যাল ওমেন আনলাইক মাই অ্যান্টিসিপেশন। স্টিল, আই লাইক ইট! অল অ্যাবাউট ইভ দেখসেন না? না দেখলে, দেখে নিয়েন। আপনাকে ভেবেই ওটা বানানো।
: শুনেন শুনেন, বেশি ভাব ধইরেন না। আপনার স্ট্যাটাসের চাইতে আমার ছবিতে লাইক বেশি। বুঝসেন? হুহ্‌!
: হবেই তো। প্রথম কথা, আপনি মেয়ে। লাইক না পেলে আপনার মেয়েজন্মই তো বৃথা! উফফ্‌! ছেলেরা পারেও! তার উপরে আমি তো আর আপনার মত মডেলিং করি না। ইউ আর সেলিং হোয়াট ইউ হ্যাভ। আই অ্যাম সেলিং হোয়াট আই হ্যাভ। এভরিওয়ান সেলস! দ্যাটস ইট! সিম্পল! ভাল কথা, সেইদিন দেখলাম, একজন আপনার ফটোকমেন্টে লিখসে, আপনার লুকটা নাকি রোমান হলিডে’তে হেপবার্ন সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় যে লুকটা দিসে সেরকম হইসে। আই মাস্ট অ্যাপ্রিশিয়েট হিজ ইন্টেনশনাল হিউমার সেন্স। আরেকজন তো আপনাকে রীতিমত ক্যাসাব্লাঙ্কার হিরোইন বানায়ে দিলো! হলি কাউ! ব্যাটাকে আমি নিজ পয়সায় ওইটার ডিভিডিটা কিনে দিব লিখলাম, আর আপনি আমার কমেন্টটা ডিলিট মারলেন। এইডা কিসু হইল? আপনার বিয়ের পর আপ্নারে ব্রিফ এঙ্কাউন্টার-এর নায়িকার রোলে ইম্যাজিন করসিলাম। আহা আহা! অতি শোকে সে আশাও বাদ দিলাম! আরেকজন লিখল, আপনার আই এক্সপ্রেশন নাকি লা স্ট্রাডা’র নায়িকার মতন। ওই ব্যাটার চেহারা কিন্তু কিছুটা বেনিনির মত আসে। ওইটা লিখে আমি লিখলাম, গুড লাক ওয়েটার! ভাগ্যিস, ব্যাটা লাইফ ইজ বিউটিফুল দেখে নাই। আর আপনিও বোঝেন নাই; তাই বোধ হয় কমেন্টটা এখনো আছে। আরেকজন তো বলেই বসল, সে নাকি আপনাকে নিয়ে নোটবুক মুভিটার মত বৃষ্টিতে ভিজতে চায়! আর আপনি সেটাতেও লাইক মারলেন! ভালই! আহা, সুন্দরীগুলা ব্রেইন ছাড়াই ক্যামন দিব্যি বাঁচে!
: আপনি কী বলতে চাচ্ছেন? আপনার ব্রেইন আছে, আপনি ওইটা বেচেন। আমার নাই, না? ভাল হইসে, যান!
: আপনি বুঝে ফেলসেন! ও মোর খোদা! এই মেয়েরে তো দেখতেসি গড ভুলে একটু ব্রেইন আর অনেকটা বিউটি দুইটাই দিয়ে দিসে। ক্যামনে কী!
: উফফ! আপনি বেশিবেশি বিশ্রী! টিপিক্যাল ম্যান! আপনি হলেন দ্য গুড, দ্য ব্যাড, দি আগলি’র আগলিটা। হিহিহি.......
: ও! তাই নাকি ম্যাডাম? আমি তো ভাবতাম, আমি ওয়ান ফ্লু ওভার দ্য কাকুস নেস্টের সেই পাগলটা। ব্যাপার না! ম্যান উইল বি ম্যান। অলওয়েজ! পুরুষমানুষ তো বিশ্রী হবেই! পুরুষমানুষ বিশ্রী না হলে কেমন যেন মেয়েমেয়ে লাগে।
: সন্ধ্যা হইসে। আরেকটু পর আযান দিবে। এইবার থামেন। ইফতার করবেন তো? করেন, করেন। আজকে আমিও রোজা রাখি নাই। আর ভাল কথা, অ্যামিলি রিকমেন্ড করার জন্যে আপনাকে থ্যাঙ্কস! জানেন, সন্ধ্যার সময় আমার নিজেকে অ্যামিলি অ্যামিলি মনে হয়। সিনটার কথা মনে আছে না?
: আই অ্যাগ্রি ম্যাডাম, বাট ইন ওয়ান সিন-সেগমেন্ট অনলি। ইন অল আদার কেসেস, ইউ হ্যাভ ত্রুফোস ওয়াইল্ড চাইল্ডস স্পিরিট অ্যাজ ইন দ্য ফোর হান্ড্রেড ব্লৌজ।
ঠিক ওইসময়ে আযান দিল। আমরা নায়েমের ক্যাফেটেরিয়ায় ইফতার সারলাম। চমৎকার ইফতার। ওখানে ইফতার পার প্লেট ৪০ টাকা করে। আমাদের ২ জনের বিল এসেছিল মাত্র ৮০ টাকা। অবশ্য ও-ই খাওয়ালো।
: এই যে মিস্টার! আপনার অবস্থা কিন্তু বেশি ভাল না। দ্য শশ্যাঙ্ক রিডেম্পশন দেখসেন না? কিংবা দ্য গ্রিন মাইল, দ্য সাইলেন্স অব্‌ দ্য ল্যাম্বস? আপনাকে ধইরা মাইর দেয়া দরকার। ইমিডিয়েটলি ইম্প্রিজন করা দরকার। নিজেকে শিন্ডলারস লিস্ট’এর হিরো নাকি গডফাদার ভাবতে শুরু করসেন? হুহ? ওকে ফাইন। মেক মি অ্যান অফার আই কান্ট রিফিউজ। নাও, ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান, হিহিহি.....
: বাই দ্য ওয়ে, ইজ ইট অ্যা চ্যালেঞ্জ, অর অ্যান অফার? নো ওয়ারিস, আই ডোন্ট মাইন্ড। ব্যাপার না, টোয়েলভ অ্যাংগ্রি মেন’এর নেগোশিয়েশন টেকনিকগুলা অ্যাপ্লাই করতেসি। আপনার জন্যে না হয় আজকের সন্ধ্যায় টু কিল অ্যা মকিং বার্ড’এর গ্রেগ্ররি পেকই হলাম। ফরেস্ট গাম্প’এর ডায়লগটাকে একটু বদলে দিই, কেমন? লাইফ ইজ লাইক অ্যা বক্স অব ঝামেলাস। ইউ নেভার নো হোয়াট ইউ আর গনা মিট। আহ! পুওর মি! আচ্ছা, আপনি আপনিই তো? এখানে কিন্তু আমি আমিই, অন্যকেউ না। সিজোফ্রেনিয়াটেনিয়া নাই তো আপনার? নাকি, অ্যা বিউটিফুল মাইন্ড, ফাইট ক্লাব, শাটার আইল্যান্ড......এইগুলা মাথায় ভর করসে?!
: এক্সকিউজ মি স্যার। আই কান্ট রিড ইউ! উদ্ভট সব কথাবার্তা! আমি তো কোন ছার, সেভেন, চায়নাটাউন, ভার্টিগো, রিয়ার উইন্ডো, ডায়াল এম ফর মার্ডার, স্ট্যাঞ্জারস অন অ্যা ট্রেন, দ্য ইউজুয়াল সাসপেক্টস, রিজার্ভার ডগস, দ্য ডিপারটেড, সাইকো এইসব ফিল্মের বিশ্বকাবিলগুলারে একত্র করলে ওরাও শিউর ফেল মারবে! হাসেন ক্যান? হাইসেন না। হুদাই বললাম। তেল দিলাম, বুঝসেন? তেল! মেয়েমানুষমাত্রই তো ঝামেলা। আগে বুঝেন নাই? মেয়েমানুষের সাথে ডেটিংয়ে আসছেন কেন? আপনাকে তো ইন্টিলিজেন্ট ভাবসিলাম!
: উরি বাবা! ভয় পাইসি! ভুল জায়গায় তেল দিসেন। আমার তেল লাগে না, আমি এমনিতেই পারি। কী বুঝলেন? মেয়েমানুষের সাথে আসব না তো কি পুরুষমানুষের সাথে আসব? ভুল জায়গায় নক করলেন! আর আপনি এত মুভিবোদ্ধা হলেন কবে থেকে? আমি তো ভাবতাম, সুন্দরী মেয়েরা সৌন্দর্য কমে যাওয়ার ভয়ে মুভি দেখে না, বই পড়ে না। আপনি তো আমাকে পুরাই মাননীয় স্পিকার বানায়ে দিলেন! আমি সাদামাটা মানুষ। আমি এখনো বাইসাইকেল থিভস টাইপ মুভি দেখি। একটা সাইকেলচোর ধরার কাহিনিতেই পুরো মুভি শেষ। এই মুভি দেখে আমাদের সত্যজিত অসম্ভব মুগ্ধ হয়ে ঠিক করসিলেন, উনিও মুভি বানাবেন। ভেবে দেখেন, কম কথা না কিন্তু! মুভিটার জন্যই আমরা পথের পাঁচালী পাইসি। আমার তো আর সত্যজিতের ব্রেইন নাই। কী আর করা! তাই এইরকম মুভিগুলা দেখি, মুড়ি খাই, গান গাই! কী আছে আর জীবনে! লাইফ ইজ বিউটিফুল মুভিতে বাবাকে সেনারা হত্যা করার আগমুহূর্তেও জীবনটাকে সহজভাবে নেয়ার সহজাত ইশারায় বাবা ছেলেকে যেভাবে বিশ্বাস করাইসিলেন, মৃত্যুও একটা খেলা, সেই ইশারা কি জীবনকে বাদ দিয়ে জীবন সাজানোর সকল অহেতুক আয়োজনকে অর্থহীন করে দেয় না? আপনিই বলেন! আমি প্রতি মুহূর্তের দুনিয়ায় বাঁচি। অত প্ল্যানট্যান করে বাঁচি না। আর, দ্য কালার অব প্যারাডাইস, চিলড্রেন অব হেভেন, টেস্ট অব চেরি, টার্টলস ক্যান ফ্লাই, বাশু দ্য লিটল স্ট্র্যাঞ্জার, দ্য বাকেট লিস্ট, লিটল মিস সানশাইন, সিনেমা প্যারাডিসো, ওয়াইল্ড স্ট্রবেরিস, ব্রেথলেস, স্পিরিটেড অ্যাওয়ে, দ্য সেভেনথ সিল, ইটস অ্যা ওয়ান্ডারফুল লাইফ, টোকিয়ো স্টোরি, দি ইন্টাচেবলস্‌, দ্য ক্রেনস আর ফ্লাইং এইসব দেখেদেখে আমার সহজসরল ভোঁতা মস্তিষ্কের যত্নআত্তি করি। মরার আগে ফাঁকিটাকি মেরে যতটুকু বেঁচে নেয়া যায় আরকি! জার্নি অব্‌ হোপ দেইখেন! সুখ কোথাও নাইরে, পাগ্লা! কোন শালায় সুখে বাঁচে? আসলে কেউ সুখী না। সব হইল সুখের ঢং! এভরিথিং আই লার্নড আই লার্নড ফ্রম মুভিস। ঈশ্বরকে বলি, হে ঈশ্বর! আমারে আর একটু বেশি বেরেন দিলে ঘোড়া কি আরেকটা দিম বেশি পাড়িত? আফসোস, বড়ই আফসোস! গলা ছাইড়া কানতে মঞ্চায়! উহুউহুউহুউহুহুহু ........বাই দ্য ওয়ে, থিও অ্যাঞ্জিলোপৌলস কি উনার ল্যান্ডস্কেপ ইন দ্য মিস্ট আমাদের পথের পাঁচালী থেকে মেরে দিসেন? আপনার কী মনে হয়?
: হেপবার্নের কোট মেরে দিলেন, না? পুরুষ মাইনষ্যের ঢং দেখলে গা জ্বলে। আপনার ঢংয়ের শেষ নাই; আপনি পারেনও, বস। বিশাল প্রতিভা! ভাল ভালো। মস্তিষ্কের যত্ন করার জন্যে আরো কিছু মুভি দেই আপনাকে। রেইন ম্যান, গুড উইল হান্টিং, সেন্ট অব অ্যা ওমেন, ডেড পোয়েটস সোসাইটি, মেমোরিস অব অ্যা গেইশা, দ্য প্রেস্টিজ, দ্য কিউরিয়াস কেস অব বেঞ্জামিন বাটন, দ্য লাইভস অব আদারস, ট্যাক্সি ড্রাইভার, অ্যা ফিউ গুড মেন, ইটারনাল সানশাইন অব দ্য স্পটলেস মাইন্ড, সিঙ্গিং ইন দ্য রেইন, মাই ফেয়ার লেডি, দ্য কিড, গন উইথ দ্য উইন্ড, দ্য সিক্সথ সেন্স, নো কান্ট্রি ফর ওল্ড মেন, দ্য পারসুইট অব হ্যাপিনেস, দ্য গ্রেপস অব র্যাথ, গান্ধী, দ্য কিংস স্পিচ, ইনভিক্টাস, দ্য রুলস অব্‌ দ্য গেইম, পারসোনা, সান্সো দ্য বেইলিফ, দ্য সিক্রেট ইন দেয়ার আইজ্‌, মেমোরিস অব মার্ডার, লা অ্যাভেঞ্চুরা ....... উফফ! হাঁপিয়ে গেলাম বস! ওমা! আপনি চুপ কেন? বলেন না যে, ওইগুলা সব দেখসেন! আমি এটা শোনার জন্যেই ওয়েট করতেসি। বলেন বলেন, আমি কিছু মনে করব না। দুনিয়ার চাপাবাজ! ........ অ্যাভাব অ্যাভারেজ আইকিউওয়ালা পাব্লিকের সাথে ডেটিংয়ের প্যারা ব্যাপক! সমানসমান হওয়া তো যায়ই না, খালি-খালি আজাইরা পেইন নেয়া লাগে। আমি জীবনেও এই টাইপের লোককে বিয়ে করব না; ডেটিং পর্যন্ত ঠিক আছে। এইসব পাব্লিক জগতের, নিজের ফ্যামিলির না। সুখী হওয়ার দুটো শর্ত হচ্ছে: কোনও জিনিয়াসকে বিয়ে করা যাবে না, আর নিজেও জিনিয়াস হওয়া যাবে না। নিজেকে এত পেইন দেয়ার কোনও মানে হয়? এই টাইপের লোককে বিয়ে করার চাইতে বসেবসে টম অ্যান্ড জেরি দেখাও ভালো। জীবনানন্দ বেঁচে থাকতে কী পাইসিলেন? কিছুই না! ঘোড়ার ডিম! পুরোটাই তো আমাদের লাভ! উনার কী? লাইফে বেঁচে থাকার সময় বাঁচা দরকার। ভাস্করের মত করে বলি, আমি অমরত্ব চাই না, স্রেফ বেঁচে থাকতে চাই। ...... আচ্ছা ভাল কথা, আপনার মনে আছে, আপনি ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিসিলেন না একবার? “মুভি দেইখ্যা হাউমাউ কইরা কানতে মঞ্চায়। কিছু মুভি সাজেস্ট করেন” এই টাইপের। ওখান থেকে কিছু মুভি দেখলাম। হাচিঃ অ্যা ডগস টেল, গ্রেভ অব দ্য ফায়ারফ্লাইস, দ্য পিয়ানিস্ট, মাই সিস্টার্স কিপার, নোবডি নৌস এইসব তো আপনি আগেই আমাকে দেখতে বলসিলেন। আমাদের মরণের পরে, ভাত দে-ও কিন্তু রিয়েল মাস্টারপিস! এইগুলা দেখে হাউমাউ করে কাঁদসি। আপনার ঘ্যানঘ্যানানিতে অতিষ্ঠ হয়ে এরপর দেখসি মেঘে ঢাকা তারা। উফফ! কী মুভি! ঋত্বিক ঘটককে পেলে পায়ে ছুঁয়ে সালাম করতাম। ওই বড় বোনটার কথা ভাবলে এখনো কেমন যেন বিষণ্ণ হয়ে পড়ি। একটা মানুষ সংসারে শুধু দিয়েই গেলো! আপনি মানুষ ভাল না। নিজে কাঁদেন, অন্যকেও কাঁদার ব্যবস্থা করে দেন। জানেন, মন ভাল করার জন্যে এরপর আমি কয়েকদিন খালি কমেডি মুভি দেখসি। দ্য ডিক্টেটর, এয়ারপ্লেন!, হিচ, দ্য হ্যাংওভার, লায়ার লায়ার, ইয়েস ম্যান, ব্রুস অলমাইটি, হোম আলোন, বোরাত। তাতেও কাজ হয় নাই। কান্নার অসীম ক্ষমতা! শেষই হয় না! আপনি পরামর্শ দিসিলেন না জাগরী পড়তে, ওইটা এখনো পড়ি নাই। আলসেমিতে না, ভয়ে। তার উপরে আপনি বলসিলেন, এই বই একটানা পড়া অসম্ভব; দুনিয়ার সবচাইতে নিষ্ঠুর লোকটাও নাকি এই বই টানা পড়তে পারবে না। আরো কিছু মুভি দেখে ইমোশনাল হয়ে গেসিলাম। দ্য কাইট রানার, দ্য বয় ইন দ্য স্ট্রাইপড পায়জামাস, অ্যা মোমেন্ট টু রিমেমবার ........
: থাক থাক, আর বলবেন না আপু, আপনার পিলিজ লাগে। আরও নাম বললে সত্যিসত্যি কান্নাকাটি শুরু করে দিব কিন্তু!...... আরেআরে করেন কী? ডেটিংয়ে শুধু একজন খরচ করা ঠিক না। আমি মনে করি, এতে পারস্পরিক সম্মানবোধ নষ্ট হয়। তাছাড়া, আপনি তো আর আমার বউও না, গার্লফ্রেন্ডও না। সো, চায়ের বিলটা আমাকেই দিতে দ্যান। ১০ টাকাই তো! ছোট চাকরি করলেও অন্তত এইটুকু দেয়ার সামর্থ্য থাকে। ..... আচ্ছা, আপনার ব্রেভহার্ট কিংবা সেভেন পাউন্ডসের কথা মনে আছে? দেখে কান্না পাইসিল না?
: মাফ চাই, দোয়াও চাই। আমার আর ওইসবে কাজ নাই। মন খারাপ করে থাকতে পেইন লাগে।
: মেয়েরা এমনই। মন খারাপ করতে চায় না, খালি মন খারাপ করে দিতে চায়। দুনিয়াতে যুদ্ধও বাধায়, শান্তিও আনে। সবই তো আপনাদের কৃপা, ম্যাডাম। ওয়ার মুভি বা যুদ্ধযুদ্ধ টাইপ মুভি দেখেন? এই যেমন ধরেন, গ্ল্যাডিয়েটর, সেভিং প্রাইভেট রায়ান, ট্রয়, ডাউনফল, লরেন্স অব অ্যারাবিয়া, ব্লাড ডায়মন্ড, দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কাওয়াই, ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস, ফুল মেটাল জ্যাকেট, এনিমি অ্যাট দ্য গেটস, দ্য প্যাট্রিয়ট, দি ইংলিশ পেশেন্ট? চেহারাটাকে ওরকম করে রাখসেন কেনো? ডোন্ট টেল মি, আপনাদের দয়ার শরীর, আপনারা যুদ্ধ সহ্য করতে পারেন না। যুদ্ধ তো বাধান ঠিকই!
: দেখব না কেন? দেখি, কম দেখি আরকি! আপনার কাছ থেকে কিছুটা উদার দৃষ্টিভঙ্গি আশা করসিলাম। ভাবসিলাম, আপনি অ্যাট লিস্ট স্টেরিওটিপিক্যাল চিন্তাভাবনা করেন না। ছেলেরা যুদ্ধ করে খেয়ালে, আর দোষ হয় মেয়েদের, না? যুদ্ধ করার পৌরুষ আছে আর সেটার দায়িত্ব নেয়ার পৌরুষ নাই? ছিঃ! পুরুষমানুষ! সবাই এক! শিক্ষা জ্ঞান বুদ্ধি যতই থাকুক, নারীদের সবসময়ই নিচে রাখতে চান।
: আহা! আপনি তো একবার বলসেনই, আপনি উপরে থাকতে চান। ডোন্ট ওয়ারি! আমার মনে থাকবে।
: উফফ! আবার শুরু হইসে! আপনার আম্মুর নাম্বারটা দ্যান তো! আপনি বয়সের তুলনায় দ্বিগুণ পাকসেন। উনাকে ইমিডিয়েটলি জানানো দরকার। আজকে থেকে বাচ্চাদের অ্যানিমেশন মুভি দেখা শুরু করেন, লাভ হবে। ওয়াল.ই, লায়ন কিং, প্রিন্সেস মনোকি, টয় স্টোরি, ফাইন্ডিং নিমো, ডেস্পিকেবল মি, বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট, শ্রেক, কুং ফু পান্ডা, আইস এজ, আলাদিন, আপ। এইসব দেখেন। আজকেই শুরু করবেন র্যাটাটুলি দিয়ে। দেখেন, মজা পাবেন। আমি মন থেকে চাই, আবার আপনি মানুষ হন। আপনার অবস্থা খুবই খারাপ। (বলতে-বলতে হঠাৎ ওর হেঁচকি উঠল।)
: আরে আপু, থামেন থামেন! ভাত খাওয়ার সময় এত কথা বলতে হয় না। নেন, পানি খান। ........ আপনি দেখি আমার মাইন্ড রিড করে ফেলসেন! আপনাদের এই অমৃত খেয়ে আমারও বারবার র্যাটাটুলির ওই ইঁদুরটার ডায়লগ মনে পড়তেসিলো। অ্যানিওয়ান ক্যান কুক, দ্যাট ডাজ নট মিন দ্যাট অ্যানিওয়ান শুড। এই জঘন্য রান্নার রেসিপি কী, কে জানে!
: কেন? রান্না ভাল হয় নাই, না? ক্যান্টিনের খাবার তো! কোনোরকমে খেয়েটেয়ে বেঁচে থাকা আরকি! ভুল হয়ে গ্যাসে বস, আপনাকে অন্য কোথাও খাওয়ানো দরকার ছিল। কী আর করা! কাছের মানুষের কাছেও ভুল করার সুযোগ না পেলে আমি আর কার যাব, বলেন? আচ্ছা যান, এই পচা খাবারের বিলটা আপনি দেন। আফটার অল, আমি তো আর আপনাকে পচা খাবার খাওয়াতে পারি না। হিহিহি.......
: আপনাকে ধরে মাইর লাগানো দরকার। কিপ্টুস একটা! টাকা বাঁচানোর জন্যে আমাকে কাছের মানুষও বানায়ে দিসেন! আপনি আস্তো একটা ইডিয়ট! আমি এমনিতেই আজকের ডিনারের বিল দিতাম। একটু খরচটরচ করা শিখেন, বুঝসেন? আচ্ছা, এখানে মিল কত করে?
: অনেএএএএক! পার মিল ৩০ টাকা। হিহিহি.......
: ও আচ্ছা! তাই তো বলি! আমাকে রাতের খাবার খেয়ে যাওয়ার জন্যে আপনি ওরকমভাবে রিকোয়েস্ট করতেসিলেন কেন! সরি, আমারই ভুল হইসে। খাবার মোটেও খারাপ না। অতি চমৎকার। ডাল মিশানো পানির সাথে যে তেলাপোকার বাচ্চাও ফ্রি দেয় নাই, আমি এতেই ব্যাপক খুশি!
: এরকম করতেসেন কেনো? ৬০ টাকা বিল দিলে এতো কথা শুনাতে হয়! কত দারুণ একটা সময় কাটল। কাটে নাই, বলেন? সবকিছু কী কখনও একসাথে পাওয়া যায়? ঈশ্বর নিজেই চান না, আমরা সবকিছু একসাথে পাই। ঈশ্বর একটুএকটু ঈর্ষাও করেন কিন্তু! ছোটোবেলায় ফ্যান্টমে পড়েন নাই?
: ভালোই বলসেন। আমি ভাবসিলাম, আপনাকে বিয়ে করে ফেলব। কিন্তু, এখন ভাবতেসি, করব না। আপনি বেশি জ্ঞানী, শবনম-মার্গারিটের মত। ওদের সাথে শুধু প্রেমই করা যায়, বিয়ে করা যায় না। মুজতবা-সুনীল-শঙ্খ’রাও করেন নাই। জ্ঞানী মেয়েকে বিয়ে করে কোনো লাভ নাই। খালি প্যারা দিবে!
: হায় হায়! এটা কী বললেন স্যার? এখন আমার কী হবে? আমি তো পানিতে পড়ে গেলাম! হিহিহি....... আপনি বলসিলেন না, ডেটিংয়ে খরচ সমানসমান হওয়া দরকার? আজকে কিন্তু আমি জিতে গেসি। আমি আপনার চাইতে ১০ টাকা বেশি খরচ করসি। হিহিহাহাহুহু.........
: হুঁ, কী আর করা! আপনি তো জোর করে উপরেই ছিলেন। মেয়েরা উপরে থাকলে ছেলেরা জিতে ক্যামনে? আর শোনেন, আপনি ১০ টাকা বেশি দ্যান নাই, আপনি বেশি দিসেন ৫ টাকা। হিসাব করে দ্যাখেন।
: কীভাবে কীভাবে? ...... ওওও আচ্ছা, বুঝসি। আমি আর্টসের স্টুডেন্ট, আমি কি আর অত হিসাব পারি? আমি কি আপনার মত ইঞ্জিনিয়ার নাকি? আপনি তো ব্রিলিয়ান্ট এঞ্জিনিয়ায়ায়াররর!!
: গালি দ্যান ক্যান? আমি কী করসি? একটা সার্টিফিকেটই তো আছে, আর তো কিছু নাই! হাহাহা..... আচ্ছা, আজকে আসি। ভাল থাকবেন।
: একটু দাঁড়ান। আই হ্যাভ অ্যা প্লিজেন্ট সারপ্রাইজ ফর ইউ, স্যার। আমি আপনাকে পেনড্রাইভে এমন একটা মুভি দেবো যেটা, আমি শিউর যে আপনি দেখেন নাই। দেখলে নিশ্চয়ই ওইটার নাম বলতেন। অবশ্য এই মুভিটা অনেকেরই কালেকশনে নাই।
: ব্যালাড অব অ্যা সোলজার?
: মাই গড! নীলললল!!! ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল!! আই ডু ফিয়ার ইউ, নীল!
: হাহাহা ....... থ্যাংক য়্যু ফর ইওর টাইম। গুড নাইট!
: এইইইইই...... একটু দাঁড়াবেন, প্লিজ?
: আবার কী?
: কিছু না। ভাল থাকবেন।
: হাহাহা....... আপনিও।
: এই যে!........ শুনছেন?
: এতবার পিছু ডাকলে কিন্তু থেকেই যাব। রাখবেন সাথে? হাহাহা ....... বলেন, কী বলবেন।
: নীল, ক্যান আই গিভ ইউ অ্যা বিগ টাইট হাগ? প্লিজ নীল, প্লিজ ........
ওর চিৎকারে নায়েমের গেটের পাশে শুয়ে থাকা কালো কুকুরটা ওর আধবোজা বাম চোখটা একটু খুলে লেজ নাড়লো শুধু। কিন্তু, কোন সুখে?! ভাবতে থাকলাম, তবে সুখও কি কখনও-কখনও আইরনিক্যাল? ঈশ্বর এর উত্তর দেবেন না, জানি। এটা প্রশ্ন নয়ও; স্বগতোক্তিমাত্র।
পাদটীকা। নায়েম। National Academy for Educational Management (NAEM): National Academy for Educational Management (NAEM) is an apex institution under the Ministry of Education entrusted with the responsibility of training heads of educational institutions and education functionaries. In addition, it provides foundation training to the new entrants of Bangladesh Civil Service (General & Technical) Education Cadre Officers. It offers courses on education management, planning and administration, conducts educational research and provides policy support to the Ministry of Education. (নায়েমের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত)