হিমঋতুকথা

 এই রঙটা হাওয়ার বদলাল,
শীত এল গো শীত এল।
জলটা নদীর হিম ছড়ায়,
পউষী পিঠে ঘুম তাড়ায়।
 
শিশিরমাখা আলোয় ভেজা উল-শরীর,
পাতায়-ঘাসে, জলের পিঠে নাচ পাখির।
ধুলোয়-ধূসর খামটা চিঠির নীল হ’লো,
উষ্ণতা তার দেয়াল দ্বিধার নেই ক’লো।
 
শিউলিছায়া পথটাতে, সন্ধ্যা ফোটে, সে ছোটে, বাজিয়ে রুনু মলটাতে,
ধোঁয়ার তুলি ধূমের বুলি রাত আঁকে, রাস্তামোড়ে কনকনিয়ে শীত জাঁকে।
মুগ্ধতা আর বিস্ময়ে, ভস্মরঙা তীরের ঘায়ে রাত ক্ষয়ে, এ নিশীথে হিম সয়ে,
কোন বাহানায় দিনের পাখি রাত জাগে? খেজুর ঝরে রাতভরে, মুঠোয় ওমের রাগ সরে।
 
ঘাসের ডগায় বরফকুচি পাকায় ঘুসি--বেজায় খুশি! শুভ্র ছোরায় লেপের মোড়ায় ঘুম আসে।
পাড়ায়-পাড়ায় নিদ জেগে রয়, মনউদাসের রথটা চেপে আগুনেপোকার রাত হাঁটে।
কোটের তলে, জানালাকাঁচে, গ্রিলের ফাঁকে, বইয়ের তাকে শীত গলে।
সুর ও সুরার সঙ্গমে, নাচে ইচ্ছেঘুড়ির সুতোনাটাই, বাঁধ কমে।
হতেই সকাল রোদের চুম, কফির ধুম--জাগায় শরীর।
খবর ওড়ে কাগজ ফুঁড়ে, এক লাফেতে মনচোখে।
জাগে ভূতসাহস। ফোয়ারা লুটি, অফিস ছুটি!
শীতশহর, কাটায় প্রহর এই একা।
এগোয় সময় নতুন ছকে।
রৌদ্রস্নানে দুপুর বকে।
খোঁজে ঠাহর।
হিমশরীর।
 
জ্বলছে উনুন শীতের রাতে লেপটালেপটি ভালোবাসায়,
লেপশরীরেই সবটুকু সুখ। শতক ধরে পার হয়ে যাই
ওমের ঘরের উঠোনটাকে। ঝরাপাতার গান শুনে,
উষ্ণ সুখের জাল বুনে, ফুরোয় বিষাদ প্রেম গুনে।
আগুন পোহায়, শীত মাতায় নেই-কাপড়ের দল,
মাথায় ন্যাড়া বৈরাগী গাছ, ঘুমিয়ে পড়ার ছল।
 
উতোরহাওয়ার জটলা
কাঁপে কাঁপায়, জাগে জাগায়, দোলে দোলায়, ভোলে ভোলায়।
উপচে জীবন, ঘুপচে গেরস্থালি, হঠাৎ রোদে, সব খোয়াবার
ক্ষণ নেবো।
চাঁদ হারালে
থামবে সকল
চলন বলন
হিমের মেঘে
চুপ আসরে
সুরের প্রেমে
সাপের ঘুমে।
এইতো জীবন!
Content Protection by DMCA.com