দ্বৈবিধ্য নিরন্তর

 পুড়ছে লেখা
পুড়ছে কথা
পুড়ছে ভাষা
পুড়ছে নেশা
পুড়ছে ভীষণ
অনুভূতি সব
পুড়ছে সাথে মন
কোন আগুনে পোড়ে বলো
অমন করে বন?
 
কাঁদছে মায়া
কাঁদছে কায়া
কাঁদছে ছায়া
প্রেম কাঁদছে
কাঁদছে ভালোবাসা
বিদ্রূপে হায় হাসছে কেবল
নীরব ভীরুর দল।
 
এ কী দেখি?
দ্বিতীয় মনের চোখেও কেন
জমছে এমন জল?
ও-ই তো শেখায়,
অনুভূতিটা মরে মরুক,
গ্লানি তবুও নয়।
মনটা তবে ভাবছে কী আজ?
অন্যকিছুয়, অন্যছুতোয় পরবে কি সাজ?
নাকি, হচ্ছে সবই ছল?
 
সুখটা যেজন চায় না বলো
দুঃখ তাকে ছোঁয় কীভাবে?
সুখকে হেলায় ঠেললে পরে
হয় দুঃখী সে কোন সে দায়ে?
কষ্ট যেজন টানছে কাছে
কষ্ট এলে সেই পালাবে?
এও কি হয়? কেমন করে?
স্বস্তি খুঁজে যে বাঁচে না,
অতিষ্ঠ সে হয় কীকরে?
 
মনের মাঝে থাকতে কারো
এই আমি তো চাইনি কভু,
ও মন থেকে হারিয়ে গেলে
কষ্ট কেন বাঁধে শুধু?
শক্ত বড় বাঁধার সে ঢঙ,
জীবনধাঁধার এও কি রঙ?
 
চাইনি আমি, মনটা ভরে
ভালোবাসুক কেউ আমাকে।
অবহেলাটা বিঁধলে হৃদয়
বিব্রতটা হই কীকরে?
দাবি নেই তাই
হৃদয়হীনই পাওনা মেটায়।
 
সরিয়ে আলো, মিলিয়ে কালোয়,
লুকিয়ে সেথায়, নিজেই বাঁচি।
ছায়া না পড়ে এ শরীরের
এ দেখে যে আঁতকে কাঁদি!
আলো নেই তাই ছায়াও নেই
এইটুকুও বুঝতে বাকি?
 
অভিমানেতে ভীষণ বেঁকে,
দূরে রই যে মানুষ থেকে,
শূন্যতাটা জাপটে ধরে,
প্রাণের মায়া ভয়ে মরে,
শ্বাসটুকুও আটকে আসে,
মুক্তি তবে কোন আকাশে?
এও ভাবায় এই আমাকে?
 
ভালোবাসার পথটা চেনা,
সে পথ ধরে হেঁটে চলি হাজারটা মাইল।
যাকে ভেবে হাঁটছি এমন,
সে কখনো আমার মতো,
এক কদমও হাঁটুক নাকো।
দুঃখ তো নেই।
ও পথ আমি চাই না ফেরত কারো কাছে,
আফসোসও নেই।
একাই মাপি নিজের ও পথ,
সামনে অনেক হাঁটার বাকি,
পেছন ফিরে চাই না আমি;
আমার আমি চায় যে তবু, বারণ ভেঙে।
কোন হাহাকার ওঠে জেগে,
একলা হাঁটার ভয়টা রেগে,
দেয় থামিয়ে এই আমাকে, নেয় ভাগিয়ে পথ ওটুকু।
পেছনেফেলা শূন্য পথের শূন্য যে হয় এক নিমিষেই!
এ কোন মায়া? এ কোন যাদু?
 
থাকার মতো সাথে নিয়ে,
আছে জানি অনেককিছুই,
আমি নাহয় রইবো পড়ে,
ভুলে-আছি’র বাতিল স্তূপে।
সত্যি যেদিন ভুলে যাবে,
আমিও তো নেবো মেনে !
সেদিন তবে অভিমানটা জাগবে কেন?
নেই সাধ যার মনে থাকার,
মনে রাখাবার সাধ্য কী তার?
 
মায়া সে কালো, ছড়ায় আলো মনের ভেতর
সেঁটে চোখেতে সানগ্লাসটা--রঙটা কালো, সেও ভালো।
জানি বুঝি সবই মানি, তবু খারাপটাকেই ভালোবাসি,
খারাপ কিছু সরার আশায়, রাখতে পারি জীবনবাজি।
শোধরাবে না জানিই তো সে, থাকবে এমন সারাজীবন,
তবু ওকেই চাই যে আমি! ভালোবেসে মরছি মিছে, সবই বুঝি।
কেউ না জানুক, আমি তো জানি, সে বাঁচে মোর প্রার্থনাতে,
আমি নাহয় আঁধারে রবো, আলো যেটুকু, সব ওরই হোক।
 
শুকনো ফুলের নৈবেদ্যেতে
সাজবে পুজো, ভরবে জীবন,
চেয়েছি আমি!
তবে, ঘ্রাণটা ফুলের আসবে কেন? কোথা থেকে?
সে আশাটা জাগেও যদি,
কষ্টে দারুণ ফেরাই ওকে। নিয়তি যে কয়,
ফুল ছোঁবো না,
জীবন ওতে থাকবে যখন।
কী আর করার?
 
ট্রেনটা যখন ওই চলে যায়,
তাকেই ভালোবাসি,
মায়ায়, সুরে, কী আদরে বাঁধি!
সেই আমি কি কাঁদতে পারি,
ট্রেনটা যদি বাড়ায় মায়া, দৃষ্টি ছাড়ায়?
ফাঁকা রেললাইন--
ঠাঁই জেগে রয় চোখের ভেতর, শেষ না হওয়া লেখার ছায়ায়,
আমি শুধুই তাকিয়ে ভাবি, সেই আমিও এই অসহায়?
 
রোদটা ভেজায়, বৃষ্টি পোড়ায়,
সবই জানি।
হারিয়ে ফেলার ছুতোয় ভুলে,
অলস ছাতা বাসায় রাখি।
তবে কেন রাগটা ঝারি,
রোদের খেলায়, জলের ধারায়?
সত্যি বুঝি, আমি যেমন অবুঝ অমন শিশুও নয়!
 
ভুলটা বুঝি, ঠিকটা জানি,
জেনেবুঝেও ভুলটা মানি,
পথটা ভুলের, মাশুল বেজায়,
দিতে যে হয়, কীসে ফেরাই?
জীবন হাঁটে নানান রঙে।
নীল কী সবুজ, হলুদ কী লাল,
সবকটাতেই জীবন বাঁচে,
যে পথেতে হাঁটছি এখন,
দায়টা নেবো সে পথেরই।
হিসেবটা তো সহজ বড়,
বুঝতে যে তাই হয়ই দেরি।
 
হঠাৎ আগুন! সিগ্রেটটা--
কী এক ভুলে ছড়িয়ে পড়ে, ছাই হয়ে যায় ঘরটা।
মানুষ জিনিস পুড়ল সবই।
ফিরল কেউ এক, ভাগ্যে বেঁচে।
হাঁটতে গিয়ে সে প্রথমেই, সিগারেটটাই ধরায় টানে,
সুখের খোঁজে। ভাবতে পারো?
 
এমনি করেই, না শেখারই দীক্ষাতে, জীবন কাটে ধাক্কাতে।