হারানো ‘আমি’র খোঁজে

তুমি এতটাই কাছে এসে দেখা দিয়েছ যে, এ আমার ভালো লাগে না। এভাবে আমার যে সর্বস্ব গ্রাস করেছ, তা আমার ভালো লাগে না। আমার ইচ্ছে, তুমি বেশ একটু দূরে থাকো, একেবারে আমার ভেতরে এসে আমার সমস্তটা অধিকার না করো। কিন্তু তোমার ইচ্ছে একদমই অন্যরকম দেখছি। দেখা দেবার মানে যে এ রকম, তা আমি জানতাম না।




আমার কিছুই থাকবে না, সবই তোমার হয়ে যাবে। যে চোখটি দিয়ে তোমায় দেখব, তা পর্যন্ত তোমার হয়ে যাবে; যে গলাটি দিয়ে তোমায় ডাকব, তা পর্যন্ত তোমার হয়ে যাবে... আমি এমনটি কখনও ভাবিনি। যা হোক, আমার ইচ্ছামতো তো আর তুমি দেখা দেবে না, তোমার ইচ্ছামতোই দেবে। আমি যে আমার নিজেকে বজায় রেখে তোমায় দেখতে চাই, এ আমার অহংকার, এ আমার পাপ। তুমি তো আগেই বলেছ, আমি যতটুকু নিজেকে হারাব, ততটুকুই তোমায় পাবো; যখন একেবারে হারাব, তখন চিরদিনের জন্যে তোমায় পাবো। তা-ই হোক, আমি একেবারে হারিয়ে যাই, হারিয়ে গিয়ে তোমাকে পাই।




আমি একেবারে যাব, আমার নিজের কিছু থাকবে না, অথচ তুমি আমার হবে, এটা যে আমার বুদ্ধি ঠিক বুঝতে পারে, তা নয়; কিন্তু বুদ্ধি না বুঝলেও কথাটা দেখছি ঠিক। এই তো দেখছি, আমার আগাগোড়াই তুমি... আমার চোখের জলটা পর্যন্ত! অথচ তুমি আমার, আমি তোমার। এই হারানো 'আমি'র আস্বাদনটা তুমি আমাকে এমন করে দাও যেন আমার আর আলাদা থাকতে ইচ্ছে না হয়,... তোমাকে খানিকটা দূরে নিয়ে আলাদা করে দেখবার ইচ্ছে আর না থাকে। তোমাতে আমাতে এ রকম মেশামেশিটা আমি মানুষকে কোনোমতেই বোঝাতে পারি না, এর জন্যেও বুঝি আমার ইচ্ছে হয়, তুমি খানিকটা দূরেই থাকো।




আমার অত বুঝিয়ে দরকার নেই। বুঝিয়ে কী লাভ যদি তোমায় লোকে ধরতে না পারে? আমার হাজার বোঝানোতেও দেখি, লোকে মনে করে, তুমি তফাতে; অত কাছে যে আছ, তা লোকে কিছুতেই বোঝে না। বোঝানো তাই এখন থাক। তুমি যখন এসে আমাকে একেবারে অধিকার করে ফেলবে, তোমার চোখের জ্যোতি আমার চোখ দিয়ে বেরোবে, তখন লোকে সহজেই বুঝবে যে, যে-সকল কথা বলেছি, তার সব‌ই ঠিক।