হারানোর ভয়ে ভয়ে

সারাজীবনই ঝামেলা-এড়িয়ে-চলা মানুষ আমি। কোথাও ঝামেলা দেখলে চুপচাপ সেখান থেকে সরে আসি। কিন্তু কী জানি আমারই কপালে আজীবনের জন্য এই ঝামেলা জুটে যায় কি না! এর কারণ, মাথাটা নষ্ট করে দেবার জন্য একজনই যথেষ্ট। মানুষের ভেতরে কী চলছে, সেগুলো বাইরে থেকে তো আর বোঝা যায় না!

আমি কী ধরনের মানুষের সাথে মিশলাম সারাজীবন! সবাই উপরে বলে একরকম, করে আরেকরকম। কী করব সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।

মানুষের ভেতরটা এত খারাপ কেন? মানুষ এত মতলববাজ কী করে হয়? আমার চারপাশটা এত আগাছা দিয়ে ভরে গেছে যে, সেগুলো তুলতে তুলতে আমি সম্পূর্ণ একলা হয়ে যাচ্ছি। মানুষ যখন সব দিক থেকে আটকে যায়, তখন তার কী করা উচিত?

একজীবনে কোনোদিন দু-বার জন্ম নেবার সুযোগ থাকলে আমি আরেকটি বার জন্ম নিয়ে আগের জন্মের ভুলগুলো সব শুধরে নিতাম। এমন কোনো সুযোগ মানুষ কি কখনো পারে তৈরি করে নিতে?

জীবনের কিছু ভুল সিদ্ধান্ত আছে, যেগুলো একবার নেওয়া হয়ে গেলে একজীবন‌ও কম পড়ে যায় সেই ভুলের মাশুল গুনে শেষ করার জন্য। জীবন থেকে এই জীবনটা কখন যে হাত ফসকে পড়ে গেছে টেরই পাইনি!

এখন এই পরিস্থিতি থেকে পালানোর কোনো পথ নেই, অথচ থেকে যাবার প্রতিমুহূর্তে যেন দম বন্ধ হয়ে আসে!

আমি মাঝে মাঝে এই জীবন থেকে খুব দূরে কোথাও পালিয়ে যেতে চাই; ঠিক যতটা দূরে পালালে চেনাজানা গণ্ডির সব কিছু থেকে মুক্তি মেলে…ততটা।

এতটা দূরে সরে যেতে ইচ্ছে হয় যেন চাইলেও কিংবা চেষ্টা করলেও আর ফিরে না আসা যায়।

কিন্তু কেন জানি আমি পারি না কিছু করতে। এতটাই অসহায় আমি যে, নিজেকে এতটুকু সুখও দিতে পারি না!
যে নিজেকে সুখ দিতে পারে না; সম্মান, মর্যাদা, সাফল্য কিছুই দিতে পারে না, তার কি বেঁচে থাকার কোনো অধিকার থাকে?

জীবনটাকে আমার ঘেন্না লাগে এখন!
বেঁচে থাকতে ভীষণ ভীষণ লজ্জা হয় আমার!
কেন পারলাম না আমি নিজেকে একটু সম্মান এনে দিতে?

বড়ো ঘরে জন্ম নেওয়া ভীষণ চ্যালেঞ্জিং। প্রতিটি মুহূর্তে নিজের সাথে অভিনয় করে যেতে হয়। প্রতিমুহূর্তে একটা পা-ও হিসেব করে ফেলতে হয়!

বংশীয় ঘরের মেয়েদের দোষ বেশি, পরিবারের স্ট্যাটাস বজায় রাখতে গিয়ে নিজের বলতে কিচ্ছু থাকে না আর। এর বাইরে যারা, তারা অনেক অনেক লাকি।

যাদের কিচ্ছু নেই, তাদের কিছু হারাবার ভয় থাকে? হারানোর ভয়ে ভয়ে প্রাণভরে বাঁচতেই পারলাম না কখনও!