হঠাৎ বাঁচার সাধ!

 
আমায় একচিমটি ভালোবাসবে? দুচোখ ভরে জল ঝরালে, একটুখানি কাছে আসবে?


আজকাল আমার কী হয়েছে, বলো তো! আমার কী যেন হয়েছে! আর কিচ্ছু ভালো লাগে না। কোনও কিছুতেই মন বসে না। কোনও কাজে মন নেই। ফাঁকি দিচ্ছি যে, তা-ও বুঝতে পারছি খুব। কিন্তু কেন আজকাল এমন করছি? কেন অবুঝ শিশুদের মত করছি? এইসব আমি নিজেও জানি না। আমি কেবল জানি, আমার সারাদিন কেমন যেন খালি খালি লাগে, কিছুই ভালো লাগে না আমার। মানুষ ভালোবাসলে এমন অবুঝ হয়ে যায় বুঝি? এমন শিশুদের মতো করে? আচ্ছা, আমি কি সারাজীবনই এমন থেকে যাব তা হলে? আমি কি সব সময় এমন শিশুদের মতোই করতে থাকব?


আমি বোধহয় আজকাল তোমাকে আগের চাইতে অনেক অনেক বেশি বিরক্ত করি, তাই না? আমি কিছু বুঝতেই চাই না, ঠিক না? আমি তোমাকে সারাদিনই একটু পর পর জ্বালাই। আমি কী করব, বলো, তোমাকে জ্বালানো আজকাল আমার অভ্যেস হয়ে গেছে। তুমি আমার আস্ত একটা অভ্যেস! তুমি প্লিজ আমাকে অনেক জোরে বকে দেবে? আমি কতদিন হলো পড়াশোনায় মন দিচ্ছি না, আগের মতো তোমাকে চিঠিলেখাও বাদ দিয়েছি। আমি যে কী করি সারাদিন, আর কী করে দিনটা পার হয়ে যায়, আমি তার কিচ্ছু জানি না। আমি কোথায় কীসে সময় খরচা করি, আমি তা-ও জানি না।


আমি তো এমন শিশুদের মতো করিনি কখনও। এতটা অবুঝ তো কখনও ছিলাম না আমি। আজ তা হলে কী হলো আমার? আমি কি পাগল হয়ে যাব? আমি তো তোমাকে পাই না, আমি তো পাব না তোমাকে, তা হলে আমি কী নিয়ে বাঁচব এখন? তুমি কেন এলে আমার জীবনে? কেন এভাবে ভেঙে দিচ্ছ আমাকে? আমি একা ছিলাম, বেশ ছিলাম। কিন্তু আজ আর আমি একা থাকতে আর পারি না। আমার প্রতিমুহূর্তের অনুভূতিতে তুমি চলে আসো, ভাবনায় জড়িয়ে যাও। আমার যদি তোমার অভ্যেসটা পাকা হয়ে যায়, আর যদি কোনও দিন তোমাকে ছেড়ে না থাকতে পারি, আমি কি তা হলে সেদিন পাগল হয়ে যাব, মরেই যাব? আমার ভেতর, আমার বাহির, আমার চারপাশ ঘিরে কেবলই তুমি থেকে যাচ্ছ।


আমার যে শূন্যতাটুকু ছিল, তা আজ পূর্ণ হয়ে গেছে তোমার আবেশে। হ্যাঁ, আমার ভেতরে অনেক ক্ষুধা আজ। আমার মধ্যে একধরনের ভীষণ খরা চলছে। কিন্তু এ যে আমাকে গ্রাস করছে না! আমার যে ক্রমশই তোমার অভ্যেস হয়ে যাচ্ছে! আমি নিজেকে কোথায় যে লুকাই…আমার চোখেমুখে অপরাধীর স্পষ্ট ছাপ। আমার যে কাউকে ভালোবাসতে নেই। আমার যে কাউকে চাইতে নেই। আমার যে সুখী হতে নেই। আমার যে কিছু আশা করতে নেই। আমি কেবলই না পেয়ে না পেয়ে মরে যেতে এসেছি। আমি সারাজীবনই কেবল না পেয়ে না পেয়ে শেষ হয়ে যেতে এসেছি।


আজ আমাকে একটু বলতে দাও। আমি কতকাল তোমার সাথে মন ভরে গল্প করি না, আমি কতকাল তোমাকে সব কথা খুলে বলিনি। আমি কতকাল নিজেই নিজের মুখ ঠেসে বন্ধ করে রেখেছি। আমি যদি কিছু না-ই পাব, তবে কেন এসেছি এখানে? আমি তোমাকে ছুঁতে কেন পারি না? তুমি আমার সামনে কেন নেই? ভালোবাসা এমন পোড়ায় কেন? ভালোবাসা সবটা কেড়ে নেয় কেন? ভালোবাসলে মানুষ অন্ধ কেন হয়ে যায়? অন্য আর কিছুই কেন তখন মনে আসে না? আমি সব ভুলে গেছি। একেবারে সব ভুলে গেছি আমি, জানো? আমি এতদিন কোথায় ছিলাম, আমি এখন কই যাচ্ছি, আমি কোন পথে আছি এখন, আমি কতদূর এগোলাম, আমি এসবের কিছুই জানি না। আমার ঘরে এখন কেবল স্পর্শহীন রাত নামে আর নির্লিপ্ত ভোর হয়।


আমাকে কেন তুমি প্রশ্রয় দিলে? আমাকে কেন গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দিলে না? আমাকে কেন তোমার বুকে ঠাঁই দিলে? আর কেন-ইবা রাজত্ব করতে দিলে তোমার মাঝে? আমি যে এখন অনেক অনেক ধনী, জানো? আর এজন্যই লুকাতে চাইছি নিজেকে এক এক করে সবার কাছ থেকে। আমি যে ধনী ছিলাম না কখনও! আমি যে এতটা পাইনি কখনও! আমি যে এই সুখ, এই ঐশ্বর্য আর হারাতে দেবো না! দুহাতে চেপে বুকে জড়িয়ে রাখব। এজন্যই আজকাল সবার কাছ থেকে লুকিয়ে পড়তে চাই। এত সুখে কেউ থাকে, বলো? এতটা ছিল আমার এই কপালে!


আচ্ছা, তুমিই তো এই সব আমাকে এনে দিলে, যদি কোনও দিন আমাকে আর ভালোবাসতে না পার, যদি আমাকে আর রাখতে না পার, যদি কখনও তোমার আমাকে ভালোবাসার সময় আর না থাকে, তা হলে সেদিন আমাকে তোমার ওই দুইহাত দিয়ে গলাচেপে মেরে ফেলতে পারবে না? আমি নয়তো আর কোথায় যাব? তুমি ছাড়া যে আমি এমনিতেই বাঁচব না! তা হলে একটু একটু করে আস্তে আস্তে মরে যাওয়ার চেয়ে বরং একদিনে একমুহূর্তেই আমাকে গলাচেপে মেরে ফেলো! তুমিই তো আমাকে বাঁচতে শেখালে, তুমিই এনে দিলে এই জীবন, তুমিই সুখে ভাসালে, তুমিই দুঃখে জড়ালে! সব কিছুই যদি দিতে পারলে, তবে কেন মৃত্যু এনে দেবে না? ওটাও নাহয় তুমিই দিয়ো।


আমার জীবনে, আমার এই ছোট্ট চড়ুইয়ের জীবনে আর যেকটা দিন সময় আছে, আমি সেকটা দিন একেবারে নিজের মতো করে, একেবারে বাঁচার মতো করে বেঁচে যেতে চাই। আমি ক্লান্ত, আমি বিধ্বস্ত ওই জীবনে থেকে থেকে। আমি আর পারব না ফিরে যেতে ওই ঘুটঘুটে অন্ধকারে। আমার যে অভ্যেস হয়ে যাচ্ছে এখানে থাকতে থাকতে। আমি আবার ওখানে কী করে যাব ফিরে? ওখানে গেলে আমি কী নিয়ে থাকব, বলো? এর চেয়ে বরং যদি আমাকে ফিরিয়ে দিতে হয়, যদি আর না পার আমাকে বয়ে চলতে, তা হলে একমুহূর্তেই গলাচেপে শেষ করে দিয়ো, আমি তোমাকে কিচ্ছু বলব না। আমি কাউকেই বলব না যে তুমি আমাকে গলাচেপে মেরে ফেলেছ। কেননা যদি কারও আমাকে মেরে ফেলার অধিকার থাকে, তবে তা কেবলই তোমার আছে, আর কারও নেই…আর কেউ তো আমাকে কখনও বাঁচায়নি!


আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে চাই না। আমি পারব না বাঁচতে। আমাকে কখনও পারতে বোলোও না। আমাকে প্লিজ শেষ করে দিয়ো, কেননা একা বাঁচতে গেলে আমি এমনিতেই শেষ হয়ে যাব। আজকে আমি ভীষণ স্বার্থপর হয়ে গেছি, কেবল নিজেরটা আগে ভাবি। বাঁচতে এত ভালো লাগে, আমি আগে জানতাম না। আমার এত ভালো লাগতে শুরু করবে এই জীবনটা, আগে কখনও ভাবিইনি। ভালোবাসা একাই পারে সব শূন্যতা পূরণ করে দিতে। ভালোবাসা সবই পারে! যদি তুমি বল, আজ এখানেই আমার সমাধি, আমি তা-ও মেনে নেব, কিন্তু তুমি কি আমাকে বলবে কখনও অন্য কোথাও সুখ খুঁজতে? আমাকে সত্যি বলবে এসব?


আমার সব ভাবনাতেই যে একটা মানুষ, আমি সেটাকে একশোটা ভাগ কী করে করি, বলো তো? একটাই মন একইসাথে একশো জায়গায় দেওয়া যায়? এই শরীর একইসাথে একশো জায়গায় বিলোবার মতো কিছু? আমি আর কত সহ্য করব? এর চেয়ে বরং…এর চেয়ে বরং আমাকে শেষ করে দিয়ো। আমাকে তবুও তোমাকে ছাড়া বাঁচতে বোলো না, চলে যেতে বোলো না! বলবে না, বলো? এত কঠিন কেন সব কিছু? বাস্তবতা এত কঠিন কেন? জীবন এত কঠিন কেন? এতদিন দেখেছি, বাঁচতে গেলে কিছুই লাগে না, কেবল বেঁচে থাকলেই হলো! এখন মনে হয়, আসলে বাঁচা কাকে বলে, কীভাবে বেঁচে থাকতে হয়, এসব কখনও জানতামই না! আমি এতদিন বাঁচিইনি! আমি কেবল আমার জীবনটাকে টেনে নিতে নিতে এগিয়েছি। আজকাল আমার বাঁচতে ইচ্ছে করে। আরও অনেক বছর তোমাকে নিয়ে বাঁচতে খুব ইচ্ছে হয়, জানো? তুমি থেকে যেয়ো শেষপর্যন্ত!