হঠাৎ একদিন

হঠাৎ আসা বৃষ্টির মতন করেই একদিন তুমি এ জীবনে এসেছিলে। এসেছিলে জলস্নাত এক শুভ্র কদম হয়ে।

তারপর ফ্যাকাশে জীবনটা হয়ে উঠেছিল সাতরঙা রংধনুর মতন রঙিন। সে কী আবেশ, তীব্র ভালোবাসার নেশা এবং স্বর্গীয় অনুভূতির এক সুখময় দিনাতিপাত...আহা!

তুমি এ জীবন জুড়ে ছিলে চোখের কাজলের মতন, কপালে আধফালি টিপের মতন। আমার ঘুমে কিংবা জাগরণে তুমি, আমার হাসিতে কিংবা কান্নায় তুমি। নকশিকাঁথার আইলে প্রতি সুঁইয়ের শিল্পের মতন গোটা জীবনের আনাচে-কানাচে, অলি-গলিতে তুমি...শুধুই তুমি।

হঠাৎ একদিন কালবৈশাখী ঝড় এল। তছনছ করে ভেঙে দিয়ে গেল আমার বাবুইপাখির ছোট্ট ঘরটি। দমকা হাওয়ায় ছেঁড়া তুলোর মতন উড়িয়ে নিয়ে গেল প্রায় অর্ধযুগ ধরে একটু একটু করে গড়ে ওঠা স্বপ্নগুলো। নিমিষেই ভেঙে চুরমার আমার ঘরদুয়ার।

যার জন্য ছেড়ে দিয়েছি জীবনের কত-কী, যার জন্য মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও ছেড়ে যাইনি তার হাত, খুব অবলীলায় সে অন্য দুটি হাত ধরে চোখের সামনে গড়গড় করে হেঁটে চলে গেল, আর পেছনে ফেলে দিয়ে গেল তীব্র প্রেম, মধুময় স্মৃতি ও জানা-অজানা হাজারো খুনসুটি।

অথচ কথা ছিল সারাজীবন একসাথে থাকার। কথা ছিল, তার প্রতিটি জন্মদিনে প্রথম উইশটি আসবে আমার কাছ থেকেই। না, হলো না। গতবছরের মতন এই বছরটা আর হলো না। আজ আমার জায়গাটা দখলে নিয়ে গেছে অন্য কেউ।

অন্য কেউ তোমার ঘর সাজাবে, গায়ে রং মাখবে, প্রথম প্রহরের গানটি অন্য কেউ শোনাবে। আজ আমিই হয়ে গেলাম সেই ঘরে পর, যে ঘর ছিল একান্তই আমার।

তুমি জীবনে এসেছিলে বলেই বুঝেছিলাম, পৃথিবীতে ভালোবাসার ঊর্ধ্বে কোনো অনূভুতি নেই; তুমি পৃথিবীতে এসেছিলে বলেই জেনেছিলাম, বিরহ কিংবা বিচ্ছেদের চেয়ে বেশি যন্ত্রণা বুঝি মরণেও নেই।
আজ হারিয়েছি সব‌ই। তবু বলছি, প্রিয়, তুমি ভালো থেকো, আমাকে ছাড়াই খুব ভালো থেকো। তুমি ভালো না থাকলে ভালোবাসব আর কাকে? তুমি ভালো না থাকলে যে মনের ভুলে আবারও বিশ্বাস করে কষ্ট পাবো!