স্ববিরোধিতা

দু-জন দু-জনকে ছেড়ে বাঁচবে না ভেবে ভেবে দীর্ঘ পাঁচ কিংবা সাত বছরের প্রেমের পর মানুষদুটো পালিয়ে গিয়ে পরিবারের অমতে বিয়ে করে নেয়; অথচ বছরকয়েক যেতে না যেতেই সেই দু-জন মানুষ আবার মিউচুয়ালি ডিভোর্স‌ও নিয়ে নেয়।

এর কারণ, ভালোবাসা রং বদলায়।

মানুষের ভিড় দেখলে চটজলদি এড়িয়ে যেত যে মানুষটি, আড্ডা কিংবা হ‌ইচ‌ই থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে 'আমাকে একটু একা থাকতে দে!' বলে যে মানুষটি খুব করে একা থাকতে চাইত, একাকিত্বের দুঃসহ ভারে সে মানুষটিই আবার একদিন সুইসাইড করে বসে।

এর কারণ, একাকিত্বের মানে একা থাকা নয়; একাকিত্বের মানে আত্মার খুব কাছে রাখার মতো একজন মানুষের তীব্র অনুপস্থিতি।

বাড়ি, গাড়ি, নামিদামি ক্যারিয়ার থাকার পরও কেউ কেউ মধ্যরাতে হু হু করে কেঁদে ওঠে, আবার কিছুই না থাকা ঝালমুড়িওয়ালা মামাটি মধ্যরাতে ঘুম ভেঙে জানালা-ভাঙা চাঁদের আলো দেখে বউকে ডেকে তুলে বলে, চলো, জোসনা দেখি।

এর কারণ, টাকায় সব কিছু কেনা গেলেও সুখ কেনা যায় না।

মানুষ এমনই। চকচকে প্যাকেটে মোড়ানো পচা মাছের মতন মানুষের এই জীবন। এখানে চিত্তের ঐশ্বর্যের কাছে বিত্ত বেচারা বড্ড মার খেয়ে যায়!

আমরা উপরে উপরে দেখাই এক, ভেতরে ভেতরে আরেক। আমরা ভাবি এক, হয়ে যায় আরেক। আমরা অন্যকে বলি এক, অন্তরে পুষি আরেক।

মানুষ চলনে-বলনে স্ববিরোধী প্রাণী।

আমরা ভালোবাসি বলেও ঘৃণা করি, ঘৃণা করি বলেও ভালোবাসি। ক্রোশ মাইল দূরে থেকেও কাছের ভাবি, আবার কাছাকাছি থেকেও দূরের ভাবি।

তবুও তো জীবন ঠিক‌ই কেটে যায়। সময়ের প্রয়োজনে জীবন রং পালটায়, সেই পালটানো সময়ের সাথে তাল মেলাতে গিয়ে কখনোবা আমরা নিজেরাই গিরগিটি হয়ে যাই। হতে হয়, কিচ্ছু করার নেই।