সেলিম খানকে নিয়ে

সালমান খানের বাবা সেলিম খান, যিনি দিওয়ার-ডন-জান্‌জির-ত্রিশূল-শোলে-মিস্টার ইন্ডিয়া'র মতো বিখ্যাত সব সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখেছেন, দাপটের সঙ্গে অভিনয় করেছেন হিন্দি সিনেমার স্বর্ণযুগের মঞ্চে, শের-শায়েরি'তে তাঁর দখল শ্রদ্ধা জাগানোর মতন। আসলে দখল বললে কম বলা হয়, খুবই উঁচু মাপের তাঁর চিন্তাভাবনা।

একবার এক প্রোগ্রামে তিনি বলেছিলেন, আসু নিকাল আয়ে তো খুদ পুছিয়েগা। লোক পুছনে আয়েঙ্গে তো সওদা কারেঙ্গে।

বাংলায় তরজমা করলে দাঁড়ায়: যখন চোখে জল আসে, তখন তা নিজেই মুছবে। অন্য কেউ মুছতে আসে যদি, তবে সে তা নিয়ে ব্যবসা করবে।

হিন্দিতে অনেক সুন্দর এবং তাৎপর্যপূর্ণ একটা কথা ওটা, যদিও বাংলা করলে একটু এদিক-সেদিক হয়ে যায়। কথাটার গভীরতা অনেক অনেক বেশি! মেনে চলতে পারলে অনেক কষ্ট থেকে নিজেকে খুব সহজেই দূরে রাখা যায়।

সেলিম খান আরও বলেন, আচ্ছা আদমি ও (ব্হো) হ্যায়, যিসকা দোস্ত পুরানা হো, অউর যিসকা নকার পুরানা হো।

তরজমাটা এমন: ভালো মানুষ সে-ই, যার বন্ধু পুরোনো, বাড়ির চাকরটাও পুরোনো।
কথাটার গভীরতায় ঢুকুন। বুঝবেন, একজন মানুষের মনমানসিকতা বোঝার জন্য এর চাইতে সহজ রাস্তা বেশি নেই। পোশাকের মতন বন্ধু আর কাজের লোক বদলায় যারা, তারা আর যা-ই হোক, মানুষ হিসেবে খুব চমৎকার কিছু নয়।

শুরুতে সেলিম খানকে সালমান খানের বাবা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়াটা ঠিক হয়নি। উর্দু সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি কাইফি আজমিকে চিনতে যেমনি তাঁর মেয়ে শাবানা আজমির রেফারেন্স টানতে হয় না, ঠিক তেমনি ভারতের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড সেলিম খান নিজের জ্যোতিতেই ভাস্বর।

বরং সালমান খান এখনও অনেক অনুষ্ঠানে দাওয়াত পান সেলিম খানের ছেলে হিসেবে, সালমান খান হিসেবে নয়। অনেক বিদগ্ধজন‌ই আফসোস করে বলেন, আহা, সেলিম খানের ছেলেটা গুণের বিবেচনায় বাবার ধারেকাছেও যেতে পারল না!
ছোট্ট একটা তথ্য দিয়ে শেষ করছি। সালমান খান নিজে কী ভাবেন এমন বাবার সম্পর্কে? সেলিম খান‌ই এই পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর সামনে কাউকেই-পরোয়া-না-করা সালমান খান মদ্যপানের সাহস‌টুকুও করতে পারেন না!

পুনশ্চ। কেউ কেউ হোয়াটসঅ্যাপে/ইনবক্সে জিজ্ঞেস করেছেন, সালমান খান মদ্যপান করেন, এটাকে কি আপনি সমর্থন করেন?

তাদের বলছি, যতক্ষণ পর্যন্ত মদকেনার পয়সাটা আমার পকেট থেকে খসছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত কার‌ও মদ্যপান নিয়ে আমার কিছুই বলার নেই।

সালমান খান! তিনি যে উচ্চতায় পৌঁছেছেন, তার এক-শো ভাগের এক ভাগ উচ্চতায় সারাজীবন ধরে চেষ্টা করলেও পৌঁছতে পারব না বোধ হয়।

এরকম একজন মানুষের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কথা বলার সময় আমি শুধুই তাঁর পজিটিভ দিকগুলো নিয়েই বলতে ভালোবাসি। এই যেমন, তিনি একজন দানবীর।

আপনি হয়তো বলবেন, সালমান খান এখনও বিয়ে করে না কেন? আমি বলব, তিনি বিয়ে করলে কি তাঁর গার্লফ্রেন্ডদের মধ্যে কেউ আপনাকে নিজের বাড়ির দারোয়ান হিসেবে চাকরি দিত যে তাঁর বিয়ের অপেক্ষায় হাঁ করে বসে আছেন? না কি তিনি বিয়ে করছেন না বলে আপনি আপনার নিজের বংশের প্রদীপ জ্বালানোর প্রাথমিক কাজটাই এখনও শুরু করতে পারছেন না?

সালমান খান মদ খেলে লিভার নষ্ট হবে তাঁর নিজের, তিনি ইচ্ছেমতো প্রেম করে বেড়ালে নরকে যাবেন তিনি নিজে। এখানে আপনার সমস্যা কোথায়?

Please stop being judgemental. "জাজমেন্টাল" শব্দটার একটাই মানে: আজাইরা!