ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা: ১৩০





ভাবনা: নয়শো চার
………………………………………………………


এক। একমুঠো রোদ্দুর চেয়ে নিতে ইচ্ছে করছে তোমার কাছ থেকে। কিংবা পুরো একটা সকাল বা বিকেল!

তোমার আঙুল ছুঁয়ে আরও অনেকটা সময় তোমার সঙ্গে থেকে যেতে ইচ্ছে করছে!

ইচ্ছে করছে, তোমায় জল বানিয়ে জলের গ্লাস হয়ে আমি থেকে যাই তোমার সারাশরীর লেপটে!

ইচ্ছে করছে, তোমার ওই তুমিটাকে লুকিয়ে ফেলে আমার চারপাশে বৃত্ত করে এঁকে দিতে!

আমার আরও ইচ্ছে করছে, তোমার সঙ্গে হারিয়ে গিয়ে আমার সেই আমিটাকে খুঁজে পেতে, যে আমিটা প্রায়ই তোমার কাছে থেকে যায়!

যোগাযোগ না রাখার কথা বলে হারিয়ে গিয়েও বার বার তোমার কাছে ফিরে এসে হেরে যেতে আবারও ইচ্ছে করছে!

ইচ্ছে করছে, তোমায়, শুধু তোমায় আরও বেশি করে ভালোবেসে ফেলতে!
ইচ্ছে করছে, অভিযোগের খাতা খুলে তোমায় নিয়ে অভিযোগ লিখে লিখে চিঠি আকারে খামে ভরে তোমার পড়ার টেবিলে রেখে দিয়ে আসতে!

আমার আবারও, বার বারই হাজারো উপায়ে শত ঢঙে শত রকমে তোমায় ভালোবাসতে... ভীষণ ইচ্ছে করছে!

হ্যাঁ, আমার ইচ্ছেগুলো তোমার বুকপকেটে রেখো। মাঝেমধ্যে কাজের ফাঁকে টুক করে পড়ে ফেলো তোমায় ঘিরে পূরণ না-হওয়া আমার সমস্ত ইচ্ছের কথা!

দুই। ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম। চেম্বারের বাইরে বসে হিসেব করছিলাম। আসলে আমার হিসেব করতে ভালো লাগে না, তা-ও আবার তোমায় নিয়ে! কারণ এখন যদি হিসেব করতে বসি, তাহলে দেখা যাবে, এখানে কিছুই নেই। যা ছিল, তা আমার; শুধু তুমিটাই আমার না।

এখন আমার যা, তার আবার হিসেব কী করে হয়!

তবুও সাহস করে হিসেবের পথে পা বাড়িয়ে দেখলাম। দেখি, তোমার আর আমার একসঙ্গে কাটানো তেমন কোনও মুহূর্ত নেই, কথার ফুলঝুড়িও নেই। আমাদের দু-জনের মধ্যে প্রেম, সম্পর্ক কিছুই নেই...

কাছে আসার পর ভেবেছিলাম, হয়তো আমাদের কোনও একটা মুহূর্ত থাকবে, যেটা মনে করে অনেক দিন পর্যন্ত ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা থেকে যাবে! 

খুঁজতে গিয়ে দেখি, আমাদের কাটানো কোনও মুহূর্ত‌ই নেই। না আছে সকাল, না আছে বিকেল। কোনও কথাও নেই আমাদের...তবে?

এইসব ভেবে ভেবে আমি আকাশ থেকে পড়লাম আজ! এই বয়সে এসে...আমার কাছে আর লেখার মতো শব্দ নেই। সরি!

ধন্যবাদ, কাছে এসে বুঝিয়ে দেবার জন্য যে আমি তোমার কেউ ন‌ই। এবং, আমার জন্য তোমার কাছে পাঁচমিনিট সময়ও নেই।

ধন্যবাদ।


তিন। আমার বিয়ে নিয়ে তেমন কোনও আগ্রহ কাজ করে না, মন থেকেই আসে না। আপনারা কীভাবে অপরিচিত কাউকে বললেই হুট করে বিয়ে করে ফেলেন, আমার মাথায় ধরেই না।

আমি নিজেকে বিয়ের জন্য কোনোভাবেই কনভিন্স করতে পারি না। আর সবচেয়ে বড়ো কথা, আমাদের সমাজে বিয়ে এখনও জলজ্যান্ত একটা প্রতারণার ফ্যাক্টরি।
অনেক অ্যারেঞ্জড ম্যারেজেই এখনও প্রতারণা হয়। আমি নিজেচোখে এটা দেখেছি। এগুলি আমার জন্য না।

আমি আরেকজন পুরুষকে (যে বিয়ে করে সংসার করতে চায়) সম্মান করি বিধায় তাকে বিয়ে করে সংসার করতে চাই না। আমি তো একজন অপরিচিত মানুষের জীবন বাঁচিয়ে দিচ্ছি।

কাউকে বিয়ের একমাস পরে যদি 'স্বামী, আপনাকে আমি স্বামী বলে মানতে পারছি না, আপনি আসলে স্ত্রীর মতন!', এটা বলে বিয়ে ভেঙে দিই, তবে এটা কি ভালো হবে? এটা কি তার জন্যই ক্ষতিকর হবে না? আমি তো নিজের কথা ভাবছি না, তার কথাই ভাবছি। তবুও কেন আমাকেই তিরস্কার করা হয় বিয়ে করতে রাজি না হবার অপরাধে?

চার। আপনাকে অপ্রাসঙ্গিক একটা কথা বলি। প্রায় ছয় মাস আগে এটা আমার মাথায় এসেছে। চেয়েছিলাম আপনাকে না বলতে, কিন্তু ভাবলাম, বলে দিই।

আপনার অবহেলায় কয়েক শত বার আমার মৃত্যু হয়েছে। আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি; এতটাই যে, নিজেকে নিজেই বুঝিয়েছি, আপনার এত্ত এত্ত অবহেলা পাবার পরও যদি আমি মানুষ হতে না পারি, তাহলে আর কখনোই আমার মানুষ হওয়া হবে না। আপনিই বলুন, কতটা কষ্ট পেলে মানুষ নিজেকে এভাবে বোঝায়?

আমি ঠিক করেছি, শেষ হয়ে যাব না, আরও অবহেলা নিয়ে তারপর যাব। হায়, মানুষ মানুষকে এতটাও তুচ্ছ করতে পারে!

আপনি আমার ঘর। আমি আমার নিজের ঘরেই আর ফিরতে পারব না, এটা মানতে পারি না আমি। কী দোষে আপনি আমাকে বের করে দিলেন, সেটাও জানতে পারলাম না। এইসব ভাবলে অসুস্থ হয়ে যাই, গত পরশু একপাতা ঘুমের ওষুধ খেয়েছি। নিজেকে নিজেই অনেক কষ্ট দিই।

আমি একদিন অবশ্যই চলে যাব। আপনি যতটা অবহেলা আমাকে করেছেন, ইতিহাস যদি লিখতে পারতাম, মানুষকে বোঝানো যেত যে, সেই অবহেলা কতটা ভয়ংকর। তবুও আমি নির্লজ্জের মতন বেঁচে আছি।

আমি বাঁচব। আপনার কাছে সব মানুষেরই কদর আছে, এক আমি বাদে। শুধু আমাকেই দেখতে ইচ্ছে করে না আপনার। আপনার কাছে অনেক অনেক অজুহাত! দরকার নেই অজুহাতের। দিলেও আমি আর বিশ্বাস করব না। অজুহাত আর লাগবে না, আমি জানি, আপনার আমাকে ভালো লাগে না।

আপনার চার বছরের এতসব অবহেলার কথা মনে পড়লে নিজেই নিজের গলা চেপে ধরি। আমি মরব না, বাঁচব। যদি মরে যাই, আত্মহত্যাই করে বসি যদি, ওরকম ভীতু হয়ে গেলেও আপনাকে দোষারোপ করব না, কিন্তু আপনি জেনে রাখবেন, আমার মৃত্যুর জন্য অন্য কয়েকটা কারণের সাথে সাথে অবশ্যই অবশ্যই অতিঅবশ্যই আপনিও সমানভাবে দায়ী!
আপনি আমার ঘর ভেঙে দিয়েছেন, আমার সব স্মৃতি আপনি কেড়ে নিয়েছেন, আমার থাকার জায়গা, আমার আশ্রয়ের জায়গা পুড়িয়ে দিয়েছেন আপনি। আমি যে কিছু আঁকড়ে বাঁচব, তা-ও কেড়ে নিয়েছেন আপনি।

ধন্যবাদ। পৃথিবীটা হয়তো এমনই। আপনারা এমনই হয়তো। যা করছেন, করে যান। আপনি একদম ঠিক করছেন!

পাঁচ। প্রিয় অনু,

তোমাকে লিখিনি অনেক দিন। আজ কিছু কথা বলছি। যদিও আমার ভীষণ জ্বর, তবু কথাগুলো আমাকে বলতেই হবে।

আমি চলে যাচ্ছি, অনু। আমাকে এবার অন্য কারুর হাত ধরতে হবে। তুমি তো হাতটা সরিয়ে ফেলেছ। খুব ভালো করেছ। তুমি ভালো থেকো তোমার মানুষটার হাত ধরে, আমি ভালো থাকব আমার নতুন মানুষটার হাত ধরে।

ভেবেছিলাম, তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে হয়তো একদিন মৃত্যু এসে যাবে। ঠিক সেসময়ই আমি একজোড়া নতুন হাতের সন্ধান পেয়েছি। যে হাত আমি চাইলেই ধরতে পারব, যে হাত আমাকে দেখতে আসার সময় তার হাতঘড়িটা খুলে রাখবে। যে হাত আমাদের একশহরে না থাকার অজুহাত দেবে না। সেই মানুষকে আমি খুঁজে পেয়েছি, যে আমাদের স্মৃতিগুলোকে 'সময়ের দাবি' বলে উড়িয়ে দেবে না। আমি চাইলেই যে মানুষটাকে একটু দেখতে পাবো, কাঁদতে পারব যাকে ধরে, আর যাকে ফোন করলে সে অন্তত ফোনটা ধরবে, কেটে দেবে না তোমার মতন।

আমি তো শুধু ওইটুকুই চেয়েছিলাম! অনেক বেশি চেয়ে ফেলেছিলাম, তাই না? আমাকে ক্ষমা করে দাও, আর হবে না। আমি আমার নতুন মানুষকে খুঁজে পেয়েছি। আমার আর তোমার 'সময়ের দাবি' শেষ হয়েই গেল শেষমেশ!

ভালো থেকো, অনু। আমার প্রিয় মানুষ, আমার মনের মানুষ, তুমি খুব ভালো থেকো।

বিদায়!


ভাবনা: নয়শো পাঁচ

………………………………………………………


এক। সুজাতা,

ভালো আছ নিশ্চয়ই।

প্রত্যেক বার কান্না ভুলতে আমি আনন্দ করি, গান গাই, তোমাকে চিঠি লিখি কিংবা কবিতা লিখি। তবুও কেন জানি না কিছুই ভুলতে পারি না। কেন পারি না বলো তো?

স্মৃতি বয়ে বেড়ানো কী যে ভয়ংকর যন্ত্রনার ব্যাপার, তা এর আগে কখনও টের পাইনি। আচ্ছা, তুমি কি এখনও ভেজামাটির সোঁদা ঘ্রাণ নিতে হুট করে গ্রামে ফিরে যাও? এখনও কি বাদামি রঙের প্রতিই তোমার সব দুর্বলতা? তুমি কি এখনও আগের মতন বাঁশি বাজাতে পারো?

আমার জানতে ইচ্ছে হয় তোমার কথা। তুমি পালিয়ে থাকতে চাও, তার হিসেব নাহয় আলাদা। কিন্তু আমি তোমাকে খুব করে খুঁজি। তুমি বড্ড আগেই চলে গেলে।

কত কত স্মৃতি তোমার-আমার মিষ্টি বিকেলগুলোর, ওসব তুমি কী করে ভুলে থাকতে পারো?

আজকাল কেমন আছ? শরীর কি এখনও খারাপ হয় ঘনঘন? না কি ওটা সেরে গেছে? এখনও কাউকে পাগলের মতন একটানা ফোন করেই যাও? ফোন পেয়ে কেউ বকে আমার মতন? না কি বকার ধরনটাও পালটে গেছে? আচ্ছা, তুমিও কি পালটে গেছ সময়ের মতন?

সব কিছু শেষ করেই দিলে? আমার যে তুমি ছাড়া আর কিছুই নেই, ছিল না কখনোই!

দুই। পরীক্ষা শুরু হয়েছে আমার।
পড়তে বসে কী যেন ভাবছিলাম।
আম্মু আর আমার কনভারসেশন:

: কী ভাবছিস পড়াশোনা বাদ দিয়ে?
(যেহেতু আমি অনেক অনেস্ট, তাই বলেই দিলাম)
: আম্মু, আমার মনে গান বাজতেছে 'তেরি টায় টায় ফিশ...'  
: কালকের পরীক্ষায় কী হবে, সেটার আলামত হচ্ছে এই গান।  

আমি কিছুক্ষণ আম্মুর দিকে তাকিয়ে ছিলাম।
কিছুক্ষণ পরে আম্মু আবার ডাকল।

: কী রে, আবার কই হারায়ে গেলি?
আ আ আ আ...বসন্ত বাতাসে সই গো...  
: থাম থাম! এই গলায় গান গাইস না, মা; কেউ শুনে ফেলবে! একটু থাম! বসন্ত না রে, তোর বিয়ের বাতাস লাগছে।
: মা, সব কিছুতেই কি তুমি বিয়া খুঁইজা পাও?
: বিয়াই তো...

আমি আর "বিয়ার প্যাঁচাল" নিতে না পেরে পড়ার রুমে পরীক্ষার রুটিন দেখতে গেলাম।
রুটিনে পরীক্ষার সাবজেক্ট দেখলাম ট্যাক্স অ্যান্ড অডিট। ভাবলাম, এত্ত বাজে সাবজেক্ট পড়লে কালকে পরীক্ষা দেবার মুডই আর থাকবে না!  তাই পড়ে সময় নষ্ট না করে আবার এসে টিভি অন করলাম।  

তো টিভি অন করতেই দেখি "কাঁচা বাদাম" গান বাজতেছে।

: হ্যাঁ, পড়া না শিখলেও এই গানটা ভালো করে শিখে রাখ। বাদাম বেচে খেতে পারবি।
: কী!!! কী বললা এইটা!
: কী আবার? বাদাম, বাদাম, কাঁচা বাদাম। হি হি হি।
আমি এবার জলদি চ্যানেল পালটে দিলাম।
এবার দেখি কোন বাংলা চ্যানেলে যেন শাবনুর-আলমগীরের "চার সতীনের ঘর" সিনেমার গান 'চার সতীনের ঘর রে, চার সতীনের ঘর' বাজতেছে,
আর চার সতীন হাত ধরাধরি করে নাচতেছে।  

দেখি, আম্মু এবার আরও জোরে হো হো করে হাসতেছে।
: কী সমস্যা, আম্মু? তুমি হুদাই হাসো কেন?
: শোন, ভালো করে শোন। এই গানই তো তোর ভবিষ্যৎ, মা। পরীক্ষার আগের দিন যে টিভি দেখে, তারও ভবিষ্যতে এইভাবে চার সতীনের ঘরেই যাওয়া লাগবে।  
: আম্মুউউউউ...


তিন। দিপু,

আমি চাই না আর কোনও পিছুটান, আর কোনও বারণ। আমি আর কোনও আবেগি মিথ্যাকে সত্যের উপর রাজত্ব করতে দেবো না। আমি আর ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখব না, আমাকে জেগে উঠতে হবে।

আমি আর কখনও হাসি দিয়ে কান্না আর কান্না দিয়ে হাসি লুকোতে যাব না। মানুষ সবসময়ই এই ভুলটা করে। আমি যেমন আছি, তেমনই থাকব, না-ইবা কেউ মেনে নিক। অন্যের হিসেবে চলতে চলতে আমি নিজের হিসেবের খাতাটা আর হারিয়ে ফেলতে চাই না। আমি এবার থেকে নতুন একটা ডায়েরিতে হিসেব করব। দুঃখের কথা লিখে লিখে ডায়েরিটা আমি আর লুকিয়ে রাখব না। সুখের কথাই লিখব, আর সেই ডায়েরিটা বাসার সবার চোখের সামনেই রাখব।

আমি সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলার সাহস জড়ো করব। ধীরে ধীরে আমার সব ভয় পালিয়ে যাচ্ছে। মৃত্যুর পরে আমার নামটা বদলে গিয়ে "লাশ" হয়ে যাবে, কেবলই এই ভয়টুকু আমি কাটিয়ে উঠতে পারছি না!

ইতি-
মণি

চার। আমরা জানি না, আমরা কে।
আমরা শুধু জানি, অন্যরা আমাদের কে ভাবে।
যদি জানতে পারতাম, আমরা কে, তবে আমাদের নিজস্ব পৃথিবীটা বদলে যেত।

পাঁচ। তুমি এতটা অবহেলা করতে পারো সিরিয়াসলি! তার সঙ্গে এতটা অপছন্দ‌ও...আমার সত্যিই ভীষণ ভীষণ অবাক লাগছে।
সত্যিকারের ভালোবাসা উপেক্ষা করার মতো শক্তি নাকি কারুরই নেই! আমার ভালোবাসা কি তবে মিথ্যা!

সবসময়ই তোমাকে আমার নিজেরই মতো খুব সাধারণ মানুষ বলে মনে হয়েছে, যে কারণে ভালোবাসতে পেরেছি।
কিন্তু এখন কেন জানি মনে হচ্ছে, তুমি বাকিদের বেলায় সাধারণ মানুষ হিসেবে থাকো, আর আমার বেলায় সেলিব্রিটি!

আমি সত্যিই গতকাল তোমার অপেক্ষায় ছিলাম। অথচ দেখলাম, সময় দেবার মতো অনেক মানুষ তোমার আছে!

আমি কখনোই তোমার কাছে হারিনি; প্রতি বারই নিজের ভালোবাসার কাছে হেরেছি। আজ বার বারই মনে হচ্ছে, এই জীবনের সবচেয়ে বেশি দামি জিনিস ভালোবাসাটা আমি এমন কাউকে বেসেছি, যে আমাকে প্রেমিকা দূরে থাক, মানুষই ভাবতে পারেনি আজ পর্যন্ত!

আমি এই ভোরবেলায়ও তোমাকে লিখতে বসতাম না, যদি না খুব বেশি অবাক হতাম! আমার চোখ দিয়ে সত্যিই জল পড়ছে এই সকালবেলায়, যেখানে আমার প্রতিটা সকালের শুরু হয় তোমার জন্য প্রার্থনা দিয়ে! 

৮টা বছর! ভাবতে পারো? ৮ বছরে কত-কী হয়? এই ৮ বছরে একটা দিনও কি ভুলতে পেরেছি তোমাকে? আমি ভুল করেছি, এটা যদি তুমিও বলো, আমি মেনে নেব না। এই বয়স তো ভুলের নয়, আবেগের নয়!

তবে এটা কী! সত্যি সত্যি এটা এমন কিছু, যেটা সত্যিকারের। তোমার কাছে সবসময়ই আমার লেখাগুলোকে শব্দ মনে হয়। আজ প্লিজ শব্দ আকারে না নিয়ে কারুর জীবনের সবচেয়ে সত্যিকারের একটা বিষয় হিসেবে দেখবে এই লেখাকে।

তুমি এত কঠোর কবে থেকে হতে শুরু করলে আমি বুঝতেই পারিনি। না, তুমি মোটেও কঠোর ন‌ও বাকিদের বেলায়! তবে হিসেবের খাতাটা আমার বেলায়ই খুলতে হলো? আমি যে হিসেবের খাতাই রাখিনি তোমার বেলায়!

তুমি চলে গেলে মারা যাব, তেমনটা কিন্তু নয়। কারণ প্রতিটা দিনই এই ৮ বছর তুমি আমার সঙ্গেই ছিলে... আমার মাঝে, তোমার শত না-চাওয়া সত্ত্বেও! তবে তুমি এই আমার এত কাছে থাকার পরও আমার সঙ্গে চোখের দেখাটাও করতে পারলে না; না, বাইরে কোথাও না, আমার বাসায়‌ও, এটাই অবাক লাগছে। তোমার মানুষটার জন্য সময় রেখেছিলে গতকাল, তাই তো? তুমি ভালোবেসো অন্য কাউকে, সমস্যা নেই, কিন্তু এই আমাকেই তুমি কণামাত্রও বুঝতে পারলে না?!

তুমি সবসময়ই তাদের পাশে রাখো, যারা তোমাকে শান্তিতে রাখে। কিন্তু তুমি তো কখনোই আমাকে রাখোনি পাশে যে আমি তোমাকে শান্তিতে রাখব! 

এক বার ভেবে দেখবে...!

ভোর ৫টা থেকে ভাবছি লিখব। কী লিখব, জানি না। কী বলতে হবে, তা-ও জানি না। তোমার ইনবক্সে নিশ্চয়ই এই লেখাটাও জাস্ট সিন করে ফেলে রাখবে। 

কারুর জীবনের প্রতিটা দিনে, প্রতিটা মুহূর্তে তুমি জড়িয়ে আছ, তুমি তাকে দূরের মানুষ ভাবার পরও!

এতটা নিঃস্বার্থভাবে ভালো এই প্রজন্মের কেউই...না বাসতে পারে, না বাসে!

তোমার হয়তো লাগেই না ভালোবাসা! কিন্তু যে মানুষটা তোমায় ভালোবেসেছে কোনও রকমের আশা না রেখেই, তারও যে ভালোবাসতে ভুলে যাবার কোনও উপায় নেই!

আমার সত্যিই কেমন যেন অচেনা লাগছে তোমাকে!

এক্সপেকটেশন রাখিনি ভালোবাসার মানুষটার কাছে, কিছু সময় চেয়েছিলাম মাত্র, যেটা দিতে...চাইলেই সে পারে! হ্যাঁ, এতটুকু আবদার তো করতেই পারি দীর্ঘদিনের পরিচয়ের খাতিরে...ভালোবাসার দাবিতে না হলেও!


ভাবনা: নয়শো ছয়

………………………………………………………


এক। The more people know you indeed, the fewer people help you in need.

দুই। ঠকতে চাইলে যে সবসময় মানুষকে বিশ্বাস করে টাকা ধার দিতেই হয়, তা নয়; কখনও কখনও ফুডপান্ডায় দামি দামি রেস্টুরেন্ট দেখে খাবার অর্ডার করলেও চলে। নাম-না-জানা দামি ফরেন আইটেম অর্ডার করেন যদি, তাহলে দেখবেন, হয়তো ৬০০ টাকা খরচ করে ৬ টাকার আলুসেদ্ধ পেয়ে বসে আছেন, যার উপরে একচিমটি চিকেন/মাটন/বিফ-এর কুচি ছিটানো!

কিছু ব্যবসায়ীকে দেখলে মনে হয়, তাঁদের পূর্বপুরুষেরা স্বনামধন্য ডাকাত ছিলেন। ডাকাতি করলে খারাপ দেখায়, তাই ব্যাবসা করেন।

তিন। অনেক মেয়েই, যাকে তার বিয়ে করার ইচ্ছে, সেই বয়ফ্রেন্ডকে কিছুই দেয় না; আর যাকে তার বিয়ে করার ইচ্ছে নেই, সেই বয়ফ্রেন্ডকে সবকিছুই দিয়ে বসে থাকে। যাকে সে বিয়ে করতে চায়, তার কাছে সে চরম ব্যক্তিত্ববোধ বজায় রাখে; আর যাকে সে বিয়ে করতে চায় না, তার কাছে সে নিজের তেমন কিছুই গোপন রাখে না।

চার। যখন তুমি বলো, আমি তোমাকে ভালোবাসি,
তখন আমি শুনি, বাঁশ খাওয়ার জন্য রেডি হ‌ও!

পাঁচ। আমাকে তোমার ভালো লাগে না?
অত প্রেশার নিয়ো না, বস! তোমাকে আমি চিনিও না!
বাই দ্য ওয়ে, ভালো না লাগলেও আমার ওয়ালে ঘুরঘুর করো কেন? কী করতে আসো এখানে? লেবু-চা বেচতে?  

ছয়। আপনার এবাদতটা আপনি ঠিকমতন করুন, আমারটা আমি ভালোই বুঝি।

(হুমায়ূন আহমেদের "বহুব্রীহি" নাটকের একটি সংলাপ)

সাত। কোন‌ও একজন বিশেষ কাউকে নিয়ে বলতে গিয়ে, কেউ একজন বলে ফেলল: তাকে তো আমি পাত্তাই দিই না...!

অথচ এই কথাটি বলার সময় এক বারও সে ভেবে দেখে না...সেই বিশেষ মানুষটার কাছে, তার পাত্তা দেওয়া বা না দেওয়ার কোন‌ও মূল্য আদৌ‌ আছে কি না...

যে আপনার পাত্তা দেওয়াটাকে গোনাতেই ধরে না, তাকেও 'পাত্তা দিই না' বলাটা...অবান্তর ও নিছকই হাস্যকর।

আট। আমার দুই বিবাহিত বান্ধবী ওইদিন অনেক বছর পর আমার বাসায় এসেছিল।

আম্মু আর আমার কনভারসেশন:

: দ্যাখ, রেহানা কী সুন্দর বিয়ে করে ফেলেছে! নাজিয়াও কী সুন্দর বিয়ে করে ফেলেছে! কপাল লাগে, বুঝলি? বেঁচে থাকা অবস্থায় মেয়ের জামাই দেখতে কপাল লাগে।
: শোনো, আমি যখন রেহানার বিয়েতে গিয়েছিলাম, তখন ওর জামাইকে দেখে জাস্ট অজ্ঞান হয়ে যাইনি!
: অ্যাঁ...এত হ্যান্ডসাম! আমাকে ছবি দেখা না, প্লিজ!
: এহ্, না! ওই ব্যাটা এত বয়স্ক যে, ব্যাটা যখন হাসল, তখন দেখি, মাড়িতে দুইটা দাঁত নাই। আমি বিয়েবাড়ি থেকে জাস্ট পালায়ে আসছি!  
: আ...হা হা হা! তুই পারিসও বটে! কিন্তু নাজিয়া...নাজিয়াও তো সুন্দর বিয়ে করেছে।
: মা, নাজিয়া যেই হারে সেই ছোটোবেলা থেকেই একটার পর একটা প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করা শুরু করেছে, আমিও এটা করলে তোমার কেমন লাগবে?  
: মানে? কয়টা বিয়ে ওর?
: এখন আপাতত দ্বিতীয়টা চলে। 
: মানুষের জীবনে দুটো বিয়ে থাকতেই পারে!
: হ্যাঁ, পারে। কিন্তু তুমি কি জানো, ওর দ্বিতীয় স্বামীর বাড়ির উঠান থেকে প্রথম স্বামীর কবর দেখা যায়?
: কীক্‌কীইইই...!!! কী বলিস এসব!!  
: হ্যাঁ, আমার জীবনে এরকম বহু বন্ধু আছে...আমার জীবনে এত ট্র্যাজেডি, যেটা জর্জ বার্নার্ড শ'র জীবনেও ছিল না!
: এই জজ-ব্যারিস্টার আবার কে রে? আমাকে বল, বলবি না, মা আমার?
: এটা আমার জামাই, ওনারও দাঁত নাই। তুমি খুশি? তুমি ওনাকে দেখায়ে বলতে পারবা, আমার মেয়ের জামাইটা এত্ত কচি না, ভাবি... এখনও দাঁত পড়ে!    

নয়। Staying a good person is not an easy thing.

দশ। কল্পনার জগতে হেঁটে হেঁটে যখন আমি লিখি, তখন আমাকে মাথায় রাখতে হয়, আমি যার হয়ে লিখছি বা আমি যাকে চরিত্র বানিয়ে লিখছি, সে লোকটা কীরকম করে ভাবে, কীরকম করে কথা বলে, কীরকম করে আচরণ করে। ওসব ভেবেই আমাকে লিখতে হয়। যখন আমি কোনও একটা ঘটনা নিয়ে লিখি, কোনও একটা পরিস্থিতি নিয়ে লিখি, কোনও একটা আবেগ নিয়ে লিখি, কোনও একটা অনুভূতি নিয়ে লিখি, তখন আমাকে পুরোপুরি সেটার মধ্যে ঢুকতে হয়। ঢুকে তারপর সেই জায়গা থেকে কথাগুলি লিখতে হয়। সেই কথাগুলি কিন্তু আমার নিজের কথা না। সে কথাগুলি ওই পরিস্থিতির কথা, ওই পরিস্থিতিতে যে মানুষটা আছে, সেই মানুষটার কথা।

কল্পনার বিষয়টা মানুষকে আনন্দে রাখে, সুখে রাখে। বাস্তবে মানুষ যা পায় না, সেরকম অনেক কিছু মানুষ কল্পনাতে পেতে পারে। সে বিষয়গুলো মানুষকে অনেক কিছুই পাইয়ে দেয়, মানুষকে ভালো রাখতে পারে! তাই এই বিষয়টাকে আমি খারাপভাবে দেখি না, বরং ভালোভাবেই দেখি। কল্পনার জগতটা অনেক সুন্দর, অনেক মনোরম। এবং একটা মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাপনের যে গ্লানি, যে যন্ত্রণা, যে ক্লান্তি, সেটাকে ভুলে থাকার জন্য বা সেটা থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার জন্য কল্পনার জগতটা অনেক হেল্প করে, মানুষকে অনেকটুকুই এগিয়ে নেয়। এটা আমি মনে করি।

যারা লেখে বা যারা সৃষ্টিশীল মানুষ, তারা ছাড়া সাধারণ মানুষও নিজেকে কল্পনার জগতে নিয়ে গিয়ে অনেক কিছুই পেতে পারে, যা যা সে পেতে চায়, যা যা পেলে তার জীবনযাপনটা একটু হলেও সহজ হবে, একটু হলেও স্বস্তিকর হবে। এগুলো আসলেই পাওয়া সম্ভব। তাই একে আমি খুবই পজিটিভলি দেখি। এমনকী, আমরা যা-কিছু জানি, আমরা যা-কিছুর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি, আমরা যা-কিছু শিখেছি, সেটার চাইতেও কল্পনাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ! যে কল্পনা আমাকে বাঁচিয়ে রাখে, যে কল্পনা আমাকে আমার কাজগুলো করতে দেয়, যে কল্পনা আমাকে আমার জীবনটাকে ঠিকভাবে সাজিয়ে তুলতে দেয়, সেইসব কল্পনা নিঃসন্দেহে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।


ভাবনা: নয়শো সাত
………………………………………………………


এক। আপনি আমাকে সাইলেন্ট ট্রিটমেন্টে রেখে দিচ্ছেন। জবাব দেবেন না কিছুরই, শুধু সিন করে ইনবক্সে সমস্ত মেসেজ ফেলে রাখবেন।

আচ্ছা, রাখুন। কিচ্ছু বলব না আর। যা যা করতে ভালো লাগে, করুন। সময় দেবেন না, দেখা করবেন না, উত্তর দেবেন না, ফোন রিসিভ করবেন না…এমন কেন করছেন, আপনি ভেবে দেখবেন এক বার, প্লিজ!

আমার অপরাধ কি খুব গুরুতর? মানুষ খুন করার মতো জঘন্য অপরাধ কি আমি করেছি?

আপনি তো জানেনই, আপনি আমার কাছে বরাবরই জিতেই থাকেন…তবে কেন জিততে চান?

আমার শব্দরা আপনার নীরবতার কাছে এসে চুপ করে সরে যেতে চায়! আপনিই দায়ী এর জন্য!

আমার শব্দরা তখনই কথা বলবে, যখন আপনি আপনার নীরবতা ভেঙে শব্দ হয়ে আসবেন।

আসি তবে…বাই!

যদি হান্ড্রেডের মধ্যে টেন পার্সেন্টও তুমি দিতে, তবে তার বিনিময়ে আমি থাউজেন্ড পার্সেন্ট ফেরত দিয়ে দিতাম! আমার জন্য যদি কেউ নদীতে পায়ের পাতাও ভেজায়, আমি তার জন্য গলা অবধি পানিতে ডুবে যাই!

দরকার নেই তোমার কথা বলার! মুখে পান আর হাতে মেহেদি দিয়ে রেখো, সুন্দর লাগবে অনেক। আরও একটা বাহানা পাবে তখন!

তোমার সঙ্গে এইবার সত্যিই আমার আর কোনও কথা নেই।

অনেক ঘণ্টা পর মেসেজ দিচ্ছি। সিন করা, উত্তর দেওয়া সবই তোমার বিষয়। আমি শেষ বারের মতো একটা কথাই বলব, তুমি আমায় বুঝলে না। চেয়েছিলাম, একটু হলেও বোঝো। হলো না কিছুই!
সময়ও চেয়েছিলাম এবং তার সঙ্গে তোমার ব্যবহার-করা কোনও একটা জিনিস। কিছুই পেলাম না!

শোনো, অভিযোগ থাকবে কিছু, যতদিন ভালোবাসা থাকে! ভালোবাসা শেষ যেদিন, সেদিন অভিযোগও শেষ। এই সামান্য কথাটা বুঝতে গেলে তোমাকে নিশ্চয়ই রকেট-সায়েন্টিস্ট হতে হবে না!

আর শোনো, শেষ এক বার দেখা করো, প্লিজ! এটা আমার আবদার। না, ভালোবাসতে বলছি না, শুধুই দেখা করতে বলছি।

দেখা করলেই যে ভালোবেসে ফেলতে বলব, এরকম ছোটো মন নিয়ে আমি চলি না।
আমি খুউব ভালো করে জানি, এই শহরেরই অন্য কাউকে তুমি দেখতে চাও এবং দেখাও করো। কিন্তু আমি যে শহরেই যাই না কেন, শুধু তোমায় ভেবেই সময় এবং বছর কাটিয়ে দিই।

এ-ই হচ্ছে আমাদের দু-জনের মধ্যে পার্থক্য।

উপসংহারে চলে আসি। যদি দেখা করতে না চাও, তবে আমাদের আর কোনও দিনই যোগাযোগ হবে না। দেখা না করলে সবই শেষ করে দেবো, সাঙ্গ হবে এই একতরফা ভালোবাসার।

পুনশ্চ। লিখতে বসে দেখি, কিছু অভিযোগ চলে এসেছে। দেখে হাসি পেল! যে ভালোবাসা নিভু অবস্থায়, সেখানে আজও আগুনের ধোঁয়া দেখা যায়! তুমি অভিযোগ হিসেবে নিয়ো না।

বার বার বলতেও হবে না যে আপনি আমাকে ভালোবাসেন না! আমি খুব ভালো করেই এটা জানি। এবং সবচাইতে বড়ো কথা, এটা জেনেই ভালো আমি বেসেছিলাম!

আমার প্রতিটা শব্দের বিনিময়ে তুমি নীরবতা ছুড়ে দিয়েছ। তুমি কখনও আমার নীরবতার উত্তরে কি শব্দ ছুড়ে দেবে?

দুই। কিচ্ছু ভালো লাগছে না। তুমি প্লিজ আমার মন ভালো হবার কারণ হয়ে যাও!

তোমাকে অনেক কিছু লিখতে গিয়ে কেন জানি আজকে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমি জানি, আমার তুমি ছাড়া আর কেউ নেই কথা বলার মতো এবং আমি এ-ও জানি, আমার জন্য তোমার সময় নেই। তবুও কেন জানি না...এক তুমি ছাড়া আর কারও সঙ্গেই আমার কিছু বলতে ভালো লাগে না।

আমি এ-ও জানি, আমাদের আজীবন যোগাযোগ থাকবে না। তবুও তোমার কাছেই আজীবনের জন্য সবচাইতে দামি কিছু জমা রেখে দিতে কেন জানি না ইচ্ছে করছে ভীষণ। আমি লিখছি আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছি।

আমি তোমার কাছ থেকে কোনও কিছুর আশা মনে রাখি না। আল্লাহর কসম করে বলছি, আর্থিক বা অন্যান্য সাহায্য-সহযোগিতা, এমন কোনও কিছুরই আশা করে আমি তোমার সঙ্গে মিশি না এবং তুমি যে আমাকে দেখতেই পারো না, সেটাও মাথায় রেখে ভালোবাসি।

আমি সত্যিই জানি না, তোমাকে কী লিখছি! আজ কোনও ভালোবাসার কথাও লিখছি না। আমি ব্যক্তি তুমি এবং আমি, আর আমাদের দীর্ঘদিনের পরিচয় এবং যে সম্পর্ক, তার সাথে জড়িত কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছি।

আমার ইচ্ছে করছে, তোমার সঙ্গে বাইরে কোথাও বসে কিছু কথা বলি, যা খুব ব্যক্তিগত।

সত্যিই আমি জানি না, তোমাকে কেন এত কিছু লিখছি।

তুমি আমাকে অনেক পেছনে ফেলে চলে এলেও আমি কখনোই তোমাকে এড়িয়ে সামনে যাবার সাহস রাখি না।

আমার তোমার বিপক্ষে অভিযোগ থাকলেও কখনোই আমি মন থেকে মানি না, তুমি খারাপ! কিছু অভিযোগকে বিরক্তিকর হিসেবে নিয়ো না। বুঝে নিয়ো, সেটা অভিযোগ না, বরং ভালোবাসার মানুষটার প্রতি সামান্য একটু আশা, যেটা আমাদের নিজের অজান্তেই মনের ভেতর জেগে উঠে।
তুমি আমাকে ভিড়ের মধ্যে সময় দেবার চাইতে বরং এমন কাউকেই সময়টা দিয়ো, যে মানুষটা এক তোমাকেই তার জীবনের সবচেয়ে বেশি কাছের এবং প্রিয় মানুষ ভাবে। যে মানুষটা তোমার জন্য পথ চেয়ে বসে থাকে, তাকে কখনও বলতে যেয়ো না, রাস্তায় অনেক ভিড়!

প্রিয়, তুমি ছাড়া বেঁচে থাকা যায়?
আমার কথা তোমায় বোঝানোর বলো আছে কি কোনও উপায়?

তিন। আপনি একবার বলেছিলেন, যুক্তি দিয়ে জীবন চলে না! যদি তা-ই হয়, তবে বলি, আপনি নিজেও কিন্তু আপনার জন্য কিছু নিয়ম তৈরি করে বা মাথায় রেখে সেগুলো মেনে চলেন। সত্যিই কি সবসময়ই নিয়ম মানা যায়? কখনোই কি অনিয়ম হয় না?

না কি আপনি শুধুই আমার বেলায় নিয়ম, নীতি ঠিকভাবে পালন করেন?

যা করতে আপনার মন চায়নি, সেটার জন্য যে আমি আপনাকে প্রেশার দিই, তেমনটা কিন্তু নয়।

দেখা করার কথা বলি কেন, জানেন? আমি কোথায় যাই ঠিক থাকে না। আপনার সঙ্গে, এমনও হতে পারে, আজীবন আর দেখাই হলো না!

হ্যাঁ, এটাকে প্রেশার বলতে পারেন, তবে আকাশের চাঁদ চাওয়ার মতো কিছু তো আর নয়!

আপনি ইচ্ছে করলেই পারেন। এর জন্য যে আমায় ভালোবাসতে হবে, তেমনটা কিন্তু নয়।

ঘৃণা করেন, বুঝি সেটা। কিন্তু আমার জানামতে, আমি আপনার কোনও ক্ষতি কখনোই করিনি। তবে কেন আমাকে সীমানা দেখান?

আমার ভীষণ তাড়াহুড়ো। কখন আবার ঢাকা যাই, গেলে আর আসা হবে না কয়েক মাসের আগে। তাই আপনাকে আমি বার বারই বলি... দেখা করুন, দেখা করুন।

এই যে এখনও বলব...আপনাকে খুব খুব করে চাইছি আবারও দেখতে।


ভাবনা: নয়শো আট
………………………………………………………


এক। অনেক দিন পর লিখছি তোমাকে; তোমার পোস্ট পড়েই।

আমার কখনোই আফসোস ছিল না...তুমি কোনও দিনই আমাকে ভালোবাসতে পারোনি বা পারবে না, এইসব ভেবে!

আমি শুধুই সময় চেয়েছিলাম। ঠিক আছে, সেটাও আর চাইব না এখন।

বিরক্ত করি না, তোমার সময় নষ্ট করি না। তাই ধরেই নিয়েছি, ভালোই আছ। অবশ্য তোমার যত্ন নেবার অনেক লোক আছে, এমনকী এই শহরেও আছে। থাকুক তারা।

আজ অভিযোগ, আবদার কিংবা পুরোনো কোনও কথা বলব না। আজ নতুন কিছু বলি। তুমি সবসময়ই সবার কাছে জানতে চাও, কী লাগবে? আজ আমিই জানতে চাইছি, তোমার কী লাগবে? আমার সামর্থ্যের ভেতর যদি থাকে, দেবো অবশ্যই। সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে আমি কখনও পা ফেলি না।

লোকজনের কাছে চাওয়ার বা হাত পাতার অভ্যাস আমার নেই। আমি শুধু তোমার কাছেই চেয়েছিলাম একটুখানি সময়। বলেছিলাম, সময় না দিলে যোগাযোগও হবে না। হ্যাঁ, সত্যিই যোগাযোগ আর হবেও না আগের মতো। তুমি তোমার মতো করে থাকবে, আমিও থাকব আমার মতো করে।

আমাদের মধ্যে যেহেতু কিছুই নেই, সেখানে এতটা সময় নিয়ে কীভাবে থেকেছি, সেটা এক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না।
হয়তো পত্র লিখতে গেলেও কেউ কেউ লিখে ফেলে কারুর সঙ্গে কাটানো মুহূর্ত, সকাল, বিকাল অথবা মুঠোফোনের কিছু মুহূর্তের কথা; অথচ আমাদের ভেতর কিছুই ছিল না, শুধুই একটা জিনিসই ছিল, যা হচ্ছে ভালোবাসা।

এই ভালোবাসাটাও এক আমার পক্ষ থেকে, সেইজন্য‌ই মনে হয় এতটা সময় ধরে এই থেকে যাওয়া আমার। তোমাকে বলেছিলাম, যেদিন সমস্ত অভিযোগ শেষ হয়ে যাবে, বুঝবে, সেদিন আর ভালোবাসা নেই।

আজ আর কোনও অভিযোগ নেই; হ্যাঁ, ভালোবাসাও নেই। এখন অনেক শান্তিতে থাকি এবং তোমাকেও শান্তিতে রাখি, ঠিক যেমন শান্তি তুমি চেয়েছিলে।
ভালোবাসা জোর করে পাবার জিনিস নয়, তবে হ্যাঁ, সময় জিনিসটা কিন্তু আমরা যদি কাউকে ভালো না-ও বাসি, তবুও দেওয়া যায়। আমি দিইও। ব্যস্ততা থাকে না প্রিয় মানুষের বেলায়, যেমন ধরো, তোমার জন্য এই আট বছর শুধু সময় রেখে দিয়েছি।

আচ্ছা, যা-ই হোক, বাদ দাও। অনেক সময় দেখা যায় কী জানো, অতিথিপাখির যত্ন নিতে গিয়ে ঘরের পোষাপাখিটাকেই আমরা দূরে ঠেলে দিই! ব্যাপার না!

আসলে আমার কোনও কথা নেই। আর কী কী বলব বা কী কী লিখব, সেটাও জানা নেই!

দুই। যে-কোন‌ও সম্পর্কে একটা স্পেসের প্রয়োজন হয়। এই স্পেস মানে যে মানুষটাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া বা ভুলে যাওয়া, সেটা কিন্তু নয়। আমি খুব করে চাই সকালে, বিকেলে এবং রাতে তোমার খোঁজ নিতে, ফোন দিতে এবং তোমাকে দেখতেও খুব যে ইচ্ছে করে, সেটা তোমার চাইতে ভালো আর কেউ জানে না।

আমি আমার ইচ্ছেগুলোর পায়ে শেকল পরাই। একটা মানুষকে মিনিমাম স্পেসটুকু দিতে হয়, তারও একটা জগৎ আছে, এই ভাবনা মাথায় রেখে।

ঘরের যে আসবাবপত্র, তা যদি তুমি স্পেস দিয়ে না রেখে সব একসাথে হিজিবিজি করে রাখো, তবে সেটা কি সুন্দর দেখায়? কিংবা তোমার চলাচলে কি বিঘ্ন ঘটায় না?

চিঠি যখন লিখো, তখন শব্দগুলো কি সব একসাথে দলা পাকানোর মতো করে লিখো...হিজিবিজি করে? না কি পর পর দুটো শব্দের মাঝে মিনিমাম গ্যাপটুকু দিয়ে লিখো? গ্যাপ বা স্পেস দিয়েই লিখো নিশ্চয়ই।

শব্দ, আসবাবপত্র বা যে-কোন‌ও জিনিস যেমন স্পেস থাকায় দেখতে সুন্দর লাগে এবং এই স্পেসটা থাকা দরকার, ঠিক সেইরকম মানুষের জন্যও কিছুটা দূরত্ব লাগে বা তাকে একটু স্পেস দিয়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয়।

তুমি প্রায়ই ভাবতে পারো, আমি তোমায় কম ভালোবাসি। এটা ঠিক না বেঠিক, সেটা নিয়ে কিছু বলব না। আমি চাই, আমার ভালোবাসা তোমার গলার কাঁটা হবার চাইতে বরং তোমার শান্তির কারণ হোক, তোমার ভালোলাগার কারণ হোক, তোমার মুখের হাসির কারণ হোক; দিনশেষে রাতে যখন ঘুমাতে যাবে, তখন যেন মনে হয়, আমার ভালোবাসা তোমার মাথার নিচে থাকা ওই বালিশটা, যেখানে তুমি প্রায়শই মাথা রেখে শান্তিতে ঘুমাও, আমার ভালোবাসা দিনশেষে তোমার শান্তিতে ঘুমাবার একটা অন্যতম কারণ হোক।

আকাশে উড়তে থাকো। আকাশটা যেন আমার হয়, সেটাও বলছি না। তার চাইতে বরং চাইছি, শান্তিতেই আকাশে উড়তে থাকো।

আমি স্রোতে গা ভাসিয়ে তোমায় ভালোবাসতে চাইছি না; চাইছি, ঠিক আমার মতন করে এবং তোমাকে অনেকটা বুঝে, তোমার জন্য সকল ভালো কিছু ভেবে ভালোবাসতে। তুমি হয়তো বলবে, এইরকম করে সবাই ভালোবাসে। হুম বাসে, কিন্তু সবাই সবার নিজের দিকটা আগে চিন্তা করে। আর আমি সবার আগে তোমারটা ভেবে তারপর নিজেরটা ভাবি।

তোমাকে খুব বেশি পড়তে চাইছি না; চাইছি, কিছু চ্যাপ্টার না পড়েও প্রচণ্ডভাবে ভালোবাসতে।

তোমাকে ভালোবাসার পর থেকে আমার কাছে পৃথিবীর সকল কিছুই সুন্দর লাগে, অসুন্দর বলে কোনও কিছু নেই আমার কাছে।

তোমায় ভালোবাসি, এটা বলার আগে আমার মাথায় থাকে, তোমায় আমি কতটা ভালো রাখতে পারি।

প্রিয়, যদি সম্ভব হয়, তুমি আমায় না, আমার ভালোবাসাটাকে একটু করে বুঝে নিয়ো, আমায় নাহয় না-ইবা বুঝলে!

তিন। যারা আমাকে নিজেদের সঙ্গে স্বর্গে নেবার জন্য টানাহেঁচড়া করে, তাদের দেখি আর ভাবি, এইসব চিড়িয়ার সঙ্গে স্বর্গে থাকার চাইতে নরকে থাকাই তো স্বস্তির! আপনার পথে আমাকে হাঁটতে যে অমন টানাটানি করেন, তা দেখে আমি প্রায়‌ই ভাবি, ওই পথে হাঁটার মানেই তো স্বর্গে যাবার মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানির এজেন্ট হ‌ওয়া! পরক্ষণেই আপনার কাছ থেকে দৌড়ে পালাই! ডেসটিনি কোম্পানির কথা মনে পড়ে যায়...বেচারারা বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে বড়োলোক বানানোর চেষ্টা করতে করতে নিজেরা আজ‌ও থেকে গেল রাস্তার রাজা।

চার। আপনার ফ্রেন্ড এবং ফলোয়ারদের লিস্টে...মাত্র টোয়েন্টি পার্সেন্ট মানুষ আপনার হেইটার।

তবে বাকি এইটি পার্সেন্ট মানুষের মধ্যে মাত্র টু পার্সেন্ট আপনার পক্ষে কথা বলবে, তা-ও যদি আপনি খুব সৌভাগ্যবান হন। আর ওই টোয়েন্টি পার্সেন্টের মধ্যে এইটি পার্সেন্ট মানুষই সারাক্ষণ আপনার পেছনে লেগে থাকবে।

অকাজের লোকেরা বরাবরই ঐক্যবদ্ধ ও সরব।
কাজের লোকেরা বরাবরই স্বার্থপর ও নীরব।


ভাবনা: নয়শো নয়
………………………………………………………


এক। সত্য সুন্দর, তবে সুন্দর সবসময় সত্য না-ও হতে পারে। তুমি মাঝেমধ্যে বলো, আমার ভালোবাসা তোমাকে অশান্তিতে রাখে। তখন প্রশ্নবিদ্ধ হয় আমার ভালোবাসা, আমি না!

ভালোবাসা তো সত্যের মতো সুন্দর। যে সুন্দরের কথা তুমি বলো, ভালোবাসায় সেই সৌন্দর্য থাকে। তবে অনেকসময় লক্ষ করলে দেখবে, সত্যিকারের ভালোবাসায় অভিযোগ, মানঅভিমান, রাগ এই বিষয়গুলো ভালোবাসার মতন তীব্রভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকে। কেন, জানো?

কারণ ওই যে ভালোবাসা এখানে তীব্র, তাই। আবার যে ভালোবাসায় রাগ, অভিযোগ, অভিমান এই সমস্ত কিছুই নেই, সেখানে ধরে নিয়ো, যিনি ভালোবাসছেন, তিনি অনেক কৌশল করে ভালোবেসে যাচ্ছেন।

একটা মানুষ কখনোই তোমার সঙ্গে রাগ দেখাবে না, অভিমান করবে না কিংবা অভিযোগও করবে না, এমনটা তো হয় না! এমনটা তখনই হবে, যখন সে তোমার সব কিছু লক্ষ করে কৌশলে থাকছে তোমার সঙ্গে, কিন্তু ভালোবাসছে না মন থেকে।
আমি মনের ভেতর তোমার জন্য অভিযোগের চাইতেও বেশি করে ভালোবাসা রাখি। মন খুলে দেখাব? তুমি হয়তো হাসছ আমার কথা পড়ে। কিন্তু এটাই সত্যি।

মুখে যা-ই বলি, তা রাগ থেকে বলি, কিন্তু অন্তরে ভালোবাসাটা লালন করি।
আমি তোমার পাশে কাউকে সহ্য করতে পারি না। এটাকে যদি তুমি সমস্যা হিসেবে দেখো, তবে তা-ই! কী করব, বলো? তুমি যে আমাকে ভালোই বাসো না, সেটা মেনে নিয়েও তো আমি তোমাকে ভালোবাসি। তবে তুমি কেন বুঝতে চাও না যে, তীব্র ভালোবাসায় ভালোবাসার মানুষটার পাশে কাউকেই সহ্য করা যায় না!

দেখতে দেখতে বেলা অনেক হলো, এখন আমরা বোধ হয় দু-জন দু-জনকে সহ্য করা শিখে গেছি।

এভাবে সহ্য করে পাশে থেকে যায় কারা, জানো? যাদের কাছে প্রিয়জনের দোষের চাইতেও প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা গুরুত্ব পায় বেশি, তারাই।

দুই। শবেবরাতের রাতে কী কী চাইব স্রষ্টার কাছে তোমার জন্য, ভাবছি। ভেবে দেখলাম, সকল ভালো কিছুই তোমার হোক, তোমার মনের সকল নেক আশা তিনি কবুল করুন, তোমাকে সুস্থতার সঙ্গে তিনি এই দুনিয়ায় রাখুক, তোমার চলার পথ যেন সুন্দর এবং মসৃণ হয়।

সকল সুন্দর এবং ভালো কিছুই যেন তোমার সাথে হয়।তোমার কষ্ট, গোপন বা প্রকাশিত; তোমার করা অন্যায়, যদি হয়ে থাকে, সেটা থেকে যেন তিনি তোমাকে মুক্তি দেন।

আসলে তোমার জন্য চাইতে বসলে ফর্দ আরও লম্বা হবে।

আমি নাছোড়বান্দা এই বেলায়। আমার চাইতেও যেন তুমি ভালো থাকো, সেই দোয়াই করি আজ এই রজনীতে। সকল ভালো কিছু যেন তোমার সাথে হয় বা ঘটে।

আমি মাঝেমধ্যে হারিয়ে যাই কেন, জানো? এই যে অবহেলা করে ইনবক্সেও রাখো, তাই। আসলে তুমি আমাকে কোথাও রাখোনি।

খুব অল্পতেই খুশি-হওয়া মানুষ আমি, তুমি সেটাই বুঝলে না!

পবিত্র এই রাতে তোমাকে আমার জীবনে ভুল করেও চাইছি না। তার চেয়ে বরং চাইব, যার সঙ্গে কথা বললে তোমার ভালো লাগে, যার উপস্থিতি তোমার ভালো লাগে, তার সঙ্গেই থেকো।

আমি দূরে সরে থাকি দেখে ভেবো না, খুব কম ভালোবাসতাম তোমায়। স্রষ্টার কসম করে বলছি, তোমাকে তোমার মতো থাকতে দিয়ে যেই ভালোটা বাসি, সেটা এক জনও পারবে না। মরে গেলেও পারবে না আর কেউ। আমি অবশ্যই ব্যতিক্রম এবং তোমায় ভালোবাসি বলেই তোমার মতো করে থাকতে দিই।

ইবাদত আর ভালোবাসা নাকি গোপনেই শ্রেয়। এতকাল বলিনি কিছুই। যখন বলতে লাগলাম, তুমি বললে, আমার ভালোবাসা নাকি মনোযোগ আকর্ষণের জন্য!

এই যে মাত্রই জায়নামাজে বসেও তোমার জন্য চাইতে ভুলিনি।

আচ্ছা, বলো তো, না-ও যদি বলতাম, তবুও কি বুঝতে আমার ভালোবাসা...সত্যিই?

তিন। যা-কিছু আমি অনুভব করি,
তা-কিছু সত্য, না কি কেবলই ভ্রান্তি---
আমার দিক থেকে,
এইসব মাথায় না এনেই বলছি,
খুব সম্ভবত, আমি তোমায় খুব ভালোবাসি
এবং আমি চাই না, হৃদয়ের এই অনুভূতিকে
কোনও প্রশ্নবোধক চিহ্নের মধ্যে রাখতে।

তোমার মনে হতেই পারে,
আমার হৃদয় বলতে কিছু নেই।
আমি জানি, তা আছে; এ-ও জানি,
হৃদয়ের মধ্যে ঘটছে যা যা,
তার সবটুকু মিলে
খুব চমৎকার একটা গল্পের প্লট হতে পারে।


চার। একটা সময় পর, ইনবক্সে নক দেবো না আর কোনও দিনই। অভিযোগ আর সময় চাওয়া নিয়ে যে শব্দগুলো খরচ করে করে তোমার কাছে অপরাধী হয়ে আছি, সেই সমস্ত কিছু থেকেই একটা সময় তোমার আমার ছুটি মিলবে।

সময় নেই, তবুও সেই সময়ের ভেতর থেকেও সবার আগে তোমার জন্য সময় রেখেছি। আমার আর তোমার দু-জনের মধ্যে কোনও স্মৃতি নেই, তাই হয়তো ইতি টানতে খুব একটা কষ্ট হবে না!

ইতি টানার কথাই-বা আসছে কেন! এইভাবে যদি প্রশ্ন আসে তোমার মনে, তবে বলতে হয়, যা-কিছু আমার ছিল, শুধু তা নিয়ে একতরফাভাবেই আমি চলে এসেছি এতদূর।

আমি তো মানুষ! কখনোবা হাঁপিয়েও তো উঠতে পারি এই একলা চলায়। কখনও ইচ্ছে করেই বন্ধ করে দিতে পারি এই একতরফা যত কিছু।

আমি এত কিছু ভাবি না। ভাবতে গেলে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে যায়। প্রতিটি দিনই সমান না গেলেও বেশিরভাগ সময়ই আনন্দ খুঁজে নিয়ে বেঁচে-থাকা মানুষ আমি।

কাল যা হবে দেখা যাবে। সামনে যা আসে মোকাবেলা করে চলা যাবে, শুধু তোমার সঙ্গে আমার কখনও থেকে যাওয়া হবে না।

থাকবে না কোনও স্মৃতি! মন খারাপ করে বসে থাকলেও বলা হয়নি আজ‌ও, পাশে এসে বসবে কিছুক্ষণ? তোমায় দেখতে চেয়েও বার বারই খারাপ হয়েছি তোমার চোখে, অথচ দেখতে চাইতামই শুধু তোমায়!

বড়ো হয়ে গেলে অনেক কিছু মেনে নিতে হয়? এটাই বলবে তো? আচ্ছা, বড়ো হয়ে গেলে কেন ভালোবাসাও রয়ে যায় এমন কারুর প্রতি, যে চায়ই না বা বুঝেই না ভালোবাসা আমার? উত্তরটা দাও!

তোমায় নিয়ে অনেক কিছু ভেবে ভেবে আজকাল ভাবনার জগতে ঢুকতে পর্যন্ত ভয় হয়!
ভালোবেসেছিলাম এক তোমাকেই...এখন এর চাইতে বেশি আর তেমন কিছুই জানি না।

পাঁচ। আমার পৃথিবীতে একান্ত নিজের বলে কেউ নেই, এটা জেনেও বেঁচে থাকা যায়, কিন্তু আমার পৃথিবীতে আমার চারপাশের মানুষগুলো সবাই যার যার সুযোগ আর স্বার্থ বুঝে নিতে ব্যস্ত, সবার‌ই আড়ালে একটা মুখোশ আছে, এইসব জেনে গেলে বেঁচে থাকতে আর ইচ্ছে হয় না। জীবনের সব লক্ষ্য ঝাপসা হয়ে আসে। এমন অবস্থায় মানুষের বেঁচে থাকার কোনও উদ্দেশ্য অবশিষ্ট থাকে না। আমি কীজন্য বেঁচে থাকব, বেঁচে থেকে বেঁচে থাকার সময়টুকু আমি কী করে কাটাব, এইসব কারণও যখন হারিয়ে যায়, তখন জীবন খুব সস্তা হয়ে যায় নিজের‌ই কাছে।

ভাবনা: নয়শো দশ
………………………………………………………


এক। ছেলেরা: আগে শান্তি, পরে ভালোবাসা।
মেয়েরা: আগে ভালোবাসা, পরেও ভালোবাসা।
ছেলেরা: তাহলে শান্তি...?
মেয়েরা: তোমাকে ভালোবাসতে বাসতে ওটা নিয়ে ভাবার সময়ই পাই না!
ছেলেরা: অ্যাঁ...! কিন্তু আমি যে শান্তি চাই!
মেয়েরা: আমি শুধু তোমাকেই চাই! তার জন্য যদি অশান্তি দিতে হয় তো দেবো; যদি অশান্তি নিতে হয় তো নেবো!
ছেলেরা: আম্মুউউউ...আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম...

দুই। আমি: ভালোবাসতে চাও? না কি ভালোবাসা পেতে চাও?
সে: ভালোবাসতে চাই।
আমি: শান্তির সঙ্গে থাকতে দেবে তো আমায়?
সে: শান্তিটা কে আবার? এই মেয়ে কবে থেকে এল তোমার জীবনে? যাও, থাকো গিয়ে তার সঙ্গে! ছিঃ! চরিত্র এত খারাপ তোমার!

তিন। তোমার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে হঠাৎ করেই, আমি তোমার কাছ থেকে ভালোবাসা চাই, না কি তোমাকে ভালোবাসতে চাই! প্রশ্নটা জটিল না, কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন!

উত্তরটা দিই। শোনো, আমি কখনোই চাইনি, তুমি আমাকে ভালোবাসো বা তোমার কাছ থেকে আমি ভালোবাসা পাই। আমি চেয়েছি, আমিই যেন তোমায় ভালোবেসে যেতে পারি অনেকটা সময় নিয়ে।

ফ্লেক্সিলোডের দোকানে রিচার্জের কার্ড দেখেছ কখনও? সেই কার্ডে বোনাস থাকে এবং নির্দিষ্ট একটা সময় পরে সেই বোনাসটা আর ব্যবহার করা যাবে না। শর্ত উল্লেখ থাকে যে, এক বারই মাত্র ব্যবহার করা যাবে বোনাস।

ভালোবাসা কেবলই বাড়তি বোনাস যদি তুমি বলো, তবে আমি তোমার কথার উত্তরে বলব, হ্যাঁ, রিচার্জ কার্ডের মতোই তা এক বার যেমন ব্যবহার করা যায়, তেমনি ভালো শুধু একজনকেই বাসা যায়, সবাইকে না।

জনে জনে ভালোবাসা নয়,
জনে জনে টাইমপাস হয়।

যে ভালোবাসা যত গভীর,
সে ভালোবাসা তত কঠিন।

ভালোবাসায় থাকেও যদি দূরত্ব,
তবুও মনে কেবল এক জনেরই রাজত্ব।

ছেড়ে যাবার যখন হাজারো বাহানা,
কাছে থাকার তখন‌ও চলে লাখো দোটানা।

জীবনটা যান্ত্রিক, তবে বিকল নয়, নিশ্চিত।
তোমায় ছাড়া বেঁচে থাকা যায় ঠিক‌ই,
তবে তোমার মতো করেই কাউকে ভালোবাসা দেওয়াটা একদমই অনিশ্চিত।

চার। আমি তোমায় নিয়ে লিখব, সেটা কী নিয়ে লিখব, এটাও ভাবতে হয় আজকাল। যেমন ধরো, তোমাকে পছন্দ করে, তুমি এমন কাউকে ফোন করেছ নিজে থেকে। এখন তোমার ফোন পাবার পর সে তো ভীষণ খুশি! সেই খুশিতে সে কবিতাও লিখে ফেলতে পারবে!

তুমি দেখা করেছ ওরকম কার‌ও সঙ্গে নিজে থেকেই; এখন এই দেখা করা নিয়ে সে অনেকগুলো গল্পও লিখে ফেলতে পারবে। তোমার তাকানো, তোমার কথাবলা আরও কত-কী!

ধরো, কাউকে নিয়ে ঘুরতে গেলে খুব সুন্দর একটা জায়গায়। তখন সেই মানুষটা কী করতে পারে... সেইসব কিছু নিয়েই সে সুন্দর সুন্দর কথা বা পত্র লিখে তোমার মন ভালো করে দিতে পারে।

যার কাছে তুমি তোমার সারাদিনের সমস্ত কথা জমা রাখো, সে-ও তোমায় নিয়ে অনেক কিছুই লিখে ফেলতে পারবে। তুমি হয়তো খুব খুশি হবে এ ভেবে যে, ইস্, মেয়েটা কত্ত ভালো জানে আমায়! অথচ তুমিই তোমার সমস্ত কিছুই তাকে জানার সুযোগ করে দিয়েছ। তা না হলে কীভাবে জানল সে তোমায়?

এর কিছুই আমার সাথে হয়নি! আফসোস!

আমার যা হয়েছিল, তার পুরোটাই একতরফা। আমার লেখাও তাই বাস্তবতা এবং তোমায় ঘিরেই সমস্তটা!

আমাদের কোনও স্মৃতি নেই, কাটানো কোনও মুহূর্ত নেই, সকাল কিংবা বিকেল নেই।

এত বছর পর একটু সময় চেয়েছিলাম, সেটাও তোমার কৃপণ মন দিতে নারাজ!

আচ্ছা, শান্তি যে চাও আমার কাছে কিংবা তোমায় শান্তি দিতে যে বলো, যে গাছে ভুলেও তুমি জল দাওনি, সে গাছের কাছ থেকে শান্তির মতো মিষ্টি ফল কী করে আশা করো?!

প্রশ্ন রেখে গেলাম।

পাঁচ। প্রিয়, ওই যে ওইবার বাসায় এলে, গলির মাথায় দাঁড়িয়ে বলেছিলে, আবার যখন আসবে, তখন শুধু আমার ওই গিফটটা নিয়ে আসবে। মনে আছে তোমার? ওই যে ওইটা...তোমার ব্যবহার-করা কোনও জিনিস!

তুমি বলেছিলে, পরের বার সঙ্গে করে নিয়ে আসবে। আমি মাথা নিচু করে শুনেছিলাম তোমার কথা। আমি মনে মনে তখন ভাবছিলাম, একে তো প্রিয় মানুষ, এর কাছ থেকে সময় পাওয়া মানেই বড়ো উপহার, আবার তার ব্যবহার-করা জিনিস...এ তো বিশাল কিছু! ডায়মন্ড, প্লাটিনামের গহনা দিলেও আমি এত খুশি হব না; তার চেয়ে বরং যদি তুমি আমায় সময় দাও, তবে সেটাই সবচেয়ে দামি উপহার আমার জন্য।

প্রিয়, তুমি সামনে থাকলে আমার মাথা নিচু করে থাকতে হয় কিংবা চোখ নিচে নামিয়ে কথা বলতে হয়। তুমি দেখেছ বিষয়টা? না, মনে হয়।

তুমি পাশে থাকো যদি, আমার কাছে তখন মনে হয়, চুপ করে শুধু তোমায় শুনি। তুমি চোখে চোখ রাখো যখন, তখন আমার খুব বলতে ইচ্ছে করে...প্লিজ, চোখ দিয়ে আমায় বন্দি করে রাখো, কথায় নয়!

তুমি পাশে থাকো যখন, তখন সময়কে আমার খুব করে বলতে ইচ্ছে করে...সময় আরও আস্তেধীরে চলো, আমার ভালোবাসা এসেছে আমার কাছে।

প্রিয়, তুমি ছাড়া বেঁচে থাকতে তুমিই আমাকে শিখিয়েছ। তোমার দেওয়া আঘাত সহ্য করে তোমাকে পাগলের মতো করে ভালোবাসতেও শিখিয়েছ এবং তোমার সমস্ত রাগ কীভাবে হজম করে ফেলতে হয়, সেটাও ভালো করে আমাকে তুমি অভ্যাস করিয়ে ছাড়িয়েছ।

প্রিয়, এই যে এত কিছু, তবুও বলবে, আমি তোমার কেউ হই না?

আমি তোমার কেউ না হলেও তুমি আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ এই দুনিয়ার।

তুমি পাশে থাকলে আমার মনে হয়, পৃথিবী এখনও অনেক সুন্দর। তুমি থেকে যাও না আমার হয়ে, কেউ জানবে না শুধুই তুমি আমি ছাড়া! 
তোমার কাছে আমার আবারও একটা আবদার...যদি জনাবের মর্জি হয় দিতে...প্রিয়, যদি পারো, কিছুটা সময় দিয়ো!

গভীর রাত ইবাদত কবুলের সময়। ইবাদতে স্বার্থপরের মতো তোমায় চাইছি না। নিঃস্বার্থভাবে ভালোবেসে তোমার জন্য সকল ভালো কিছু চাইছি আর তোমার কাছে চাইছি কিছুটা সময়।

কেমনটা লাগে বলো তো, বহু ঘণ্টা অপেক্ষা করে থাকার পরও টেক্সট দেখো না যখন! বহু বছর অপেক্ষা করে থাকার পরও দেখা দাও না যখন!

প্রিয়, একটা কথা বলি? পরকীয়া করার কথা বলছি না তো! তোমাকে আমি ভালোবাসি। সেই ২০১৪ থেকে, যখন তুমি একা ছিলে, মানে আনম্যারিড। এখন বলো, এক বার কাউকে ভালোবাসলে বন্ধ কি করে দিতে হয়? আছে কোনও নিয়ম? আমার জানা নেই।

যা জানা আছে, ততটুকু দূরত্ব এবং ভদ্রতা বজায় রেখেই আমি চলেছি।

এতটুকু সময়ও তোমার হয় না আমার জন্য! আর চাইবও না সময়। বলবও না কেন মেসেজ সিন করো না!

অনেকটা সময় ধরে বলছি...এখন কেমন যেন লাগে নিজেকে। অথচ এই তুমিটাকে ভালোবেসেই আমি নিজেকে অনেক ভালো রাখতে জানতাম।

তুমি বড্ড পাষাণ আমার বেলায়! অভিযোগ করতে আসব না আর। আমার কিচ্ছুই লাগে না, নেবোও না তোমার কাছ থেকে কিছু।

কোনও একটা শব্দ খরচ না করে, কোনও একটা ফোনকল না দিয়ে কী অদ্ভুতভাবে হৃদয়ে ভালোবাসা তৈরি করে ছাড়লেন...তা-ও আপনার জন্য!

বলুন, এর চাইতেও নিঃস্বার্থ ভালোবাসা হয় কখনও?

চোখের আড়াল হলেই নাকি মনের আড়াল! সত্যিই কি তা-ই?
আমার বেলায় তো তা নয়! আপনি চোখের সামনে না থেকেও খুব শক্তভাবে মনে গেঁথে থাকেন, যেন আমার মনে খুঁটি গেড়ে বসেছেন।

চোখ দিয়ে বেঁধে রাখি না আপনাকে, কিন্তু হৃদয়ে রেখে দিই।
 
আচ্ছা, আপনি এমন কেন! না, মানে খারাপ না, তবে কেমন যেন! মনে হয়, আপনার সকল জেদ‌ এক আমার সাথেই!

আচ্ছা, জেদ, রাগ, বকা, ঝাড়ি সব মাথা পেতে নেবো। তার আগে আপনার বুকে মাথা রাখতে দিন তো! কত কান্না জমে আছে! সেই খেয়াল আছে আপনার?

ওমা, লজ্জা কেন থাকবে আপনার বুকে মাথা রাখতে? আপনি তো আমার ভালোবাসা। এখানে তো সবচেয়ে সুন্দর যে জিনিস, সেটাই...মানে ভালোবাসা আছে।

এই যে মশাই! নীরবতা শেষ করুন, কথায় বন্দি হতে চাইছি এবার।

বার বার আসি বলে যায় যারা,
একদিন তাদের সত্যিই আর হয় না ফেরা।

ভালোবাসার মানুষটাকে দেখার যে ভীষণ তেষ্টা, 
সেটা মুখে বলার পরও বোঝে না যে,
তার সঙ্গে না থাকুক যোগাযোগের আর চেষ্টা!

নীরবতা দূরত্ব বাড়ায়,
তাতে যে-কোন‌ও মানুষই...
সহজে হারায়!