সবুজ কৌটোয় হৃদয়-কড়চা/৫

মেয়েরা সাধারণত, সরাসরি কথাকে নিতে পারে না। একই কথাটিকেই একটু ঘুরিয়েপেঁচিয়ে ইনিয়েবিনিয়ে অন্যভাবে কৌশলে বলতে পারলে কাজ হয়ে যায়। মেয়েরা মুখে যা-ই বলুক না কেন, ওরা অকপটতা সহ্য করতে পারে না। মেয়েরা বড্ড ছেলেমানুষি। মেয়েদের কাছে প্রিয় হতে চাইলে কথার মধ্যে মিথ্যের প্রলেপ থাকতেই হবে। তাই, মেয়েদের পছন্দের তালিকায় এক নম্বরে আছে ভণ্ডরা। মেয়েদের কাছে ভণ্ডরাই প্রকৃত প্রেমিক। বেশিরভাগ মেয়েই প্রতারিত হওয়ার জন্মগত প্রতিভাসম্পন্ন হয়ে থাকে। মেয়েরা মনোগত ভালোবাসা পেতে হিপোক্রিসিকে প্রশ্রয় দেয়, আর ছেলেরা দেহগত ভালোবাসা পেতে হিপোক্রিসির আশ্রয় নেয়। এই একবিংশ শতকে ভালোবাসার আয়ু কতক্ষণ? মেয়েদের মানসিক প্রয়োজন আর ছেলেদের দৈহিক প্রয়োজন ফুরোনোর আগ পর্যন্তই ভালোবাসার আয়ু! হ্যাঁ, ব্যতিক্রমও আছে। ওরকম যারা, তাদেরকে ঠকানো কঠিন। আমি তো মনোগত ভালোবাসা না পেয়েও তোমাকে নিয়ে ভেবেই যাচ্ছি। আমি কী চাই? আমি তোমাকে ভুলতে চাই। আর পারছি না এই অসহ্য ভালোবাসা বইতে। কীভাবে ভুলবো? কখন? তোমার বিয়ে হয়ে গেলে? পারব? প্লিজ বিয়ে কোরো না। এভাবেই থাক। ভেবো না, আমাকে করবে না বলে বিয়ে করতে বারণ করছি। তুমি আমার নও, হবেও না আমার, ঠিক আছে। তবে তুমি এখনও কারও হওনি, এটা ভাবতে পারাটাও অনেক শান্তির ব্যাপার! আমি চাই, আজীবন এই শান্তিতে বাঁচতে। কী অদ্ভুত আমি! একটু আগে তোমার মেয়ে নিয়ে এতোএতো চিন্তা করে ফেললাম, আর এখন চাইছি, তুমি বিয়েই না কর! বিয়ে ছাড়া তোমার মেয়ে আসবে কোত্থেকে? আজব, অতিঅতি আজব! দেখেছ, কী ছিরি আমার ভাবনার!

আসলে কী জানো, অনেককিছুই বলতে মন চাচ্ছে। মন চাচ্ছে, চট করে ফোন করে তোমার ঘুমটা ভাঙিয়ে দিই, মেজাজটা খারাপ করে দিই, সকালটা তেতো করে দিই। কিন্তু সে অধিকার যে আমার নেই! একবার কল দিলে যদি কেটে দাও, আমি আর পরেরবার ফোন দিই না। হাজারবার মন চাইলেও দিই না। মনে ভয়, যদি আমাকে ঘৃণা করে ফেল! ভালোবাস না, তবে ঘৃণাও কর না আমাকে, এটা আমি নিশ্চিত জানি। কিন্তু বিরক্তবোধ তো কর। আমি তোমার বিরক্তির কারণও হতে চাই না। আমি তো তোমার কিছুই হতে চাই না। তবে কেন এতো কথা লিখছি? আমি কি তবে শুধুই ভালোবাসতে চাই? আমার ভালোবাসার কথা আমি বলতেও চাই না। তবে কী চাই আমি? ভালোবাসতে চাই, অথচ ভালোবাসা না পেলেও চলবে, এমনকিছু? অবশ্য, একাএকা ভালোবাসার মজাই আলাদা। ইচ্ছেমত মনের মধ্যে মনের যেকোনও প্রকোষ্ঠে রেখেরেখে মনের মানুষের সাথে খেলা করা যায়। আমি যে তোমাকে নিয়ে কত খেলি, তা তুমি ধারণাও করতে পারবে না। আমার মাঝেমাঝে মনে হয়, স্পিচ দেয়ার সময় এই যে তুমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা টানা দাঁড়িয়ে কথা কথা বলে যাও, এতো সময় কথা বলা শেষ করে অনর্গল হাসতেই থাক ছবি তোলার সময়ে, এটা কীভাবে কর আসলে? আমি অনুভব করতে পারি, তোমার হাত, পা আর মুখটা যে কত ব্যথা করে। বাসায় ফিরে এসে যখন বালিশে মাথাটা একটু রাখ, তখন শুয়েশুয়ে তোমার মনে হয়, কেউ যদি তোমার পা-টা একটু টিপে দিত, মাথাটা টিপে দিত, মুখটা ম্যাসাজ করে দিত। বুকে হাত দিয়ে বলতো, একটু আরাম লাগছে? হয় না তোমার এমন অনুভূতি? আমার তখন মনে হয়, আহা, ওই সময়টাতে যদি আমাকে তোমার পাশে পাঠিয়ে দেয়া হতো কোনও এক অলৌকিক শক্তিতে, তবে আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, আমিই তোমার জন্য সবচাইতে নিরাপদ আর আরামের আশ্রয় হয়ে যেতে পারতাম। এবং, আমি তোমাকে বিশ্বাস করিয়ে ফেলতাম যে, এরপর সারাদিন কথা বললেও আর সমস্যা নেই, দিনশেষে তোমার জন্য একটু শান্তি আর স্বস্তি নিয়ে আমি বসে আছি।

যেদিন তোমার কোনও মোটিভেশনাল সেমিনার থাকে, সেদিন আমিও মনে হয়, ওখানেই থাকি। সারাদিনই ভাবি, এখন বোধহয় তুমি এটা বলছ, ওটা বলছ, এভাবে করে হাসছ ঝলমল শব্দে। আর গভীর রাতে মনে হয়, ইসস! তুমি কী ক্লান্তটাই না হয়ে আছ! মনেমনে একাএকা বলি, “এসো না, মাথাটা একটু টিপে দিই। এসো, ঘাড় থেকে সমস্ত চাপটা নামিয়ে দিই, সারাদিনই তো মাইক্রোফোনটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলে। ঘাড় আর মাথাটা জ্যাম হয়ে গেছে না? আমি সব ঠিক করে দেবো, তুমি শুধু চোখটা বন্ধ করে থাক।” হয়তো ওইসময়ের মধ্যে ক্লান্তির ভারে তোমার এক ঘুমও হয়ে গেছে, অথচ চিন্তার ভারে আমার ঘুম নেই। আমি যে কী অদ্ভুত এক ধরনের সমত্ব অনুভব করি তোমার জন্য, সেটা বলে বোঝাতে পারবো না। তোমার কাছে থাকলে আমিই তোমাকে পৃথিবীর সব রিলাক্সেশন এনে দিতাম। একদিন অনুষ্ঠান শেষ করেই পরেরদিন অফিসের জন্য গাড়িতে উঠেই দৌড় দাও। আমি তো ভাবলেও শিউরে উঠি। আমি প্রার্থনা করি, “প্রভু, মানুষটা যেন ঠিকমতো পৌঁছয়। যেন অসুস্থ না হয়ে পড়ে।” তোমার জন্য কত মানুষ যে প্রার্থনা করে, সে খবর তুমি কোনওদিনই পাবে না। অনুরোধ করছি, এতো স্ট্রেস নিয়ো না। বয়সটা তো বাড়ছে, কমছে না। কেউ তো পাশে নেই যে একটু কেয়ার করবে। মাঝেমাঝে মনে হয়, একটু যত্ন পাওয়ার জন্য হলেও মানুষটার বিয়ে করা উচিত। এতো পরিশ্রম করো, যত্ন পেতে তো ইচ্ছে করেই, না? আমি তো আর পারবো না কিছু করতে, তাই আমি যত কষ্টই পাই না কেন, আমি চাই, কেউ আসুক তোমার জীবনে। কেউ এসে তোমার সব দায়িত্ব বুঝে নিক। তোমাকে একটু স্বস্তির হাসি হাসতে দেখি।

আজ তো শুক্রবার। কই আছ? রাজশাহীতেই? ইসস! এগারো মিনিট আগেই অ্যাক্টিভ ছিলে। কী আজব! কই তুমি? আজ অন্তত একটু পড়েপড়ে ঘুমাও। এতো সকালে রোজই উঠতে হবে নাকি? আর উঠেই ফেসবুক? চোখ খোলার দেরি, লগইন করতে দেরি নেই। এতো কী আছে এতে, শুনি? অসহ্য! তুমি অসহ্য, তোমার ফেসবুক অসহ্য, তোমার ঢঙ্গী প্রেমিকারা অসহ্য! এই দেখো, আবার অ্যাক্টিভ! বিশ্বাস করো, সবসময়ই চ্যাটলিস্ট খুলে বসে থাকি তোমাকে স্পাইইং করার জন্য। তুমি কখন আস, কখন চলে যাও, কোনদিন, কোন সময়ে, কতক্ষণ থাক, সবকিছুই আমার মুখস্থ। মেয়েদের মাছির মতো হাজার চোখ থাকে আর আমার আছে হাজার মাছির চোখ। আমাকে এড়াবে, সাধ্য কী তোমার? এই দেখ, অ্যাক্টিভ নাউ। ইচ্ছে করছে, খুব জোরে একটা ধমক দিয়ে বলি, এই সাতসকালে কেন উঠেছ ঘুম থেকে? কী কাজ তোমার? ফেসবুকিং? চ্যাটিং? ফ্লার্টিং? কেউ বসে থাকে তোমার আশায় চ্যাটরুমে? ঘুমাও কতক্ষণ তুমি? খুব বেশিক্ষণ ঘুমাও বলে তো মনে হয় না। তোমার ওই বালের সিক্স-আওয়ার প্রিন্সিপল মানতে হবে নাকি এখনও? এখন এতো কম কেন ঘুমাতে হবে তোমাকে? আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখো তো! কী খেয়েছ রাতে? এতো সকালসকাল যে উঠলে, খিদে পায়নি? কী খাবে এখন? নাকি, না খেয়েই আবার ঘুমাবে? উফফ! আমি যে এদিকে টেনশন করে মরে যাচ্ছি, তুমি ওদিকে কী কর? কোনও খবর রাখ? কীভাবে জানবে? আমি তো আর তোমার মাথাতেই নেই। অথচ দেখ, সেই যে কবে ফালতু প্যাঁচাল শুরু করেছি, এখনও থামছি না। কী করে থামব, তাও বুঝতে পারছি না। শুধু জানি, তোমাকে চোখেচোখে রাখতে হবে। যতটুকু পারি, যেভাবেই পারি। তোমার খোঁজ নিতে হবে, তোমার খোঁজ রাখতে হবে। যত বিরক্তই হও না কেন, ওসব করা আমি ছাড়তে পারবো না। কিছু তো অন্তত করতে দাও আমায়, তোমার খোঁজখবরই তো নিচ্ছি, এইটুকুই, আর কিছুই তো করছি না। তুমি ভাল আছ শুনে একটু হলেও ভাল থাকতে পারি। ওটা করতে দিয়ো, বারণ করো না করতে, অতোটুকু নিষ্ঠুর হয়ো না কখনওই। বড্ডো বেশিই ফিল করি তোমাকে। যদি তোমার মধ্যে ঢুকে যেতে পারতাম একবার! ভয় পেয়ো না, আমি আবার ঠিকই বের হয়ে আসতাম, কারণ আমি জানি, সেখানে থাকার কোনও যোগ্যতাই আমার নেই। তবুও কেন যে মন এতো এতো অসম্ভবের দিকেই কেন ছোটে, কে জানে? ভাল থেকো, প্লিজ! খুব ভাল থেকো। অনেকঅনেক ভালোবাসি তোমায়।

ভালোবাসার নানান রূপছটা এঁকেছি। দেখবে? দেখো।

স্পর্শহীন ভালোবাসা। ছায়াহীন ভালোবাসা। বিবর্ণ ভালোবাসা। বর্ণহীন ভালোবাসা। শব্দহীন ভালোবাসা। ফ্যাকাসে ভালোবাসা। রঙচটা ভালোবাসা। রঙধনুর অপছায়া। ভালোবাসার সাতরঙ নয়, ভালোবাসার শূন্যরঙ। রঙহীন ভালোবাসা। অচল ভালোবাসা। অব্যক্ত ভালোবাসা। অস্পষ্ট ভালোবাসা। অসম্পূর্ণ ভালোবাসা। অদেখা ভালোবাসা। অনুভূতিহীন ভালোবাসা। অর্থহীন ভালোবাসা। মরীচিকা ভালোবাসা। আলোহীন ভালোবাসা। অশ্রুসিক্ত ভালোবাসা। অজানা ভালোবাসা। অদ্ভুত ভালোবাসা। অন্ধ, অপ্রাপ্ত, অপ্রাপ্য, অথর্ব ভালোবাসা।

আমার সকল না-বলা না-শোনা না-বোঝা ভালোবাসা।

……………শুধুই তুমি।

ভালোবাসার রঙগুলি কেন জানি ফিকে হয়ে যাচ্ছে। কী অদ্ভুত, না? একাএকাই ভালোবেসে যাচ্ছি, একাএকাই কষ্ট পাচ্ছি, আবার এখন একাএকাই ভুলে যাচ্ছি! আচ্ছা, ভুলে কি যাচ্ছি আদৌ? কী হবে মনে করে, মনে রেখে? কাকে মনে রাখবো? যে আমাকে জানতেই চায় না, চায়নি কখনওই, তাকে? সে কোথায় আছে, কী করে, কী খাচ্ছে, কই থাকছে, কীভাবে থাকছে, কিছুই তো আমার জানা নেই, তবুও সারাটিক্ষণই তাকেই ভাবি। তাহলে আর ভুললাম কখন? এটা কি ভালোবাসা, নাকি স্রেফ মনে রাখা? কী এটা? তাকে যদি একটুও কাছে পেতাম, আঁকড়ে ধরে রাখতাম। কিন্তু সে আশা যে নিছকই গুড়েবালি। আমি কী করবো তাহলে? কতদূর যাবো এ অদৃশ্য বোঝা কাঁধে নিয়ে? মানুষটার জন্য কেন যে এমন করছি! দুনিয়াতে কি সেলিব্রেটির অভাব ছিল? আচ্ছা, আমি তো আর দশটা মেয়ের মতো সেলিব্রিটি-ফ্রিক না, তাহলে কেন তার জন্য ফ্রিকি হয়ে গেলাম? নাকি, সে অন্যদের মতো না বলেই তাকে ভালোবেসে ফেলেছি? নাকি, ওকে ভালোবেসে ফেলেছি বলেই ওকে অনন্য মনে হচ্ছে? আর ওকেও তো হাজারহাজার মেয়ে চায়, তবুও কেন আমি ওকেই ভালোবাসি? আমি যে সহ্যও করতে পারছি না! কী করা যায়? ঈশ্বরকে খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে, যাদেরকে এ পৃথিবীতে শুধুই ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই পাঠানো হয়েছে, তাদেরকে কীকরে ভালোবাসতে হয়? কী উপায়ে ভালোবাসলে পরে ওরাও ভালোবাসে? এতো কষ্ট হয়, তারপরও ভুলতে পারি না। ভোলাই তো সম্ভব নয় মনে হয়। কতদিন এভাবে মনে রাখতে পারবো? ওকে রোজই দেখি, রোজই নতুন লাগে। রোজই একই প্যাঁচাল পাড়ে, তাও একই প্যাঁচাল রোজই ভাল লাগে। ঠিক যেমনি একটাই বউ কিংবা বর, রোজই দেখতে ভাল লাগে, নতুননতুন রূপে আবিষ্কার করতে ইচ্ছে করে। একটাই তো মা, একটাই তো বাবা, তাও তো পুরনো বাবা হয় না, পুরনো মা হয় না। ভালোবাসা তাই একটাই।

এতোএতো ক্রাশ আমার, ওদের জন্য যা ছিল, তা ছিল মূলত মোহ, এই প্রথমবারের মতো ভালোবাসার সাথে দেখা হয়ে গেল, আর আমি ওতেই কাঙাল হয়ে গেলাম। অন্যদের কারও কথাই একটুও ভাবি না, ভাবতে ইচ্ছে পর্যন্ত করে না। অথচ কী অখণ্ড মনোযোগ দিয়ে মানুষটার লেখাগুলি পড়ি, মেসেজ পড়ি, পুরনো কথাগুলিই ইউটিউবে বারবার শুনি, একটুও পুরনো লাগে না, ক্লান্ত হয়ে উঠি না, ওর প্রোফাইল ঘাঁটি, পুরনো পোস্ট আর ছবি কতবার যে দেখে ফেলি ও যদি একটুখানিও বুঝত আমার পাগলামির কথা, সারাদিনই ওর সাথে কাটাই আমার মতো করে, আমার প্রাণের দেবতা ও, ওকে নৈবেদ্য দিই আমার হৃদয়ের সবটুকু ঐশ্বর্য দিয়ে। যদি এর ৫% মনোযোগও পড়াশোনায় দিতাম, ডিপার্টমেন্টের ফার্স্ট গার্ল হতাম আমি। ফেসবুকে এখন আর কারও কিছু ভাল লাগে না। ওর অর্থহীন এক লাইনও জীবনানন্দের সবচাইতে সুন্দর কবিতার চাইতে বেশি চিত্ররূপময় হয়ে ধরা দেয় আমার হৃদয়ে। বাকি সব লেখাকেই ওর লেখার কাছে ষাঁড়-অসার লাগে। কেন জানি না মনে হয়, এখন এ পৃথিবীতে ও ছাড়া আর কেউই ভাল লেখে না। কত শত পোস্ট না পড়েপড়ে এড়িয়ে গিয়ে গিয়ে স্ক্রল করতে থাকি। ওর কোনও পোস্ট পেলেই হয়! ওটাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পোস্টমর্টেম করতে থাকি। ও যা কল্পনাতেও আনেনি, সেটাও আমার মনের মধ্যেথাকা ওকে দিয়ে ভাবিয়ে ফেলি। ও তো আমার মনের মধ্যেই আছে, আমার ইচ্ছেমত ভাবিয়ে নিলে কী এমন অসুবিধে? আমার ভেতরের ‘ও’ বাইরের ‘ও’র চাইতে অনেক বেশিই ভাল। আমার ওয়াল তো ওর পোস্ট দিয়ে ভরিয়ে রাখি সবসময়ই, সবকটাই ‘অনলি মি’ করে দেয়া। লুকিয়েলুকিয়ে আর কতদিন এমন করবো, কে জানে! আমি কি কোনওদিনই ক্লান্ত হবো না? আমার ক্লান্তি কি তবে আস্তেআস্তে চলে যাচ্ছে আমার মধ্য থেকে? কই, পড়তে বসলেই তো ঘুম পেয়ে যায়! অথচ ওকে নিয়ে পড়ে থাকলে আমি হয়তো কয়েক শতাব্দী না ঘুমিয়েই দিব্যি কাটিয়ে দিতে পারবো! ক্লান্তি ব্যাপারটাই আপেক্ষিক, অতএব, মানসিক। আমি কখন ওকে নিয়ে সব পাগলামি করা বন্ধ করে দেবো? ওর বিয়ে হয়ে গেলে? আসলে কী করবো তখন?

কী করছ? প্রোগ্রামে? সকাল থেকে ঠায় দাঁড়িয়েদাঁড়িয়ে কথা বলছ? আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি তোমাকে। সবাই তোমার দিকে তাকিয়ে আছে, না? তুমি কি মনেমনে কোনও সুন্দর মেয়ে খুঁজছ? সোয়া দুইটা বাজে। খেয়েছ কিছু? জানো, তোমার কোনও ক্যারিয়ার আড্ডা চলাকালীন আমার কী মনে হয়? মনে হয়, এই বুঝি পেয়ে গেলে, পেয়ে গেলে কোনও অপরূপা, কোনও প্রেমিকা, একটা বউ, একেবারেই তোমার মনের মতো। কোনও সুন্দরী এসে অটোগ্রাফ চাইবে, সেলফি তুলবে তোমার সাথে, আর তোমার মনে ঝড় তুলে দিয়ে চলে যাবে। ব্যস হয়ে গেল! কাহিনী খতম! তুমি এরপর এক ছুটে চলে যাবে প্রেম নিবেদন করতে। ও রাজি হয়ে যাবে। অথবা সে-ই তোমায় প্রেম নিবেদন করতে ছুটে আসবে, আর তুমি হ্যাঁ বলে দেবে। সত্যিই বলবে?? হায় ঈশ্বর! ওরকম যেন ভুলেও না হয়! এসব চিন্তা করেকরে মাথাটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আমার। বুকটা মুচড়ে আসে, আছড়ে পড়ে অসহায় ঢেউয়ের মতো। কেন যে এতো কষ্ট পাচ্ছি! কাল যে ছবিটা দিলে না, একগাদা দাড়িওয়ালা মুখ, তবু সে কী সুন্দর হাসি! উফ! এক মুহূর্তের জন্যও ওই চেহারা সরাতে পারছি না চোখ থেকে। তুমি তোমার চোখজোড়া দিয়ে মানুষ খুন করে ফেলতে পারো। কোনও মেয়ে একটা ছেলের জন্য এতোটাই পাগল হয়? বিশ্বাস করো, যেসব মেয়ে ছেলেদের জন্য পাগল হয়, আমি একসময় ওদেরকে মানসিকভাবে অসুস্থ ভাবতাম। কত নাটক-সিনেমার নায়ক-গায়কদের জন্য মেয়েরা হুদাই কাঁদে, হাত কাটে, পা ছিঁড়ে। আমার না আগে মাথায়ই ঢুকত না কেন ওরা ওসব করে। আমি ভাবতাম, মেয়েরা কেন এমন করবে, এসব তো ছেলেরা করে! বিশ্বাস করো, এই আমার জন্যও যে কত ছেলে এমন করেছে, তার ঠিক নেই। এখন আমি ভাবি, ওরাও কি আমাকে নিয়ে এমনভাবেই ফিল করতো? আসলে নিজে এ অবস্থার মধ্য দিয়ে না গেলে কেউ বুঝতে পারে না, আরেকজন তার জন্য কেমন ফিল করে। আমিও কি না জেনে ওদেরকে কষ্ট দিয়েছি? তাই কি সে কষ্টগুলি ফেরত এসেছে আমার জীবনে? বিশ্বাস করো, আমি ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি। আমি তোমার জন্য হাত-পা কাটছি না, ঘুমের ওষুধ খাচ্ছি না, কিছুই করছি না। যা হচ্ছে, তার সবই আমার ভেতরে। ওটা আরও বেশি কষ্টের। না যায় বলা, না যায় সওয়া।

আমার অনুভূতিগুলো আমার ভেতরে কষ্টের মশাল জ্বালিয়ে আমাকে দগ্ধ করছে, পুড়িয়ে মারছে, আমার নিঃশ্বাসটাকে বেঁধে রাখছে। আমার বুকের ঠিক মাঝখানটায় ওরা আমাকে ক্রমাগত আঘাত করে যাচ্ছে, কী দিয়ে, আমি জানি না। আমি ব্যথা পাচ্ছি না, কিন্তু এতো যন্ত্রণা হচ্ছে, মনে হচ্ছে, এখনই বুঝি মরে যাবো। ব্যথা ছাড়া কষ্ট অনুভব করেছ কখনও? ওটা ব্যথার চাইতেও ভয়াবহ। এর চাইতে হাত-পা কাটাকুটি ঢের আরামের। আমি আর কতদিন এভাবে কাটাব? খুব তো বেশিদিন হয়নি তোমাকে চিনি। তবুও কেন এমন করছি আমি? সেদিন বলা নাই, কওয়া নাই, এতো সুন্দরসুন্দর বইয়ের ছবি আপলোড দিলে, দেখে তো পাগলই হয়ে গেছি। ইসস! তোমাকে যদি জীবনে পেয়েই যেতাম, বইয়ের সাগরে সারাজীবনের জন্য ডুবে যেতে পারতাম! আমি তোমার রিকমেন্ড-করা বই খুঁজে বেড়াই দোকানেদোকানে। অনেকগুলিই পাই না। আহা, তোমাকে পেয়ে গেলে আর এতো কষ্ট করে খুঁজে বেড়াতে হতো না। তোমাকে একবার তুই বলি? তুই যে কী পরিমাণ নিষ্ঠুর, কতটা হৃদয়হীন, তা আমি নিজেকে কিছুতেই বোঝাতে পারছি না। অথচ, আমি একটা অকর্মার ঢেঁকি, তোকে জ্বালাতেও পারি না ননস্টপ। যদি আমাকে ঠাস করে বলে দিস, তোর সাথে আর যোগাযোগ না করতে, তখন আমি কই যাবো? তুই তো ঠাসঠাস কথা বলে দিতে ওস্তাদ! আমাকে দূরে ঠেলে দিলে আমি বাঁচতেই পারবো না। এই ভয়ে আমি তোকে জ্বালাই না, ছেড়ে দিই। এই পাগলীর জন্য একটুও মায়াও কি হয় না তোর? ভালোবাসতে না দে, ভালোবাসা না দে, তোর মুখটা একবার দেখতে দে, আমার সাথে দেখা কর, তোর বইগুলি একটু ছুঁয়ে দেখতে দে। দে না বাবু, এমন করিস কেন? একটা লাইব্রেরি-গার্ল রাখ না বাসায়! আমি চাকরি করবো, মাইনে লাগবে নারে, শুধু তোকে আর তোর বইগুলিকে দেখতে দিস, ওতেই হবে। তোকে এই পাগলিটা খুব বেশি ভালোবসে রে! এমন করে আর কেউ কোনওদিন বাসবে না, দেখিস! তোমাকে তুই বলা শেষ। তালিইইই……নিজেনিজে কথা বলার কী মজা, দেখেছ? তুমি সামনে থাকলে কক্ষনো বলতে পারতাম এমন করে? তুমি সামনে আসলে তো মাথাই কাজ করে না ঠিকমতো! কথাই তো বলতে পারি না, তাকাতে পর্যন্ত পারি না!

আমি মরে যাবো, সত্যিই মরে যাবো। আর কিছুদিন যাক না। আমার বাসায় বিয়ের কথা উঠুক, আর তুমি বিয়েটা করে ফেল, এরপর একদিন হঠাৎ হারিয়ে গিয়ে আর ফিরবো না। ভাবছি, একদিন গ্রামে যাওয়ার সময় পদ্মায় ঝাঁপ দেবো। অথবা, হরিচাঁদ ঠাকুরবাড়ির দুধসাগরে ডুবে মরবো। আমাদের হরিচাঁদ ঠাকুরবাড়িতে দুটো বড়বড় পুকুর আছে। একটা দুধসাগর, অন্যটি কামনাসাগর। কামনাসাগরে ডুব দিয়ে যে যা চায়, তা পায়, আর যার কিছু চাওয়ার নেই, সে দুধসাগরে স্নান করে। প্রতি বুধবার পুজো হয়। ভক্তরা ওখানে প্রতিদিনই যায়। বারুণীস্নানের কথা শুনেছ তো? যাবে একদিন? চলো না! খুবই শান্তির জায়গা। ভয় নেই তোমার। আমি কামনাসাগরে ডুব দিয়ে কখনওই তোমাকে চাইবো না। তোমাকে তো না চাইতেই পুরোপুরি পেয়েছি আমি। কয়টা মেয়ে আমার মতো ভাগ্য নিয়ে বাঁচে, বলো? ওই আংশিক নিয়েই জীবন কাটিয়ে দেয়া যাবে। ব্যর্থ সম্পূর্ণ জীবনের চাইতে সার্থক আংশিক জীবন অনেক ভাল। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। তবে, এই অনুভূতিটুকু গায়ে, মনে, হৃদয়ে মাখিয়ে যতদিন পারি বাঁচি, এরপর নাহয় দুধসাগরে ডুব দিয়ে আর উঠবো না। তলিয়ে যাবো। যদি ঈশ্বর একটু সহায় হোন, আমাকে তুলে নেন। তবে হ্যাঁ, আমার বাকিটুকু আয়ু যেন উনি তোমাকে দিয়ে দেন, এইটুকু শেষ চাওয়া চেয়ে একটা পুজো দিয়ে তবেই মরব। আমার বড় বোনের কথা মনে পড়ছে। দিদির কথা অন্যদিন বলবো। সে দিদি নেই, মরে গেছে। ধুর! কাকে বলবো? যে কখনও শুনবে না, তাকে? অদ্ভুত আমি! কাজ নাই, কাম নাই, আগা, মাথা, মুণ্ডু, ছাই, ভস্ম, ঘোড়ার ডিম নিয়ে লিখেলিখে কাগজ নষ্ট করে যাচ্ছি। এসব লেখা তুমি তো দূরের কথা, এমন কোনও কাছের বন্ধু নেই যাকে পড়তে দিয়ে নিজের কষ্টটা কমাবো। আমার কষ্ট শেয়ার করার মানুষও নাই। আমি এমনই অভাগা। তোমার কথা আমি সারাক্ষণই সবাইকে বলে বেড়াই। একে বলি, ওকে বলি, নিজেকে বলি, দুনিয়াসুদ্ধ মানুষকে ধরেধরে বলি, শুধু যাকে বলা দরকার, তাকেই বলতে পারি না। ধ্যত্‌, আমি পুরাই একটা রেডিমেড ঘোড়ার ডিম!

বিশ্বাস করো, আমার এমন একটা মানুষ নেই যাকে আমি তোমাকে ভালোবাসার কথা বলতে পারবো। আমার ভালোবাসার বিন্দুমাত্রও প্রমাণ নেই কোথাও। শুধু আছে আমার এই ডায়রি, ঈশ্বর আর আমার আরেকটা আইডি যেটাতে আমি সারাদিনই তোমার ছবি ঢুকাই। ছবি পেলেই হয়ে যায়। নামাই, আর ওই আইডিতে রাখি। আর রোজই দেখি। কী করবো, বল! ফোনের অ্যালবামে তো রাখা রিস্কি। এই হলো আমার প্রমাণ। কাউকে কেন বলার সাহস হয় না, জানো? সবাই আমাকে একটা কথাই বলবে। তোমাকে বলে ফেলার কথা বলবে। সেটা তো কিছুতেই সম্ভব না। সবাই আমাকে রিস্ক নিতে বলবে। আমি যেটা কখনওই পারবো না। শুধুশুধু তোমার মুখ থেকে ‘না’ শুনে মরে যাওয়ার চাইতে বরং একাএকা আস্তেআস্তে শেষ হয়ে যাওয়াই ভাল। মানুষের মরণব্যাধি হলে কি আর সাথেসাথেই হুট করে মরে যায় নাকি? কষ্টটা ধরেই তো কোনওরকমে বাঁচার চেষ্টা করে যায়। ওষুধে কোনও কাজ হবে না জেনেও ওষুধ খায়। ভালোবাসাও মরণব্যাধিই—সবচাইতে নিশ্চিত, সবচাইতে মারাত্মক। আমিও নাহয় ওরকম আক্রান্ত রোগীদের মতো ওষুধের সন্ধান না-ই বা করলাম। ওষুধ না নিয়েই বাঁচলাম। ক্ষতি কী? কেউ তো আর জানে না যে, আমি কোনওভাবেই তোমার মনের কোনও জায়গাতেই নেই। শুধুশুধু ওদেরকে বলে উস্কানি খেয়ে দ্বিগুণ কষ্টে বাঁচতে চাই না। আর পারছি না আমি। সাদা সার্টপরা এক শুভ্র রাজকুমারের নেশায় চোখদুটো ঝলসে যাচ্ছে আমার। কাল থেকে এখনও পর্যন্ত এভাবেই আছি। আমার রাজকুমার, আমার স্বপ্নের রাজকুমার, যাকে আমি পৃথিবীর যেকোনও কিছুর চাইতেও বেশি ভালোবাসি। যাকে পাবো না তার দিক থেকে চোখ ফেরাতে না পারা কতটা কষ্টের, তুমি জানো? যে আমার নয়, সে যখন মনের মধ্যে ঝড় তুলেই যায়, তখন কেমন অসহায় লাগে, সে খবর তুমি কোনওদিনই জানবে না। আমি জানাবোও না।

অ্যাই ছেলে! অ্যাই! বকবক শেষ হয়নি এখনও? কত কথা বলতে হয় একটা মানুষকে? কত কথা বলতে ভাল লাগে তোমার? কই, আমার সাথে তো বল না! অ্যাই পচা ছেলে! খেয়েছ দুপুরে? যাও না একটু! মোবাইলটাকেও একটু বিশ্রাম দাও। আমাকেও একটু নিস্তার দাও। তোমাকে ওয়েটিং-এ পেলে আমার শুধু মনে হতে থাকে কোন না কোন ডাইনির সাথে কথা বলছ তুমি! ইচ্ছে করে, ওই ডাইনিটাকে তুলে আছাড় দিই। আমাকে একটু স্বস্তি দাও না! কিছু ভাল লাগছে না। আবার লিখতে বসলাম হাবিজাবি। তুমি এতো অবাধ্য হয়ে থাক কেন? বাস্তবেও অবাধ্য, আমার মনেও অবাধ্য। ঠিকমতো খাও না, ঘুমাও না। কী করবো আমি তোমাকে নিয়ে? আমার কিন্তু ভাল লাগছে না। তোমাকে এতো মনে পড়ছে আমার! একটু পরপর পাগলের মতো তোমার প্রোফাইলে ছুটে যাচ্ছি। কিছুই নেই নতুন, তবুও। তোমাকে কখনওই পুরনো ভাবতে পারি না। প্রতিটি মুহূর্তেই তুমি নতুনভাবে ধরা দাও আমার মনে। বইও পড়তে ভাল লাগছে না, বইয়েও তুমি চলে আস। বইয়ের নায়কগুলিকে মনে হয়, তুমি। কেন এমন হয়? আমি এই অস্থিরতা থেকে মুক্তি চাই। ভুলতে চাই তোমাকে। চলে যাও না! বের হয়ে যাও আমার মন থেকে, হৃদয়ের উঠোন থেকে। তোমাকে আমি চাই না, তোমাকে আমি ভালোবাসতে চাই না। তোমার কোনওকিছুই আমি চাই না। গেট লস্ট, প্লিজ!

দেখছ, কী অবস্থা আমার! আগের পেইজে কী লিখেছি, আর এই পেইজে কী লিখছি! পুরাই আধাপাগল আমি! নাকি, পুরাই পুরাপাগল? কতটুকু পাগল হলে পরে পুরোপুরি পাগল বলে? পাগলামি মাপার যন্ত্র আছে কোনও? ওটার নাম কী? কই পাওয়া যায়? কত দাম? আমি একটা কিনবো। আমি আমার পাগলামি মাপব। পাগলামি মেপে ভালোবাসার পারদ কতটুকু ওঠানামা করে, সেটা বুঝব। কাঁদব এখন। তুমি নিশ্চয়ই কর্ডলেস হাতে নিয়ে কেলাইতেসো এখনও। তোমার অন্যান্য নায়িকারা কী করে? মরুক গা সবাই! আমার কী? অ্যাই ছেলে! তোমার গাল টানতে ইচ্ছে করছে। তোমার ভুঁড়িতে ঘুষি মেরে দিতে ইচ্ছে করছে। তোমার ধরে টানতে ইচ্ছে করছে। তোমার ধাক্কা মেরে চেয়ার থেকে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছে। তোমার নাকের ডগায় কামড় দিব। তোমার চুল ধরে টানব। তোমার চোখে জোর করে চুমু খাবো। তোমাকে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরব। এসব করতে মন চাচ্ছে, আমি কী করবো? অ্যাই! আসো না…..একটু ধরো না প্লিজ! আমার এক ফোঁটা চোখের জল তোমার ওই আঙুলে নাও না! আমাকে একটু ধরো না। আচ্ছা, কিছুই করতে হবে না। আর কিছু না, জাস্ট আমার মাথায় তোমার হাতটা রাখো না। মাথাটা ঝিমঝিম করছে অনেকক্ষণ ধরেই। কাউকে কিছু অভিযোগ করতে ভাল লাগে না, কারও সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছে করে না, কাউকে কিছুই বলতে ইচ্ছে করে না। কাউকেই সহ্য হয় না আমার। শুধু গান ভাল লাগে। এখন আমার জীবনটা শুধু তোমাকে আর গানকে ঘিরে। তোমার কথা শুনে এখন গান নিয়ে জেদি হয়েছি। তুমি ক্যারিয়ার আড্ডায় যতবারই প্যাশন নিয়ে কথা বল, ততবারই আমার মনে হতে থাকে, এই গানই আমার একমাত্র প্যাশন। শশ্যাঙ্ক রিডেম্পশন মুভিতে বলে, Get busy living, or get busy dyning! আমি নিজেকে বলি, Get busy loving, or get busy singing. আমার শুধু এটা মনে হয়, আচ্ছা, তুমি কি কখনও আমার গান শুনবে না? কখনও কি আমার একটা পারফরম্যান্সও তোমাকে দেখাতে পারবো না? আমার গান শুনলে কী বলবে? তুমি বলেছিলে, যে মেয়েটা ভাল গাইতে পারে, তাকে অবশ্যই রেস্পেক্ট করতে হবে, কারণ ওর মতো করে গাইতে হলে অন্তত ১০ বছর সাধনা করতে হবে। এই কথাটা যে কতবার শুনেছি, তার কোনও হিসেব নেই। প্রথমবার শোনার পর তো মনে হয়েছিল, আমি ক্লাউডনাইনে ভাসছি। এই! ক্লাউডনাইন খাও তো? আমার চকোলেট-বয় যে শুধু চকোলেটই খায়। তোমার জন্য ভ্যালেন্টাইনে যে কত জায়গায় চকোলেট বুকিং দিয়ে রেখেছিলাম, অথচ আজও সময় হলো না তোমার। আর কি দেখা হবে না আমাদের? আরেকবার দেখা হলে অ্যাত্তোগুলা চকোলেট নিয়ে যাবো আমার বাচ্চাটার জন্য। তোমার জন্য যে কত কিছু কিনব বলে ভেবে রেখেছি, অথচ তুমি আসবে আসবে বলে আস না। খুব খারাপ তুমি। হয়তো এমন একটা সময়ে হুট করে বলবে, তখন আমি কিছুই কিনতে পারবো না। এর আগেরবার মগ আর রিং নিয়ে দেড় মাস তোমার অপেক্ষায় বসে ছিলাম। উফ! তোমার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে মনে হয়, জীবনটা এতো বড় কেন? আমার যে কী শখ তোমাকে এটাসেটা কিনে দেয়ার! আমি তোমার জন্য দুনিয়ার সব আজগুবি-আজগুবি জিনিস খুঁজেখুঁজে বের করি। এগুলি দেখলে তুমি খুব মজা পেতে। এইতো সেদিন মিনিওনের একটা ব্রাশহোল্ডার খুব পছন্দ হয়েছে। তুমি এটা যখনই দেখতে, তোমার হাজার মেজাজখারাপ থাকলেও মনভাল হয়ে যেত। কিন্তু কিনে কী হবে? এরপর দেখা যাবে, গিফট দেবো বললে, কিংবা কিছু কিনে দেবো বললে তুমি আর আসবেই না। আচ্ছা যাও, তোমার বিয়ে ঠিক হোক, এগুলো তোমার বউয়ের হাতে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করবো। এখন তোমাকে শুধু চকোলেটই দেবো। আচ্ছা, আমার দেয়া মগটা আর চাবির রিংটা কি ফেলে দিয়েছ? নাকি, কোনও একটা জায়গায় ফেলে রেখেছ? রিংটা কি ব্যবহার করই না? মা আর বাবার ছবি দিয়ে বানিয়েছি ওটা, তাও কি ইউজ কর না? সবসময় বাসায় যেতে পার না, নিশ্চয়ই নিজের রুমে বাঁধাইকরা উনাদের কোনও ছবিও নেই, তাইতো উনাদের ছবি প্রিন্ট করে মগ দিলাম। চা না খাও, কফি না খাও, দুধ না খাও, একটু জল তো খেতে পার মগটাতে ঢেলে। খাওয়ার সময় এক ঝলক সবাইকে দেখে নিলে! আমার কথা মনে করতে বলছি না, শুধু নিজের পরিবারকে একবার দেখে নিলে কাজের ফাঁকে। ওটা ভেবে মগটা দিয়েছি। অথচ, এখন মনে হয়, ওগুলো বোধহয় ধুলোয় ডুবে আছে। মানুষটা তো মহাব্যস্ত, নিজের যত্ন নেয়ারই সময় নেই, আর ওসব তো তুচ্ছ উপহার! আচ্ছা, ওসব নাহয় ব্যবহার না-ই বা করলে, হয়তো ধুলোর পাহাড় জমে আছে ওসবের গায়ে, ওতেও দুঃখ নেই, তবু আছে তো? নিজের ক্যারিয়ার আড্ডার যে ক্রেস্টগুলো আছে, ওগুলো যত্ন করে রাখ তো? ওগুলোই সব। এই যে এতো কষ্ট করে করে নানান বিশ্ববিদ্যালয়ে যাও, বক্তৃতা দাও, এ কাজের সামান্যতম স্বীকৃতিও যদি থাকে, তা হল, ওই ক্রেস্টগুলো। বইয়ের পর যদি কিছু বেশি যত্ন করে রাখ, তবে ওই ক্রেস্টগুলোকে রেখো। প্রতিটি ক্যারিয়ার আড্ডার উজ্জ্বলতম সাক্ষী ওই ক্রেস্টগুলো তোমার মতোই জ্বলজ্বল করছে। ওগুলো একটা গুছিয়ে রেখো, প্লিজ। আমার তো গুছিয়ে রাখতে পারার ভাগ্য নেই, তাই তোমাকেই বলছি ওই কাজটা করতে। ওগুলো অমূল্য ধন, ঈশ্বরের আশীর্বাদের উপহার। তোমার প্রাপ্য সম্মান। আমি বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করে যাবো, একদিন তুমি অনেক বড় পুরস্কার পাবে।

এই মিস্টার অলরাউন্ডার, আমাকে কি আর কোনওদিনই ডাকবে না? আর কোনওদিনই আমার কাছে আসবে না? তোমার কোনও স্মৃতিই তো নেই আমার কাছে, এমনই বোকা আমি, একটা সেলফিও কোনওদিন তুলিনি। একটা অটোগ্রাফ নিইনি তোমার, একটা প্রণাম করার কথা মাথায় নিয়েনিয়ে তোমার কাছে যাই, আর তোমাকে দেখলেই সবকিছু ভুলে যাই। গতবার ভেবেছিলাম, আসার সময় তোমার হাতদুটো একটু ধরব, কিন্তু সেটাও করিনি। তোমার হাবভাব দেখে খুব মেজাজখারাপ হচ্ছিল। একটা মেয়ে সামনে বসে আছে, আর তুমি অমন গাছাড়া ভাব দেখাচ্ছ? এটা আমি বসেবসে ভাবছিলাম। খুব খারাপ লাগছিল আমার, তাই আর কিছু বলিনি। তুমি আসলেই একটা পচা! মানুষকে যে কতটা স্মুথলি অ্যাভয়েড করা যায়, সেটা তোমার কাছ থেকে শিখতে হবে। ভেড়া কোথাকার! তবুও যে সারাদিনই এই ভেড়াটার কথাই ভাবি! কেন ভাবি? কেননননন??? সত্যিই কি আর দেখা হবে না আমাদের? চকোলেট দিতে পারবো না তোমাকে? দিদিরা আসুক না খালি আমেরিকা থেকে! যা চকোলেট আনবে, তার অর্ধেকটাই তোমাকে দেবো। দরকার হলে তুমি যেখানে থাক, ওখানে গিয়ে দিয়ে আসব। আমি দেখছি তোমাকে, স্পষ্ট দেখছি তোমাকে। ছবিতে নয়, ফেসবুকে নয়। তুমি একেবারে আমার চোখের সামনে। আমার চোখের পর্দা হয়ে চোখেই চিরদিনের জন্য নির্দিষ্ট হয়ে গেছ তুমি। আর কোনওদিনও সরবে আমার চোখের সামনে থেকে। পর্দায় একটাই প্রলেপ, একটাই চিত্র, একটাই অবয়ব, একটাই প্রতিফলন। সেটা হচ্ছ তুমি। আলোকরশ্মি পরিবর্তনের দরকার হয় না। এমনিতেই আলোকিত যে, তাকে যেকোনও পর্দায় ফেললেই সে জ্বলজ্বল করে ওঠে নিজস্ব দ্যুতিতে। তুমি আমার জ্বলন্ত অগ্নিশিখা; চোখে, মুখে, বুকে, হৃদয়ে। আমার Whitehole তুমি!

যখন মনটা খুব খারাপ থাকে, তখন বসেবসে তোমার ছবি দেখি। মনে হয়, এইতো তুমি! সামনেই! ছুঁয়ে দিতে পারবো! তোমার হাসিটা দেখলে শান্তিশান্তি লাগে। তখন আবারও মনে হয়, ঈশ্বর তোমাকে খুব যত্ন করে বানিয়েছেন। তোমার সাদাকালো নেশাধরা চোখদুটো দেখি, আর ভাবি, ওই চোখে তাকালেই পৃথিবীর সত্যিকারের সাদা রঙ আর কালো রঙ খুঁজে পাওয়া যাবে। এতো সুন্দর সাদা স্ক্লেরার মধ্যে সুদীঘল কালো রামধনুর একরঙা আয়োজন আমি আর কারও চোখে কখনও দেখিনি। ওই কালো রামধনুর মাঝে চোখের তারা খেলে। কামিনীকাঁটা খোঁজার অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইনি। বরং হারিয়ে গেছি কালো গভীর রামধনুর মাঝে। হোয়াইট স্ক্লেরা আর ব্ল্যাক আইরিশের অরিজিনাল চোখের দৃষ্টান্ত খুঁজলে তোমাকে দাঁড় করিয়ে দেয়া যাবে নির্দ্বিধায়। ওই চোখদুটোর মাঝে যে কী অসীম ক্ষমতা আছে, তা তুমি নিজেও জানো না। কারণ ছাড়া এমনিই তাকাই, কিংবা মনোযোগ দিয়ে তাকাই, যেমন করেই তাকাই না কেন, আমার লোমকূপগুলি নিজের অজান্তেই দাঁড়িয়ে যায়। এরকম অনুভূতি কেন হয়, বলতে পারো? সত্যিই তোমার চোখের মতন অতো সাদা স্ক্লেরা আর কালো আইরিশ আমি আর কারও চোখে দেখিনি। মনে হয়, যেন একই কোটরে দুটো রঙের খেলা চলছে অবিরাম। ওরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছে, কে কত বেশি উজ্জল, তা নিয়ে। ওই সাদা আর কালো রঙের আভার দৃষ্টি যার দিকে পড়ে, সে-ই কি ক্রাশ খায়? আমি তো তোমার উপর ক্রাশ খাইনি। তোমার প্রেমেও পড়িনি। আমি তোমার বইয়ের উপর ক্রাশ খেয়েছি। তাহলে তুমি এলে কোত্থেকে? তোমার বইগুলি নিয়ে আমার অনুভূতি লিখে ফেলবো; তবে অন্যদিন। আজ তোমার চোখের নেশা লেগেছে আমার মধ্যে। এতো সুন্দর কেন তোমার চোখ? তুমি কি আগে জানতে যে, তোমার চোখের ভেতরে সাদা আর কালো রঙ সবার আড়ালে নিভৃতে যুদ্ধ করে চলেছে অবিরত, অনবরত? দুটো রঙের দুটো অবস্থান। সাদা অংশটুকুও যেমন জ্বলজ্বল করছে, ঠিক তেমনি কালো অংশটুকুও জ্বলজ্বল করছে। তোমার চোখের দিকে তাকালে কী আগে চোখে পড়ে? স্ক্লেরা? আইরিশ? নাকি, পিউপিল? তিনটা পার্টই ইকুয়ালি ব্রাইট। কালোও ব্রাইট, সাদাও ব্রাইট। তবে কী আগে দৃষ্টি কাড়ে? তোমার চোখের অভ্যন্তরে এতো মায়া আর উজ্জ্বলতা যে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। তাকিয়ে থাকলে কী হবে, জানো? মৃত্যু, নয়তো পাগল হয়ে যাওয়া। নিশ্চিত। কোনও ছেলের চোখ যে এতো সুন্দর হয়, এটা প্রথম অনুভব করলাম। আগেও প্রেম করেছি, কিন্তু বিশ্বাস করো, কোন ছেলের সৌন্দর্য এতোটা অন্তর থেকে অনুভব করিনি। উফ! কত সুন্দরসুন্দর ক্রাশ আমার, দেখলেই জড়িয়ে ধরতে মন চায়। অথচ কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, কার কোনটা বা কী সুন্দর, কাছে টানে, সত্যিই নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারবো না। কারণ, ওটা তো চট করে ভাললাগা। ওটা আবার চট করে চলেও যায়। জাস্ট এ স্মৃতিটা থেকে যায় যে, ওকে ভাল লেগেছিল। আর কিছুই না। ওটা ভালোবাসা নয়। কিন্তু তুমি আমার হৃদয়ের অনুভূতি, আমার ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ। যদি আমাকে কোনও ব্যক্তির সবকিছু নিয়ে পিএইচডি করতে বলে, তবে আমি নিঃসন্দেহে তোমাকেই বেছে নেবো। তোমাকে আমি তোমার চাইতেও বেশি বুঝি। আমি তোমাকে নিয়ে সারাক্ষণই ভাবি। তুমি আমার প্রতিদিনের রুটিন, আমার হোমওয়ার্ক। তোমাকে ভাবা বন্ধ করা অসম্ভব।

খানিক আগেও ভীষণ রকমের মেজাজখারাপ ছিল। মাথায় আগুন ধরে গিয়েছিল কোনও একটা কারণে। এরপর ফোনে তোমার ছবিগুলি দেখলাম, আর লিখতে বসলাম। ব্যস! মনটা এখন শীতল শিথিল আছে। হাসছি আমি। তোমার ছবির ম্যাজিকটা তুমি কোনওদিনই জানতে পারবে না, আমি জানি। মনটাকে কেমন যে শান্ত করে দাও তুমি! আমি কৃতজ্ঞ তোমার কাছে, তোমায় ধন্যবাদ। আমার জীবনটাকে কানায়কানায় ভরিয়ে দিয়েছ তুমি। তোমার বই, তোমার কথা, তোমার লেখা, তোমার চিন্তাচেতনা, তোমার ভাবনা, তোমার বিবেকচিত্র, তোমার দুষ্টুমি, তোমার হেঁয়ালি, তোমার ঠাট্টাগুলি, তোমার ইয়ার্কি, তোমার মস্করা, তোমার চোখ, তোমার হাসি, তোমার হাঁটার স্টাইল, তোমার তাকানো, তোমার হাত নাড়ানো, তোমার চমৎকারিতা, তোমার রাগ, তোমার অভিমান, তোমার সৌজন্য, তোমার সহজতা, তোমার সেন্স অব হিউমার। তোমার সবকিছুর কাছে আমি হেরে যেতে ভালোবাসি। ওটাই আমার জিত। তোমার সবকিছুর মধ্যে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি। এখনও পর্যন্ত আর খুঁজে পেলাম না নিজেকে। সবচাইতে অবাক ব্যাপার, আমি একবিন্দুও চেষ্টা করছি না নিজেকে এসবের মধ্য থেকে বের করে আনার। লুকিয়েলুকিয়ে ভেতরেভেতরে আমি যে কোন গভীর সাগরে তলিয়ে যাচ্ছি, একটু উঠতে কিংবা বের হতে চেষ্টা করছি না। আর তোমার সেন্স অব হিউমার? ওটার কাছে নিজেকে সঁপে দিতে পারি। অমন হিউমার আছ, এমন ছেলের সাথে সারাদিনই গল্প করা যায়। আমাকে ওই ব্যাপারটা কী এক অনুভূতি দিয়ে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাখে। আমি তোমার সবকিছু গায়ে মিশিয়ে কোথায় কেন হারিয়ে যাই, অদৃশ্য হয়ে যাই! কেউ আমাকে আর খুঁজে পায় না। ইসস! ঠিক ওই মুহূর্তের অনুভূতিটা যদি একটু দেখাতে পারতাম তোমাকে! কেমন যে লাগে, খুবই অস্বস্তি লাগে, খুবই অসহায় লাগে। কী যেন আমাকে দিনেদিনে আঁকড়ে ধরেছে, গ্রাস করেছে, আবৃত করে ফেলেছে। শুধু জোর করে হাতের শক্তিটা ধরে রেখে লিখে যাচ্ছি। কিন্তু একমাত্র ঈশ্বরই দেখতে পাচ্ছেন, আমার সারা শরীরে কীসের আবরণ আর কীসের মোহ যেন মায়া ছড়িয়ে যাচ্ছে।

ভাগ্যিস, এসব অনুভূতি অদৃশ্যই থাকে, দেখা যায় না। কারও স্বপ্ন, চিন্তা, চোখের শূন্য দৃষ্টি শুধু ঈশ্বরই দেখতে পান, নইলে কবেই যে ধরা পড়ে যেতাম! তখন আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকত না। আবার ভাবি, ওটা করে ফেললেও মন্দ হতো না। মানুষকে এ ক্ষমতাটুকু না দিয়ে ঈশ্বর অনবরত সবাইকে শাস্তি দিয়ে চলেছেন। ওসব অনুভূতিগুলো চট করে দেখা গেলে কেউ আর লুকিয়েলুকিয়ে ভালোবাসার সাহসই পেত না। এই যে দেখ না, তুমি কই আছ, তার কিছুই জানি না, হয়তো অফিসে মিটিং করছ, ব্যস্ত ভীষণ। অথচ, আমার মনে হচ্ছে, তুমি আমার ভেতরেই আছ। আমার সব শিরা-উপশিরা রক্তের সাথে মিশে গিয়ে আমার শরীরে চলমান স্রোতের মতো আনাগোনা করছ। আমি বেশ সুখে আছি। তবু নিজেকে অসুস্থ মনে হচ্ছে কেন? আর কতদিন এমন করে বয়ে বেড়াতে হবে জীবনটাকে? একটা মানুষের ছত্রছায়ার ছিটেফোঁটাও আমার জীবনে নেই। অথচ, সে নাকি আমার শরীরে চলমান। তার অনুভূতি, তার চেহারা, তার হাসি ঠিক কতটা গতিতে আমার মস্তিষ্কে হামলা চালায় প্রতিনিয়তই, সেটা আমি জানি না। কত বেগে মাথায় ঢুকে পড়ে আর কত বেগে বেরিয়ে পড়ে, সে খোঁজ আমার জানা নেই। এটা কি তবে চেইন বিক্রিয়া, কিংবা ওরকম কিছু? এ বিক্রিয়া একবার শুরু হলে তো আর শেষই হয় না। তবে তুমি বা তোমার নামে যে বিক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে আমার মাথায়, সেটা কি শেষ হবেই না আমাকে শেষ না করে? তেজস্ক্রিয় বিক্রিয়াগুলোর কার্যকলাপ শেষ হয় না। এর কিছু না কিছু রেশ থেকেই যায়। তোমার বিক্রিয়া যদি আমার জীবন থেকে শেষ হয়েও যায়, তবু কি এর কিছু রেশ রেখে যাবে তুমি? আমার ভয় করছে, সত্যিই খুউব ভয় করছে। আমি জেনে গেছি, আমার ভেতরে চলা ওই ভয়ংকর তেজস্ক্রিয় বিক্রিয়াটি শেষ হতে আর বেশিদিন বাকি নেই। খুব তাড়াতাড়িই আমার ভেতরে অনেক বড় একটা বিস্ফোরণ ঘটে বিক্রিয়াটিও শেষ হয়ে যাবে, সাথে আমিও শেষ হয়ে যাবো। সেটা কবে? তোমার বিয়েটা হয়ে গেলেই? মনে হয় তা-ই। সেদিন আমি শেষ হয়ে যাবো পুরোপুরিই। তবুও কি তোমার রেশটা থেকে যাবে আমার জীবনে? আমি কি পারবো না তোমাকে ভুলতে?

তোমার পাশে তোমার বউকে দেখলে তো উচিত তোমাকে ভুলে যাওয়া। ভালোবাসা কি ঔচিত্য-অনৌচিত্যের ধার ধারে? আমি তখনও কি এমন পাগলামি করে যাবো? পারবো? কষ্ট হবে না আমার? আমি তো ভাবতেও পারি না সে কষ্টের কথা। কাল হিজাবপরা একটা মেয়ের সাথে তোমার ছবিতে কে যেন তোমাকে ট্যাগ করেছে। ছবিটা দেখে ছ্যাঁত করে উঠল বুকটা। কে ছিল সে? কে ছিল, কী ছিল, কেন ছিল, কিচ্ছু দেখতে পারিনি। তার আগেই চোখে তোমার হাতটা চোখে পড়ে গেল। দেখলাম, অসীম মমতায় একটা মেয়ে তোমার বাম বুকের সাথে লেপটে আছে তোমার বাম হাতের মধ্যে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছিল আমার। এই যে লিখছি, নিঃশ্বাস নিতে পারছি না, ওই দৃশ্য বারবারই চোখের সামনে এসে পড়েছে। হাতের পাঁচটা আঙুল দিয়ে এতো স্নিগ্ধভাবে ধরে আছো মেয়েটাকে, আর সারামুখে ছড়ানো অতো হাসি! পৃথিবীর সব সুখ, সান্ত্বনা, ছায়া, মায়া, ভরসার সবটুকু আমি দেখেছি তোমার এক্সপ্রেশনে। একটা মেয়ে তুমিও অমন আগলে রাখতে পারো, এমনটা ভাবিনি আগে। কেন ধরেছ ওভাবে? আমি তোমার ওই হাতের মাঝে আর বুকে শুধু তোমার মাকে কল্পনা করতে পারি। মা ছাড়া তোমার বাহুবন্ধনে আর কেউ থাকবে, এটা আমি ভাবতে গেলেও অসুস্থবোধ করতে থাকি। কল্পনায় আনা তো অনেক পরের ব্যাপার! আমি খুব ভাল করেই জানি, মেয়েটা বোন, তোমার স্নেহের খুব কাছের কেউ, তোমাকে ও ভালোবাসে, যে ভালোবাসা পবিত্র, ও হিজাবপরা ধার্মিক মেয়ে, কিন্তু একটিবারের জন্যও মেনে নিতে পারছিলাম না। তোমাকে ঘিরে আরও অনেকেই ছিল। আমি ওইখানে থাকলে কী যে করে বসতাম, আমি সত্যিই জানি না। আমি যেখানে নিজেকে কল্পনা করার সাহসই করতে পারি না, সেখানে আরেকটা মেয়ে অবলীলায় জায়গা করে নিয়েছে। এও মানা সম্ভব? কী এক বিশ্রী যন্ত্রণা আর তাড়না আমাকে বারবার ছোবল মেরে মেরে দংশন করেছে, আমি তার একটু দাগও যদি তোমাকে দেখাতে পারতাম, তুমি নিশ্চয়ই শিউরে উঠতে! আমি রক্ত ভয় পাই, লাশ ভয় পাই, মানুষের যন্ত্রণা ভয় পাই। জীবের যেকোনও কষ্ট আমাকে ভয়ংকরভাবে ভীত আর পীড়িত করে দেয়। কিন্তু এসবের চাইতেও আমি এখন প্রবলভাবে তোমার বিয়ের সংবাদটাকে ভয় পাই। তুমি হলে আকাশের চাঁদ, তোমাকে পাবো না জেনেও তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু তুমি বিয়ে করলে ফেললে আমার কী হবে? তখন যে তোমাকে লুকিয়ে দেখতেও ভয় পাবো! জানি, আমার বুকের ভালোবাসা তোমার পায়ে লুটায়। অবহেলা পেয়েপেয়ে আমার এখন আর খারাপ লাগে না। যাকিছু উপহার আর প্রাপ্তি, সে আমার মনে যত্ন করে রাখা। তোমার পাশে আকস্মিক কাউকে ভয় পাই। যে মেয়েই তোমার পাশে দাঁড়াবে, তাকেই আমার শত্রু বানিয়ে ফেলতে এক মুহূর্তও সময় লাগবে না। ওসব দেখার আগে, শোনার আগে, বোঝার আগে আমি যেন অন্ধ হয়ে যাই, বধির হয়ে যাই, মূক হয়ে যাই, চলৎশক্তিহীন হয়ে পড়ে থাকি। খুব ভাল হয়, যদি মরে যাই। ইদানিং, মৃত্যুকে পড়শি ভাবি। হাত বাড়ালেই যেন ছুঁতে পারবো। ডাকলেই আসবে, এমন। তুমি তো আস না, ও ঠিকই আসবে। ও এতোটাই আপন!