সবুজ কৌটোয় হৃদয়-কড়চা/১১

জানালার ওপাশটা ঝরছে। কফির রাগি ফেনায় আটকেথাকা ধোঁয়া, আকাশের কান্না-প্রহর, একটুখানি জলেভেজা সুর, আমার চোখের মণিতে কয়েক টুকরো নেরুদা। বাজিয়ে যাচ্ছি লি রু-মা’র কিস দ্য রেইন, সিমপ্লি থ্রি’র রেইন, জোসেফের নাথিং এলস ম্যাটারস। ক্রমাগত। একেক পিস স্বর্গ ওরা! বাঁচতে আর কী লাগে!

বসন্তসখা আমার, দামি কিছু পেতে হলে দামি কিছু ছাড়তে হয়। লিখলে। তোমায় পেতে চাই। কী ছারতে হবে, বলো! বলেই দেখো! কিছু না ভেবেই ছেড়ে দেবো।

কেমন আছো তুমি? আজ সারাদিন মনটা খারাপ ছিল। আমার মাঝেমধ্যেই মনখারাপ হয়। তবে আজ তুমি আমার মনটা খারাপ করে দিয়েছ। তুমি এমন কেন, বলতো! আমি জানি, আমি তোমার কেউ নই, কিন্তু তবুও তো তোমার জন্য কষ্ট হয় আমার। অনেক কষ্ট হয়। তুমি কি জানো, আমি যে তোমাকে আমার পৃথিবী ভেবে বসে আছি? আমার বেঁচেথাকার কারণ তুমি, আমি যদি মরেও যাই, তার কারণও তুমিই হবে। শোনো, আমি এখন আর ছোট বাচ্চা নই যে আবেগে সব ভুলে বাজে কথা বলব। তোমার চেয়ে মোটে দশ বছরের ছোট হব। কই আর তেমন বেশি, না? আমার ব্যাপারে সম্পূর্ণ পরিষ্কার ধারণা আছে আমার। আমি জানি, তুমি আমার না, কখনো আমার হবেও না, আমি তোমার কাছে আর দশটা সাধারণ মানুষের মতই। সব জেনেও তোমাকে ভালোবাসি, ভালোবেসেই যাব। তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা হয়তো নেই আমার, কিন্তু তোমাকে ভালোবাসার যোগ্যতাটুকুও কি নেই আমার? বেশিই আছে! আমি অনেক ভালোবাসতে পারি এবং ভালোবেসে ফেলি। এটাই আমার একমাত্র দুর্বলতা। তোমার কাছে আর কিচ্ছু চাই না আমি, শুধু তোমাকে ভালোবাসার অধিকারটুকু কি দেবে আমাকে? এতটুকু না পেলে তো মরেই যাব। বলো, দেবে না? তোমার সাথে এক ছাদের নিচে না-ই বা থাকতে পারি কখনও, এক আকাশের নিচে তো আছি! এটাই বা কম কীসে? ছাদের চাইতে আকাশ আপন। আমার সুখ তুমি, শান্তি তুমি, আমার জীবন তুমি, মরণও তুমি। তুমিই আমার সব!

আর শোনো, তুমি কিন্তু কোনও ব্যাপারেই কোনও রকম কষ্ট পাবে না। ঠিক আছে? কোনও ব্যাপারেই না। তোমাকে যে কষ্ট দেবে তার মুণ্ডু কেটে স্যুপ রান্না করে খাওয়াব আমি তোমাকে, বলে দিলাম। কষ্টগুলো সব আমার জন্যই বরাদ্দ থাক, তবুও সুখে থাক তুমি! সত্যি বলছি। আমার সব কষ্টের বিনিময়ে তুমি যদি এতটুকুও ভাল থাকো, সেটাই আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমি সবসময় তোমার মুখের ওই দুষ্টু হাসিটা দেখতে চাই। আমার যত কষ্ট, দূর করার জন্য ওইটুকু হাসিই যথেষ্ট। আমি তোমার জন্য সব করতে পারি, মরতেও পারি, কিন্তু তোমার কষ্টটা দেখতে পারি না, কখনো পারবোও না। তুমি জানো, আজ তোমার জন্য আমি অনেক কেঁদেছি। আমার ভেতরের কষ্টটার চেয়ে তোমার ভেতরের কষ্টটা অনেক বেশি পোড়ায় আমাকে। আমার ইচ্ছে করে, তোমাকে ছোট্ট বাবুর মত আগলিয়ে রাখি, যেন কোনও আঁচ তোমার গায়ে না লাগে। কিন্তু ইচ্ছে হলেই তো আর হবে না, আমার তো আর সেই সুযোগও নেই অধিকারও নেই। তোমার জন্য প্রতীক্ষা করে থাকাটাও আমার জন্য আনন্দের। অপেক্ষা নয় কিন্তু, প্রতীক্ষা। তুমি আমার নও নিশ্চিত জেনেও অপেক্ষা করা যায় না, কিন্তু প্রতীক্ষা তো করাই যায়! বুঝতে পেরেছ? আমি তো তোমার প্রতীক্ষাতেই এমন কয়েক জনম কাটিয়ে দিতে পারব।

তোমার বউ যে হবে, সে অনেক লাকি। দুনিয়ার সবচেয়ে ভাগ্যবান মানুষ সে। তোমার মত একজনকে নিজের করে পাবে। তুমি তার, তাকেই ভালোবাসবে। এর চেয়ে বড় আর কী হতে পারে! শোনো, তাকে বলবে, আমার বাবুটার যেন যত্ন নেয়। তার যেন কোনও অযত্ন, কোনও কষ্ট না হয়। আমার ভালোবাসাটা যে তার কাছেই গচ্ছিত আছে! ঠিক আছে? বলবে তো?

তোমার কবিতা পড়তে ইচ্ছে করছে খুব। একটা কবিতা লিখবে তুমি? শুধু আমার জন্য? আচ্ছা থাক, আমার জন্য কষ্ট করে লিখতে হবে না। সবার জন্য, তোমার নিজের জন্যই লিখো না! লিখবে তো? বল না! এই………

আমি জানি, আমি একটা পচা মেয়ে। গালফোলানো টাইপের, জেদি আর অল্পতেই কষ্টপাওয়া মেয়ে। তুমি এই পচা মেয়েটাকে কখনো ভালোবেসো না, ঠিক আছে? তুমি কেবল ভাল মেয়েকে ভালোবাসবে। তুমি আমার কথা শুনে বিরক্ত হবে, রেগে যাবে। আমিও তখন মন খারাপ করে মনেমনে ঠিক করে নেবো, নাহ্ তোমাকে আর বিরক্ত করব না! ঠোট ফুলিয়ে কাঁদব আর নিজেনিজেই বলব, “ঠিকই তো, আমি কে? কেন ওকে বিরক্ত করি?” তারপর দুইদিন পর ঠিকই বেহায়ার মত নক করে বলব, “তোমাকে খুব মিস করছি তো!” আচ্ছা, তুমি কি তখনো বিরক্ত হবে, নাকি ফিক করে হেসে দেবে?

শোনো, তুমি কিন্তু সত্যি সত্যিই আমাকে ভালোবাসবে না। আমি যতবার তোমার কাছে যেতে চাইব, ততবার ধমক দিয়ে মানা করে দেবে, বকা দিয়ে বলবে, “এই মেয়ে, তোমার কি লজ্জাশরম কিছু নেই নাকি?” আমি তখন মনখারাপ করে ঠিক করে নেবো, “নাহ্ আর কোনওদিন তোমার সামনে যাব না।” তারপর একদিন তোমাকে না বলেই হঠাৎ করে তোমার কাছে চলে গিয়ে তোমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই জড়িয়ে ধরব। আচ্ছা, তখন কি তুমি খুব রেগে যাবে, বকা দেবে? নাকি মুচকি হেসে তুমিও জড়িয়ে ধরবে আমাকে?

তবে তুমি অনেক ভালমানুষ। ভালমানুষেরা কক্ষনো পচা মেয়েদের ভালোবাসে না। তাই তুমিও কিন্তু আমাকে ভালোবাসবে না। তোমাকে যখন অসময়ে ফোন দেবো, তুমি ফোন রিসিভ করে আমাকে প্রশ্রয় দেবে না। তুমি তখন আমার ফোন কেটে দিয়ে নাম্বারটা ব্লকলিস্টে দিয়ে দেবে। সারাদিন ফোন দিতেদিতে কষ্ট পেয়ে আমি নিজেকে প্রমিজ করব, আজ থেকে আর ফোনই ব্যবহার করব না। তবে ঠিক দুদিন পরই তোমার কণ্ঠ শোনার জন্য ব্যাকুল হয়ে অন্য কোনও ফোন থেকে তোমাকে ফোন দিয়ে দেবো। তুমি কি তখন আমার কন্ঠ শোনার পর ফোন কেটে দেবে? নাকি কপট রাগ দেখিয়ে হালকা ধমকের সুরে বলবে, “তুমি সময় বোঝ না?”

শোনো, অন্য কোন ভালো মেয়েকে ভালোবাসবে, আমার মত বেহায়া কে ভালোবাসবে না, ঠিক আছে? আমি একাই তোমাকে ভালোবাসব। তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখব। সেই অপরাধে তোমার কাছে বকা শুনব। তবুও আরো বেশি ভালোবাসব। আমার কল্পনার রাজ্যে তুমি শুধুই আমার।

মধুকর…..তোমায় ভালোবাসি ভীষন। তবুও বলতে পারি না। বলার চেয়ে লেখাই বেশি সহজ। মনের যত অব্যাক্ত কথা গুলো কি সুন্দর ভাবে বলা যায় এই লেখার মাধ্যমে। এইযে তোমাকে বলে দিলাম আমি তোমাকে ভালোবাসি, সেটা কি সামনাসামনি বলতে পারি? পারি না তো। তোমার চোখের দিকে তাকালে কথা জড়িয়ে আসে, বলতে পারি না কিছুই। একটি বার ও বলতে পারি না ভালোবাসি। অাচ্ছা, তুমি আমাকে তোমার এত ব্যাস্ত সময় থেকে একটা দিন দেবে? তোমাকে একটুও ডিস্টার্ব করব না। তুমি তোমার মত তোমার কাজ করবে, আমি শুধু অপলক দৃষ্টিতে তোমায় চেয়ে চেয়ে দেখব, আর দেখতেই থাকব। তুমি কিভাবে কথা বল, কিভাবে হাসো, কিভাবে রাগ করো, কিভাবে খাও, কিভাবে হাটো, কিভাবে হাই তোল, কিভাবে লিখ, লেখার সময় তোমার এক্সপ্রেশন কেমন হয় সব খুটিয়ে খুটিয়ে দেখব। দেবে তো? আচ্ছা যাও, না দিলে আমি নিজেই কল্পনা করে নেব।

আচ্ছা তোমার কি কখনো মনে হয়েছে নিজের একটা দ্বীপ থাকলে কত ভালো হত? আমার মনে হয়। অামার যদি ছোট্ট একটা দ্বীপ থাকত! দ্বীপটার মাঝে একটা ছোট্ট পাহাড় থাকবে, আর সেই পাহাড় বেয়ে ঝরে পড়া একটা ঝর্ণা ছোট নদী তৈরি করে একটু দূরেই সাগরে গিয়ে মিশবে। আমি সেই পাহাড়ের উপরে একটা ছোট কুড়েঘর বানাবো। পাহাড়ে ওঠার রাস্তার দুই ধারে থাকবে কয়েকটা কৃষ্ণচুড়া গাছ। লাল গালিচার মত ফুল বিছিয়ে থাকবে সেই রাস্তায়। প্রতিদিন সকালে ওই ছোট্ট নদীটার ঝিরিঝিরি পানিতে পা ভিজিয়ে হাটব। ওখানে আর কেউ থাকবে না। সবার প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ। তবে তোমাকে দিলাম প্রবেশাধিকার। শুধু তুমি কিন্তু। তোমাকে নিয়ে যাব আমার সেই রাজ্যে ময়ুরপঙ্খি নৌকায় করে। তোমার হাত ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাব সবকিছু, ঝর্ণায় ভিজব, নদীর জলে পা ভেজাব, অার ফুলের বিছানায় ঘুমুতে দেবো। তুমি আমার এই ব্যক্তিগত রাজ্যটার একটা নাম রেখে দেবে প্লিজ? দাও না!

আমি কি জেগে স্বপ্ন দেখছি, না ঘুমিয়ে দেখছি? যেভাবেই দেখি, স্বপ্নটা যেন কখনো না ভাঙে। চলতে থাকুক না! ক্ষতি কী! জেগে কি উঠতেই হবে?

আমার কাছে একটা বড় কষ্টের কাজ হচ্ছে ঘুমানো। (ঘুম থেকে ওঠা না কিন্তু!) প্রতিদিন ঘুমানোর জন্য রীতিমত কসরত করতে হয়। ঘুমাতে যাই ১২টায়, ঘুমাই ৪-৫টায়। এই ৪-৫ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করতে থাকি। বই পড়ি, গেমস্‌ খেলি, গান শুনি, ফেসবুক চালাই, শেষমেশ ভূত এফএম শুনি। ভূত এফএমটা যে আমার খুব প্রিয়, তা কিন্তু নয়। ওটা শুনি ঘুমানোর জন্য, ওটা অনেকটা ঘুমপাড়ানি গানের মত কাজ করে। মনে হতে পারে, ঘুম না আসলে তো পড়তে বসলেই হয়! ব্যস্‌! কিন্তু আমার বেলায়, না, হয় না। কারণ, একটা সময় পর আমার মাথা ভারি হতে শুরু হয়, ঘুরতে শুরু করে, মনে হয়, মাথায় কেউ পাথর চাপিয়ে দিয়েছে, এক্ষুনি সব ছিঁড়ে যাবে, আর তক্ষুনি ঘুমাতে না পারলে মাথার ভেতরের ২-১টা তার ছিঁড়েও যেতে পারে। সবই হয়, কিন্তু আমার ঘুম আসে না।

গতরাতে তেমন ঘুমানোর সময় একটা বই নিয়ে বসি, হুমায়ূন আহমেদ স্যারের ‘মেঘের ওপর বাড়ি’। তাঁর বই সবসময়ই আমার পছন্দের। এই বইটাতে তিনি সুন্দর আর কত সহজ ভাবে মৃত্যুর পরের সময়টাকে বর্ণনা করেছেন। ড. ইফতেখারুল ইসলাম, একজন পদার্থবিদ্যার শিক্ষক, যিনি মৃত, আবার সবচে’ জীবন্ত চরিত্র। ভেরি ইন্টারেস্টিং! কিন্তু পুরো গল্পে কবর, লাশ, আক্সিডেন্ট, সুরতহাল, এসব পড়তে-পড়তে একটা সময় কেমন যেন ভয় পেতে শুরু করি। এতটা সহজভাবেও কেউ ভয় দেখাতে পারে! অদ্ভুত একটা অস্বস্তিকর অবস্থা!

যাক্, আর ভয় পেলে চলবে না, ঘুমাতে হবে। ঘুমের জন্যই তো এতকিছু। এবার তাহলে ভূত এফএম। কী আশ্চর্য! এবারও ভয় পাচ্ছি! মনে হচ্ছে, লাইট জ্বালালেই খাটের পাশে সাদা কাফনে মোড়া একটা লাশ দেখতে পাব। নাহ্, এটাও আর শোনা যাবে না। কী করি! হঠাৎ খাটের নিচে খসখস একটা শব্দ শুনি। ভাবলাম মনের ভুল! কিন্তু মন দিয়ে শুনে বুঝলাম, না, মনের ভুল নয়। তাহলে! চোর? তা হবে না নিশ্চয়ই! আমার খাটটা বক্স খাট, ভেতরে ঢোকার কোনও উপায় নেই। ওই কাফনে মোড়া লাশটা নয় তো! ভয়ের মাত্রাটা একলাফে দু-তিন গুণ বেড়ে গেল! রুমের লাইট অফ, দরজাও ভেতর থেকে বন্ধ! এবার শুরু হলো আরেক অত্যাচার। কেউ খসখস শব্দে পুরো ঘরে হেঁটে বেড়াচ্ছে! ভয়ে গলা শুকিয়ে গেল। এই গরমে পায়ের কাছে রাখা লেপ মাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছি। আমি কিন্তু কোনও গল্প বলছি না, সত্যি ঘটনাই বলছি। হঠাৎ ভাবলাম, নাহ্, এভাবে আর না। একটা বিহিত হওয়া দরকার। যা থাকে কপালে। চিৎকার করার প্রিপারেশন নিয়ে আস্তে করে মোবাইলের টর্চটা জ্বাললাম। টর্চ জ্বেলে এটা কী দেখলাম! একটা চিকা সারাঘরে হেঁটে বেড়াচ্ছে, ওটার পায়ে একটা কাগজ আটকানো, কোনওভাবে আটকে গেছে হয়ত! এটা আমার ঘরে আসলো কোত্থেকে?

শুভ সন্ধ্যা! কিছুকিছু আনন্দের মুহূর্তে আমরা আমাদের প্রিয় মানুষদের কাছে পাই না, অথচ জীবনে সেই মানুষগুলোর অবদান সবচাইতে বেশি। আজকের পত্রিকাটা দেখে বড়মামার কথা খুব মনে পড়ছিল আর সাথে তোমাকেও। কুহক, তোমার মনে আছে, তুমি সবসময় বলতে, জীবনে কষ্ট পেতে হয়, যতো বেশি কষ্ট, ততো মঙ্গল। এই যে এতো কষ্ট পাচ্ছি, তাতে কী মঙ্গলটা হচ্ছে, জানি না! পেয়ে হারানোর যে কষ্ট, সেটা ভীষণ যন্ত্রণার…….ভীষণ! এই যন্ত্রণাও বিধাতা আমাকে দিলো…….দিতেই হলো! যা-ই হোক, আমি আর আমরা সবাই চাই, তুমি আর তোমরা খুব ভাল থাকো। তুমি ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করবে, রোদে ঘুরাঘুরি করবে না। রোদে বের হলে সানগ্লাস পরবে, ডাব খাবে অবশ্যই। বাইরের খাবার খাও তো তুমি! যদি খাও তবে এখন একটু অ্যাভয়েড কোরো, প্লিজ।

একটা কথা শুনবে? জানো, আজকে আমার এক বন্ধু বললো, আমি নাকি তোমাকে পীর মানি! আসলে কী তা-ই? নাহ্‌! পীর মানি না। তোমার ভাল দিকগুলিকে ভাল লাগে। এই ভাললাগাটা একসময় ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে। এখন তোমার খারাপগুলিকেও ভাল লাগে। তবে আমি কখনোই সেই খারাপগুলি নিজের জীবনে গ্রহণ করবো না। আমি জানি, আমার জন্য কী দরকার, কী দরকার নয়। আমি সেটা বুঝেই তোমাকে আমার জীবনের অনুষঙ্গ করেছি। যদি তোমাকে পীরই মানতাম, তবে তো তোমার খারাপগুলিকেও অন্ধের মতো গ্রহণ করে ফেলতাম। অনেক ভালোবাসা তোমার জন্য।

আসব না আর মেসেঞ্জারে, দেখব না আর তোমাকে, করব না নক কখনোই! থাকো তুমি তোমার মতো! আচ্ছা বাবু, বলোতো ভালোবাসা কী? কাকে বলে? আমি কি তোমাকে ভালোবাসি? কতটা ভালোবাসি? নাকি ভালোবাসি না? আমি আসলেই জানি না, আমি তোমাকে ভালোবাসি কি না। কারণ ভালোবাসার সংজ্ঞা আমি জানি না। আমি তোমাকে ভালোবাসি কি না জানি না, তবে সারাটা দিন তোমার কথা ভেবে পার করতে পারি। প্রতিটা মুহূর্ত প্রতিটা ক্ষণ তুমি আমার চিন্তাসত্তা দখল করে আছো। এটা যদি ভালোবাসা না হয়, তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি না। তোমাকে ভালোবাসি কি না জানি না। তবে তোমার জন্য প্রতি মুহূর্তে এ হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। তুমি আমার নও, এটা ভেবে প্রতি মুহূর্তে কষ্ট পেতে থাকি। মেকি হাসিতে চোখের জল আড়ালের চেষ্টায় থাকি। এটা যদি ভালোবাসা না হয়, তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি না। আমি সত্যিই জানি না, আমি তোমাকে ভালোবাসি কি না! তবে তোমার কষ্ট দেখলে তার চেয়ে বেশি কষ্ট আমার লাগে। তুমি ভাল না থাকলে তার চেয়ে বেশি খারাপ আমি থাকি। সারাক্ষণই ভাবতে থাকি, কেমন আছো তুমি, কী করছ, খাওয়াদাওয়া ঠিকমত করছ তো! এটা যদি ভালোবাসা না হয়, তবে আমি তোমাকে ভালোবাসি না।

হয়ত আমার এই কথাগুলো পড়ে তুমি আমার উপর খুব রেগে যেতে পার। তবুও বলছি। বলতে চাইছি না, তবুও যে কেন লিখছি, জানি না। আগেই সরি বলে নিচ্ছি। তুমি যদি বিরক্ত হও, তাহলে আমাকে বলে দিয়ো, আমি তোমাকে বিরক্ত করব না আর। আর, হয়ত এখন আমাকে তোমার স্বার্থপর, নিচ, খারাপ মানুষ মনে হতে পারে। কিন্তু, নিজেকে আমি কখনওই ভাল প্রমাণ করতে চাই না। যা সত্যি, আমার মন যা বলে, আমি তোমাকে তা-ই বলি। তোমায় ভালোবাসা আমার জন্য অন্যায় হলেও পুরোপুরি পবিত্র। তোমায় আমি ভালোবাসি—এই অনুভূতি খুবই সৎ একটা অনুভূতি। এই পবিত্র ভালোবাসাকে আমি মিথ্যা দিয়ে অপবিত্র করতে পারি না।

ওই সেদিনের ঘটনায় তুমি আমার উপর খুব রেগে গিয়েছিলে। হয়ত এখনো রেগে আছো। স্বাভাবিক।

আচ্ছা, তোমার কি মনে হয়, আমি যে তোমাকে ভালোবাসি বলি, তা এমনিএমনিই বলি? অথবা কোনও ফেইক ইমোশন থেকে? সত্যি বলছি, না কিন্তু। আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি। দুনিয়ার অস্তিত্ব যেমন সত্যি, তেমনই সত্যি। আমি জানতাম, তোমাকে ভালোবাসাটা আমার জন্য অন্যায়, অনধিকার চর্চা। নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে গেছি প্রতিনিয়ত। কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি, জানি না। তবে মনে হয়, সেটা করতে পারিনি। তুমি জানো, তোমার পাশে অন্য মেয়ের কথা ভাবলেই আমার কষ্ট লাগে? কষ্টলাগাটা উচিত নয়। কারণ আমি তো জানতামই যে তুমি আমার না। যতটুকু কাছে পাই তোমাকে, তার পুরোটাই বোনাস। তবুও কষ্ট লাগে। তোমার ব্যাপারে অন্য মেয়েদের এত আগ্রহ, এত কৌতূহল, এত ন্যাকামি, কোনও কিছুই আমার সহ্য হয় না। সেখানে চোখের সামনে অন্য মেয়ে, সাথে তোমাকে………কীভাবে সহ্য হয়, বলো? সহ্য হয় না আমার। কষ্ট লাগে, খুব কষ্ট। প্রথম দিন…….বুঝতে দিইনি তোমাকে। ভেতরেভেতরে মরে যাচ্ছিলাম। পরদিন আর এই মিথ্যে হাসির অভিনয়টা করতে পারলাম না। মনে হচ্ছিল, তোমার কাছ থেকে দূরে চলে যাওয়াও ভাল, কিন্তু এভাবে কষ্ট পাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। তার সাথে অন্য ব্যাপারটা তো ছিলই। তুমি এর আগের পোস্টটাতে ওর একটা মেসেজ দিয়েছিলে। বুঝতে পেরেছি আমি। তুমি ওকে চা করে খাইয়েছো, না? এই জিনিসটাও কষ্ট লেগেছে।

আমি সেদিন নিজেকে প্রমিজ করেছিলাম, আমি তোমার কাছ থেকে অনেকঅনেক দূরে চলে যাব। ভুলে যাব তোমাকে, তোমার সব কিছু। আমার এ জীবনে কখনো তোমার ছোঁয়া লাগতে দেবো না। আমার ছায়াও আর তোমার জীবনে পড়বে না। খুব কেঁদেছিলাম আমি, খুব। বেশি কেঁদেছি এটা ভেবে যে তুমি আমাকে একটুও বুঝতে পারোনি! একটুও না! অনেক অভিমান হয়েছিল। কিন্তু আমি তো আর তোমার এতটা কাছের কেউ ছিলাম না, যার উপর অভিমান করা যায়। খুব রাগ আর কষ্ট লাগছিল। কিন্তু কী-ই বা করতে পারতাম আমি, বলো? কিচ্ছু করার ছিল না। আজ আমার তোমার সেই ঘ্রাণটা পাচ্ছি। খুব কাছেই পাচ্ছি। এত কাছে যেন আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে আছি। কেন এমন হচ্ছে, বলতে পারো?

আমি তোমার থেকে দূরে থাকার অনেক চেষ্টা করেছি তখন। নিজের মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। তবে হেরে গেছি আমি। বেহায়া নির্লজ্জের মত ঠিকই ঘুরেফিরে তোমার কাছেই যাই। কী করব, বলো, তোমাকে ছাড়া যে খুব কষ্ট হয়। কেন আমি তোমাকে ভালোবাসতে গেলাম? এমন কিছু করে কী হয়, যার বিনিময়ে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই নেই! আমি এখনও চেষ্টা করছি তোমার থেকে সরে আসতে। জানি না কতটুকু পারব। আচ্ছা, আমি যখন থাকব না, তখন একেবারেই ভুলে যাবে তুমি আমাকে?

তোমাকে আমার জীবনের একটা পুরনো গল্প বলি। শোনো।

অনেক দিন আগের কথা। কিছুদিন ধরেই আমার আইডিতে কিছু সমস্যা হচ্ছিল, যেমন উল্টাপাল্টা আইডিতে রিকোয়েস্ট যাওয়া, সেগুলি যখন অ্যাক্সেপ্টেড হয়, তখনই বুঝতে পারি যে রিকোয়েস্ট গিয়েছিল। এভাবেই যাচ্ছিল। ফেসবুকে খুব একটা আসতাম না………মানে, আমি তো খুব ফেসবুক অ্যাডিক্টেড, ফেসবুক ছাড়া একটা দিনও চলে না আমার, অন্য কোনওভাবে সময় কাটেই না, এটাই আমার বন্ধু। আমি নিঃসঙ্গ, তাই ফেসবুকেই আমার সময় কাটে। রাতদিন ফেসবুকে থাকি। কিন্তু ওই কয়দিন আগের তুলনায় কম আসতাম………তো এভাবেই যাচ্ছিল। কয়দিন পর দেখলাম, আগের মতোই দুটো আইডি আমার রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট করলো। আমি এমনিতেই আনফ্রেন্ড করে দিতাম, কিন্তু এইবার দুটো আইডির মধ্যে একটা আইডি আনফ্রেন্ড করেছি, আরেকটা আনফ্রেন্ড করার জন্য প্রোফাইলে ঢুকলাম…….আর আমি কী আনফ্রেন্ড করবো, প্রোফাইল পিকটা দেখেই আমার ভাল লেগে গেলো……….এরপর আমি নিজ থেকে ইচ্ছে করে উনাকে নক দিলাম। রেসপন্সও পেলাম। (প্রায় ছেলেই মেয়েরা নক দিলে রিপ্লাই দেয়।) উনার প্রোফাইল ঘুরে বুঝলাম যে উনি গল্প লিখেন, বিভিন্ন পেইজে উনার গল্প দেখলাম। দুএকটা গল্প পড়লাম……….আমার আরো ভাল লেগে গেল! তো একদিন আমি চ্যাট করতে-করতে নানান মজার মধ্যে হুট করে বলে ফেললাম যে আমি উনার উপর ক্রাশ! উনিও এটা মজা হিসেবে নিয়েছিলেন। চ্যাট হতে লাগল, কিন্তু উনি আমাকে পাত্তা দেন না।

আমি খুব করে বোঝাতাম আমার উনাকে ভাল লাগে……হয়তো ভালোবাসিও। বয়স কম ছিল তো, ওই বয়সে ভালোবাসি বলে ফেলাও সহজ, ভালোবাসি শুনে বিশ্বাস করে ফেলা আরও সহজ। একদিন উনি আমাকে বললেন, আমি যেন উনাকে আর ডিস্টার্ব না করি……..আমার খুব অপমান লাগছিল। আমি উনাকে ফেসবুক থেকে ব্লক করে দিই! খুব কষ্ট হয়েছিল। তবে আমি উনাকে ব্লক করে বেশিদিন থাকতে পারিনি। প্রায় এক কি দেড় মাস পর আমি আবার উনাকে আনব্লক করি আর নক করি……উনি মেসেজ পেয়ে অবাক হয়ে গেলেন। আমাকে কথায়-কথায় অনেক অপমান করতেন, তাও আমি কীকরে লজ্জাশরমের মাথা খেয়ে উনাকে আনব্লক করে নক দিলাম, এটা ভেবে পাচ্ছিলেন না। এরপর আবার আগের মতো চলতে লাগলো। উনি আমাকে বললেন, উনাকে যেনো একটা কারণ দেখাই, উনাকে আমার কেন ভাল লাগে। জানো, আমি সত্যি জানতাম না কেন ভাল লাগে। আমি সত্যি কথাই বলেছি, আমি জানি না। আবারও উনি আমাকে অপমান করলেন। আর আমাকে সবসময় স্ক্রিনশট পাঠাতেন, উনাকে যে মেয়েগুলো টেক্সট করেকরে ডিস্টার্ব করত, ওগুলোর। উনি বলতেন, আমিও নাকি ওদেরই মতো। এরপর একদিন উনি আমাকে বোন ডেকে ফেললেন। শুনে আমি ঝরঝর করে কেঁদে ফেলি। আমার মেজাজ এতো খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে আমিও উনাকে দাদা ডেকেছিলাম। বিশ্বাস করো, খুব খারাপ লেগেছে। এরপর আমি উনাকে দেখার জন্য একটা ছবি চাইলাম। উনি আমাকে খুব বাজেভাবে আমার মা-বাবা নিয়ে অপমান করলেন। আমি আর চুপ থাকতে পারিনি তখন। আমি কয়েকটা কথা বলে আবারো ব্লক করে দিয়েছি। উনার কাছে আমার নাম্বারও আছে। উনি আমাকে একটা মেসেজ করে সরিও বলেননি।

হয়তো আমি গুছিয়ে লিখতে পারিনি। আসলে তখন আমার একটা ভাল বন্ধু, ভাল একটা জীবনসঙ্গীর দরকার ছিল। আমি সবসময়ই চাইতাম, আমার প্রেমের বিয়ে হোক। এখনও চাই। আমার, কেন জানি না, উনাকে ভাল লেগেছিল………..হাহাহাহা

কেমন আছো তুমি? ভাল? আজ তোমার ছবিগুলো দেখে অনেক ভাল লাগছে। তোমাকে অনেক খুশিখুশি দেখাচ্ছে। তুমি খুশি থাকলে আমার মনটাও খুশিতে ভরে ওঠে। ইসস্! সবসময় যদি তোমাকে এমন খুশি থাকতে দেখতে পারতাম। হায়, দেখতে আর পাই কই! তুমি এত কমকম ছবি শেয়ার কর কেন? এখন থেকে অনেকঅনেক বেশি ছবি শেয়ার করবে। সারাদিন যা-ই কর, ছবি তুলবে আর শেয়ার করবে। আর আমি সারাদিন তোমাকে দেখতে থাকব আর দেখতেই থাকব।

আচ্ছা, তোমাকে যে প্রতিদিন আমি অ্যাত্তঅ্যাত্ত অর্থহীন কথাবার্তা পাঠাই, তুমি কি খুব বিরক্ত হও? অবশ্য বিরক্ত হওয়ারই তো কথা! অযথা সময় নষ্ট করে তুমি কেন এসব পড়তে যাবে? বেশি বিরক্ত হলে পড়ার দরকার নেই, ঠিক আছে? থাকুক না পড়ে ইনবক্সের কোনও এক কোণে, ক্ষতি কী? তবে আমার খুব ইচ্ছে ছিল প্রেম করব ফোনে না, চিঠি লিখে। সে আমাকে প্রতি সপ্তাহে একটা চিঠি লিখে পোস্ট-অফিসে পাঠিয়ে দেবে। আমি পুরো সপ্তাহ ডাকপিয়নের অপেক্ষায় বসে থাকব। হঠাৎ কোনও একদিন আসবে সেই প্রত্যাশিত চিঠি! কী দারুণ এক উত্তেজনা! আমি চিঠি নিয়ে দৌড়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করব। তারপর পড়তেই থাকব, আর পড়তেই থাকব। পুরো সপ্তাহ ধরে, পরের চিঠি আসার আগ পর্যন্ত। তারপর মনের সব আনন্দ, কষ্ট, হাসি, কান্না মিশিয়ে তার উত্তর দিতাম। হয়ত অতো ভাল হত না, তবে মনের কথাগুলো লেখার চেষ্টাটা তো করতাম! কী ভালটাই না হত, বলো! একশ’ বছর আগে আমার জন্ম হলেই কত ভাল হত! জন্মেছি এমন এক যুগে যেখানে মোবাইল ইন্টারনেট ফেসবুক ইমেইলের ভিড়ে চিঠির নামটাও মানুষ ভুলতে বসেছে। তবে এই প্রেমপত্র বস্তুটা যে একেবারেই পাইনি, তা কিন্তু নয়; পেয়েছিলাম। আমার মনে হয়, দুনিয়ার সবচেয়ে অসুন্দর মেয়েও কারো না কারো কাছ থেকে প্রেমপত্র পায়ই। একটার কথা মনে আছে। তিনি লিখেছিলেন, আমি চাইলে তিনি তার বুকের রক্ত দিয়ে আমার পায়ে আলতা পরিয়ে দেবেন। ইসস্ কী বিচ্ছিরি! শুনে মন গলবে তো দূরে থাক্, আমার গা গুলিয়ে এসেছিল।

এই শোনো না, তুমি তো কত কিছু লিখতে পার, আমাকে একটা চিঠি লিখবে? এমন একটা প্রেমপত্র! খুব কষ্ট হয়ে যাবে, না? আচ্ছা থাক, লাগবে না। আমি যে তোমাকে এই অখাদ্য লেখাগুলো পাঠাই, একবার লেখার পর নিজেও পড়ে দেখি না। পড়লে তো আর এই জঘন্য লেখাগুলো তোমাকে আর পাঠাতে ইচ্ছে হবে না, তাই।

আচ্ছা, তুমি কি জানো, আমি একটা হিংসুক প্রকৃতির মেয়ে? আমিও আগে জানতাম না যে আমি এতটা হিংসুটে। আমি ভাবতাম, আমি কত লক্ষ্মী মেয়ে। অথচ দেখো! পরে অবশ্য নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছি, মেয়েরা হিংসুটেই হয়, ওদের একটুআধটু হিংসে না থাকলে মানায় না। তাই না, বলো? হি হি।

তোমাকে আমি অ্যাত্তঅ্যাত্ত প্রশ্ন করি, তার একটারও উত্তর দাও না কেন তুমি, বলোতো? তুমি পচা পচা পচা, কথা বলো না, কিছু না! এতগুলির উত্তর দিতে না পারো, দুএকটার তো পারোই, তবু দাও না কেন? আচ্ছা থাক, দিতে হবে না। আমাকে ব্লক না করে তুমি যে তোমার ইনবক্সটা আমার জন্য ফ্রি করে দিয়ে রেখেছ এসব বকবকানির জন্য, সেটাই বা কম কী!

(★★এই লেখাটাকে সিরিয়াসলি নিয়ে আমার উপর মেজাজ খারাপ করার কিছু নেই। পুরোটাই আমার কল্পনা।★★)

এই শোনো না, তুমি তোমার চাকরিটা ছেড়ে দাও তো! কী দরকার এসব চাকরিবাকরি করার? এসব না করেও তো কত মানুষ ভাল থাকে। কী? থাকে না?

তুমি বরং কৃষক হও। ভাল হবে। সারাদিন মাঠে কাজ করবে। আমি রান্না করে, জংলিছাপা শাড়ি পরে দুপুরে মাঠে তোমার জন্য খাবার নিয়ে যাব। কাঁধের গামছা দিয়ে তোমার কপালের ঘাম মুছে দিয়ে ভাত মেখে যত্ন করে খাইয়ে দেবো, আর তালপাতার পাখা দিয়ে বাতাস করব। সন্ধ্যায় পথের দিকে তাকিয়ে থাকব, কখন ফিরবে। যদি ফিরতে দেরি করে ফেল, তো দৌড়ে গিয়ে তোমায় জড়িয়ে ধরে বলব, “এত রাইত করছো ক্যান, তুমি জানো না একলা বাড়িত আমার ডর করে?” (এটা পড়ে হাসবে না কিন্তু! এটা আমার ভালোবাসার অনুভূতি। কারো ভালোবাসা নিয়ে হাসাহাসি করা ঠিক না।)

নয়ত হতে পারতে পানের দোকানদার। সারাদিন ৫ টাকায় পানের খিলি বিক্রি করে সন্ধ্যায় দুটো খিলি নিয়ে আসবে বাসায়। রাতের খাওয়ার পর উঠোনে বসে দুজনে দুটো খিলি খেয়ে ঠোঁট লাল করতাম, আর চাঁদ দেখতেদেখতে গল্প করতাম। ভালই হতো, না, বলো?

তাও না হলে হতে পারতে কোনও গাড়োয়ান। গ্রামের মেঠো পথ ধরে গরুর গাড়ি চড়িয়ে বেড়াতে আর উঁচুগলায় গান ধরতে। মাঝেমাঝে তোমার গরুর গাড়িতে ঘুরতে নিয়ে যেতে আমাকে। ধরো, গ্রামে কোথাও মেলা বসেছে। তুমি এসে আমাকে বলবে, “বউ, যাইবি মেলা দ্যাখতে?” আর আমিও তখন মুখের উপর লম্বা ঘোমটা টেনে নিয়ে তোমার সাথে ছুটতাম মেলা দেখতে।

একটাও পছন্দ হলো না? তাহলে মাঝি হতে! মন্তু মিয়ার মত নৌকা বাইতে আর ভাটিয়ালি গান গাইতে। তার সাথে জাল ফেলে নদীতে মাছ ধরতে আর গ্রামের হাটে বিক্রি করতে। কখনো-কখনো দুএকটা বাসায় নিয়ে আসতে, আমি সেটা যত্ন করে তোমার জন্য রান্না করতাম। আমি তোমার সাথে নৌকায় ঘুরার বায়না ধরতাম। কোনও এক বর্ষার দিনে তুমি সব কাজ ফেলে শুধু আমাকে নিয়েই ঘুরতে নৌকায়। ইস্, ভাবতেই কত ভাল লাগছে!

কিছুই না হলেও তো ফেরিওয়ালা হতে পারতে। গ্রামেগ্রামে ঘুরে মাথায় করে চুড়িফিতে বিক্রি করতে। মাঝেমাঝে এক গোছা চুড়ি লুকিয়ে এনে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলতে, “তোর জন্য”। ওই অতটুকুতেই এতটা খুশি হতাম, যেন স্বর্গ হাতে পেয়ে গেছি!

কিছু তো একটা হতে পারতেই! চাকরিই কেন করতে হবে তোমাকে? ভাল থাকতে বেশি কিছু কি লাগে?

মাঝেমাঝে আমার তোমাকে জড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। আলতো করে হাতটা ধরে থাকতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে, তোমায় চিৎকার করে বলি, “এই! হাতটা ধরতে দেবে?” কিংবা বলি, “এই শোনো না! তোমার হাতটা আমার গালে একটুখানি রাখবে?”

কিছুই বলতে পারি না। কেন? জানি না। হয়তো ভয় পাই। আবার কখনো যদি অনেকটা সাহস নিয়ে বলেই ফেলি, “এই, আমায় একটুখানি জড়িয়ে ধরতে দেবে?” তাহলে আমার কথা শুনে তুমি হাসতে থাকবে আর বলবে, ওসব জিজ্ঞেস করে ইচ্ছেপূরণের দিন এখনো ফুরোয়নি বুঝি? তোমার যা মন চায় করো, আমি তো তোমারই, আমার সবই তো তোমার!

বুঝেছি তো তুমি আমার, অনন্তকাল ধরে তুমি আমার। কিন্তু আমার যে তোমাকে বলতে ইচ্ছে করে! দুজন দুজনকে ভালোবাসি জেনেও তো আমরা একে অপরকে বারবার করে ভালোবাসি বলি! কী? বলি না?

তুমি আমার কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় মানুষ। আর কিছুই জানতে চাই না, বুঝতে চাই না। তুমি সবচেয়ে খারাপ কাজটা করলেও সেটা খারাপ না আমার কাছে। কেউ যদি না বুঝে তোমায় কষ্ট দেয় ওটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। তুমি না খুব শক্ত মানুষ? কষ্টগুলো চিবিয়ে খাও না! সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু নিজেকে নিয়ে থাকো। ভালোবাসি খুব। ভালভাবে থেকো, আর ভাল থেকো।

বাবুসাহেব, কেমন আছেন শুনি? ভেবেছিলাম, একেবারেই ভুলে গেছেন! কিন্তু নাহ্। মনে আছে দেখছি আমার কথা। টেক্সট পেয়ে ভাল লাগল। তুমি এই বিকেলে ‘শুভ দুপুর’ কেন দিলে? দোষ ধরিনি কিন্তু। তোমার প্রতিটি কথা আর কাজ নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চিন্তা করা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে, তাই। নাকি বদঅভ্যাস? কী জানি! সেই নববর্ষের মত কালও তুমি আমাকে দুদুবার করে (!) ‘শুভ সকাল’ দিয়েছ। যাক, এত ব্যস্ততার মাঝেও আমাকে লেখার জন্য তোমার সময় হল, তাও আবার দুই-দুইবার! ভাবতেই কী ভাল লাগছে। কাল দিনটা খুব ভাল গেছে। তোমার কথা ভাবলে দুনিয়ার হাজারো মনখারাপ, কষ্ট, কিছুই ছুঁতে পারে না আমায়। তুমি কি জানো, তোমার একটা মেসেজ আমি কয়েকশবার করে পড়ি? ওই ছোট দুটো শব্দও যে কতবার পড়েছি, তার হিসেব নেই। তুমি আমার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান। যেকোনও কিছুর চাইতে মূল্যবান। আচ্ছা, এই মূল্যবান জিনিসটা পেতে আমাকে কী ছাড়তে হবে, বলোতো? জানি বলবে না, এর আগেও বলনি। আরে বাবা, টেনশন নেই। আমি জানি তো, তোমাকে পাওয়া আমার হবে না। তবুও বলি, বলেই যাই, বলতে ভাল লাগে, তাই। কল্পনাতেই সুখ কুড়াই। আচ্ছা, তোমাকে নিয়ে যে আমি এতএত স্বপ্ন দেখি, কল্পনাতে ভেসে বেড়াই, তুমি কি রাগ কর? খারাপ লাগে কি? আমি এটা কখনওই বলব না, তোমাকে আমিই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। তবে এটা বলব যে, আমি তোমাকে আমার সবকিছুর চেয়ে বেশি ভালোবাসি। সবকিছুর চেয়ে বেশি। বুঝেছো? নাহ্, বুঝনি। অযথা কেন যে তোমাকে বুঝাতে যাই! তোমাকে বুঝতে চাওয়া মানেই কষ্ট কুড়ানো। থাক্, তোমার আর বুঝে কাজ নেই। বাসা থেকে কবে ফিরবে তুমি? মনে হচ্ছে, অনেক অনেক অনেক দূরে আছো। তোমার জায়গায় থাকলে দেখা না হলেও মনে হয় কত্ত কাছে! খুব মিস করছি তোমাকে। ভাল থেকো তুমি, সবসময়।

ভাবলাম, অনলাইনে নেই। তাই একাএকাই লিখছিলাম।

এই শোনো, আমি তোমায় আরো ভালোবাসতে চাই। আরো……আরো বেশি ভালোবাসতে চাই। ভালোবাসার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছুতে চাই। যতদিন বাঁচি, প্রতিটা নিঃশ্বাসে তোমাকে ভালোবাসতে চাই, প্রতিটা শ্বাসে তোমার নামটাই জপ করতে চাই। নদীর সাথে সাগরের যে ভালোবাসা, তার চেয়েও বেশি ভালোবাসতে চাই, অরণ্যের সাথে পাখপাখালির যে ভালোবাসা, তার চেয়েও বেশি ভালোবাসতে চাই। আমি তোমাকে এতটা ভালোবাসতে চাই, যতটা ভালোবাসা দিয়ে ওই আকাশ ছোঁয়া যায়। আমি চিৎকার করে তোমায় বলতে চাই, “ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি”! তোমার ক্রাশ মুনমুন মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে সুনীলের ভালোবাসি, ভালোবাসি প্রায়ই শুনি। দেখিই না চেষ্টা করে, ওর মতন হয়ে তোমায় আমার প্রেমে ফেলতে পারি কি না! তোমায় ভালোবেসে পাগল হবো, তোমায় ভালোবাসার অপরাধে অপরাধি হবো। এই অপরাধে মৃত্যুদণ্ড হলেও প্রতিনিয়তই এই অপরাধটাই করে যাব। তুমি আমাকে ভালো না-ইবা বাসো, কোনও দুঃখ নেই। আমি বাসবো, বেসে যাবো। যতটা বেশি পারি, ভালোবাসব। কেন, জানো? আমার মনে হয় তোমাকে ভালোবাসতে যে সুখ, তা আর অন্য কোথাও নেই। আমি তোমার প্রতি অ্যাডিকটেড হয়ে পড়েছি। অনেক চেষ্টা করেছি নিজেকে বোঝাতে। কিন্তু পারছি না, কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত না পেরে হাল ছেড়ে দিয়েছি। আমি তোমাকে ভালোবাসব। তুমি চাইলেও বাসব, না চাইলেও বাসব। তুমি খুশি হলেও বাসব, রাগ করলেও বাসব। তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। তোমার ছবি যতই দেখি, আশ মেটে না যে! কিন্তু অমন করে দেখব কীকরে? আমি তো তোমার চোখের দিকেই তাকাতে পারি না। কেন পারি না, বলতে পারো? লজ্জা পাই? তুমি তো আমাকে বেহায়া নির্লজ্জ করে ছেড়েছ। তবুও কেন লজ্জা পাই? নতুন বউয়ের মত লজ্জা পাই আমি! হিহিহি। কী সহজে সব বলছি, অথচ তোমার সামনে গেলে পেটে বোম মারলেও একটা কথাও বের হবে না। আমি যে একটা কী! আমার অন্তরে মনে, চিন্তায় চেতনায়, আবেগে অনুভূতিতে, ভাবনায় পরশে, মানে অভিমানে, রাগে অনুরাগে, নিদ্রায় জাগরনে, শয়নে স্বপনে, আকাশে ভুবনে………শুধু তুমি, তুমি আর তুমি। আমার সত্তাটা শুধুই তুমিময়। তুমি আমার কাছ থেকে দূরে চলে যেতে পারো, কিন্তু পারবে কি কখনো আমার মন থেকে দূরে যেতে? তোমাকে অনুভব করতে আমার যে তোমাকেই লাগে না!

এই তুমি কিউপিডকে চেন? দেবী আফ্রোদিতির ছেলে। এই কিউপিড নাকি একবার কারো দিকে প্রেমের তীর নিক্ষেপ করলে সে আর ফিরতে পারে না কিছুতেই। সাইকি ছিল তার ভালোবাসার মানুষ। সাইকি কিউপিডকে যেমন ভালোবাসতো, আমিও তোমাকে তেমন ভালোবাসি। নাহ্, তার চাইতেও বেশি ভালোবাসি! এই যে প্রতি মুহূর্তেই একটা মিথ্যা স্বপ্ন দেখে সুখ কুড়িয়ে যাচ্ছি, তুমি আমার হবে, শুধুই আমার! কবে যে এ ঘুম ভাঙবে! তুমিই বরং জাগিয়ে দাও না!

সেই ১৭ তারিখ থেকে কথা নেই তোমার সাথে। কী যে অস্থির লাগছে, এটা বলে বোঝাতে পারবো না। তোমাকে নিয়ে নিজের মত ওই থাকাটা কী খারাপ ছিল? তুমি অবজ্ঞা করতে যখন, তখন মেনে নিতাম। ভাবতাম, তাতে কী? তবুও তো তুমি আমার। কিন্তু এখন? তোমার মন চায় না আমার কথা জানতে? একা আমিই কেন বিরক্ত করবো তোমাকে বারেবারে? আর বিরক্ত যে হচ্ছ, তাতো রিপ্লাইয়েই বোঝা যায়—শেষ দুই দিনের। ১৯ তারিখ তুমি ওভাবে করে আমাকে কেন বললে? এটা তো তুমিও জানো, তোমাকে আমি শুধুই বন্ধু নয়, তার চেয়ে বেশি কিছু ভাবি। অন্য সবার চেয়ে আলাদা করে দেখি। জানো না সেটা? আমার এই একা পৃথিবীতে তুমি কী, সেটাও বলেছি তোমাকে। কিন্তু আমার জন্য তোমার সত্যিকারের কোনও টান কি আছে, বলো? থাকলে একটাবার জানতে চাইতে না, কী করছি আমি, কেমন কাটছে আমার দিনগুলি, বৈশাখটা পার করলাম কীভাবে! কই, করনি তো! কোনও টানই নেই আমার জন্য? একটুও না? যা জানতে চাই, তার উত্তরটুকু শুধু দাও, দায় সেরে। কীসের দায় তোমার আমার কাছে? আমার সাথে কি তোমার দায়েপড়া সম্পর্ক, বলো?

অনেক অনেক অনেক কান্না জমে আছে এই বুকে। দুচোখ বেয়ে গড়িয়েও পড়ে যখনতখন যেখানেসেখানে। কান্নার জল কখনো বাঁধ মানে না কোনো। কান্না গিলে নিতে যে আরো কষ্ট, সেটা তো জানো! কী? জানো না? তুমি কি আমার জায়গা থেকে আমাকে কোনও দিনই বুঝবে না?

ভালোই তো আছো! নিজের মতো দিব্যি আছো! আজ পাঁচ দিন ধরে তুমি কোথায় আছো, কী করছো, কেমন আছো, জানতে চাইছি না। তাতে খুব ভাল আছো তো, না? আমি যা-ই বলি, তাতে তোমার প্রবলেম, যা-ই জানতে চাই, নতুন সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় তোমার জীবনে, ঠিক? তোমার শান্তি বিনষ্ট হয়। আমি ইদানিং খালি অশান্তিই তৈরি করছি তোমার জীবনে। আমার উচিত তোমার থেকে দূরে চলে যাওয়া—অনেক দূরে। আমাকে ছুটি দাও তুমি।

এই এক জীবনে, শরীরের যে অনুভূতিটুকু আছে, সেগুলোর দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়ে চোখ বন্ধ করে হলেও তোমাকে ভালোবাসা যায়, আর কিছুর দরকার হয় না। আসলেই তোমাকে ভেদ করা সম্ভব নয়। ধরা যাবে, ছোঁয়া যাবে, কিন্তু ভেদ করা যাবে না, আর ব্যবচ্ছেদের তো প্রশ্নই আসে না! তবু কিছু অনুভূতি তো প্রকাশ করার মতো, তবে সেগুলিতে তোমাকে নিয়ে আমার একটা ভাবনাও আসবে না। আমায় আর কতটা জন্ম দিলে আমি তোমাকে নিয়ে আমার ভাবনা বা অনুভূতিগুলো প্রকাশ করতে পারবো, সে অক্ষমতার খোঁজ কেবল ঈশ্বরই জানেন! এই যে গভীর শ্রদ্ধাবোধটুকু একাএকাই অনুভব করছি, আছে বেশই, তবু প্রকাশ করতে পারি না, একটু প্রণাম করতে চাই তোমাকে, সেও হয় না, তোমার দুই পায়ে আমার হাতদুটো রেখে আর তোমার দুই পায়ের মাঝখানে আমার মাথা রেখে আমার চোখ দিয়ে তোমার পায়ে পানির স্পর্শ নিতে চাই, হয়ত তা অনেক বড় আস্পর্ধাই, অনেক বড় চাওয়াও একই সাথে! ঈশ্বর আমাদের প্রণাম করার সুযোগ দিয়েছেন মনভরে, অথচ একটা মন ভাল করে দেয়া জোছনাকে প্রণাম করতে আমরা বেমালুম ভুলে যাই! আজ যাকে মন থেকে প্রণাম করতে চাইছি, অথচ পারছি না এবং পারব কি না তাও জানি না, পাপের শাস্তি নিতে আমার জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তার কাছে ক্ষমা চাইবো। শুধু একটা প্রণাম করতে চাই মানুষটাকে। সত্যিই কি কখনো এমন সৌভাগ্য হবে যে মানুষটির পাশে বসে মন্দিরে ঈশ্বরের চরণে নৈবেদ্য নিবেদন করছি এবং একই সাথে প্রণাম করছি দুজন মিলে! সে কী চাইছে জানি না, তবে তারই পাশে মাথা নত করে তারই জন্যে আকুতি জানাতে পারবো কি কখনো? মনে হয়, সাহস বেড়ে যাচ্ছে দিনদিন, আবারো অসম্ভব রকমের অবাস্তব চিন্তা করছি। ক্ষমা করে দিয়ো। আর ঈশ্বরকে তো রোজরোজই ক্ষমা করে দিতে বলি, রোজই বিরক্ত করি এবং একই ভুল করি, তাই তাঁকে আর নতুন করে জ্বালাচ্ছি না। কেন এমন হলো, জানি না। সম্মান আর শ্রদ্ধাবোধ পর্যন্ত ঠিক ছিল, কিন্তু ভালোবাসাটা সত্যিই দুঃসাহসিক অভিযানের মতো হয়ে গেছে আমার জন্য। হয়ত এর খানিকটা সুযোগ তুমিই করে দিয়েছো আর আমিও অমনিই লুফে নিয়েছে সেই সুযোগটুকু!

এতটাই বাস্তববাদী ছিলাম আমি, অথচ হেরে বসে আছি দিনশেষে! দীপাবলিরা অনেক বেশি আবেগে ঝিমিয়ে আর মিইয়ে পড়ে। আমি হুমায়ূনের নায়িকাদের মতন মায়াবী কখনোই ছিলাম না, আমার কাছে মনে হতো, মেয়েরা হবে সমরেশের দীপাবলির মতন, সাতকাহন পার করেও ওরা শক্ত ব্যাধির মতো অটুট থাকবে! কিন্তু আমার ধারণা ভুল। হুমায়ূনের নায়িকাগুলো একটু আঘাত পেলেও কষ্ট পেয়ে বসে থাকে, আবেগপ্রবণ হয়, সেটাই ভাল উপায়! শব্দ না করে ঝিম ধরে থাকে, বড় কিছুও গায়ে লাগায় না, কিন্তু ওরা নিজেরাই জানে না যে ওদের ভেতরের সবকিছু ওরা নিজেরা বুঝে ওঠার আগেই ওরা সাধ করে ভুল ঘরে ঢুকে পড়ে। আমার ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। চাইনি, চাইনি করতে-করতে মনের ভেতরে গাঁথা হয়ে গেছে তোমার ছবি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। তোমাকে সারাজীবন দূর থেকেই ভালোবাসা যায়, অসীম শ্রদ্ধাবোধ জমিয়ে রাখা যায়, সীমাহীন মমত্ব অনুভব অনুভব করা যায়, কিন্তু কাছে পেতে চাওয়াটা বড়ই অন্যায়! আমার এই প্রার্থনা আজ আস্পর্ধা এবং দুঃসাহস ছাড়া আর কিছুই না। তোমার পা ধুয়ে জল খেলেও বোধহয় এই অন্যায়ের কোনও শাস্তির কিছুই হবে না! আমি আবারো ক্ষমা চাইছি। তুমি আমার মধ্যে রবে ঠিকই, কিন্তু নীরবে এবং খুব বেশি যত্নে। আমায় করুণা করে হলেও ক্ষমা করে দিয়ো।

(তুমি কি খেয়াল করেছো, আমি অনেকদিন তারিখ লিখি না? কী হবে লিখে? রাতের পর রাত না ঘুমিয়ে তোমাকে ভাবি, এটা জানিয়েই বা কী লাভ! একটু পর ভোর হবে। হোক! তুমি কি কেয়ার কর নাকি?)

তুমি খুব বাজে লিখ, অনেক পচার পচা। তুমি একদমই ভাল না। কেন এসব পচাপচা লেখালেখি? কেন সবাইকে ধরেধরে বুঝাতে হবে সবকিছুই? তুমি কি পঞ্চায়েত খুলে বসেছ নাকি? নাকি মাস্টারি ভাব এখনও যায়নি? যেসব লেখা পড়ে আধাঘণ্টা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, সেসব আবার ভাল লেখা নাকি? এত বাজে ফিকশনধর্মী লেখা আমি কখনো পড়িনি! কেমন করে লিখ এসব? আমি একদিন ঠিকঠিক স্ট্রোক করব, দেখো! আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী থাকবে তুমিই! কী ভাবছো? মিথ্যে বলছি? তোমার দিব্যি দিয়ে বলছি, ভীষণ কষ্ট হয়েছে তোমার শেষ লেখাটা পড়ার পর। আরশি চরিত্রটা যে আমি নিজেই! তবুও তো দয়া করে আরশিকে স্যারের সান্নিধ্য পাইয়ে দিয়েছো লেখায়, কিন্তু বাস্তবে ঠিক কতটা দয়া কর তুমি আমাকে? বলেছিলাম না, লেখকগুলো লেখে একরকম কিন্তু বাস্তবের পুরো এলাকা আলাদা! জানি, আরশির মত কখনোই তোমাকে এমন ফলো করতে পারবো না, কারণ ওটা তো কল্পনা আর এটা তো বাস্তব। বাস্তবের অবাস্তব ভালোবাসার মানুষটি যদি রেগে যায় একবার, তাহলে তো শেষই হয়ে যাবো! আমি বড্ড দেরি করে ফেলেছি। হ্যাঁ, জানি, আমি যে কেমন বোধ করি সবসময়ই, তা বলা হবে না, বোঝানো যাবে না, দেখানো যাবে না। তোমার প্রিয় লেখক তলস্তয় বলেছেন, অতীত আর ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই, বর্তমানই সব। ঠিকই বলেছেন! যদি ওই ভবিষ্যৎ না পাই কখনো, তখন? জীবন তো অনিশ্চিত! সাথে ভালোবাসাও। তবে কেন মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারছি না? বলার কথা তো ছিলও না! তবে কেন ভেতরে লুকানো মহুয়াটা বারবার তাড়া দিচ্ছে? ঠাস করে মনের সব কথাই বলে ফেলতে বলছে? বলে ফেললে কী হবে? দূরত্ব আরও বাড়বে? কিন্তু আমাদের মধ্যে তো কোনও কাছে আসার কিংবা থাকার ব্যাপারই নেই! কিছু ছিলও না! তাহলে কীসের ভয় আমার? আমার এখনো খুব কষ্ট হচ্ছে। আবারো বুকে মশাল মিছিল হচ্ছে। কষ্টরা আবারো আমায় উপহাস করছে। আমাকে নির্বুদ্ধিতার দণ্ড দিচ্ছে। আবারো বলছি, আমার বুকে হাতটা রাখলে তুমি পুড়ে যেতে। এই মুহূর্তে যদি তোমার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলতে পারতাম বা এরকম কোনো সুযোগ পেতাম, তবে সত্যিই তা-ই করতাম! কিন্তু তাতে তোমার কিছুই এসে যায় না। তোমাকে ভালোবাসি, সেটা আমার সমস্যা, তোমার তো না। বারবার সীমা লংঘন করি। ভুলে যাই বারবার এবং মনেও করতে চাই না যে আমার কাছে তুমি কেবলই শরীরের প্রয়োজনে আসো, আর কিচ্ছু না। এইটুকু ছিল বলেই তো তোমাকে অতখানি পেয়েছিলাম। অন্তত ওদের চেয়েও একটু হলেও আমি বেশি লাকি। ঈশ্বরকে অসংখ্য ধন্যবাদ আবারও। তিনি আমাকে তোমার নজরে পড়বার মতো হলেও এই সৌন্দর্যটুকু দিয়েছেন, নইলে আমার কাছে আসার আর কী-ই বা কারণ ছিল তোমার? হ্যাঁ, আমি আহামরি মারাত্মক সুন্দরী নই, কিন্তু তুমি কাছে টেনেছ বলেই নিজেকে এখনো ওইটুকু ভাবার সাহস হয়। এই সাহস তো তুমিই বাড়িয়েছ, আমার কী দোষ?

তোমাকে যখনই দেখি, তখনই আমার হার্টবিট বাড়তে থাকে কেন? এটা কি হার্টের কোনও সমস্যা? না মনের? এই বাড়তে থাকা হার্টবিটের মাঝেও কত সুখ, কত আনন্দ, তা যদি তুমি বুঝতে! একটা কথা বলো তো, তুমি কি সত্যিই আমার ভালোবাসাটা বুঝতে পারো? নাকি পারো না? এসব শুনলে কি মনে হয় বানিয়ে লেখা কোনও গালগল্প? বানিয়েবানিয়ে আর কতটা বলা যায়, বলো? আমি যে তুমি নই! আমার মনটাকে কি একটুও ছুঁতে পারো না? একটু কান পেতে শুনো তো, ওই হার্টবিট তার ছন্দের তালে কী বলতে চাচ্ছে! শুনতে কি পাচ্ছ? না পেলে থাক। তোমার কাছে তো আমার কোনও চাওয়া নেই, তাই তুমি শুনতে না পেলেও কিছু হবে না। আমার যত চাওয়া, সবই কল্পনায়। তুমি জানো, কল্পনায় আমি একটা রাজ্য তৈরি করেছি? সেই রাজ্যের একচ্ছত্র রাজা তুমি। চোখ বন্ধ করে যখনতখন সেই রাজ্যে চলে যেতে পারি। তারপর…… তুমি, তুমি আর তুমি। সেই জগতে আমি হারিয়ে যাই তোমার মাঝে। চোখ বন্ধ করে অনুভব করি শুধু তোমাকে। চেষ্টা করি অনুভব করতে তোমার সেই ঘ্রাণ, তোমার সেই স্পর্শ, প্রতিটা শ্বাসপ্রশ্বাস—আমার এক টুকরো স্বর্গ, আমার জীবন! আমি এই স্বর্গেই বাঁচি, এই স্বর্গেই মরি।

আচ্ছা বলোতো, প্রেমে পাগল হওয়াটা আসলে কী? আমি কি সত্যিসত্যি তোমার প্রেমে পাগল হয়ে গেলাম? হতেও পারি, সারাটাদিন তো তোমায় নিয়েই চিন্তা করি! এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারি না। ঘুম থেকে উঠে মনে হয়, তুমি উঠেছো কি না, খাওয়ার সময় মনে হয়, তুমি খেয়েছো কি না, ঘুমানোর সময় মনে হয়, ঘুমিয়েছো কি! তোমাকে নিয়ে সংসার পাততে পারলে মন্দ হতো না, বলো? সারাদিন খুনসুটি আর দুষ্টুমিতে ভালই কেটে যেত! তুমি, আমি আর একটা ছোট্ট বাবু। না থাক্, বাবুর কথা বলব না, মনখারাপ হয়ে যায়। একটা অপরাধবোধে ছেয়ে যায় মনটা, কষ্টও লাগে। বাদ এই প্রসঙ্গ।

তোমাকে তোমাকে তোমাকে আমি বিরক্ত করতে চাই। আচ্ছা, কেন এত আবেগ বেদনা মায়া দিয়ে লিখ, বলোতো? কীসের হাহাকার এত? সবই কি এখনও শতাব্দীর জন্য? কী চাও তুমি? কাকে চাও? কেমন চাও? কিছুই তো পছন্দ হয় না তোমার! কিন্তু যখন চাওই না, তাহলে কেন ওভাবে লিখ? এত আড়ালে বিশ্রীভাবে আঘাত কীকরে কর? একটুও মায়া লাগে না তোমার? হ্যাঁ, জানি তো, সমস্যা হলে পড়তে না করে দেবে, কিন্তু নিজে আর ভাল হবে না! কাউকে ভালোবাসবে না, কাউকে কাছে টানবে না, নিজেও কারও কাছে যাবে না। এটা কি কোনও জীবনের মধ্যে পড়ে? তোমাকে এতটা বিশ্লেষণ করেকরে আমি নিজে পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমার এই কথাগুলো শুধু এখানেই পড়ে থাকবে, কোথাও যাবে না, আর আমিও একদিন হারিয়ে যাবো, অথচ ভেতরটা শূন্য হয়ে আছে, শূন্য থেকেই যাবে। আমি কখনোই তোমাকে দিয়ে আমার ভেতরটা পূরণ করতে চাইনি, শুধু ভালোইবেসে গেছি। আজ লেখার মত একটি কথাও আর নেই। অনুভূতিগুলো বোবা হয়ে যাচ্ছে। ওরা আর কত অপেক্ষা করবে? ওরাও তো ক্লান্ত হয়, নাকি? ওরা যে আজ মৃতপ্রায়!

আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। ভাল থেকো, কেমন?