১. আমার মন্দিরের দিকে তাকিয়ে দেখো; মনে হবে, নৈবেদ্য শুধুই, পূজারি নেই। আমার বাগানের দিকে তাকিয়ে দেখো; মনে হবে, গোলাপ শুধুই, মালি নেই। ২. গোলাপের পাপড়িকে দেখেই গোলাপ চিনি; কাঁটাকে নয়। হৃদয়ের অনুশোচনাকে দেখেই মানুষ চিনি; ভুলকে নয়। ৩. হেমন্তের দিনে, মাঠে মাঠে ওরা ব্যস্ত খুবই…ফসল তুলতে। এদিকে আমি মাচায় বসে রৌদ্র পোহাই… ছাদের নিচে, পাছে বৃষ্টি আসে! ৪. বসন্ত গেছে, গ্রীষ্ম এসেছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি, দেবদূতেরা কাপড় শুকোয়, পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে। ৫. পাহাড়ি টিয়ার লেজে লেজে ছড়ানো সবুজ…গাছেদের ক’রে উপেক্ষিত। সেই সবুজে দু-চোখ রাখি; রাত্রি নামে, ক্রমেই চোখ ক্ষয়ে যায়। ৬. সাগরের তীর ধরে হাঁটতে হাঁটতে, দেখি, পাহাড়চুড়োয় সূর্য ওঠে। পাহাড় কি সাগর, ঢেউ কি আভা… এই দ্বিধাতেই আটকে থাকি। ৭. পাহাড়ের ওপাশ হতে ভেসে আসে হরিণের তীব্র চিৎকার! সেই চিৎকার শুনে পাহাড়ের এপাশে চলে ভোজের বুনো আয়োজন। ৮. সেতুর উপর হাঁটার সময়, রাজার মুকুট দেখে হঠাৎ করেই… রাত্রি তাড়াই, আর দিনের আলো ক্রমেই আসে। ৯. আকাশের দিকে তাকাই যখন, ভাবনাগুলি ওঠে আরও উপরে, চাঁদের ছায়ায় আঁধার নামে… রৌদ্রের তীব্র দহনে পালাই যখন। ১০. বাড়ি আমার এই শহরকোণেই, ঘরটা তবু গ্রামে। আমি ভালোই থাকি দালানকোঠায়, বাঁচি কুঁড়ের ছনে। ১১. প্রবল বর্ষণে ফুলের তীব্র রংটাও যায় ধুয়ে! আমার ভালো লাগে যা, তা নিয়ে একদিন কত মাতামাতি… রঙের সাথে যায় ভেসে গোটা এক রঙিন জীবন। ১২. যে আগন্তুক ঘুরে এসেছে অনেকটা পথ, যে বন্ধুটি পাশে থেকে যায় হাসি রেখে মুখে, এমন সব ধরনের মানুষ, যারা করে আসা-যাওয়া--- পাহাড়ের এদিকটায় এসে হয় মিলিত, বিশ্রাম নেয়। ১৩. জেলেদের জন্য প্রার্থনা করি, জালে-নৌকোয় মাছ ভরে যাক। মাছেদের জন্য প্রার্থনা করি, সমুদ্রে-খাদে জেলে ভরে যাক। ১৪. হে ঝড়ো হাওয়া, মেঘ নিয়ে এসো! স্বর্গকে আজ ধূসর রঙে রাঙাও, যাতে ভুল করেও, অপ্সরারা দেবদূতদের না ভাঙে ডানা! ১৫. নদীর জল এসে আছড়ে পড়ে পাহাড়ের পায়ে, আমার ভালোবাসার মতো দৃঢ় জলের সে শরীর, রাত নামলেও…জলের মধ্যে জলের নয়, শক্তির খেলা চলে। ১৬. আহা, ভালোবাসা কেন দেয় না ভাবতে! ইচ্ছেগুলিকেও করে এলোমেলো। মনে হয়, আমি যেন শাড়ির পাড়ের সেই নকশা, যা আলগোছে গেছে খুব এঁকেবেঁকে। ১৭. ভেবো না, মা; একদিন ফিরব আমিও হাতে নিয়ে সওদাপাতি। সময়টা যেন ফুরোচ্ছেই না, ফুরোনো সময়ের শাপে। ১৮. পাহাড়ের চূড়ায় চূড়ায়, পুরনো গাছের ফাঁকে ফাঁকে, দীর্ঘশ্বাসের বসতি, একাকী ফিসফিস। এইসব ভুলে একদিন ঠিকই তোমার কাছে যাব। ১৯. নদীতে ভেসে-চলা খড়কুটো আর কিছু শুকনো হলদে পাতা, ওরা সবাই যেন চিরজীবী ঈশ্বর! আমাদের দিকে তাকায়, আর মৃদুস্বরে বলে, এইসব মধুর গানের একটিরও সুর ঠিক নেই। ২০. সমুদ্রের ঢেউগুলি পায়ের কাছে এসে চুমু খায় অবিরত, তবু সে আসে না। যখন পাহাড়ে পাহাড়ে হাঁটি এবং চোখ রাখি নিজের চোখে, তখনও, ভুল করেও, স্বপ্ন ছোঁয় না।