শূন্যতার সাক্ষাৎকার

  
 আমার কী হয়েছে, তা জানতে আমাকে পাঁচমিনিট সময় দিতে হবে।
 তোমার সময় নেই। তুমি ব্যস্ত। ভীষণ ব্যস্ত।
 আমার অভিমান হয়েছে, তুমি বুঝতে পারছ না।
 আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে, তুমি বিশ্বাস করছ না।
 তোমার কবিতার নায়িকাদের মতো মরে যেতে আমারও ইচ্ছে করে।
 তুমি আমার কিছুই বুঝতে পারো না।
  
 আমি ইদানীং ঘুমোতে যাবার সময় ভাবি, এই ঘুমটা আর না ভাঙুক।
 ঘুম ভেঙে যায়, তুমি আবারও সময় দাও না।
 আমার জন্য কখনও মাত্র দুইমিনিট রাখবে?
 না, রাখতে হবে না। রেখো না। তুমি কিছুই কোরো না আমার জন্য।
 আমি তোমার কে? কেউ তো নই…
  
 আমার পেটভর্তি ক্ষুধা। আমাকে খেতে বলার কেউ নেই।
 আমি হয়তো আবারও ঘুমিয়ে পড়ব। আমাকে ডেকে দেবার কেউ নেই।
 ঘুম না ভাঙলেও কেউ জানতে পারবে না, কেউ আমার খোঁজ করবে না।
 আমার খোঁজ নেবার কেউ নেই। এসব আমার ভালো লাগে না।
  
 তোমাকে বিরক্ত করি। এটা আমি জানি।
 এই কাজটা ঠিক নয়। আমি তা-ও জানি।
 আমার প্রায়ই মনে হয়, আমার তোমাকে অনেক কথা বলার আছে।
 আবার মনে হয়, সত্যিই তুমি সময় দিলে,
 তখন আমি আদৌ কিছু বলতে পারব না।
  
 তুমি এখানে এসো না। তুমি অনেক ব্যস্ত।
 তুমি এলে আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে চাইব।
 তুমি তখন আমার দিকে না তাকিয়েই চলে যাবে।
 তুমি আমাকে কিছুই বলবে না। তোমার কিছুই বলার নেই।
 তোমার ব্যস্ততা আমার সহ্য হচ্ছে না। আমার কী যেন হয়েছে…
  
 তুমি আজকাল সবার কাছে জিতে যাচ্ছ।
 এবং, তুমি আজকাল নিজেকে আর ভালোবাসছ না।
 সবার কাছেই জিতে যায় যারা, ওদের একজনও নিজেকে ভালোবাসে না।
 তোমাকে এভাবে দেখতে আমি অভ্যস্ত নই।
 আমার ভালো লাগছে না, আমি কখনও তোমাকে এই অবয়বে স্বপ্নে দেখিনি।
  
 তুমি কিছু সময়ের জন্য হেরে যাও।
 হাসো, বাঁচো। ইচ্ছে হলে…কাঁদো! বুক ভরে নিঃশ্বাস নাও। সবুজ দেখো, ফুল ছোঁও।
 তুমি একবার হাসো, মন থেকে হাসো। দেখবে, তুমি জিতে গেছ।
 তুমি এগোচ্ছ না, তুমি কেবলই হাঁটছ। তুমি কিছুতেই এমন নও।
  
 তোমার কিছু কষ্ট আমাকে দিয়ে দাও।
 এতটা ভারী হয়ে থেকো না। আমাকে কষ্ট দেবার মানুষ ভাবো। অন্তত একবার?
 চোখ মেলে দেখো, আমার চোখে জল। একটু মুছে দেবে?
 আমার কষ্ট নেই, ভয় পেয়ো না। তুমি এবার অশ্রু মোছো।
  
 আমি সব কিছুর সাথে আপোষ করতে শিখে নিয়েছি।
 ব্যাপারটা সুন্দর, ব্যাপারটা মসৃণ। আমাকে আহত করে ফেলা এখন কঠিন।
 তুমি আমার অশ্রু মুছে দিচ্ছ না। তুমি আবারও হারিয়ে যাচ্ছ।
  
 আমার বালিশ ভিজে যাচ্ছে। তুমি কিছুই বুঝতে পারছ না।
 তোমার ঠিকানা দাও। একটা ক্যুরিয়ার যাবে।
 কষ্ট করে রিসিভ কোরো। এই ভেজাবালিশটা আমার কোনও কাজে আসবে না।
  
 বহু, বহু এবং বহু বছর পর আজ শাড়ি পরেছি।
 এবং, শাড়ি পরে একটা সেলফি তোলার পর
 আমি মনে মনে তোমাকে ফোন করেছি। তিনটা কথা বলেছি।
 এক। আমি তোমার কবিতা বুঝি না। তুমি আমাকে কবিতা বুঝিয়ে দাও।
 দুই। একটু আগে আমার একটা বাচ্চা-দুঃখ বাড়ল। খুব শখ করে একমগ দুধ-চা বানিয়ে বারান্দায় আসার পর চায়ে পোকা পড়েছে। তাই আমার মন খারাপ। তুমি আমার মন ভালো করে দাও।
 তিন। তোমাকে আমার খুব জ্বালাতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ভয়ও লাগছে, যদি তুমি বকা দাও!
 …ও আচ্ছা, আরও একটা কথা ছিল। সেলফিটা সুন্দর এসেছে। তোমাকে পাঠাতে ইচ্ছে করছে।
  
 আমি একটা গান গেয়ে রেকর্ড করেছি। ওটা খুব কুৎসিত শোনাচ্ছে। তোমাকে পাঠাই?
  
 আমি কেন এমন করছি, বুঝতে পারছি না। এটা ঠিক না।
 দেখি, কী করতে পারি। আমি হয়তো কিছুই করতে পারব না।
 আমার ঘুম পাচ্ছে না, কিন্তু আমি শুয়ে থাকব।
  
 তুমি এরকম নিষ্ঠুর আগে কখনও ছিলে না…