লিপি ধূসরিত: নয়

১২১।
বেচারা বেঁচে ছিল এক গরিব যুবক হয়ে;
চালচুলোহীন, সম্বল বলতে এক প্রেয়সী।
মরার পর তাকে প্রেয়সী রাখে অশ্রু বয়ে;
কী মূল্য সেই ধনীর, হয় যে মরণেই বাসি?




১২২।
হে বিধাতা! পাঠালে কেন তোমার সেই বন্ধুটিরে,
নিজের কাজে এত জলদিই ফিরিয়ে নেবে যারে?




১২৩।
মানুষের জীবন সুখী হয়ে ওঠে পালন করলে ধর্ম,
মৃত্যুর পর দিতে আয়ুর সাক্ষ্য এগিয়ে আসে কর্ম।




১২৪।
বন্ধুরা সব একে একে গেছে আলোর রাজ্যে চলে,
এক আমিই বসে অপেক্ষাতে এখনও সময় হয়নি বলে।
বেঁচে গেছে, বার্ধক্যের যাপন ওদের হয়নি করতে বরণ,
এদিকে আমি বোঝা হয়ে বেঁচে করছি ওদের স্মরণ।




১২৫।
মাটির ধন একদিন এই মাটিই ফিরে পায়,
মায়ার ভিড়ে মাঝে কিছু সময় কেটে যায়।
জীবনের নাটক, মৃত্যুর পরে হয় মঞ্চায়িত,
যে যা বলুক, সত্য যেটুক, হবেই প্রকাশিত।




১২৬।
চলে যে গেছে কবরের তলে, কিছু বলা তারে অন্যায়,
যে দায়ে তারে করো ঘৃণ্য, সে খণ্ডাবে কি আর তায়?
মরে যে গেছে, কেন আজ তার করছ এই বিচার?
বেঁচে যে আছে, তার হাতে কেন হচ্ছ‌ই-বা নাচার?




১২৭।
তুমি মরার পরে ওরা গড়েও যদি তোমার পাথরমূর্তি,
কী এসে যায়; দেখবে, সেখানে ধুলোই করছে ফুর্তি!
তার চেয়ে ঢের ভালো, আয়ু যতদিন, বাঁচো বাঁচতে দিয়ে,
শেখো সুখী হতে আর কার‌ও সুখ ভুলেও কেড়ে না নিয়ে।




১২৮।
মৃত্যুর পর গেয়ো না সে-যশ, আমার নেই যার কিছুই।
কবরে তা লিখে কী হবে বলো, যা থেকে আমি নিচুই!




১২৯।
শান্তি তো চায় সবাই!
শান্তির জন্য যা প্রয়োজন,
তা করতেই-বা কে চায়?
মৃত্যুর আগে গড়ে বিত্ত অঢেল,
জানে যদিও, বিত্তে নেই শান্তি;
এই ছুটে চলা যে মৃত্যুরই খেল!




১৩০।
তোমার সন্তানেরে থাকতে দিয়ো ভালো, সে-ও যেমন দেয়,
কার কত আয়ু, বলতে কে পারে, মৃত্যু আগে যে কারে নেয়!




১৩১।
পাপ না করেও পেল যে কেবল‌ দুঃখ‌ই জীবনভর,
তার যাবার কালে, হে ভগবান, কষ্টকে কোরো পর।




১৩২।
তুমি আছ বলেই আজ জীবন ফেলে মৃত্যু খুঁজি।
তুমি আছ বলেই আজ জীবন মানে নরক বুঝি।




১৩৩।
যার সাথে যার মিলে, হয় প্রেম ও সখ্য,
তার সাথে তার একসাথে থাকা লক্ষ্য।
এমন বন্ধুর হাত ছাড়তে বেদনা যে কী,
ছাড়তে হয়নি যাকে, সে তা বুঝবে কি?




১৩৪।
প্রেমের পরম রেশের ঘর,
হয় না তা মৃত্যুতেও পর।




১৩৫।
সারাটি জীবন ভ্রান্তমোহে ভগবানে না ডেকে,
মরার আগে বলে, ভগবান, ঠাঁই দিয়ো চরণেতে।
বুকের মধ্যে রাখেন যিনি চরণে চাইলে স্থান,
অন্ধজীবন রাখে বন্ধ দেখা কী তাঁর অপার দান!