যে-শক্তি তারুণ্যের

বয়সের সাথে তারুণ্যের তেমন সম্পর্ক নেই। ক্রমাগতভাবে বেড়ে ওঠার আর এগিয়ে চলার যে সামর্থ্য, তার নামই তারুণ্য। একে ব্যবহার করার মানে হলো, নিজের সুপ্ত ক্ষমতাগুলির পূর্ণতা সম্পাদন করে চলা। বার্ধক্য বেশি বয়সের কারণে আসে না। বেড়ে ওঠার আর এগিয়ে চলার যে অক্ষমতা বা অনাগ্রহ, তারই কারণে আসে বার্ধক্য।

কুড়ি বছরের বৃদ্ধ আর সত্তর বছরের তরুণ আমরা অনেকেই দেখেছি। জীবনে চলার পথে যখনই কেউ সব গুছিয়ে নিজেকে গুটিয়ে ফেলতে চায়, চায় তার পুরোনো চেষ্টাগুলির ফলভোগ করতে; যখনই কেউ ভাবে যে, তার যা করার ছিল, তা করা হয়ে গিয়েছে... এককথায়, সে যখন অগ্রগতি থেকে বিরত হয়, পূর্ণতার পথ বেয়ে আর এগিয়ে যেতে না চায়, অবসর নিয়ে নেয় কাজের ক্ষেত্র থেকে, তখনই সে পিছিয়ে পড়ে—হয়ে যায় বুড়ো।

দেহের সম্পর্কে বলতে গেলেও বলা যায়, তাকে এমন শিক্ষা দেওয়া যেতে পারে, যার ফলে তার বৃদ্ধির আর অগ্রগতির কোনো সীমা থাকবে না। তবে এটা করতে গিয়ে নিজেকে অতিকষ্টের মুখে ফেলে দিয়ে অনেকেই অল্প বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। বাড়াবাড়ি ঠিক নয়। সৌন্দর্যের চেয়ে আয়ু জরুরি। তাই যে-কোনো কাজ করতে গেলে প্রকৃত পদ্ধতি আর সঠিক শর্তগুলিকে আবিষ্কার করা চাই। শুধু চললেই হয় না, ঠিকপথে চলার নামই চলা।

শক্তির একটা উৎস আছে, যাকে একবার আবিষ্কার করতে পারলে আর কখনোই মনের শক্তি ফুরিয়ে যাবে না—জীবনে যা-ই ঘটুক, কিংবা শারীরিক অবস্থা যেমনই হোক না কেন। এই শক্তির নাম আধ্যাত্মিক শক্তি। এর উৎস নিশ্চেতনার অতলে নয়; তাই একে গ্রহণ করতে হবে উপরের দিকে নিজের চৈতন্যকে মেলে ধরে, যেখানে রয়েছে মানুষ আর বিশ্বজগতের মহামিলনস্থল। চেতনার সেই সর্বশক্তিমান আর শাশ্বত আলোকধাম থেকেই গ্রহণ করতে হবে এই শক্তি।

এ শক্তি রয়েছে আমাদের চারিদিকে, সব কিছুর মধ্যেই তা অনুপ্রবেশ করছে। তার সংস্পর্শে আসতে হলে, তাকে গ্রহণ করতে হলে, কেবল শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস নিয়ে আন্তরিক ও অকপটভাবে তার দিকে নিজেকে সমর্পণ করা, তার জন্যে আন্তরিক ও কর্মপরায়ণ হওয়াই যথেষ্ট।

প্রথম প্রথম কাজটা খুব কঠিন মনে হবে। নূতন পথ শুরুতে কঠিন মনে হবেই—পথ সহজ মনে হয় কেবলই তার কাছে, সেই পথে চলতে যে এখনও শুরুই করেনি। অলস ব্যক্তির মুখে পৃথিবী সহজ। ধৈর্য নিয়ে নিবিড়ভাবে ব্যাপারটিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, আধ্যাত্মিকতা সাধারণ মানবচেতনার‌ই সর্বোচ্চ স্তর, যা মানুষের মধ্যেই আছে, কেবল তাকে খুঁজে নিতে হয়, তার সন্ধান পেতে সাধনা করতে হয়। এ নিজের আত্মার বাইরে অবস্থিত বিদেশি বা বিজাতীয় কিছু নয়।