যে মেয়ে সৌভাগ্যের আধার

 কারও সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে ভয়ংকর রকমের একটা ভুল সম্পর্কে থাকার পর যখন কেউ সেখান থেকে একসময় বেরিয়ে আসে, তখন হয়তো তাকে অনেক দিন সিঙ্গেলই থাকতে হয়। কেননা তখন সে সহজে আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারে না, নতুন আরেকটা সম্পর্কে জড়াতে খুব ভয় পায়।
  
 এই সময়টাতে খুব একা একা লাগে। কীরকম জানি ভীষণ খারাপ লাগে। প্রথম প্রথম খুবই কষ্ট হয়। এমনকী সেসময় নিজেকে শেষ করে দিতেও ইচ্ছে করে। কিন্তু একটা সময় পর গিয়ে, মেয়েটা বুঝতে শেখে, সে এখন আগের চাইতে অনেক ভালো আছে। ভুল কারও সঙ্গে বাঁচার চাইতে একা বাঁচাও অনেক ভালো। সবচেয়ে বড়ো কথা, নিজেকে সুখী রাখার জন্য এখন তার আর কাউকেই লাগে না। এখন সে একা একাই ভালো থাকতে শিখে নিয়েছে।
  
 তখন আবার আরেকটা ব্যাপার ঘটে। যে মেয়েটা একা বাঁচতে একবার শিখে যায়, সে আর কখনওই কারও প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে না। মানসিকভাবে আর কারও উপরই নির্ভর হতে সে আর চায় না। সে আর কাউকে বিশ্বাস করার প্রয়োজনই মনে করে না।
  
 যে মেয়েটা বড়ো একটা ধাক্কা সামলে উঠে একা চলতে শিখে নেয়, সে আর কারও প্রতিই সহজে কোনও আবেগ বা প্রেম অনুভব করে না। সে যখনই নিজের যত্নটা নিজেই নিতে একবার শিখে যায়, তখন বাঁচতে আর কারও উপরই তাকে নির্ভর করে থাকতে হয় না। নির্ভর সে আর করেও না।
  
 এর মূল কারণটা হলো, সে আর কোনোভাবেই পুরনো সেই অন্ধকার অধ্যায়ে ফিরে যেতে চায় না। হয় সে ভয় পায়, নয় সে পরোয়াই করে না। তার বার বারই মনে হয়, সে আবারও এমন কোনও অপদার্থ এবং ফালতু লোকের পাল্লাতেই পড়বে, যে তাকে একসময় ইউজড টিস্যুপেপারের মতো ছুড়ে ফেলে দেবে। এমন একটা লোকের পেছনে জীবনের এত মূল্যবান একটা অংশ ব্যয় করার কী মানে? কী দরকার নিজের হাতে ধরে জীবনে কষ্টকে আমন্ত্রণ জানানোর?
  
 সে আজ আর চায় না ভুল কারও জন্য জীবনটাকে আবার ওরকম নরক বানিয়ে ফেলতে। আগের সেই নরকটা থেকে বেরিয়ে আসতে তার অনেক অনেক সময় নষ্ট হয়েছে, অহেতুকই অনেক দুঃখ সহ্য করতে হয়েছে। যদি ওরকম‌ই কেউ তার জীবনে আবার আসে, তখন? যদি তাকে আবারও অমন কাঁদতে হয়, তখন? যদি বেঁচে থাকার সমস্ত অর্থ হারিয়ে মৃত্যুর দিকে ছুটে যেতে ইচ্ছে করে, তখন?
  
 হ্যাঁ, সে তাই একাই বাঁচতে চায়। সে আর কোনও ঝুঁকি নিতে চায় না। সে এখন ভালো আছে।
 তার মানে কি সে সত্যিই আর কোনোদিনই কারও হবে না? বাকি জীবনটা এমন একা একাই কাটিয়ে দেবে?
  
 না, তা নয়।
  
 হয়তো একদিন এমন কেউ তার জীবনে আসবে, যে...
  
 তার সমস্ত মনোযোগই মেয়েটার জীবনে নিঃস্বার্থভাবে সমর্পণ করবে।
 তার সমস্ত আন্তরিকতা ও চেষ্টা মেয়েটার পেছনেই অকাতরে ঢেলে দেবে।
 মেয়েটাকে ঠিক তার মতো করেই বুঝবে, তাকে সময় দেবে, তার পাশে থাকবে।
 কখনওই মেয়েটার অতীত নিয়ে ঘাঁটবে না, তাকে ভুল করেও জাজ করবে না, তার সব কষ্ট ও ক্লান্তি মুছে দেবে যে-কোন‌ও মূল্যে।
 মেয়েটাকে ভালো থাকতে, অতীত ভুলে বাঁচতে, জীবনে ভালো কিছু করতে, বেড়ে উঠতে সবসময়ই তার পাশে থেকে সাহায্য করবে।
 তার মন খারাপের সময়, তার যন্ত্রণার সময়, তার দ্বিধা, নিরাপত্তাহীনতা ও সংকটের সময় বন্ধুর মতন পাশে থেকে যাবে, যত যা-কিছুই ঘটুক না কেন।
  
 কেউ যদি মেয়েটার ভালোবাসাকে একবার জয় করতে পারে, তবে সে পৃথিবীজয়ের সুখ পাবে। এই ধরনের মেয়েরা যতটা ভালো রাখতে পারে, যতটা পরিস্থিতি ও বাস্তবতা বুঝতে পারে, তার সত্যিই কোনও তুলনা হয় না। তাকে ভালো রেখে নিজেও ভালো থাকা যায়। তাকে নির্ভার রেখে নিজেও নির্ভার থাকা যায়। সে পাশে থাকলে অনেক অসাধ্য‌ও সাধন করা যায়।
  
 এমন একটা মেয়ে আপনার মনের শক্তিকে যতটা অবিশ্বাস্য রকমের বাড়িয়ে দিতে পারে, আর কেউই ততটা পারে না। এক‌ইসঙ্গে, যদি এমন কারও প্রতি আপনি অন্যায় করেন, তবে সে আপনাকে যে শাস্তিটা দেবার ক্ষমতা রাখে, তা আপনি কল্পনাতেও আনতে পারবেন না। সেই শাস্তি এতটাই ভয়াবহ যে, তখন আপনার আর বাঁচতেই ইচ্ছে করবে না।