যে ছায়া আলোর অধিক/ সাত

 
- আপনি আমার সব কথার ছোট ছোট রিপ্লাই কেন দেন তা হলে? এড়িয়ে যান কেন এমন করে? সরাসরি বলুন, তুমি বিরক্ত কোরো না! একবার বলে দেখুন! আমি ঠিক কতদূর সরে যেতে পারি আপনার কাছ থেকে, আপনার আন্দাজও নেই! হয়তো এখন যে আপনার কাছে আছি, এটা আপনার মনেও আসে না কখনও। আপনার দিক থেকে আমাদের মধ্যকার দূরত্বটা অনেক বেশি, কিংবা আমাদের এই যে যোগাযোগ, এটার দূরত্ব কেমন, তা নিয়ে আপনার কখনও ভাবতেও ইচ্ছে হয় না। আমি জানিই, এই সমস্ত অনুভূতি ও অনুযোগ একতরফা। আমার এইসব পাগলামি কেবল আমারই। আমি চলে যাব বলেছি তো! আমি সত্যিই আর থাকব না। আমারও ক্লান্ত লাগে, আমিও যে মানুষ! আপনি বলুন আমাকে সরে যেতে! একবার বলেই দেখুন না বলার পরও থেকে যাই কি না!
- কেন মিথ্যে বলব? আমি চাই, তুমি থাকো। বলেছি তো!
- কেন চাইছেন অমন? For extracting sadistic pleasure? নিজে তো আর কষ্ট পান না! যা কষ্ট, তার সবটুকুই তো আমার একার!
- Am I a sadist? Are you sure?
- হ্যাঁ, শুধুই আমার ব্যাপারে! আমার কোনও কিছুই আপনাকে স্পর্শ করে না! কেন? আমাকে নিয়ে আপনার ভেতরে কোনও অনুভূতিই কাজ করে না। আপনি এই মুহূর্তে বলুন, আমি বিরক্ত না করলে কি খুশি আপনি? Ignore me, oneday you are going to miss how much I loved you. আপনি আমার কোনও লেখাই পড়েন না! সব সময় এক কথা--আমি অস্থির, আমার ব্যবহার খারাপ, আমি বেয়াদব! এর বাইরে কি কিছুই আপনি দেখতে পান না আমার মধ্যে? যদি না পান, সেটা আপনার ব্যর্থতা! আমি ভাবছি, একমাসের মধ্যে সুইসাইড করব! আপনার টাকাটা আমার বোন পাঠিয়ে দেবে! আমি এই পৃথিবীতে আর থাকতে চাই না। অনেক হয়েছে। অনেক সহ্য করেছি। আর না! আর নাহ্।
- তুমি বাঁচবে, তুমি হাসবে, তুমি ঘুরে দাঁড়াবে...আমার জন্য, তোমার নিজের জন্য। এটা তোমাকে করতেই হবে! তোমাকে বাঁচতে দেখলে আমার ভালো লাগবে! তোমাকে ভালোভাবে বাঁচতে দেখলে তোমায় যারা ভালোবাসে, ওদের বড় ভালো লাগবে। মানুষ কি কেবলই নিজের জন্য বাঁচে, বলো?
- এই যে শুনুন, আমার মা-বাবা কিচ্ছু নেই! তা তো জানেন! ওই ছেলেটা বিয়ের দিনও আমাকে জানায়নি যে সেদিন ওর বিয়ে! আমার সাথে এরকমই হয়ে এসেছে সব সময়ই। আমার সত্যিই কেউ নেই। মানুষ কারও না কারও জন্য হলেও বেঁচে থাকতে চায়। আমি কার জন্য বাঁচব? আপনি জানেন, আমি একটাও চাকরির পরীক্ষা দিইনি! আমার চেয়ে কম কোয়ালিফাইডরাও পরীক্ষা দিচ্ছে সব জায়গায়! আমার কোনও কিছুতেই যার কিছু এসে যায় না, তার কাছে এসব বলার কোনও মানে নেই, জানি। তবু বলছি, বলেই যাচ্ছি। কেন বলে যাচ্ছি, জানি না। আমি শুধুই আপনার জন্য হাসি, আপনি ছোট একটা টেক্সট করলেও আমি সারাদিন ওটা নিয়ে থাকি! আপনার একটু কিছু নিয়েও আমি দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দিতে পারি। আপনাকে ভেবে দিনের পর দিন পার করে দিতে পারি। যাকে কখনও পাবেন না, এমন কাউকে ভেবে সময় পার করেছেন কখনও? কিন্তু আমি এগুলো কীসের জন্য করছি? কার জন্য করছি? এমন কারও জন্য, যে আমার কথা মনেই আনে না ভুল করেও? না কি নিজের জন্যই করছি এসব? স্রেফ মন চাইছে বলে, এসব করে নিজে ভালো থাকছি বলে? এসব মাথায় এলে আমি পাগল হয়ে যাই! আমি আপনার দুই-পা জড়িয়ে ধরে বলি, আমি অন্য সব ফেসবুক মেয়েদের মতো সস্তা না! আমি ভালোবাসলেই তবে ‘ভালোবাসি’ বলি। আমার কাছে ভালোবাসাটা অনেক দামি, শুভ্র। ভালোবাসাটা বলার জিনিস নয়, অনুভব করার জিনিস। সত্যি সত্যি আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি! আপনি আমাকে দূরে সরিয়ে দিন! খুব বাজেভাবে অপমান করলেই আমি চলে যাব! আমার আত্মসম্মানবোধ অনেক বেশি! প্লিজ! আমার কথাটা একটু ভাবুন! আমি খুব অসহায় হয়ে আপনাকে এমন অনুরোধ করছি!
আমার লেখাটি পড়ুন! আমি সারাজীবন ধরেই সবাইকে ১০০% দিয়েও শূন্যহাতে ফিরে এসেছি! কেউ বোঝে না আমাকে! কেউ না! Everyone judges me superficially. Everywhere I am taken for granted.
- তোমাকে অনেক সম্মান করি, ভালোবাসি। ভুল বুঝো না। আমি জানি, তুমি অন্য দশটা মেয়ের মতো না। এটা আমাকে আলাদা করে বলে দেওয়ার মানেই হলো আমার বোধশক্তির উপর তোমার আস্থাহীনতার প্রকাশ। আমি সত্যিই বুঝতে পারি, তুমি কেমন।
- ‘ভালোবাসা’ শব্দটা উচ্চারণ করে সেটাকে অপমান না-ইবা করলেন! কেউ কাউকে ভালোবাসলে সেটার একটা শব্দ থাকে, ইশারা থাকে…দূর থেকেও ঠিক বোঝা যায়! কেউ কাউকে ভালোবাসলে সেটার একটা প্রকাশ থাকে, আর্তি থাকে, কাছে না এসেও অনুভব করা যায়। এখন তো বলে বসবেন, বোঝার বা অনুভব করার ক্ষমতা নীরজার নেই! আমি যা বলছি, তা সত্যি। এই যেমন আমার কথাই ধরুন। আমি ভালোবাসি আপনাকে, তাই সেটা আপনি যতই অ্যাভয়েড করুন না কেন, একটু টের ঠিকই পান দুই-এক সেকেন্ডের জন্য হলেও! তেমনি, আপনি আমায় ভালোবাসলেও আমি টের পেতাম। জানেন তো একেবারেই নির্বোধ মানুষটিও ভালোবাসা টের পায়। যা-ই হোক, ওই সব ভালোবাসা-টালোবাসা পাবার কপাল নিয়ে সবাই জন্মায় না, তেমন কপাল আমার থাকলে আমার একান্ত পৃথিবীতে সবচেয়ে নিঃস্বার্থ বলে মান্যতা-পাওয়া মা-বাবার ভালোবাসাই তো পেতাম। পাইনি তো! কিছুই পাইনি জীবনে! না ভালোবাসা, না স্নেহ, না মনোযোগ। সেটাই যখন হয়নি, আর কেউ আমাকে ভালোবাসবে না। সেটা আমি বড় হয়ে বুঝেছি! মানুষ কখন সত্যিকারের বড় হয়, জানেন? মানুষ কেবল তখনই বড় হয়, যখন--কে তাকে ভালোবাসে আর কে তাকে ভালোবাসে না--এটা সে বুঝতে পারে। আমি বড় হয়ে গেছি। আমাকে আর ভালোবাসার চেহারা চেনাতে আসবেন না।
আমি বলছি, আমাকে ব্লক করে দিলে আমি আপনাকে ফেসবুকে না দেখে দেখে একসময় এমনিতেই ভুলে যাব! আর আমি যে অন্য গাধাদের মত কোটাকে কোঠা বলে বিসিএস-এর পিছনে লাফানোর জন্য আপনার পিছনে পড়ে থাকার মানুষ নই, তা তো অন্তত এই তিনমাসে বুঝেছেন! আমি আপনার কাছে কোনও স্বার্থ নিয়ে আসিনি! আমি আপনাকে কীভাবে কখন ভালোবেসে ফেললাম, টেরও পাইনি! আমি টের পেলে কখনও নিজেকে আরও একবার পোড়াতে চাইতাম না! পুড়তে কেমন লাগে, আমি জানি। তবে কখন যে পুড়ে যাচ্ছি, তার আগেই নিজেকে সামলাতে এখনও শিখিনি। মনের গোপন একটা কথা বলি, নিজের বোনও এটা জানে না, আমি সিরিয়াসলি সুইসাইড করব! আর একটা যন্ত্রণার কথা বলি, কেমন? কোনও ডাক্তার না, একমাত্র আপনার উষ্ণ মমতাই পারে আমাকে স্বাভাবিক জীবন দিতে! আপনি তো একটা সময়ে অ্যান্টি-সুইসাইড কাউন্সেলিং করতেন। ৭৪ জনকে আত্মহত্যার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন, স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে এনেছেন। ওদের কেউ কি আপনাকে ভালোবাসত বা ভালোবেসে ফেলেছিল? কাউকে ভালোবেসে ফেললে কি মরে যেতে ইচ্ছে হয়? না কি কাউকে ভালোবেসে ফেললে মরে যাওয়ার ইচ্ছে চলে যায়? আমি যে আপনাকে ভালোবাসি! আমি মরে যাচ্ছি, আমাকে বাঁচাবেন না? আপনার বুঝি আর কাউকে আত্মহত্যার হাত থেকে বাঁচাতে ইচ্ছে হয় না? আপনি কি খুব ক্লান্ত? না কি বিরক্ত?
আমাদের মধ্যে কোনও ধরনের আবেগজাত সম্পর্ক কখনওই সম্ভব নয়! কারণ আমরা দুইজন ভিন্ন জগতের মানুষ! আপনার পিছুটান আছে, জীবন আছে! আমার জীবন আছে, কোনও পিছুটান নেই! ‘দৃষ্টিকোণ’ ছবিটা দেখেছেন? আমার দুঃখগুলো কাছিমের মতো…তুমি আমি মুখোমুখি নীরবতা পালনের গান শুনে যাই! আপনি…কেন এলেন?????????? আমি তো ভালোই ছিলাম। নিজের মতো করে, একাকিত্ব নিয়ে, এই পৃথিবীর সমস্ত অবহেলা সহ্য করে। মানুষ না খেয়েও কয়েক দিন বেঁচে থাকতে পারে, তবে কাউকে ভালোবেসে ফেললে তার ভালোবাসা ছাড়া এক মুহূর্তও বাঁচতে পারে না। কেন এলেন আপনি?
- আমি সব কিছুই শুনলাম, বুঝলাম। আবারও বলছি, এই পৃথিবীতে ভালোবাসা শেষকথা নয়, শান্তি ও শুধু শান্তিই শেষকথা।
- আচ্ছা, ঠিক আছে। শান্তি দিচ্ছি আপনাকে আমার পক্ষ থেকে চিরদিনের জন্য! Stay blessed! এ জীবনে আমাদের মিলন কখনওই হবে না। আমি জানি। সব জেনেবুঝেও আমি এমন অস্থির হয়ে আছি। মিলনের চাইতে মিলনের ইচ্ছেটা অনেক বেশি তীব্র, তাই হয়তো! জীবন আমাদের সব কিছু দেয় না, এমনকি দিলেও অনেক কিছু কেড়ে নেয়! কেন এমন হয়? জীবন আমাদের ঠিক ততটাই দেয়, যতটা আমাদের দরকার। যা আমাদের বেঁচে-থাকার জন্য দরকার নেই, জীবন তা আমাদের দেয় না, দিলেও ঠিকই কেড়ে নেয়। আমি এসব জানি, বুঝি। সব জেনেবুঝেও কেন আমি এতটা অস্থির হয়ে আছি?
শেষ কিছু কথা:
একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেছিলেন ক্লাসে--
কেউ সত্যিই চরিত্রবান কি না, সেটা প্রমাণ করার জন্য তাকে খারাপ জায়গার মধ্যে থেকে নিজেকে ভালো প্রমাণ করতে হয়!
সে হিসেবে এখন পর্যন্ত আমিই চরিত্রের সব ধরনের সার্টিফিকেট পাবার যোগ্য। আমার ধারেকাছেও কেউ আসতে পারেনি এখনও পর্যন্ত!
তেমনি বলতে হয়, মানসিক শান্তির স্বাদ সেই সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারে, যাকে চরম মানসিক কষ্টের মধ্য দিয়ে বাঁচতে হয়েছে দিনের পর দিন! তেমন মানসিক কষ্টের মধ্যেও দুদণ্ড শান্তি ঠিক কেমন লাগে পেতে, সেটার স্বাদ আমিই ভালো বুঝব। জীবনানন্দকে ‘নির্জনতার কবি’ বলা হয়েছিল…কেননা সব ধরনের সৌভাগ্য তাঁর সাথে শুধু প্রতারণাই করেছে! তিনি নিজেকে গোটা পৃথিবীর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছিলেন, নির্জন একটা জীবন বেছে নিয়েছিলেন নিজের জন্য। শুধু নর্তকী (গবেষণায় যতটুক জানা যায় বলে আমি জেনেছি) বনলতার কাছে ৪৮ ঘণ্টা শান্তি পেয়েছিলেন তিনি। সে গবেষণা ভুল কি ঠিক, সে বিচারে না গিয়ে বলব, জীবনানন্দ যদি সত্যিই কোনও নর্তকীর কাছে গিয়েও শান্তি পেয়ে থাকেন, তবে শান্তির সেই মুহূর্তগুলিই তাঁর জীবনের পরম সম্পদ। স্বস্তি বা শান্তি, যা-ই বলেন না কেন, সেটা কোথা থেকে আসছে, তা বিবেচ্য নয়, সেটা যে আসছে, শুধু সেটাই বিবেচ্য। এমনকি তা যদি আসে পরিবার থেকে নয়, বরং পরিবারের বাইরে কোথাও থেকে, তবে সে জায়গাটাই আপন। পরিবারের মানুষ নয়, বরং সে জায়গার মানুষগুলোই আপন। যার কাছ থেকে শান্তি পাওয়া যায়, সে আপন কেউ হোক না হোক, সে সব সময়ই আপনের চেয়েও আপন। দিনের শেষে শান্তিতে থাকলে আমরাই থাকি, কষ্টে থাকলে কান্নাটাও আমাদেরই করতে হয়। অন্য লোকের কথা মাথায় এনে কাজ নেই, আমরা যন্ত্রণায় বাঁচলে কারও কিচ্ছু এসে যায় না। এমনকি পরিবারের সদস্যদেরই-বা কার কী এসে যায় আমার নিজের জীবনটা কষ্টে কেটে গেলেও? জীবনানন্দ কেন নর্তকীর কাছে গিয়ে শান্তি পেলেন, এটা মাথায় রেখে যারা তাঁর চরিত্রের ব্যাবচ্ছেদ করতে বসে, সেসব ভণ্ডদের আমার গুলি করে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করে। মানুষটা যখন দিনের পর দিন কষ্টে কাটিয়েছেন, তখন কোথায় ছিল সেইসব শুয়োরের বাচ্চারা?
একবার সত্যিকথা কথা বলার অপরাধে ভার্সিটির সমস্ত আন্দোলনকারী ছেলেরা মিলে আমাকে মানসিকভাবে হ্যারাস করেছিল! ওদের কেউ কেউ আমার আইডিতে গিয়ে খারাপ ছবি ছড়িয়ে দিয়েছিল, এমনি সেক্সের কথাও বলেছিল! আমার অপরাধ ছিল, আমি একটা নিউজ চ্যানেলের সামনে বলেছিলাম, আন্দোলন বন্ধ হয়ে ক্লাস শুরু হোক! তখন আমি আমার পাশে দুই-একজন বন্ধু আর শিক্ষক ছাড়া আর কাউকে পাইনি। ওরা আমাকে হত্যার হুমকিও দিয়েছিল! এদেশে সত্যবলার সময় পাশে কাউকে পাওয়া যায় না, তবে সত্যের মিষ্টি ফলটা ভোগ করার জন্য অনেকেই প্রস্তুত। যখন আমি দেখেছি, আমি যাদের সাথে সাত বছর এক পরিবারের মতো করে থেকেছি, পড়াশোনা করেছি, তারাই আমার বিপক্ষে ছেলেদের লেলিয়ে দিয়েছিল, তখন আমি ভাবলাম, কাদের সাথে আমি এত বছর সুখ-দুঃখের ঘর বাঁধলাম!
আপনি বলেন না…আমি অমানবিক, বেয়াদব, আরও কী কী সব! আন্দোলন শেষে আমাকে বলা হয়েছিল, তোমাকে যারা মেনটালি হ্যারাস করল, তাদের নামে অভিযোগ আনো, ওদের ছাত্রত্ব বাতিল হবে! আমি বলেছি, না! ওদেরকে আমার চেনার দরকার ছিল! চিনেছি! ওদের প্রতি আমি কোনও অভিযোগ আনতে চাই না। খারাপ সময় এলে মানুষ চেনা যায়। কারা আপনার জন্য, কারা আপনার জন্য নয়, আপনি চিনতে পারবেন। সময়ই সব কিছু বলে দেয়, শেখায়। আমি কিছু মানুষের প্রকৃত চেহারা দেখে ফেলেছি। এটাই আমার সবচাইতে বড় পুরস্কার। আমার আর কিছু দরকার নেই। জীবনে খারাপ সময় আসার আগ পর্যন্ত কারও পক্ষেই বলে দেওয়া সম্ভব নয়, কে তার বন্ধু, কে তার বন্ধু নয়। মানুষ তো মুখোশ পরে থাকে, মুখোশের ভেতরের মানুষটাকে চিনতে নিজেকে খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমি সৌভাগ্যবান, অল্প বয়সেই অনেক মানুষের ভেতরের মানুষটাকে দেখে ফেলেছি।
গল্পটা বললাম এই কারণে যাতে আপনি বুঝতে পারেন, অনেক মানুষের জীবনে ঘটে-যাওয়া ঘটনা আমার জীবনে ঘটে-যাওয়া ঘটনার অংশবিশেষ মাত্র! আজকে আমি আপনার কথা দিয়েই খুব ভালোভাবে বুঝেছি, আপনি আসলে আমার কোনও কিছুই ভালো দেখেন না! এটা আপনার দোষ নয়! ফেসবুকে আমরা প্রতিদিন এত সব ফেইক জিনিস দেখি যে ব্যতিক্রম কিছু আমাদের চোখেই পড়ে না! সমস্ত অভিযোগ মেনে নিয়ে খুব ঠান্ডা মাথায় বলছি, জীবনে কখনও আপনি আর আমাকে দেখবেন না। হোক সেটা ফেসবুকে, হোক সেটা অন্য জায়গায়! বাই, মাই মেমোরিজ ইন নভেম্বর!
- শুভ রাত্রি! অত রাগ করে থাকতে হয় না। জীবন সুন্দর। সামনে বুঝতে পারবে। তোমার জন্য সুন্দর সময় অপেক্ষা করছে। একটু শান্ত হয়ে, ধীর মেজাজে সে সময়ের দিকে হাঁটতে হবে। এখন ঘুমাও।
- You are left forever. You don’t know anything about me. You only know what I have decided to let you know. You will never ever be disturbed by me again. Just one thing to say…you will never know what you have lost. You have just lost an eternal love…If God exists, someday He will answer it. Best wishes for you. Bye forever! A ‘beyadob’ does not deserve these greetings such as: Shuvo sokal, dupur, bikel, sondha, ratri…Hope, your life will be surrounded by lots of so-called civilized persons in this year. You will never ever be disturbed by this beyadob…আমার বন্ধঘরের জানালা আমি আর কখনওই খুলে আকাশ দেখব না। একটা জীবন কেটে যাবে আকাশ না দেখেই! Take care of yourself. Bye forever. I might not make you understand what I feel inside myself for you. Be happy wherever you are. Day after day I was getting mentally attached with you...I need to be detached from you...otherwise it will make me suffer extremely in the long run. I will be waiting for hearing your voice after death. Death will help us meet together. Take care of yourself. DON’T leave me in the afterlife.
পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন শুভ্র নির্মল সত্য হচ্ছে--যার গর্ভধারিণী তাকে দূরে ঠেলে দিতে পারে, ভুল বুঝতে পারে, তাকে অন্য সবাই আঘাত-করা, ভুল-বোঝা…স্বাভাবিক ব্যাপার!
- শুভ সকাল।
- আমার সব খারাপ। Stay away from me. আর কখনও কোনও দিনই আমার ফোন থেকে আপনার ফোনে কোনও মেসেজ যাবে না! আমি খারাপ খারাপ খারাপ! পরিষ্কার? লিসেন! রেপিস্টরা পর্যন্ত আমার নিষ্পাপ চোখের দিকে তাকিয়ে আমাকে ছেড়ে দিয়েছে! এই চোখ যে বা যারা পড়তে পারেনি, তাদের জীবনের সূক্ষ্ম অঙ্ক দেখার মতো চোখ নেই! আমি চিৎকার করে এ সত্যিটা বলার সাহস রাখি! যে নীরজাকে নিয়ে একলাইন লিখতে পারল না, সে তো সাহিত্যের মর্মই বুঝতে পারেনি! যে রাস্তার ছেলেটা পরীক্ষার খাতায় সবচেয়ে কম-পাওয়া, সে আজকে আমাকে সুইসাইড অ্যাটেম্পট থেকে ফিরিয়ে এনেছে! ও জীবনের খাতায় অনেকের চেয়ে অনেক বেশি নম্বর-পাওয়া একজন মানুষ! কাকে কী যে বলি…যে কিনা কী অবলীলায় বলে ফেলল, বেকার কিংবা অ্যাভারেজ কেউ হলে সে তোমাকে নিয়ে ভাবত! অত সময় কোথায় আমার! নীরজাকে নিয়ে বসুন্ধরাতে বসা বড় বড় ডাক্তারও ভেবেছেন! বুকে জড়িয়ে ধরেছেন! বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ভেবেছেন! পেটে দশমাসের বাচ্চা নিয়েও ম্যাডাম দূর থেকে ছুটে এসেছেন নীরজাকে শান্ত করার জন্য! ডিন স্যার লঞ্চে অভিভাবক হয়ে সারারাত অসুস্থ নীরজার পাশে নির্ঘুম চোখে বসে থেকেছেন। দশজন গুরুত্বপূর্ন মানুষকে রুমে ঢোকার অনুমতি দেননি, কিন্তু নীরজাকে পাশে বসিয়ে জন্মদিন উপলক্ষ্যে মিষ্টি খাইয়েছেন! আমাকেও ভালোবাসা যায়, জীবনে আমিও মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পেয়েছি।
এঁরা সবাই-ই কিন্তু ব্যস্ত! এঁদের কেউই অ্যাভারেজ নন! কিন্তু এঁরা সব নিয়মনীতির, সুপারফিশিয়াল জিনিসের বাইরে গিয়ে এক শুভ্র সত্যকে চিনেছেন! সেই সত্যকে, যে সত্য নিষ্কলুষ, নিখাদ! যে চোখ দেখে রাস্তার ইভটিজার ছেলেটাও ক্ষমা চেয়ে গেছে, সে চোখ নিয়ে নীরজা বেঁচে আছে! আর এই চোখ যার কাছে বদমেজাজি, অমানবিক, বেয়াদব…তার ফ্রয়েডের সাইকো-অ্যানালাইসিস পড়া উচিত খুব ভালো করে! উফ্! কার সাথে কী বলি! সরি, আপনার আর আমার জীবনের ফিলসফি এক নয়! কারণ আমরা দুজন জীবনকে দুভাবে দেখেছি! আসলে কী জানেন, প্রতিটি মানুষই, যতক্ষণ পর্যন্ত অন্য কারও কোনও ক্ষতি করছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তার নিজস্ব জায়গায় ঠিক, কেননা একেক জন জীবনকে একেক চোখে দেখেছে। সবার অভিজ্ঞতা একই রকমের নয়। জীবনের কাছ থেকে সবার চাওয়া ও পাওয়াও একই নয়। ফলে সবার জীবনদর্শনও একই হবে না, এটাই স্বাভাবিক ও সুন্দর।
এত দিন ধরে লম্বা লম্বা মেসেজ লিখে আপনার পিছনে সময় নষ্ট না করে ঠিকমতো ঘুমালেও শরীরটা ভালো থাকত! আমরা ভুল কাজটা করে ফেলার পর ভুল বুঝতে পারি। আর আপনার উদ্দেশে বলব, সিরিয়াসলিই আজকের পর থেকে আমার আপনার প্রতি আগের সেই দু্র্বলতা অনেক কমে গেছে! নিজের উপরই রাগ লাগছে, কেন আপনাকে ভালোবাসলাম! বুঝলেন মশাই, হ্যালুসিনেশনের মধ্যে ছিলাম! তা না হলে মন্দিরে গিয়ে কেউ নিজের আয়ুটা অন্যকে দেওয়ার দুঃসাহস করে! আমি পারিও বটে! পুরোই ছাগল একটা! আর কখনওই নিজের আয়ু কাউকে দিতে চাইব না। আপনিই ঠিক--নিজেকে ভালোবাসা উচিত!
যা-ই হোক, ৭৫ দিন ঘুমাইনি! এখন একটু ঠিকমতো ঘুমাব আমি! বাই…মেমোরিজ ইন নভেম্বর! ভালো কথা, ‘মেমোরিজ ইন নভেম্বর’ বলায় সেটা নিয়ে আবার অপব্যাখ্যা করবেন না! আপনি আমার কাছে অর্ণবের মতো ‘বাবু’ হয়ে থাকবেন…who will never be replaced, whose absence will hurt me silently.
- হ্যাঁ। আমিই খারাপ। জীবনের পরীক্ষায় শূন্য-পাওয়া মানুষ। আমার মতো আমিকে নিয়ে আমি ভালো আছি। আমার কারও সার্টিফিকেট লাগবে না। আমি কাউকে সার্টিফিকেট দিই না, কার‌ও সার্টিফিকেটের দরকার‌ও আমার নেই। আমরা কে কাকে চিনি! কী প্রয়োজন এত ব্যাখ্যাবিশ্লেষণ করার?
- শুভ সকাল! দিন ভালো কাটুক। আমরা সবাই কথা বলি, কিন্তু কেউ কারও কথা শুনি না! নিজের কথাই বলতে থাকি, আশা করে বসে থাকি, পাশের মানুষটা আমার কথা সত্যিই শুনবে--কেবলই কানে নয়, মনেও…অথচ নিজেই তার কোনও কথা ওরকম করে শুনি না। আমরা অনেক সত্য, অনেক সুন্দর মিস করে ফেলি কেবল কথা শুনতে শিখিনি বলে। আমরা কেবলই কথা শোনাতে শিখেছি, কথা যে শুনতেও হয়, সেটা আমাদের মাথায় কাজই করে না। আমরা চাই, সবাই আমার কথা শুনুক, অথচ আমরা কারও কথা শুনতে চাই না।
এইমাত্র বিজ্ঞানে পড়ছিলাম, গ্রীষ্মের প্রচণ্ড রৌদ্রে উত্তপ্ত পিচঢালা রাজপথকে নাকি বৃষ্টির অব্যবহিত পরবর্তী সময়ের মতো ভেজা আর চকচকে দেখায় পূর্ণ অভ্যন্তরীণ প্রতিফলনের জন্য! আমার মনে হয়, মানবজীবনও এমনই! উপর থেকে আমরা যা দেখি, তা সব সময় সত্য হয় না! এর পিছনেও কঠিন, তিক্ত সত্য থাকতে পারে! তার খোঁজ আমরা নিই না। এমনকি যে আমার কাছের মানুষ, তার সত্যটাও ঠিকভাবে জানতে চাই না। কারও সম্পর্কে আমরা ঠিক ততটুকুই জানতে চাই, যতটুকু জানলে সে মানুষটাকে আমি যেমন ভাবতে চাইছি, তেমন ভাবতে আমাদের সুবিধা হয়। সত্যকে নেওয়ার মতো মানসিক সততা আমাদের নেই।
আপনি সত্যি সত্যি এত বিরক্ত আমার প্রতি! আপনার স্ট্যাটাসে (ভালোবাসা নয়, শান্তি বড়--আমার জন্য কি না আমি ঠিক শিওর নই যদিও) ১০০০ মানুষের লাইক দেখে বুঝলাম! Everyone has the ability to make someone happy. One can do it by entering the room while the other can do it by leaving the room. It is as simple as that! আমি আপনার কাছ থেকে দূরে গিয়ে আপনাকে মানসিক প্রশান্তি দেবো! খুশি? তরঙ্গতত্ত্বের মতো যদি কোনও দিনও আপনার হৃদয়ে কম্পাংকের সৃষ্টি হয়ে আমার জন্য একটু ভালোবাসায়ও হৃদয়টা উষ্ণ হয়ে ওঠে এবং সেখান থেকে ছোট্ট একটি দীর্ঘশ্বাস বের হয়, তবে সেটাই হবে আমার ভালোবাসার সার্থকতা, তা আপনি যত দোষারোপই আমায় করেন না কেন! আমি আপনাকে বোঝাতে পারলাম না আমার ভালোবাসাটা, এই করুণ ব্যর্থতা শুধুই আমার! I can only pray for you...May you never have to stagger in a desert in search of water like me who was scuttling in blazing heat for the drops of your love. Dear, you blew a new life into me. But you went away taking the last fragment of my optimism with you, now I am just a breathing entity with no hopes left!
অরুন্ধতী রায় তাঁর The God of Small Things-এ বলেছিলেন: Love Laws were made. The laws that lay down who should be loved, and how. And how much. আমি সেই love laws-কে ভেঙে এমন একজনকে ভালোবেসেছিলাম, যেখান থেকে তাজা রঙিন দুঃখ ছাড়া আমার আর কিছুই পাবার কথা ছিল না! কে কাকে ভালোবাসবে, তা ঠিক করা আছে। কে কাকে পাবে, তা ঠিক করা আছে। কে কাকে কতটা দূরে ঠেলে দেবে, তা ঠিক করা আছে। কে কাকে কতটুকু ভালোবাসা দেবে, তাও ঠিক করা আছে। You are my memories in November. ভালো না বাসুন, আমায় কখনও ভুল বুঝবেন না, এই করুণ আর্তিটুক রইল! আমি চেয়েছিলাম, আমার দেওয়া কোনও কিছু আপনার কাছে থাকুক সারাজীবনের জন্য! তাই বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে খুঁজে আনতে চেয়েছিলাম একশোআটটি নীলপদ্ম! আপনি নিলেন না! ফিরিয়ে দিলেন কী নির্দয়ভাবে! আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন যেন আমি বহু বছর পর বলতে পারি,…বরুণা, এখন তার বুকে শুধুই মাংসের গন্ধ…আপনার কথা মনে করে যেন বহু বছর পর হো হো করে হেসে উঠে বলতে পারি, একসময় কী পাগলামিটাই না করেছিলাম তাঁর জন্য!
আজকে একটু আমার সবটুকু লেখা হৃদয় দিয়ে অনুভব করে কয়েকবার পড়বেন? ইতি অর্ণব! (যাকে আপনি চিনতে পারেননি।)
- শুভ সকাল! পড়েছি তোমার লেখা। তুমি সব সময়ই খুব ভালো লিখ। কেমন আছ?
- একদিন রুবি রায় সত্যিই বলবে, তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি! বলবেই! অপেক্ষা করুন, এটা আপনাকে শুনতে হবে! Stay blessed.
একটা গল্প করি, কেমন?
একটি মেয়ে হঠাৎ একদিন আমাকে মেসেঞ্জারে নক করল। তার কথাগুলো খুব অদ্ভুত লাগল আমার কাছে! এরকম তো কেউ বলে না! কথাগুলো ছিল--দিদি, আই লাভ ইউ! ভার্সিটিতে আমি আপনাকে প্রতিদিন দেখি! রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির মতো লাগে আপনাকে দেখতে! আপনাকে দেখলে আমি আমার রবীন্দ্রনাথকে দেখতে পাই।…আরও অনেক কিছু! আমি তো হতবাক শুনে! ভাবলাম, আইডিটা ফেইক! বললাম, তোমার ছবি পাঠাও! সে নিজের ছবি পাঠাল, দেখে কেন জানি ফেইক মনে হলো না! অ্যাকসেপ্ট করলাম ওর রিকোয়েস্ট! প্রতিদিন আমাকে জিজ্ঞেস করত, খেয়েছেন? কী করেন? কেমন আছেন?...একদম প্রতিদিনই! আমি বলতাম, ভালো আছি! এতটুকুই!
সে একদিন ভার্সিটিতে আমার সাথে দেখা করল! আমার টাকাপয়সা কম হবার কারণে বেশিরভাগ মানুষ আমার মুখের দিকে না তাকিয়ে জামার দিকে তাকাত! কেউ দেখত না, আমি ছিলাম ফুলদানিতে ফুটে-থাকা বাসি ফুলটার মতো! আমি ছিলাম সেই মানুষটি যার মলিন জামাকাপড় ছাপিয়ে অস্ফুট নান্দনিকতা ছড়িয়ে ছিল সারামুখে! ওর সাথে যখন দেখা হলো, দেখলাম, সে শুধুই আমার মুখের দিকেই তাকিয়ে আছে! এখন আমি ভালো জামা পরলেও তখন আমার ভার্সিটির খরচ এত বেশি ছিল যে খুবই পুওর-লাইফ লিড করতে হতো।
মেয়েটাকে খুব ভালোভাবে লক্ষ করলাম। দেখলাম, সত্যিই আমার অন্য মেয়ে-বন্ধুদের মতো সে আমার পোশাকের দিকে তাকাচ্ছে না। এ এক অন্য অনুভূতি! এর পর পরিচয়, কথাশুরু! কিন্তু কখনওই আমি নিজ থেকে তাকে নক করতাম না! সে-ই স্বেচ্ছাই আমার সব খবর নিত! কোনও দিনই প্রতিদান পেতে ইচ্ছে হলো না কেন তার, আমি জানি না!
কিন্তু মানুষ হয়তো অভিমানী প্রাণী…অনেক বেশিই! একদিন তার মেসেজ ছোট হতে লাগল, ক্যাম্পাসে আমাকে অ্যাভয়েড করা শুরু হলো! তখন আমি ভাবলাম, কে যেন আজ আমাকে জ্বালায় না, আমার খবর নেয় না! বারবার মেসেজ চেক করলাম, দেখলাম, নাহ্…সে আর নেই! ক্যাম্পাসে দেখা হলে শুধু ‘কেমন আছেন’ বলে চলে যেত, একটুও দাঁড়াত না আমার সামনে! যার মেসেজ আমি একদিন অবহেলায়, বিরক্তিতে রেখে দিতাম, সেই আমিই তার উষ্ণ আঁচের ভালোবাসাটুকু পেতে চাইতাম তখন! দেখি, কেউ আর খবর নেয় না…আমি খেলাম কি না, আমি ভালো আছি কি না! কেউ আর বাহ্যিক খোলস থেকে বেরিয়ে এসে আমার শুভ্র-সুন্দর অথচ অনাদরে বেড়ে-ওঠা মুখের দিকে তাকায় না নিষ্পলক চোখে! সে শুধু একদিন বলেছিল, আমি কোনও স্বার্থ নিয়ে আপনার কাছে আসিনি!
জানি না, এখনও কেন তার জন্য চোখ ভিজে ওঠে! আজ ছয় মাস হতে চলল আমি ওই ভার্সিটি চিরতরে ছেড়ে এসেছি, তবুও মনে হয়, কাকে যেন রেখে এসেছি ওখানে! আমি আর সেই মানুষটাকে খুঁজে পাব না। সেই সময়ের মানুষটিকে আমি খুন করেছি নিজেরই হাতে! যাকে আমি একদিন অবহেলা করেছি, আজও আমি তার ভালোবাসার লোভে কাঁদি! আর একজন মানুষকে এ জীবনে কখনও ভুলতে পারব না--আমার ডিন স্যারকে। আমার পছন্দের ডিন স্যার আর ওই মেয়েটা…ভার্সিটি থেকে আমার প্রাপ্তি এটাই! আমি কত সৌভাগ্যবান। কত মানুষই তো ভার্সিটি থেকে কেবলই একটা সার্টিফিকেট পায়, আর কিছুই পায় না, এমনকি একটা বন্ধুও না! আমার বেলায় তো তা হয়নি!
মেয়েটা আর আমার খোঁজ নেয় না! একদিন যার ভালোবাসার দাবিকে আমি অশান্তি ভাবতাম, এখন তার উদাসীনতা আমাকে স্বস্তিতে থাকতে দেয় না! জীবনটা তরঙ্গতত্ত্বের মতো! হৃদয়ে কম্পাংকের সৃষ্টি হয়ে তা দীর্ঘশ্বাস হয়ে বের হয়! যখন কারও উদাসীনতা কাউকে সত্যিই স্বস্তি দেবে, তখন বুঝতে হবে, ভালোবাসা মুখচেপে হাসছে আর বলছে--বোকা,… তুই ফেলে এসেছিস কারে, মন, মন রে আমার। তাই জনম গেল, শান্তি পেলি না রে মন, মন রে আমার…
আর একটু শেয়ার করি, কেমন!
আমি জানতাম, ওর অবস্থা তেমন ভালো না! বইয়ের অনেক খরচ! আমি দেখতাম, মেয়েটা অন্য কারও কাছ থেকে বই ধার নেয়! একদিন আমি বললাম, এই মেয়ে, তোমার বই লাগলে আমার কাছে তো চাইতে পার! এগুলো তো সেমিস্টার শেষে আমার আর কোনও কাজে লাগে না! মেয়েটা উত্তর দিল, দিদি, আমি যদি আপনার কাছে বই চাই, তা হলে হয়তো কোনও একদিন আপনি ভাববেন, বইয়ের জন্য আমি আমাকে ভালোবাসি!
ওর কথা শুনে আমি সেদিন কেঁদে ফেলেছিলাম। সিরিয়াসলি, সে আমার একটা বইও নেয়নি! অথচ কত ছেলেমেয়ে, যাদের অবস্থা ভালো, ইচ্ছে করলেই বই কিনতে পারে, কিন্তু বই কিনবে না, বরং সে টাকা বাঁচিয়ে প্রেম করবে--তারাও আমার কাছ থেকে বই নিয়েছে! আমার সব বই একটা ঝুলির মধ্যে রেখে দিয়েছি! বইগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবি ওর কথা মাঝেমধ্যে! আমাকে এখন আর কেউ বিরক্ত করে না। কেউ ক্রমাগত আমার খোঁজখবর নিতে থাকে না। আমার বিরক্তি সহ্য করার জন্য কেউ বসে নেই এখন আর। কখনও কখনও বিরক্তিকর মানুষগুলো বিরক্ত না করলে কেন যে এত কষ্ট হয়! বুঝি না! ধুউর!
…সুন্দর না গল্পটা?
সে চলে গেছে, কারণ মানুষ অভিমানী! আমি তার মতো করে কখনও তার খোঁজ নিইনি! ওর লম্বা লম্বা মেসেজ পড়তে আমার মাঝেমধ্যে বিরক্ত লাগত! আমি ভাবতাম, আমি ওর থেকে অনেক সিনিয়র! আমাকে এভাবে বলে কীভাবে মেয়েটা! কিন্তু সে অকপটভাবে মনের কথা লিখতেই থাকত! সত্যিই, এ জীবনে অবহেলায় কোনও জিনিসই টিকে থাকে না!
- লম্বা লম্বা মেসেজ পড়তে আমার তো ভালো লাগে, তোমার লাগত না কেন?
- এত ভালো লাগে আপনার যে আমার জন্য আপনি মানসিক অশান্তিতে ভোগেন! বাহ্‌! দেখবেন, একদিন ঠিকই চলে যাব! আর কেউ আমার মতন লম্বা মেসেজ করবে না! কথা বলতে বলতে চোখ ফিরিয়ে নিলে আমার মতন করে কেউ বলবে না, এই! চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছ কেন! কেউ না!
আমাকেই দেখুন না, বিরক্ত লাগত বলেই, বিরক্ত করার মানুষটি কেন আর বিরক্ত করছে না, এইজন্য নিজে বিরক্ত হচ্ছি এখন! জগতের নিয়মই বোধহয় এটা। এ পৃথিবী সব কিছুই ফিরিয়ে দেয়। যা দিই, তা ফিরে আসে। আসেই আসে! সবাই মূল্যটা বোঝে, চলে যাবার পর, দেরি হয়ে যাবার পর! তখন আর কিছুই করার থাকে না আফসোসে পুড়ে মরা ছাড়া।
- একমত। এই সত্যটা আমি নিজের জীবন থেকে শিখেছি। কখনও সময়সুযোগ হলে বলব। আর আমি মেসেজ পড়তে কখনও অশান্তিতে ভুগি না। Please don't misinterpret me.
- আর একটা গল্প বলি। আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়তাম, বন্ধুদের সাথে খেলতে যেতাম, তখন একটা ড্রাগ-অ্যাডিক্টেড ছেলে আমার পেছনে ঘুরত! আমার ওকে ভয় লাগত! শুধু ওকে দেখলেই আমি জুতো দেখাতাম, পারলে লোকজনকে বলতাম, ওকে মারুন! তখন আমার বাড়ির পরিবেশ এত নোংরা এবং কঠিন ছিল যে বেশিরভাগ সময়ে বাড়ির বাইরে থাকতাম, এমনকি রাতেও! যেহেতু সে ড্রাগ-অ্যাডিক্টেড ছিল, He could have seduced me very easily if had wanted. কিন্তু সে আমাকে কখনওই কিছু বলত না!
এরকম ১২ বছর সে আমার পেছন পেছন ঘোরে!
যখন আমার অনার্স শেষ হয়, তখন শুনি, সে বিয়ে করেছে! ওর বউটা অনেক সুন্দর! একটি ছেলে আছে ওদের! সে কাজকর্মও করে এখন! কিন্তু আমি যখন তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাই, পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি, ও আর তাকিয়ে থাকে কি না আমার দিকে! সত্যিই দেখি, সে আর তাকায় না! একেবারে একটুও না! একদিন আমার দিকে ওর তাকানোর অপরাধে আমি ওকে মার খাওয়াতে চাইতাম! আর আজ যতদূর দৃষ্টি যায় ওর দিকে তাকিয়ে দেখি, সে সত্যিই আর তাকায় না! এটাই হয়তো ন্যাচারাল জাস্টিস।
- আছে এরকম কিছু মানুষ। এমন আর একজনের গল্প শুনেছিলাম।
- আচ্ছা, আপনি কেন বলেন যে আমি আপনাকে মানসিক যন্ত্রণা দিই? One day you will search for me, but I will not be there to entertain you. অবশ্য জানি না, শূন্যতা সবাইকে ভাবায় কি না! হায়, pseudo-human beings-ই সমাজে অনেক বেশি! তবে আমি খুব সেনসিটিভ…আমার খারাপ লাগে! শূন্যতা ভীষণ রকমের ভাবায় আমাকে। যাকে ভালোবাসি, সে চলে গেলে কষ্ট হয় আমার, আর সে ভুল বুঝে চলে গেলে আরও বেশি কষ্ট হয়।
- আবারও বলছি, তোমার মেসেজ নিয়ে আমার কোনও আপত্তি কখনও ছিল না, এখনও নেই। ভুল বুঝো না। প্লিজ!
- তা হলে আমাকে নিয়েই আপনার যত আপত্তি!
- না, তাও না। তোমার কিছু ভাবনা ও মানসিক অবস্থান নিয়ে আমার আপত্তি আছে।
- মিশেল ফুকোর একটা ফিলসফি ছিল, যেটার মূল কথা হলো, ভাষা মানুষের তৈরি। ভাষা দ্বারা কখনও কিছু বোঝানো সম্ভব নয়! সব হচ্ছে signifier আর signified-এর খেলা! একটু ভেঙে বলি। এ পৃথিবীতে স্ট্যান্ডার্ড ভাষা বলে আসলে কিছু নেই। যে কয়েকটা ভাষাকে আমরা স্ট্যান্ডার্ড ধরে নিই, সে কয়েকটা ভাষার যেকোনওটি জানাটাকেই আমরা গ্রহণীয় হবার মাপকাঠি হিসেবে ধরে নিই। আমাদের এমন ধারণা সম্পূর্ণ আরোপিত। সেইসব ভাষায় যারা কথা বলে, তাদের প্রভাব, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয় ভাষাগুলোকে গ্রহণযোগ্য করেছে। ব্যাপারটা এমন যে যেকোনও ভাষাই অন্য ভাষায় কথা-বলা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে যেতে পারে, যদি প্রথম ভাষাভাষী মানুষ খুব শক্তিধর হয়। আবার এমনও হতে পারে, ধরা যাক, শ’ পাঁচেক মানুষ এমন একটা দুর্বোধ্য ভাষায় কথা বলে, যে ভাষা পৃথিবীর আর কেউ জানে না। যদি এমন হয় যে সেই পাঁচশো জন মানুষকে তাদের জীবনের কোনও পর্যায়েই অন্য ভাষাভাষী কারও উপর বিন্দুমাত্রও নির্ভর করতে না হয়, জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি ওরা নিজেদের বাইরে আর কারও উপরই নির্ভরশীল নয়, তবে তারা ওই একটা নেটিভ ভাষাতেই জন্ম, বেড়ে-ওঠা, মৃত্যু সব কিছুই অনায়াসেই সম্পন্ন করতে পারে। কোনও কথা না বলেই যদি হাত বা মুখের ইশারাতেই সব কাজ চালিয়ে নেওয়া যায়, তবে তা-ই যথেষ্ট। যে বোঝাতে চাইছে আর যাকে বোঝাতে চাইছে, এই দুই পক্ষ যেকোনও ভাষাতেই, হোক সেটা বাকি পৃথিবীর কাছে দুর্বোধ্যই, পারস্পরিক ভাব আদানপ্রদানের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে পারে।
আবার কেউ যদি আমার কথা বুঝতেই না চায়, তবে এমন একটা ভাষাও নেই, যে ভাষায় তাকে আমি আমার কথাটা বোঝাতে পারি। আমাকে পছন্দ করে না, কিংবা আমি যা বলছি তা সে ওই মুহূর্তে পছন্দ করছে না, এমন কোনও মানুষকে আমি যা বলতে চাইছি তা বোঝানো অনেক কঠিন, এবং প্রায়ই দুঃসাধ্য। আবার যে আমায় পছন্দ করে, তাকে তেমন কিছু বোঝাতে হয় না, সে এমনিই বুঝে নেয়! আমি যা বলতে চাই তা শুনতে চায় না, আমি যা বোঝাতে চাই তা বুঝতে চায় না, এমন কারও সাথে কোনও ভাষাতেই কথা বলা সম্ভব নয়। আবার যদি এমন করা যায় যে…সে যেভাবে বা যে পথে বুঝতে চায়, আমিও সে পথে হাঁটতে রাজি, তবে তাকে আমার কথা বা ভাবনা বোঝানো একটুও কঠিন নয়। এখন বুঝি, ভাষা কত অসহায়! কাউকে জোর করে কিছুই বোঝানো সম্ভব নয়। এমনকি এই পৃথিবীর সর্বজনীন যে দুইটা ভাষা--ক্ষুধা ও যৌনতা, কারও যদি এই দুইয়ের চাহিদা না থাকে বা কোনও পরিস্থিতির কারণে এই দুইয়ের প্রতি বিতৃষ্ণার সৃষ্টি হয়, তবে তাকে কোনওভাবেই এই দুই দিয়েও খুশি করা যাবে না।
কিছু দিন ধরে আমি মিশেল ফুকোর ফিলসফি কাজে লাগাচ্ছি! নিজস্ব ভাষা দিয়ে কাউকে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছি না, সবাই যে যার মতো করে বুঝে নিচ্ছে। এই তো সেদিন যে মানুষটিকে বললাম, ভাই, টিউশনের সব টাকা শেষ করেছি এই হাতের ব্যথার পিছনে, এত ডাক্তার দেখিয়ে…কাল সে আমায় বলে, ভাই, হাতে এত ব্যথা আপনার, ডাক্তারই তো দেখান না, নিজের যত্ন নেন না…ইত্যাদি ইত্যাদি! মেজাজটা খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল! কাকে কী বোঝালাম সেদিন! জবাব না দিয়ে তার কথাকে সাপোর্ট করলাম! হ্যাঁ, সে ঠিকই বলেছে, আমি ডাক্তার দেখাই না, নিজের যত্ন নিই না, আসলেই নিজের খেয়াল নিজেকেই রাখতে হয়…শুনে সে মহাখুশি, আমাকে গ্রিলড-চিকেন খাওয়ার আমন্ত্রণ জানায়! নিজের দ্বিচারিতার এমন সাফল্যে আমি নিজেই অবাক! কেউ আসলে কারও সব কথা শোনে না, শুধু সেটুকুই শোনে যেটুকু সে শুনতে চায়, বাকিটুকু শোনে না, কেবল বক্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। Superficiality এভাবেই জয়ী হয়! Nobody cares about the true impulsive instincts. শব্দও যে ভাঙা যায়, নতুন অর্থ তৈরি করা যায় সেসব ভাঙা শব্দ দিয়ে, কার অত সময় এগুলো নিয়ে ভাববার! মানুষ শুধু ততটুকুই শোনে ও মাথায় রাখে যতটুকু সে শুনতে চায়।
দুই রকমের সত্য আছে। এক, যে সত্য প্রকৃত। এর নাম বোধের সত্য। দুই, যে সত্য মানতে ভালো লাগে। এর নাম মনের সত্য। মানুষ সাধারণত মনের সত্য জানতে ও ধারণ করতে ভালোবাসে। যা-কিছু তার কাছে সত্য বলে মানতে সুবিধে হয়, তা-কিছু পায় যার কাছে, তাকেই সে আপন ভাবে। তার জন্য নিজের সবটুকু দিতে প্রস্তুত থাকে। মুখে যা-ই বলুক, মোটামুটি সবাই-ই চায় শেষ পর্যন্ত ভাবনার কমফোর্ট-জোনে থেকে যেতে। এমনকি মানুষ অপ্রিয় মিথ্যাকেও সহজেই মেনে নেয়, যদি সে মিথ্যা তাকে তার সেই সেইফ জোন থেকে বের করে না আনে! মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত তার নিজস্ব সেইফ-জোনে আছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনও সত্য বা মিথ্যায় তার কিছুই এসে যায় না।