যেভাবে তোমার দাম কমে

 নিজেকে সবসময়ই খুব বেশি অ্যাভেইলেবল করে রেখো না; মাঝে মাঝে নিজেকে এমন করে রাখো, যাতে সে তোমাকে মিস করে। যদি এটা না করো, তবে তোমার এমন বেপরোয়া আচরণ দেখে দেখে সে একসময় ক্লান্ত হয়ে যাবে। সে তখন তোমাকে নির্লজ্জ ভাববে এবং তেমন কোনও 
 দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই নিজের দাম বাড়িয়ে আকাশে উঠে যাবে।
  
 তখন কী হবে, জানো? সে তোমাকে দেখলেই বিরক্ত হবে, তোমার ছায়া দেখলেও পালাতে চাইবে, তোমাকে ফর-গ্রান্টেড হিসেবেই ধরে নেবে। তোমার কোনও কিছুকেই সে আর পাত্তা দেবে না, সে ধরেই নেবে, 'তাকে এত কেয়ার করার কিছুই নেই! তাকে তো ডাকতেও হয় না, সে তো ডাকার আগেই চলে আসে!' মনে রেখো, না ডাকলে কিন্তু নিজের পোষা কুত্তাটাও আসে না!
  
 এরকম করলে দেখবে, দু-দিন পর সে তোমার কোনও কাজেরই প্রশংসা আর করবে না। তুমি আগে যা করলে সে খুশি হয়ে উঠত, তার দিকে সে আর খেয়ালই করবে না। এমনকী তুমি পাশে থাকলে সে উলটো বিরক্ত হবে, যদিও একদিন সে তোমাকে খুব করে পাশে চাইত! সে তোমাকে প্রায়ই বলবে, তুমি তাকে তার মতো করে থাকতে দিচ্ছ না, তুমি তাকে তার জীবনটা উপভোগ করতে দিচ্ছ না।
  
 সারাক্ষণই এরকম গা ঘেঁষে ঘেঁষে থাকলে সে ক্রমেই তোমার উপর চরম বিরক্ত হয়ে উঠবে, তোমাকে দেখলেই সে অতিবিরক্ত হবে, কখনওবা গালাগালিও করতে পারে। একসময় সে তোমাকে প্রতিপক্ষ ভাবা শুরু করে দেবে। ভালোবাসা দূরে থাক, তোমার প্রতি বিরক্তি ও ঘৃণায় তার মনটা পূর্ণ হয়ে যাবে। তুমি তাকে ভালোবেসেই যাবে, এবং তার আচরণগুলি দেখে কিছুতেই কিছু মেলাতে পারবে না। নিজেকে একেবারেই ফালতু, তুচ্ছ, নগণ্য মনে হবে। আত্মসম্মানবোধ তো হারাবেই, তার সঙ্গে হারাতে থাকবে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটুকুও।
  
 দেখো, কাউকে ভালোবাসো বলে সারাক্ষণই তার পেছন পেছন অমন কুকুরের মতন ঘুরো না। এটা সত্যিই খুব বিরক্তিকর। বাঁচার জন্য প্রত্যেকেরই একটা পার্সোনাল স্পেস লাগে। তুমি ভালোবাসার অজুহাতে সেটা নষ্ট করে দিতে পারো না। যদি দাও, তখন দেখবে, তুমি নিজের অজান্তেই ক্রমেই একজন সাইকোপ্যাথ এবং টক্সিক মানুষে পরিণত হচ্ছ। ওরকম কারও সঙ্গে থাকতে কে চায়!?
  
 তাকে ভালোবাসো? তো ভালো কথা, তাই বলে তার সঙ্গে প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় কথা বলতে হবে? তার আশেপাশে ছায়ার মতো লেগে থাকতে হবে? প্রতিদিনই তাকে তোমার সামনে হাজিরা দিতে হবে? তোমার নিজের সুখের জন্য তাকে বিরক্ত করে ছাড়তেই হবে? তার প্রতিটি কাজেই ওরকম ফালতুভাবে গোয়েন্দাগিরি করতে হবে? যত বেশি তুমি কারও পিছু নেবে, তত বেশি সে তোমার কাছ থেকে পালাতে চাইবে।
  
 তুমিই বলো, যাকে না চাইলেও পাওয়া যায়; শুধু যে পাওয়াই যায়, তা নয়, রীতিমতো যে মানুষটা বিরক্ত করে ছাড়ে, সে মানুষকে আদৌ কি দাম দেবার কিছু আছে? একটু বুঝতে শেখো! শুধু ভালোবাসতে জানলেই হয় না, এসবও বুঝতে হয়। ভালো তো অনেকেই বাসতে জানে, ব্যাপারগুলি বুঝতে জানে কয়জন?
 আচ্ছা ভাই, তোমার কি সত্যি সত্যি তার পেছনে ঘুরঘুর করা বাদে আর কোনও কাজই নেই? তুমি কি সত্যিই ভুলে গেছ যে একদিন তোমারও কিছু লজ্জাশরম ছিল? একটু মনে করে দেখো তো! নিজেকে সম্মান করতে একদিন তুমিও জানতে! করার মতো অনেক কাজ একদিন তোমারও ছিল! তুমি জন্মেছ মানুষের পেটে, আর বাড়ছ কিনা এমন কুকুর হয়ে! কোনও মানে হয়!?
  
 ভালো থাকতে চাইলে এবং ভালো রাখতে চাইলে কিছু দূরত্ব লাগেই। ভালোবাসা কিছু দূরত্বের দাবি রাখে। শান্তি বজায় রাখতে চাইলে দু-জনই নিজের সঙ্গে নিজে কিছু সময় কাটিয়ো। এবং দু-জন দু-জনকে ওরকম একান্তে সময় কাটাতে দিয়ো। ছেড়ে দিলে পালাবে না, ধরে রাখলে পালাবে। আর যে পালানোর, সে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখলেও পালাবে!
  
 তুমি তার চোখের সামনে সারাক্ষণই অমন লটকে থাকলে সে তোমাকে মিস করার সুযোগটাই-বা কখন পাবে? মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে এমন আঠামানব হয়ে জীবন কাটাচ্ছ কেন? বিরক্ত কোরো না, অশান্তিতে রেখো না, যন্ত্রণা দিয়ো না। ওরকম করলে তোমার শুদ্ধতম ভালোবাসাও ক্রমেই হয়ে উঠবে এক ভয়ংকর দানব!