যত্ন নিতে শিখুন

 যে থাকার, সে থাকবে।...এটা পুরোপুরিই গা-বাঁচানো, ফালতু ও ভুয়া একটা কথা। যত্ন না করলে লোহার পিঠেও জং ধরে, হিরের গায়ে ধুলোর স্তর জমে।
  
 যত্ন না করলে যেখানে পালা-কুকুরটাও চলে যায়, সেখানে কী করে আশা করছেন, একটা মানুষের যত্ন না নিলেও সে জীবনে থেকে যাবে?
  
 থাকলে থাকবে, না থাকলে নাই!...এই কথাটা পুরোপুরিই একটা দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা। যাদের ভেতর ন্যূনতমও দায়িত্ববোধ নেই, তারাই এই কথাটা বলে। এবং, যারা এমন কথা বলে, তারা আসলে কাউকেই লাইফে ডিজার্ভ করে না। তাদের উচিত, একা থাকা।
  
 দেখেছেনই তো, যত্ন না করলে ফুলের বাগানেও আগাছা জন্মায়, বটগাছের মগডালেও পরগাছা গজায়। যেখানে অযত্নে অযত্নে গাছেরও আগাছা জন্মায়, সেখানে কী করে আশা করছেন, অযত্নের পরও মানুষ থেকে যাবে?
  
 খেয়াল করলে দেখবেন, আপনি মানুষটিকে যতই গভীরতা দিয়ে ভালোবাসেন না কেন, মানুষটির কাছ থেকেও একইরকমের যত্ন না পেলে ধীরে ধীরে তার প্রতি আকর্ষণ হারাবেন, মনের মধ্যে কেমন একটা বিতৃষ্ণা জন্মাবে, ফলে ক্রমশই অন্য কারও প্রতি আপনার আগ্রহ তৈরি হবে।
 মানুষের মনটা অনেকটা জলের ধারার মতন, যেদিকে টান পায়, সেদিকেই বয়ে যায়।
  
 এই মনটা আবার অনেকটা কুকুরের মতনও, একটু যত্ন পেলেই সে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়।
 যে মানুষটি আপনাকে পেয়েও ‘যে থাকার, সে এমনিতেই থাকবে!’ সূত্রে আপনাকে অযত্নে রাখে, তাকে পলিথিনে মুড়িয়ে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে আসাটাই আপনার কর্তব্য।
  
 যে মানুষটি ‘থাকলে থাকবে, না থাকলে নাই!’-এর মতো অমন বস্তাপচা নীতিতে বিশ্বাস করে আপনাকে ধরে রাখার চেষ্টাই করে না, তার মুখে থুতু ছিটিয়ে অন্য কারও হাত ধরে উলটোপথে হেঁটে যাওয়াটা আপনার জরুরি দায়িত্ব।
  
 বাঁচতে চাইলে ছাড়তে জানতে হয়। কেউই অপরিহার্য নয়, কিছুই চিরন্তন নয়। এক মৃত্যু বাদে আর কোনও ঘটনাই অনিবার্য নয়।
  
 আমাদের পুরা লাইফটাই মেড ইন চায়না, বাস্তবে এখানে ‘গ্যারান্টি’ বলে কোনও শব্দই নাই! যা আছে, তা কেবলই কাগজে-কলমে!
  
 যার ভেতর আপনাকে ধরে রাখার দায় বা দায়িত্ববোধ নেই, তার জন্য নিজের অমূল্য ভালোবাসা খরচ করা ভালোবাসারই চরম অবমূল্যায়ন!
  
 এ পৃথিবীতে ভালোবাসার চেয়ে ঢের ঢের জরুরি বিষয় হলো আত্মসম্মানবোধ। যে আপনাকে সম্মান দিতে জানে না, সে আপনার ভালোবাসা ডিজার্ভই করে না, তা সে যে অবস্থানেরই মানুষ হোক না কেন! যে আপনাকে মূল্যবান ভাবে না, সে-ও আপনার কাছে ছিটেফোঁটাও মূল্যবান কেউই নয়! নিজের মূল্যটা বুঝতে শিখুন, দেরি হয়ে যাবার আগেই! আপনার মূল্য দেয় না যে, তাকে আপনার মূল্যটা বুঝতে দিন। সময়ই অনেক উত্তর দিয়ে দেয়, মুখে কিছু বলতে হয় না।
  
 যা-ই ঘটুক না কেন, মানুষের জীবনে একজন নির্বিকার ভালোবাসার মানুষের চেয়ে বরং একজন যত্নশীল ভালোবাসাহীন মানুষই অনেক বেশি প্রয়োজন। ভালোবাসায় নয়, জীবনটা যত্নেই বাঁচে। যদি কখনও টের পেয়ে যান, আপনার মানুষটা ভালোবাসে, কিন্তু যত্ন নিতে জানে না বা নিতে জানলেও নেয় না, তখনই তার জীবন থেকে সরে দাঁড়াবার কথা ভাবুন।
  
 যে আপনার যত্ন নেয় না, খোঁজ নিলে জানতে পারবেন, সে-ও কিন্তু অন্য কারও যত্ন নিতে চায়!
 সামান্যতমও লজ্জা থাকলে কাউকে দিয়েই জোর করে আপনার যত্ন নেওয়াবেন না!
  
 আপনার দেহে কিংবা মনে যত রকমেরই আঁচড় বা আঘাত স্থায়ীভাবে লেপটে যাক না কেন, সাইকোপ্যাথ ও টক্সিক পার্টনারকে ছেড়ে আসতে চাইলে কেবল একটি যোগ্যতাই লাগে: যদি আপনি ইতোমধ্যেই কবরে চলে না যান!