যখন কাউকে ভালোবাসো

 যখন তুমি কাউকে ভালোবাসো, তাকে তুমি প্রতিদিনই, এমনকী প্রতি মুহূর্তেই ভালোবাসো। এখানে অন্য কিছু ভাববার কোনও অবকাশ নেই; তুমি তাকে তার সুদিনে যেমন ভালোবাসো, তেমনি তার দুর্দিনে তুমি তাকে আরও একটু বেশি ভালোবাসো।
  
 তার সব কিছুই তোমার ভালো লাগে। তুমি তার প্রশংসা করলে সে সঙ্গে সঙ্গে লজ্জায় কেমন লাল হয়ে ওঠে, সে খুব জোরে হাসলে তার কণ্ঠটা কেমন ফ্যাসফ্যাসে হয়ে যায়---এ সবই তোমার ভালো লাগে। তোমার খুঁটিনাটি সব কথাই সে খেয়াল করে শোনে, মনে যা-ই আসে সঙ্গে সঙ্গে বলে দেয় কিংবা জিজ্ঞেস করে ফেলে। এইসব দেখতে তোমার ভালো লাগে।
  
 তবে সে ভুলও করে, মাঝে মাঝেই করে। হয়তো সে কোনও একটা ব্যাপারে সব এলোমেলো করে বসে আছে, তার মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে কোনও একটা কারণে, কিন্তু সে তোমাকে কিছুই জানাচ্ছে না। তখন তোমার মনে হবে, কেন এমন করছে সে? কেন আমার কাছ থেকে লুকোচ্ছে সে? সে কি আমাকে বিশ্বাস করে না? তোমার মাথায় নানান কিছু আসবে, মনে সন্দেহ ক্রমেই দানা বাঁধবে।
  
 কখনওবা, তুমি এতটাই ব্যস্ত হয়ে থাকো যে তার জন্য সময় বের করতেই পারো না। হয়তো তার সঙ্গে কোথাও যাবার কথা ছিল, সময়ের অভাবে শেষ মুহূর্তে তুমি প্ল্যানটা বাতিল করে দিলে। সে তখন ভাববে, তোমার কাছে বোধ হয় তার দামটা ফুরিয়ে আসছে।
  
 ভুল বোঝাবুঝি ছোটো ছোটো দ্বন্দ্বের জন্ম দেয়। এবং সেইসব দ্বন্দ্বের কারণে যখন দু-জন মানুষ পরস্পরের সঙ্গে কথা বলাই বন্ধ করে দেয়, তখন সেই ভয়ংকর নীরবতা মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্নের সৃষ্টি করে, যেগুলির ভুলভাল উত্তর মন নিজেই দিয়ে দেয়। এতে দূরত্বটা আরও বাড়ে। এবং, বাড়তেই থাকে। কথা বলে অনেক সমস্যারই সমাধান করে ফেলা যায়, কিন্তু মন তো তখন কথা বলতেই দেয় না!
  
 প্রেমে পড়া সোজা হলেও প্রেমটাকে ঠিকভাবে টিকিয়ে রাখা খুবই কঠিন। কারও প্রেমে পড়ার মানে এ নয় যে, তোমাকে সারাক্ষণই তাকে ফোন করতে হবে, প্রতি দু-দিন পর পর তার সঙ্গে ডেটে যেতে হবে, কিংবা তাকে উপহারে উপহারে ভরিয়ে দিতে হবে। এসবের চাইতে বরং তাকে কখনও কখনও তার মতো করে থাকতে দিয়ো, নিজের সঙ্গে কাটাবার জন্য কিছু সময় ও জায়গা তাকে ছেড়ে দিয়ো; এবং সবচাইতে জরুরি বিষয় হলো, তুমি থেকে যেয়ো তার অপেক্ষায়। নিজের সঙ্গে সময় কাটানোশেষে সে ঠিকই তোমার কাছে ফিরে আসবে।
  
 জীবন যখন কঠিন হয়ে যায়, তখন দু-জন দু-জনকে সময় দিয়ো, পুরনো গল্পগুলি আবার কোরো। যখন দু-জন দু-জনের প্রেমে পড়েছিলে, তখন তোমরা পরস্পরের সম্পর্কে কী ভাবতে? এখন কী ভাবো? এমন নানান গল্প করো। তার মন খারাপ হলে সে যদি তোমাকে অনেক কথাও শোনায়, তবু তখন তার পাশে থেকো। তোমার সঙ্গটা তার খুব প্রয়োজন। তাকে জড়িয়ে ধরে তার পাশে চুপ করে বসে থেকো; নীরবতা আপনাআপনিই অনেক সমস্যার সমাধান করে দেয়।
  
 যাকে বা যাদের তুমি ভালোবাসো, তাকে বা তাদের হাতটা ছেড়ে দিয়ো না। ওদের কষ্টের সময়ে পাশে থেকো। ছেড়ে যাবার লোকের অভাব হয় না, থেকে যাবার লোকের সত্যিই বড়ো অভাব।
 মানুষটার পাশে বসো, তার প্রিয় গান বা ইন্সট্রুমেন্টালটা দু-জন মিলে শোনো। তার ভালো সময়ে পাশে থাকো না থাকো, খারাপ সময়ে অবশ্যই থেকো। যখন সবাই ছেড়ে চলে যায়, তখনও যে পাশে থেকে যায়, কেবল সে-ই বন্ধু। সুসময়ের বন্ধুকে কেউ মনে রাখে না, দুঃসময়ের বন্ধুকে মানুষ আমৃত্যু মনে রাখে। তার সাফল্য যেমনি উদ্‌যাপন করো, ঠিক তেমনি তার ব্যর্থতাও দু-জন মিলে সামলে নিয়ো।
  
 আর কিছু নয়, তুমি তাকে ভালোবাসো বলেই কক্ষনো তাকে ছেড়ে যেয়ো না, যা-ই ঘটুক না কেন---যদি এতে তোমার নিজের অস্তিত্ব বিপন্ন না হয়!