মেয়ে, পৃথিবী কাঁপিয়ে নাচো!

 সে যখন বলেছিল, তোমাকে ভীষণ ভালোবাসে, সেই সময়টার কথা মনে পড়ে?
 সে যখন বলেছিল, সারাজীবন একসঙ্গে থাকবে, সেই সময়টার কথা মনে পড়ে?
 কিংবা সেই সময়টা...যখন সে শপথ করে বলেছিল, কখনও ছেড়ে চলে যাবে না, সবসময়ই তোমরা দু-জন একসঙ্গে থাকবে, তুমিই তার সব কিছু, এরকম আরও হাজারো মনভোলানো কথা...মনে পড়ে?
  
 তার বুকে মাথা রেখে যখন তার হৃৎকম্প শুনছিলে, তোমার চুলের সমুদ্রে যখন তার আঙুলগুলি খেলছিল নিপুণ জাদুকরের মতো, সে তোমাকে টেনে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে লেপটে রেখেছিল পুরো শরীরের সাথে, আর বার বারই বলে চলছিল, সবসময়ই পাশে থেকে যাবে, যা-ই ঘটুক না কেন...মনে তো নিশ্চয়ই আছে, তাই না?
  
 মনে পড়ে, ঠিক সেই প্রশান্তির মুহূর্তে কতটা স্বস্তি আর শান্তি নিয়ে হাসছিলে? মনে হচ্ছিল, এর চাইতে শান্তি বুঝি আর কোথাও নেই...তোমার মধ্যে কোনও দ্বিধা ছিল না, মনে কোনও পাপ ছিল না, কোনও পিছুটান কিংবা ভয় ছিল না, জীবন নিয়ে সুন্দর সুন্দর অসংখ্য দর্শন ছিল, বেঁচে-থাকা নিয়ে তৃপ্তি ছিল পুরোমাত্রায়! শুধুই মনে হতো, এই মানুষটার উত্তাপ গায়ে মেখে, কণ্ঠস্বরটা বুকে ধারণ করে, হাসিতে-কান্নায় নির্দ্বিধায় গোটা একটা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যাবে!
  
 হ্যাঁ, মানুষটাকে আঁকড়ে ধরেই একদিন তুমি বেঁচে ছিলে।
 আজ সে নেই, তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে।
 সব কিছু আজ শেষ হয়ে গেছে।
 খুব করে চাইলেও আগের জীবনটা আর ফিরে পাবে না।
 জীবন এমন কোনও খেলা নয়, যা চাইলেই আবার নতুন করে শুরু করা যায়। যখন আমরা বুঝতে পারি, কোনও একটা জীবনে আমরা হেরে যাচ্ছি, তখন চাইলেই সেই জীবনটা আবার নতুন করে প্রথম থেকে শুরু করা যায় না। তবে হ্যাঁ, নতুন আরেকটা জীবন চাইলেই শুরু করা যায়! খুব ভালোভাবেই শুরু করা যায়।
  
 যা-ই ঘটুক, নিঃশ্বাসটা বন্ধ করে রেখো না। বাঁচতে হবে তো! চুলটা আঁচড়ে নাও, এক কাপ কফি নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসো, পা-দুটো মোড়ায় তুলে দাও, বাইরে থেকে ঠান্ডা হাওয়া এসে শরীরে লাগুক। মেয়ে, আনন্দে ও সুখে শিহরিত হও! শিহরিত হতে পুরুষ লাগে না। চাইলে ফুল ভলিয়্যুমে গান ছেড়ে দিয়ে পছন্দের ঢিলেঢালা পোশাকটা পরে নাচো! নিজেকে আর থামিয়ে রেখো না। অনেক রাখলে তো! রেখে কী লাভ হলো?
  
 উদ্‌যাপন করো! আজ তুমি মুক্ত! কারও তোয়াক্কা না করেই আজ থেকে দিব্যি বাঁচতে পারবে। আজ যা ইচ্ছে, তা-ই করো! অনেক দিন ধরে শেকলে বাঁধা ছিলে। তা-ও এমন কারও জন্য, যে একটা প্রতারক, মিথ্যেবাদী, বিশ্বাসঘাতক, কাপুরুষ! বড়ো বাঁচা বেঁচে গেছ, মেয়ে!
  
 নাচো, গলা ফাটিয়ে চিৎকার করো। নিজেকে আয়নায় দেখো! মুক্তির সুখে ভেসে যাও, নিজেকে ভাসিয়ে নাও। তার প্রস্থানকে স্বাগত জানাও! তোমার জীবনের ঠিক যে সময়টা থেকে সে আর নেই, সে সময়টা থেকেই নিজেকে গড়তে শুরু করো। নিজেকে আবারও ভালোবাসার সমুদ্রে ভাসিয়ে দাও। নিজেকে সুখী হতে দাও। যা করতে ভালো লাগে, তা-ই করো। যে যা-ই বলুক, পরোয়া কোরো না। তুমি কোনও শালার খাও-ও না, পরোও না! এত কেয়ার করার কী আছে! তুমি বসে বসে কাঁদলে কারও কিচ্ছু এসে যায় না। দুঃখ সবসময়ই ব্যক্তিগত। সুখের উৎসগুলিও হোক ব্যক্তিগত। এটা নিয়ে কাউকেই কিছু বলতে দিয়ো না। তুমি মরে গেলেও ওদের কিছু এসে যাবে না। সত্যি!
  
 এখন তোমার বাঁচার সময়। এখন তোমার হাসার সময়। হাসো, শব্দ করে হাসো...! নাচো, পুরো পৃথিবী কাঁপিয়ে নাচো...!
  
 দীর্ঘসময় ধরে তোমার জীবনের বড়ো একটা অংশ হয়ে সে পাশে ছিল। তাই মানুষটার জন্য খারাপ লাগবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভুল করেও তার প্রস্থানকেই তোমার জীবনের ধ্রুব সত্য করে তুলো না। তার প্রস্থান যতটা সত্য, ততোধিক সত্য তোমার পুনর্জন্ম।
  
 সুখকে আসতে দাও। ভালোবাসাকে আসতে দাও। আনন্দকে আসতে দাও। বাধা দিয়ো না।
  
 মন চাইলে বাইরে কোথাও ঘুরে আসো, মন চাইলে ঘরেই থাকো। ক্রেডিট কার্ডটা একটু হালকা করে ফেলো যদি মন চায়। চিজকেক, বার্গার, পিৎজা, কিংবা চটপটি-ফুচকা; সঙ্গে ইচ্ছেমতো শপিং! জেনে রেখো, তুমি যেমন আছ, ঠিক তেমন করেই তুমি সুন্দর। যে তোমাকে পায়নি, সে তো পুরো একপৃথিবী সুখই নিজের হাতে খুন করল। আর কেউ না বুঝুক, তুমি তো বোঝো, ভালোবাসার মানুষটাকে কতটা ভালো রাখতে জানো তুমি! যা ভেঙে গেছে, তা সারিয়ে নাও। সবই ধীরে ধীরে সারিয়ে নেওয়া যায়। সময়ের উপর আস্থা রাখো।
  
 নিজেকে ভেঙে যেতে দিয়ো না। তোমাকে ভেঙেচুরে রেখে যাবার সময় যে ভাঙা টুকরোগুলি সে চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়ে গেছে, সেগুলিকে কুড়িয়ে নাও। জোড়া লাগাও, নিজেকে আবারও শক্ত করে গড়ে তোলো। চাইলেই পারবে। তবে তার জন্য সবার আগে চাইতে হবে। চাইতে শেখো। এখন চাইতে শেখার সময়।
  
 তার ছবিগুলি ডিলিট করে দাও। তার চিঠিগুলি পুড়িয়ে ফেলো। তার যা যা স্মৃতি, সবই ছুড়ে ফেলে দাও। তাকে এবং তার সব কিছুকেই ধ্বংস করে দাও। সত্যি সত্যি এসব করো। বাঁচতে চাইলে এসব করতে হবে। জোর করে হলেও করতে হবে। পেছনে ফেরার সময় নেই। প্রয়োজনও নেই। পেছনে কেউ নেই, পেছনে কিচ্ছু নেই। তাই ওদিকে ফিরে তাকানোর কোনও মানেই নেই।
  
 অনেক রাতই তো না ঘুমিয়ে কাটালে! কী লাভ হলো?
 নিজেকে অনেক কষ্ট দিলে, ভেঙে তছনছ করলে সবই! কার কী এসে গেল?
 নিজের হৃদয়টাকে ইচ্ছেমতো কাটাছেঁড়া করলে! এক তুমি বাদে আর কেই-বা কষ্ট পেল?
  
 মনে রেখো, তুমি তোমার সমস্ত দুঃখের চেয়েও বড়ো। তুমি তোমার সমস্ত দুর্ভাগ্যের চেয়েও বড়ো। তুমি তোমার সমস্ত অপ্রাপ্তির চেয়েও বড়ো।
 নিজেকে চিনতে শেখো। অনেকই তো ছোটো করে রাখলে, অনেকই তো পরাজিত হতে দেখলে। আর কত!?
  
 সবসময়ই নিজেকে ভালোবাসো। তুমি না বাসলে বাসবেটা কে? কার এত দায় পড়েছে? নিজেকে গ্রহণ করতে শেখো। তুমি যেমনই আছ, তেমনই সুন্দর। যে তোমাকে ঠিক এভাবেই গ্রহণ করতে পারে না, তাকে গোনার সময়ই তোমার না থাকুক। নিজেকে সারিয়ে তোলার জন্য তুমি নিজেই যথেষ্ট। আর কাউকেই তোমার লাগবে না ব্যথায় প্রলেপ লাগিয়ে দিতে, কাজটা তুমি নিজেই করতে পারবে। সেই শক্তি ও সাহস তোমার আছে।
  
 সময় লাগলে লাগুক। দেরি হয়ে যায়নি এখনও, নিজেকে ভালো রাখার বেলায় দেরি হয়ে যায় না কখনও। নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখো। তোমার জন্য কোথাও কেউ-না-কেউ অপেক্ষায় আছে। তার জন্য হলেও বাঁচো। দুঃখের দিন শেষ হবে খুব শিগ্‌গিরই। আলো আসছে, চোখ মেলে তাকিয়ে দেখো। দু-হাত মেলো, আলো আসতে দাও। আলোতে স্নান করার জন্য প্রস্তুত হও। পৃথিবীকে দেখিয়ে দাও, তুমি নিজেকে ভাঙতে যেমনি জানো, তেমনি জানো নিজেকে গড়তে।
  
 জীবন সহজ। একে সহজভাবেই নাও। এখানে সবই ঘটে, তাই এর নাম জীবন। তোমার সঙ্গে নিশ্চয়ই এমন কিছু ঘটেনি, যা পৃথিবীতে একমাত্র তোমার সঙ্গেই ঘটল। তুমি এমন কিছুই হারাওনি, যা এই প্রথম তুমিই হারালে। তোমার চাইতে অনেক বেশি ভেঙে চুরমার হয়ে-যাওয়া মানুষ নিজেকে একেবারে ধ্বংসস্তূপ থেকে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে গেছে। তুমিও পারবে। ঘুরে দাঁড়াও। আর কেঁদো না। তোমার কান্নার একটুও দাম এক তুমি বাদে পৃথিবীর আর কারও কাছে নেই।