ভুল ভাঙে টুংটাং

আপনাকে ছাড়া একটা দিনও বাঁচবে না বলে বলে যে-মানুষটি একসময় রাতবিরেতে কেঁদেকেটে একাকার হয়ে যায়, সময়ের ব্যবধানে দেখবেন, সেই মানুষটিই অন্য কারও সাথে হেসেখেলে দিব্যি জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে।

যে-মানুষটি ক্যারিয়ার, ফ্যামিলি, ব্যক্তিজীবন নিয়ে অসুখী বলে একসময় হাজারো বার সুইসাইড করার সিদ্ধান্ত নিয়ে জীবনটাকে শেষ করে দেবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল, ভাগ্যের হেরফেরে সে মানুষটি হয়তো আজ সত্তর পেরিয়ে বৃদ্ধবয়সে নাতিপুতিদের সাথে হেসেখেলেই দিন পার করছে।

সবচেয়ে কাছের মনে করে যে বন্ধুটিকে আপনি জীবনের গোপন সব কিছুই শেয়ার করেন, একসময় আবিষ্কার করবেন, আপনার সব গোপন কথাই সে অন্যদের কাছে অনায়াসে ফেরি করে বেড়ায়।

বয়স যত বাড়বে, পৃথিবীতে যত পুরোনো হবেন, ততই আপনার ভুল ভাঙবে। বয়স বাড়লে শরীর ভাঙুক না ভাঙুক, ভুল ভাঙেই!

কাছের মানুষ বলে যাদের বুকে টানেন, তাদের দেখবেন দূরের মানুষ হয়ে প্রতিনিয়তই আপনার পিঠে ছুরি চালাতে, চোখ বন্ধ করে যাদের ভরসা করেন, তাদেরকেই চোখ উলটে ফেলে ভরসা ভাঙতে দেখবেন।

আপনার বুকে মাথা রেখে যারা হু-হু করে কাঁদতে পারে, একসময় দেখবেন, তারাই আপনার অনেক নির্ঘুম রাতে হাউমাউ করে কান্না করার একমাত্র কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই যে নিখাদ কিছু বাস্তবতা চোখের সামনে দেখবেন বয়স বাড়াতে বাড়াতে, এটাই হলো অনেক দিন বাঁচার অভিশাপ, এটাই হলো লম্বা হায়াত পাবার শাস্তি।

তবু জীবন ঠিক চলে যায়, তবু মানুষ বেঁচে থাকে; যদিও এর‌ই মাঝে কেউ কেউ আটকে যাবে সময়ের স্রোতে, কেউবা ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করতে করতে অনেকদূর চলে যাবে নাম-না-জানা নদীর শাখা-প্রশাখার মতন।