ভাবনা: নয়-শো একাশি ……………………………………………………………… এক। তোমার হাত ধরতে ইচ্ছা করে, তোমার পাশে বসে থাকতে ইচ্ছে করে, প্রতিদিনই, রাতে যখন বাড়ি ফিরি, খুব ইচ্ছে করে তোমাকে দেখতে। কিন্তু কখনও বলার সাহসই হয় না। দেখা তো নয়ই, মেসেজ যে পাঠাব, সেই সাহসটুকুও আমার হয় না। "হাতটা ধরি?" বললে তুমি যদি ভাবো, আমি দেখা করতে চাই! তাই ভয়ে কিছু বলতেও পারি না। এইসব বড়ো বড়ো অসহায়ত্বকে মানুষ ভালোবাসা বলে কেন, আমি বুঝি না। দুই। ভেবেছিলাম, গতকাল ব্রাজিল জিতলে খুশিতে ঠ্যালায় ঘোরতে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে দশ জন ক্যান্ডিডেটকে আমি ব্যক্তিগতভাবে ইনটেনসিভ কেয়ারের মধ্যে রেখে সামনের বিসিএস পরীক্ষাতেই ফার্স্ট করে দেবো। কিন্তু আর্জেন্টিনা জেতার কারণে আমি আমার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হলাম। ব্রাজিল হেরেছে, দুঃখ নেই। আর্জেন্টিনা জিতেছে, দুঃখ এটাই। ব্রাজিল দশ বার জেতার চাইতেও আর্জেন্টিনা এক বার হারা পৃথিবীর জন্য অনেক জরুরি। তবে ক্ষীণ আশার কথা একটাই: এই ব্রাজিলের বিপক্ষে খেলে হারার চাইতে এই ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে খেলে হারাটা এই আর্জেন্টিনার পক্ষে অনেক সহজ। তিন। যারা তোমার মানসিক শান্তি নষ্ট করে, তোমাকে আঘাত করে কথা বলে কিংবা যাদের আচরণ তোমার মন বা মেজাজ খারাপ করে দেয়, তাদের প্রতি কঠোর হও, চোখের সামনে থেকে তাদেরকে দূরে সরিয়ে দাও। দিনশেষে, নিজেকে ভালো রাখাই বড়ো কথা। যাদের ভালো লাগে না, তাদের এড়িয়ে চলো। ওদের কাছাকাছি গিয়ে বলার প্রয়োজন নেই যে ওদেরকে তোমার ভালো লাগে না, কিংবা ওরা খারাপ (এবং তুমি ভালো)। যার দিকে তাকাতে ভালো লাগে না, তার দিকে না তাকিয়ে অন্যদিকে তাকাও। যা-কিছু ভালো লাগে না, তার কাছে বার বার যাবার কী দরকার? দুর্গন্ধযুক্ত মলমূত্র চাটতে চাটতে কী বাজে গন্ধ, কী বাজে স্বাদ... ওয়াক থু... এসব বলার সত্যিই কি কোনও মানে আছে? পৃথিবীর সকল জ্ঞান, পাণ্ডিত্য, ঐশ্বর্য ইত্যাদি থাকার চাইতেও কমনসেন্স থাকাটা জরুরি। যে তোমাকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা দূরে থাক, তোমার সাথে কথাই বলল না, তাকে উদ্দেশ্য করে বা আক্রমণ করে কথা বলা আর রাস্তার কুকুরের মতো পথচারী দেখে ঘেউ ঘেউ করা একই ব্যাপার। যাকে ভালো লাগে না, তাকে এড়িয়ে চলি, তার ছায়াও মাড়াই না। তার ধারেকাছেও ঘেঁষি না, তাকে কিছু বলা তো অনেক পরের কথা! কেন? রুচিও হয় না, সময়ও হয় না। সে তার মতো, আমি আমার মতো। কথা শেষ! চার। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে, আজ আর্জেন্টিনা জিতে যাবে; কেননা কেবল আজকের আকাশই আর্জেন্টিনার পতাকার রঙে সেজেছে। ভালোবাসার মানুষকে সাময়িকভাবে ভুল বুঝলেও মানুষটি ঠিকই আবার ফিরে আসে, কেননা এই আবেগি বাংলাদেশে ভালোবাসার কোনও মৃত্যু নেই। আপনি সত্যিই যাকে ভালোবাসেন, দেখবেন, শেষমেশ সে-ই থেকে যাবে আপনার দু-চোখের সামনে... হাত-পা ছড়িয়ে। জ্বলন্ত চিতা থেকেও টুরু-লাভ একলাফে আপনার সামনে উঠে এসে গাইবে, তোমাকে ছেড়ে আমি কী নিয়ে থাকব... মনটাকে সরিয়ে কোনখানে রাখব... মন মানে না... ট্যাঁ ট্যাঁ ট্যাঁ... অ্যাঁ অ্যাঁ অ্যাঁ... ক্রোয়েশিয়াকে অসংখ্য ব্রাজিল-ভক্ত মাত্র ঘণ্টা দুয়েকের জন্য ভুল বুঝলেও ওরা মূলত ক্রোয়েশিয়াকেই ভালোবাসে। মাত্র দুই ঘণ্টায় মানুষের বাইরেরটা পাওয়া গেলেও মানুষটাকে কক্ষনো পাওয়া যায় না! আমরা বাংলাদেশের মানুষ। আমাদের মত হাজারটা হলেও মন একটাই। আমাদের ভালোবাসা মাঝে মাঝে এদিক-ওদিক চলে গেলেও ঠিকই আবার জায়গামতো ফিরে আসে। গরু সারাদিন মাঠে-ঘাটে চরে চরে এ-খেতে ও-খেতে মুখ দিলেও দিনশেষে ঠিকই মুখ দেয় নিজের খেতেই... একদম 'জায়গামতো'ই! এর নামই ভালোবাসা, এর নামই ফিরে আসা। এভাবেই ফিরে আসা যায়! শয়তানেরা আমাদের দেহ পেলেও মন পায় শুধু এক জনই! ক্রোয়েশিয়ার সাথেই যার নিয়তি বাঁধা, সে আর কোথায় গিয়ে থিতু হবে?! হিসাব বুঝেন নাই, দুধু খান?? প্রেমিকা হারিয়ে গিয়েছে তো কী হয়েছে? প্রেমিকার বান্ধবী তো আছে, তাই না? মন বাড়িয়ে ছুঁই যাকে, হাত বাড়িয়ে পাই না তাকে... তো হয়েছেটা কী? মনের মানুষ চলে গেলেও হাতের মানুষ ঠিকই থেকে যায়। প্রেমিকার অনুপস্থিতিতে প্রেমিকার বান্ধবীর সাথে ঘর করলেই বরং ভালো; ওতে ঘরটা অন্তত টিকে থাকে, ভেঙে যায় না। এই টেকানোটাই বড়ো কথা, যার সাথেই টিকুক না কেন! সকল সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে মনটাকে বড়ো করতে হবে, মনের জায়গা বাড়াতে হবে। মানুষের নেশায় ঘর ছাড়ে যে, তার মানুষও যায়, ঘরও যায়। আমরা তাই ঘর টেকাই, মানুষ ছাড়ি... এটাই আমাদের লিগ্যাসি, হৃদয়ের ঔদার্য, গর্বের জাত্যাভিমান! টুট টুট টুট ব্রাজিল চলে গেছে, রেখে গেছে তার প্রাণের চেয়েও প্রিয় বান্ধবী ক্রোয়েশিয়াকে। আর কেউ না জানুক, আমি তো জানি, সেদিন ব্রাজিল ক্রোয়েশিয়ার সাথে লড়াই করেছিল আমাদের ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনি থেকে ক্রোয়েশিয়াকে আউট করে দিতে! কী নিদারুণ! কী মর্মান্তিক! কবি বলেছেন, তুমি দিয়ো না গো বাসরঘরের মানুষ সরাইয়া... ভালোবাসার মানুষকে দূরে সরিয়ে দিতে চায় যে, তার বিচার স্বয়ং ঈশ্বরই করেন! কী ক্ষতি হতো যদি হতো একঘরে... দুই বধূ, এক স্বামী! হায় ঈর্ষা! হায় ব্রাজিল! হায় অদৃষ্ট! ব্রাজিল আর আমি দু-জনই ক্রোয়েশিয়াকে ভালোবাসি। আমার কারণেই ঈর্ষার আগুনে ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া'র যে ঘর পুড়ল, সে ঘর টিকিয়ে রাখা যে এখন আমারই পবিত্র দায়িত্ব! আমি যদি আজ আমার প্রেমিকার বিদায়ে তার প্রাণের চেয়েও প্রিয় বান্ধবীর পাশে না থাকি, তাহলে যে আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় প্রেমিকা কষ্ট পাবে! জীবন থাকতে আমার ভালোবাসার এ অপমান আমি হতে দিই কী করে!? না না না... এ আমি কিছুতেই হতে দেবো না...!!! হ্যাঁ ভাই, ঠিকই ধরেছেন, ঈশ্বর আছেন। ভালোবাসা যদি মেইড ইন বাংলাদেশ হয়, তবে সেটা কখনোই হারিয়ে যায় না... হয় মনের চিপায়, নয় রানের চিপায় তুষের আগুনের মতো হু হু করে জ্বলতে থাকে চিরন্তন ভালোবাসা। এ কারণেই তাঁর ইচ্ছেয় ক্রোয়েশিয়ার জয় হয়েছে, আমার সত্যিকারের ভালোবাসার জয় হয়েছে। আহা আহা, ভালোবাসা ঘুরে ঘুরে পলিটিক্সের ভাষায় কথা কয়... মুখে ছিল ব্রাজিল, হৃদয়ে ছিল ক্রোয়েশিয়া, হৃদয়ের গহীনে ছিল... শরম লাগে, তাই পরে বলব! হ্যাঁ, আমাদের সমস্ত ভালোবাসা আসলে ক্রোয়েশিয়ার জন্যই। এটাই ঈশ্বরের নির্দেশ। বুকের মধ্যে একসমুদ্র গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা (পড়ুন ব্রেকআপের ব্যথা) নিয়েও যে জাতি জীবন কাটিয়ে দেয় অন্যের বা অন্যদের প্রাক্তনের সাথে, সে জাতিকে এসব তুচ্ছ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা বিরহের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা গরিব হতে পারি, কিন্তু আমাদেরও একটা ইশটিটাশ আছে। ইউএস ডিভি লটারির সময়েও আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি, আমরা যাকে সবচাইতে বেশি ঘৃণা করি, তার বুকেই সবচাইতে বেশি ঝাঁপিয়ে পড়তে চাই। উঠতে-বসতে সমাজতন্ত্রের ঝাণ্ডা ঊর্দ্ধে তুলে ধরে আমেরিকার চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করতে করতে একদিন লটারি জিতে একদৌড়ে আমেরিকায় পালিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে অনেককেই দেখেছি এ জীবনে। "অন্তরে অমৃত না থাকলে মুখ দিয়ে এত গরল উগরে দিতে..." আমরা পারি না! এদিকে আবার স্টকহোম সিনড্রোম-গ্রস্ততা আমাদের শিরায় শিরায়... যে যত মারে, সে তত বাঁধে।... লও ঠ্যালা! আমাদের প্রেম ব্রাজিলের সাথে, বিয়ে ক্রোয়েশিয়ার সাথে, দরকার হলে ঘর করব আর্জেন্টিনা বা অন্য কারুর সাথে। ভামোস, ভালোবাসা! পুনশ্চ। ক্রোয়েশিয়া না জিতলে কী পাবেন? অশ্বডিম্ব! আর ক্রোয়েশিয়া জিতলে কী পাবেন? এক্স মিস ক্রোয়েশিয়া ইভানা, জিতলে ক্রোয়েশিয়া... যা দিবে না... জম্মে হপ্পে এক্কেবারে ক্ষীইইর! ক্রোয়েশিয়া, মাই লাভ! (এ কথার অর্থ না বুঝলেও ক্ষতি নাই, বিসিএস পরীক্ষায় আসবে না।) ভাবনা: নয়-শো বিরাশি ……………………………………………………………… এক। টানটান উত্তেজনা কাহাকে বলে, কত প্রকার ও কী কী, তা বুঝলাম আজকের ম্যাচ দেখে! একটা ম্যাচে একদমই সহজ জয়কে কঠিন জয়ে পরিণত করে, ওটা আবার শেষমেশ জিতে যাওয়া... এ কাজে আমাদের জুড়ি নাই। আমাদের নার্ভে সেই লেভেলের চাপ সৃষ্টি করার জন্যই প্রিয় ভাইয়েরা অমন সহজ ক্যাচ ইচ্ছে করেই মিস করে কি না কে জানে! বিশেষ করে, হার্টের অসুখ যাদের আছে, তাদের জন্য আজকের খেলাটা দেখা বিশেষ অসুবিধার! এরকম একটা ম্যাচ নাস্তিক মানুষকেও আস্তিক বানিয়ে ছেড়ে দেয়! বাপ রে বাপ! দুই। ভাই, আপনারা যে যা-ই বলুন না কেন, অনলি ক্রিকেট ইজ রিয়েল! নিজের দেশ খেলে, বিদেশি টিমকে তুলোধুনো করে, দেখতে সত্যিই ভালো লাগে। মিরাজ ইজ অ্যা বিউটিফুল জিনিয়াস!! গ্যালারির দিকে তাকান। দেখবেন, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা'র সাপোর্টাররা জার্সি গায়ে পাশাপাশি বসে আছে, বাংলাদেশের দাপুটে পারফরম্যান্স দেখে একসাথে সেলিব্রেট করছে। ব্রাজিলের উত্তাপে আর্জেন্টিনা সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে হেমন্তের শীত তাড়াচ্ছে। আহা, দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়! দেরিতে হলেও আর্জেন্টিনার সাপোর্টাররা বুঝতে পেরেছে, সত্যকে মেনে নিতে চাইলে ব্রাজিলের সাপোর্টারদের কাছে যেতেই হবে, তাদের পাশে বসতেই হবে, তাদের হাতে হাত মেলাতেই হবে। একমাত্র ক্রিকেটই পেরেছে আর্জেন্টিনার সাপোর্টারদের মধ্যে এমন বোধোদয় করতে। ফুটবল আবার কী জিনিস! আজ থেকে ফুটবল বাদ। ক্রিকেট থাকতে ফুটবল কী!? আজব! তাই আবারও বলছি, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা'র চিন্তা ছেড়ে সবাই মিলে আজকের বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ম্যাচের দর্শকদের মতো ব্রাজিলের ছায়াতলে আসুন। দেখলেনই তো, বাংলাদেশের ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখে আমি নিজেও আর্জেন্টিনার সাপোর্টারদের দেখাদেখি লাইনে চলে এলাম! হ্যাটস অফ, টাইগারস!! তিন। ফ্রেন্ডশিপ ডে এলেই আমার প্রাক্তনের কথা মনে পড়ে। জানি না, কে কতটা ভালোবেসেছি, ভালোবাসা পেয়েছি, কিংবা আদৌ কোনও ভালোবাসা ছিল কি না আমাদের মধ্যে! কিন্তু আমরা একে অপরের ভালো বন্ধু ছিলাম, অনেক অনেক অনেক বেশি ভালো বন্ধু। আমি যেমন এখনো মুখস্থ বলে দিতে পারি, সে এই সময়ে কী করছে, সে ছুটির দিনে কী করে, কী পড়তে আর পরতে ভালোবাসে, ঠিক তেমনই সে-ও বলে দিতে পারবে, আমি রেগে গেলে কেমন করি, আমাকে কীভাবে শান্ত করতে হয়, আমার শাড়ি প্রিয়, না কি ওয়েস্টার্ন, কোন বই পড়তে ভালোবাসি, কী খেতে ভালোবাসি... সব, সবই বলতে পারবে। আর সবচেয়ে বড়ো কথা, দু-জনেরই মোটামুটি ভয়ংকর কিছু অতীতের গল্প থাকার পরেও আমরা ওসব নিয়ে কেউ কাউকে আঘাত করিনি কখনোই। এতটা গভীর বন্ধুত্ব বোধ হয় আমি আর কারুর কাছ থেকে পাইনি। প্রেমটা এখন আর নেই সত্যিই। আসলে প্রেম এক অদ্ভুত জিনিস, কারও প্রতিই আজীবন থাকে না। আমি প্রেমিক খুঁজতে গিয়ে বন্ধু পেয়েছি। বরাবরই আমার লাক অনেক ভালো। আমি জানি, আমার কোনও প্রেমিক বিপদের সময় পালিয়ে গেলেও আমার এই বন্ধুটি কিছুতেই পালাবে না। আমিও তার বন্ধু হয়ে উঠতে পেরেছিলাম কি না জানি না, কিছু জানতে ইচ্ছেও করে না এই ব্যাপারে। তবে কেন যেন মনে হয়, আমার অস্তিত্বের কোথাও-না-কোথাও এখনও সেই প্রেমিকা সত্তাটি রয়ে গেছে, কে যেন খুন করে লুকিয়ে রেখেছে ওখানে। কে করল এই কাজটা? কেন করল আমার সাথে? প্রিয় প্রাক্তন এবং আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, তুমি তো আমার জীবনের প্রায় সবই জানো, আমাকে বোঝো বলেও দাবি করেছ বহুবার। তুমিই সবাইকে বলে দাও তবে খুনির নামটা! বলবে তো, নাকি? চার। ব্রাজিলের ফ্যানরা যেভাবে আর্জেন্টিনাকে সহ্যই করতে পারে না, এবং আর্জেন্টিনার ফ্যানরা যেভাবে ব্রাজিলকে সহ্যই করতে পারে না, ঠিক সেভাবে যদি মানুষ নিজের বউ বাদে আর কারও বউকে সহ্যই করতে না পারত, তাহলে বাংলার ঘরে ঘরে বউরা সবাই স্বামীদের এতই প্রশংসা করত এতই প্রশংসা করত যে, তার কাছে ব্রাজিলের বা আর্জেন্টিনার কোচের বাংলাদেশ-প্রেম নিতান্তই তুচ্ছ মনে হতো। পুরুষমানুষ নিজের বউয়ের ভালোবাসার কোনও দামই দেয় না, অথচ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা'র কোচের ভালোবাসা পাবার জন্য ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতন সমানে লাফায়! পছন্দের দল এক, আর পছন্দের বউ আরেক। পুরুষমানুষ... হুঁশ ঠিক, মাথা খারাপ! পাঁচ। বাই দ্য ওয়ে, মরক্কো বনাম স্পেন-এর খেলা দেখেছেন তো? একদম সেইরকম ফাটাফাটি একটা ম্যাচ! না দেখে থাকলে পরে দেখে নিতে পারেন। অনেক হাই-ভোল্টেজ ম্যাচই এই ম্যাচের কাছে নস্যি! মরক্কোর জন্য শুভকামনা। ছয়। এমন একটা কথা লিখুন, যা পড়লে কেউ খুশি হবেন, কেউবা অখুশি হবেন। শুরুটা আমি করছি: দিন চিরকাল এমন থাকবে না। সাত। সময় থাকতেই কিছু কাজের স্কিল ডেভেলপ করার চেষ্টা করো; নয়তো ইন্টারভিউ বোর্ডে "হোয়াট আর ইয়োর স্পেশাল স্কিলস?" প্রশ্নের উত্তরে বলতে হবে: "আমি প্রেম করতে পারি।" আট। তার সাথে থাকাই সবচাইতে কঠিন, যার সাথে থাকলে নিজের মতো চলা যায় না, আবার তার মতোও চলা যায় না। নয়। আবেগ বড়ো, না কি বাস্তবতা বড়ো...সুখী হবার জন্য? ভালোর জন্য একটা পরামর্শ দিই: অবশ্যই বাস্তবতা বড়ো সুখী হবার জন্য; একটাই তো জীবন, আবেগতাড়িত হয়ে নষ্ট করার কোনো মানে হয় না! ভাবতে পারেন, কীভাবে মেনে নেব সব কিছু? আপনার নিজের অভিজ্ঞতা কী বলে? মানুষ সব মেনে নিতে পারে। মৃত্যুও মেনে নেয় যে মানুষ, তার কাছে বিচ্ছেদ খুব তুচ্ছ বিষয়। হ্যাঁ, দুঃখ পেতে চাইলে বাস্তবতা থেকে দূরে থাকাই যায়। তবে এর জন্য চড়া মূল্য দিতে হয়, এমনকী মরতেও হয়। ভাবনা: নয়-শো তিরাশি ……………………………………………………………… এক। ছেলেদের চোখে, ভালো মেয়ে কাকে বলে? ...যে মেয়ে ভালো থাকতে দেয়। মেয়েদের চোখে, ভালো ছেলে কাকে বলে? ...যে ছেলে খারাপ রাখতে দেয়। এ জগতে, হায়, ভালো কোথায় পাই! দুই। একটা মেয়ের কাছ থেকে ছেলেদের চাওয়া: আমাকে আমার মতো থাকতে দাও, তুমিও তোমার মতো থাকো। একটা ছেলের কাছ থেকে মেয়েদের চাওয়া: আমাকে আমার মতো থাকতে দাও, তুমিও আমার মতো থাকো। গ্যাবন বড়োই সৌন্দর্য। পেরেম বড়ো মডুর। তিন। ছেলেরা পার্টনার হিসেবে ভালো মেয়ে যতটা চায়, তার চাইতে অনেক বেশি চায় ঝামেলা করে না, এমন মেয়ে; মেয়ে একটুআধটু খারাপ হলেও অসুবিধে নেই, অশান্তি না দিলেই হলো। ব্যতিক্রম অবশ্য আছে, কেননা অনেক ছেলের হাতেই ঝামেলা করার ও ঝামেলা সহ্য করার অফুরন্ত সময় থাকে। চার। হয়তো কোনো এক ঘোরলাগা সন্ধেয় রাস্তাপার হতে গিয়ে একটা সাদারঙা ট্রাক আমার বুকের উপর দিয়ে ভুল করে চলে যাবে, আর আমি শেষবারের মতো 'মা' বলে চিৎকার করে ওঠার সুযোগটুকুও পাবো না। নয়তো অন্ধকার কোনো মধ্যরাতে বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যথা উঠে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে আমি বিছানাতেই মরে পড়ে থাকব। শেষইচ্ছের কথাটা কাউকে জানানোই হবে না। বোধ হয় টঙের দোকানে চা খেতে গিয়ে পুলিশ আর সন্ত্রাসীদের মধ্যকার বন্দুকযুদ্ধে মাথার খুলি বরাবর একটা গুলি এসে মগজ-সহ উড়িয়ে নিয়ে যাবে। আমার ঘরে ফেরা হবে না আর। কিংবা এসবের কিছুই নয়, খুব সম্ভবত আমি আকাশ দেখার সময় আততায়ী কেউ হুট করে এসে আমার কলিজা বরাবর ধারালো ছুরি ঢুকিয়ে দিয়ে কলিজা ছিঁড়ে দিয়ে পালিয়ে যাবে; আমি জানতেও পারব না খুন হবার কারণটা। এভাবেই হয়তো মৃত্যু হবে---খুব ভোরে অথবা মধ্যরাতে; খুব শব্দে নতুবা একেবারে নিঃশব্দে। পাঁচ। বোঝার চেষ্টা করুন, সবাই এক রকমের নয়। একেকটা জীবন, একেকটা যাপন। পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে, যাদের আকাশটা নীল নয়, ধূসর; কখনোবা মিশমিশে কালো। সেই আকাশ থেকে কখনও তারা খসে পড়ে না। ওদের ইচ্ছেগুলি তাই অপূর্ণই থেকে যায়। চাঁদ দেখে কবিতা লিখতে ওদেরও ইচ্ছে করে, অথচ ওদের আকাশে কেবলই চন্দ্রগ্রহণ। ওদের সাম্রাজ্য বিশাল—এর পুরোটাই ধু-ধু মরুভূমি। সেখানে কিছু শুকনো গাছ, আশেপাশে কীসের যেন হাড়গোড় ছড়ানো-ছিটানো; বড়ো বড়ো পাথরের অন্ত নেই। কিছু প্রাণী অবশ্য সেখানে আছে, ওরা একে অপরের রক্ত খেয়ে বাঁচে। কোথাও কোনো ভালোবাসা নেই, আলো নেই; চারিদিকে শুধু নিঃসীম অন্ধকার। ঘৃণা করে বাঁচতে না জানলে সেখানে বেঁচে থাকা কঠিন। ওদের সাম্রাজ্যে কেবল দুঃস্বপ্নগুলিই প্রকট এবং চিরন্তন। স্বপ্নহীনতাই ওদের জীবন। এমন নয়, ওদের পাশে কেউ নেই। আছে অনেকেই, আর আছে বলেই ওদের একাকিত্বের শেষ নেই। ওরা কোথায় চলেছে জানে না। ওদের আকাশ কাঁদে; রৌদ্রেও কাঁদে, বৃষ্টিতেও কাঁদে। সেই কান্নার শব্দ এক ওরা বাদে আর কেউ শুনতে পায় না। আকাশে পৌঁছে গিয়ে আকাশের অশ্রু মুছে দিতে পারলে ওদের ভালো লাগত। তবু সেখানে যাবার উপায় কোথায়? দুই পা যে শেকলে বাঁধা! ওরা একা থাকলে নিজেকে সঙ্গী হিসেবে পায়, লোকের ভিড়ে থাকলে তা-ও হারিয়ে ফেলে। ওদের ঘর আছে, তবু থাকার জায়গা নেই। ওরা কী যেন খোঁজে, কী যেন চায়…স্পষ্ট করে জানে না কিংবা জানতে চাওয়ার সাহসই ওদের নেই। ছয়। 'ফুল ছেঁড়া নিষেধ' লেখাটিকে পুরোপুরি অগ্রাহ্য করে খুব সুন্দর একটা গোলাপ ছিঁড়ে প্রেমিকার খোঁপায় গুঁজে দিয়েছিলাম। কেউ আমাকে ফুল ছিঁড়তে দেখেনি। তাই আমার ওপর কোনো ধরনের দায় বর্তায় না। তবু যতক্ষণ পার্কে বসে ছিলাম, সারাক্ষণই মনে হচ্ছিল, এখন কেউ এসে কিছু জিজ্ঞেস করলে শুধু অস্বীকার করতে হবে। ভাবতে ভাবতে গভীরে চলে গিয়েছিলাম। কীভাবে উত্তর দেবো, কী ধরনের মিথ্যা বললে সেটা বিশ্বাসযোগ্য শোনাবে, প্রেমিকা কিছু ভাবছে কি না...এইসব। সেদিন কেউ আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। সমস্যা হচ্ছে, সেদিনের পর থেকে একধরনের অপরাধবোধ আমাকে তাড়া করে ফেরে। চুরি করে প্রেম করছি, ঠিক আছে, তাই বলে চুরি-করা জিনিস দিয়ে প্রেম করতে হবে? প্রেমিকা আজও সঙ্গে আছে, কিন্তু সে কি মনে মনে হলেও আমাকে চোর ভাবে না? যদি না ভাবে, তাহলে নিশ্চয়ই সে-ও চুরির বিষয়টিকে সহজভাবে নেয়। যে মেয়ে চুরিকে সমর্থন করে, তার সাথে জীবন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেওয়াটা কি ঠিক হবে? এখন যদি আমি আমার প্রেমিকার সাথে বিচ্ছেদ ঘটাই, তাহলে বেঁচে যাবে কে? আমি? না কি আমার প্রেমিকা? আমি কেন এত কিছু ভাবছি? আমি আসলে কাকে সহ্য করতে পারছি না? আমাকে? না কি তাকে? না কি আমাদের এই সম্পর্কটাকে? সাত। বহু কষ্টে আমার পছন্দের বিভিন্ন গাছের বীজ সংগ্রহ করেছিলাম। নিজের ছোট্ট বাগানে সেইসব বীজ ছড়িয়ে দিলাম। মনে বড়ো আশা ছিল, সুন্দর সুন্দর ফুলে আমার বাগান ভরে উঠবে। কিন্তু হায়, আজ দেখি, আমার সমস্ত বাগান আগাছায় ভরে গেছে! হে ঈশ্বর! আমার ভুলটা কোথায় ছিল? আমি কি বীজ চিনতে ভুল করেছি? না কি আমার পরিচর্যায় কোনো গাফিলতি ছিল? না কি সবই নিছক সময়ের খেলা? আট। Your life is not wrong, maybe your partner is. End your relationship instead of ending your life. Take advice from no one, not even from your parents. It's your life, not theirs. Parents want to make you happy, but they usually don't know what makes you happy. If they see you unhappy afterwards, they will feel sad and this sadness makes no sense. Unhappiness is always personal. Parents love you, love and do everything for their wellbeing in return, but never allow them to make you unhappy in the name of love. Maybe one day they'll die but your unhappiness won't. People who can't forgive their parents suffer the most. নয়। যে ব্যক্তি অন্যের পেছনে লেগে থাকে, সে আর যা-ই হোক, ধার্মিক কিছুতেই নয়। ধার্মিক মানুষের হাতে অত সময় নেই। ভাবনা: নয়-শো চুরাশি ……………………………………………………………… এক। শিবের গলায় সাপ, ভাবে শিবের বাপ! দুই। যোগ্যতা প্রধান নয়, স্থানই প্রধান; স্থানগুণে গর্দভও সিংহের সমান। তিন। কাউকে পোশাক দিয়ে বিচার কোরো না। কাউকে জ্ঞান দিয়ে বিচার কোরো না। কাউকে ধর্ম দিয়ে বিচার কোরো না। অর্থ থাকলে দামি পোশাক কেনা যায়। চেষ্টা করলে জ্ঞানার্জন করা যায়। আর ধর্মের ক্ষেত্রে তো কারও কোনো কৃতিত্বই নেই। শুধু দেখো, তার কাণ্ডজ্ঞান আছে কি না। পৃথিবীতে কাণ্ডজ্ঞানের চাইতে বড়ো ঐশ্বর্য আর একটিও নেই। যার কাণ্ডজ্ঞান নেই, তার সাথে কখনও মিশো না---তা সে যা-ই হোক না কেন। কে দেখতে সুন্দর, কে বড়ো সার্টিফিকেটধারী জ্ঞানী, কে খুবই ধার্মিক...এসব দিয়ে তোমার কী এসে যায়? তার পোশাকটা তো আর তুমি পরতে পারবে না! তার জ্ঞান তো আর তুমি পাবে না! তার ধার্মিকতা তো আর তোমাকে স্বর্গে নিয়ে যাবে না! তবে তার কাণ্ডজ্ঞানহীনতা তোমাকে বিপদে ফেলতে পারে কিংবা বিরক্ত ও বিব্রত করতে পারে। প্রকৃত জ্ঞান একটাই: কাণ্ডজ্ঞান। চার। বছর চব্বিশেক আগের কথা। পুরোনো বইয়ের দোকানে দোকানে ঘুরে ওদের গোডাউনে মইয়ে উঠে বই খুঁজে বের করা ছিল আমার নিত্যকার কাজ। এরকম মইয়ে উঠে শেষ বার বই খুঁজেছি, তা-ও প্রায় পনেরো বছর হয়ে গেল। বহু বছর পর আজ আবারও খুঁজলাম। হঠাৎ পুরোনো অনেক স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছিল বই খোঁজার সময়। বই খোঁজায় মগ্ন হয়ে ছিলাম; কখন ছবি তোলা হয়েছে, টেরই পাইনি। আমার সন্ধানসখা ধৈর্যশীল নিলয়ের ধৈর্য আরও বাড়ুক। পাঁচ। যেখানে লোকে নৌকায় চড়ে কড়কড়ে রাস্তায় ভ্যানের উপর... দেখি, বলুন তো, পৃথিবীতে এমন জায়গা কোথায় আছে? ছয়। যে আমায় ভালো থাকতে দেয় না, সে যখন বলে, আমি ভালো থাকতে জানি না, তখন যে-কোনো মূল্যে তাকে ত্যাগ করাই বাঁচার একমাত্র পথ। ত্যাগ করতে না পারলে তার সকল আচরণ ও কথাকে অগ্রাহ্য করতেই হবে। সাত। বড়োডি হইসে তো, কতডিই-না কইব! আট। তুমি কী করবে, কোথায় যাবে... ওসব একে-ওকে জিজ্ঞেস করেই-বা কী হয়? স্থির হও, নিজের কাছে বসো। তোমার কি নেই তেমন কিছুই, যার নাম হৃদয়? নয়। : দাদা, আমি এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হব। কোন বিষয় নিয়ে পড়লে আমার বিসিএস ক্যাডার হতে সুবিধা হবে? : অনার্সে ভর্তি হবারই দরকার নেই, শুধু শুধু সময় নষ্ট। তার চাইতে দুগ্গা-দুগ্গা বলে চার বছরের জন্য কোনো বিসিএস কোচিং সেন্টারে ভর্তি হয়ে যাও। হাইট অব বিসিএস সিকনেস! দশ। প্রিয়জনের কাছে বারবার ব্যাখ্যা চাইতে নেই। এটা করলে তাকে কষ্ট করে বারবার মিথ্যা বা সত্য ব্যাখ্যা তৈরি করতে হয়। কেউ যখন ব্যাখ্যা চাওয়ার কাজ বারবার করে, তখন তো সে ইতোমধ্যেই আপনার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। এটা বুঝেও তাকে বারবার খোঁচানোর কী দরকার? এতে কেবল সম্পর্ক খারাপ হওয়া ছাড়া আর কোনো লাভই হয় না। কেউ একজন তাকে ভালোবাসে কি বাসে না, মানুষ এটা যতটা মাথায় রাখে, তার চাইতে ঢের বেশি মাথায় রাখে: সে তাকে ভয়ে বা বিরক্তিতে রাখে কি না...প্রায় সময়ই ব্যাখ্যা চেয়ে চেয়ে। ভালোবাসার মানুষ যখন এমন কেউ হয়ে ওঠে, যার কাছ থেকে পালিয়ে পালিয়ে বাঁচতে হয়, তার অনেক আগেই সে সম্পর্ক থেকে ভালোবাসা জিনিসটাই অনেক দূরে সরে যায়। ব্যাখ্যা চাওয়ার কিছু নেই, সব দেখেও নীরব থেকে বুঝে নিলেই তো হলো! বুঝে নেবার পর নিজেকে সে অনুযায়ী সাজিয়ে ফেললে কষ্টের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া সহজ হয়ে যায়। কিছু জিনিসের কোনো সমাধান হয় না; সেগুলিকে মেনে নিয়ে থেকে যেতে হয়, আর মানতে না পারলে দূরে সরে যেতে হয়---এর বাইরে আর কিছু করার নেই। এগারো। নতুন চাকরি। স্বাভাবিকভাবেই আমি একটু নার্ভাস। বস একদিন ডেকে বললেন, বি ইজি। জাস্ট বি ইয়োরসেলফ। আমি জানতাম, বসের কথা শোনাই হচ্ছে চাকরি। তাই আমি বসের কল ধরা বন্ধ করে দিলাম। দেখলাম, বস আমার উপর খুবই বিরক্ত। বুঝিয়ে বললাম, স্যার, আপনিই তো আমাকে আমার মতো করে চলতে বলেছেন! দেখলাম, বস এবার মহাবিরক্ত। কিছুই বুঝলাম না। আমার ভুলটা কোথায়? আমি কি তাহলে বসের কথা শুনব না? বারো। কেউই মরতে চেয়ে মরে না, সবাই বাঁচতে চেয়েই মরে। তেরো। একদিন বুঝতে পারবেন, আপনার চাইতে আপনার টাকার প্রয়োজন আপনার পরিবারে অনেক বেশি; টাকা আপনার, কিন্তু সকল ধরনের সিদ্ধান্ত আপনার পরিবারের এবং এই দূরত্বের উৎস টাকা। তখন আপনার মধ্যে যা কাজ করবে, তার নাম কষ্ট। দেখবেন, সব বুঝেও, অন্য দশটা মানুষের মতো আপনিও এখান থেকে পালাতে পারছেন না, চুপচাপ সব মেনে নিচ্ছেন; পরিবারের কারও সাথে এই কষ্ট শেয়ার করা দূরে থাক, বরং সাধারণ কথাবার্তা বলার সময়ও একধরনের ভয় আপনাকে সারাক্ষণই গ্রাস করে রাখছে, যেটির উৎস আপনি নিজেই জানেন না। তখন আপনার মধ্যে যা কাজ করবে, তার নাম অসহায়ত্ব। যদি আপনার অবস্থা এমন না হয়, তবে আপনার মধ্যে যা কাজ করবে, তার নাম সুখ। সুখে থাকার সময় যদি আপনার পরিবার আপনাকে আপনার মতো করে থাকতে দেয়, তখন আপনার মধ্যে যা কাজ করবে, তার নাম শান্তি। উপরের কোনোটাই যদি আপনার সাথে না ঘটে, তবে আপনি এখনও জীবনের পথে হাঁটাই শুরু করেননি। অভিনন্দন আপনাকে! হাঁটতে শুরু করার আগে ভালো করে ভেবে নিন, এই পথে হাঁটার আদৌ কোনো দরকার আছে কি না। খুব ভালো করে খেয়াল করুন, 'ভেবে নিতে' বলেছি, তার মানে, আপনাকে 'নিজের' সাথে আলাপ করতে বলেছি, 'অন্য লোকের' সাথে নয়। জীবন আপনার, যাপন অন্যের---এমন জীবনের চাইতে মৃত্যু ভালো। ভাবনা: নয়-শো পঁচাশি ……………………………………………………………… এক। লোকে বলে, এক হাতে তালি বাজে না। আমি তো দেখলাম, অনেকসময় তালি দুই হাতেও বাজে না; অন্তত তিন-চারটা হাত একসাথে হলে তবেই তালি বাজে! তাই অনর্থক হাত বাড়ানো যাবে না। যত হাত, তত ঘাত। দুই। সংসারের জন্য যে যত বেশি করে, সে তত নীরব; যে যত কম করে, সে তত সরব। তিন। কষ্ট পেয়ে কী আর হবে? সে কি বোঝে আমার কষ্ট! চার। প্রজাপতিদের কখনও মশাদের ধারেকাছে উড়তে নেই। উড়লে ওরাও একসময় রক্ত খেতে শিখে যাবে। চার। আমি তোমার সেবা করব যদি তুমি আমার মতে দীক্ষিত হও। আমি তোমার সেবা করব যদি আমি মানুষ হই। উপরের দুই মানসিকতার মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব! পাঁচ। কাউকে ভালোবাসার চাইতে তার সেবা করা কঠিন। ভালোবাসতে ভালোবাসার মন লাগে, সেবা করতে সেবা করার মানসিকতা লাগে। এই দুই এক নয়। ভালোবাসার মানুষ অনেক পাবেন, কিন্তু সেবা করার মানুষ তেমন একটা পাবেন না। ভাবতে পারেন, যে ভালোবাসে, সে তো সেবা করেই! ভুল ভাবছেন। সময় এলে বুঝতে পারবেন। ভালোবাসার মানুষটা অসুস্থ; এই অবস্থায় তাঁর সেবা করা দূরে থাক, উলটো তাঁর কাছ থেকে নির্বিকার চিত্তে সেবা নিচ্ছেন, এমন মানুষও দেখেছি। সুস্থ অবস্থায় ভালোবাসা পাবার চাইতে অসুস্থ অবস্থায় সেবা পাওয়া বেশি জরুরি। বৈষ্ণব দর্শনের মূল দিকটিই হচ্ছে সেবা। যাঁরা হৃদয় দিয়ে এর চর্চা করেন, তাঁদের দেখলে বিস্মিত ও মুগ্ধ হবেন। এখানে কোনো স্বার্থ নেই, আছে কেবলই আত্মতৃপ্তি। সেবা ওঁদের কাছে কোনো মহত্ত্ব নয়, প্রাত্যাহিক অভ্যাস। ওঁরা নিজেদের সেবক ভাবেন, মানুষের ভেতরে ভগবানের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন। মানুষকে সেবা করার মধ্য দিয়ে ভগবানকে সেবা করার প্রত্যক্ষ অনুভূতিলাভ করেন। কাজটি সহজ নয়, নিজের সমস্ত ভাবনা মানুষরূপী ভগবানের পায়ে নিবেদন করে দিতে না পারলে অমন সেবা করা অসম্ভব। নিজের মায়ের সেবা করাই যায়, কিন্তু পরের মায়ের সেবা করার আগে অনেক কিছুই ছেড়ে আসতে হয়। দিনশেষে, কেউ ভালোবাসে, কেউবা বোঝা বাড়ায়। ছয়। ধর্মচর্চা একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়; বলে বেড়ানোর বা জেরা করে বেড়ানোর বিষয় নয়। আমরা যেন ভুলে না যাই: ধর্মচর্চার প্রথম ধাপই হচ্ছে কাণ্ডজ্ঞানের চর্চা। সাত। যেমন রুচি, তেমন রুজি। আট। গুরুকে দেখে নয়, সতীর্থদের দেখে গুরুর শিষ্য হও। নয়। প্রেমে পড়লে কেউ হয়ে ওঠে দেবতা, কেউবা হয়ে ওঠে পিশাচ। এর মাঝামাঝি যারা থাকে, ওরা আসলে প্রেমে নয়, স্রেফ অভ্যস্ততায় বাঁধা পড়েছে। দশ। যে তোমাকে যা ভাবে, তুমি চাও না চাও---সে তোমাকে তা-ই বলে ডাকে। যদি তোমার মনে হয়, তুমি তা নও, সে তোমাকে যা বলে ডাকছে, তাহলে সে নিজেই তা কিংবা সে মনে মনে তা হতে চায়। এগারো। পুরোনো বন্ধুর সাথে রাস্তাঘাটে দেখা হলে জড়িয়ে ধরে বা হাত বাড়িয়ে দিয়ে ওর নাম উচ্চারণ করে কুশলাদি জিজ্ঞেস করি। খুব ভালো লাগে। আমি চাই, সে-ও আমার নাম ধরে ডেকে সহজভাবে আমার সাথে কথা বলুক। বন্ধুত্ব বাদে আর কোনো পরিচয় সেখানে ভুল করেও না আসুক। আমার সাথে সহজভাবে কথা বলতে পারেন না, এমন মানুষের তো আর অভাব নেই! কী দরকার সেই দলটা ভারী করার! বন্ধু কখনোই বড়ো বা ছোটো হয় না, বন্ধু কেবল বন্ধুই থাকে। আমার বন্ধু বাদাম বিক্রি করলেও আমার বন্ধু; যে আমার বন্ধু নয়, সে শিল্পপতি হলেও আমার বন্ধু নয়। বন্ধুত্বের চেয়ে দামি আর কী আছে? তবু কিছু বন্ধু ইদানীং 'সেলিব্রিটি', 'ক্যাডার সাহেব', 'স্যার', 'আমলা' ইত্যাদি সম্বোধনে কথা শুরু করে। ভীষণ বিরক্ত হই। সেদিনও এক বন্ধুর সাথে দেখা হবার পর ওর নাম উচ্চারণ করে "কেমন আছ, বন্ধু?" জিজ্ঞেস করলে উত্তরে শুনতে হলো: "আরে, সেলিব্রিটি যে! কী খবর?" সাথে সাথেই হেসে বললাম, "আমার নাম সুশান্ত---হয়তো পেশেন্টের চাপে আমার নামটা ভুলে গেছ!" কষ্ট পাই কেউ এমন করলে; কষ্টটা নিজের জন্য নয়, তার জন্য। বারো। মনের মধ্যে জ্যান্ত মানুষ কবর দিতে খুব যন্ত্রণা হয়। মানুষ মরে গেলে মাটিতে কবর দিয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু বেঁচে থাকলে বুকে কবর দেওয়া বড়ো কঠিন! তেরো। এসো, দু-জন মিলে নষ্ট হয়ে যাই। চৌদ্দ। অধার্মিক মানুষ চিনবেন কীভাবে? যার নিজের আমলনামার ঠিক নাই, অথচ অন্যের আমলনামায় ভুল পায়, সে-ই অধার্মিক। পনেরো। আপনার সিগনেচারটা সুন্দর নয়, বরং দামি হওয়া জরুরি। ষোলো। সেই আবেগের পোশাকটাকে সার্ফএক্সেলে দিন ধুতে, যে-আবেগে আপনার প্রিয় মানুষ হাসিমুখে দেয় মুতে। সতেরো। মানুষ কী অসহায়---যার কাছে শান্তি পায়, তার সাথেই থাকতে পারে না! আঠারো। যেখানে সত্য বলার দায় নেই, সেখানে মিথ্যা বলারও প্রয়োজন না থাকুক। উনিশ। ছোটোবেলায় ভূতে ধরত, আর এখন ধরে মানুষে। বিশ। বিয়ের আগে সেক্স নয়---এটাকে আমরা যেভাবে ট্যাবু বানিয়ে রেখেছি, ঠিক সেভাবেই, জবের আগে বিয়ে নয়---এটাকেও যদি ট্যাবু বানাতাম, তাহলে আমাদের সমাজে মেয়েদের অবস্থান আরও শক্ত হতো। একুশ। ওই নীল নীল আকাশে তোমারই ছবি যেন জাগে, এই ঝিরিঝিরি বাতাসে তোমারই ছোঁয়া যেন লাগে। তোমার ওই চোখের মতো আর কোনো সাগর যে দেখিনি, তোমাকে ছাড়া এ মনে আর কারও স্বপ্ন তো আঁকিনি। এ ফুলের মিষ্টি সুবাসে এক 'তুমি'ই যেন মিশে থাকে। বাইশ। তোমার মনে কী আছে, তার চেয়ে জরুরি: তোমার আচরণে কী আছে। তোমার সুন্দর মন দিয়ে কার কী এসে যায় যদি তোমার আচরণে সে কষ্ট পায়? ভাবনা: নয়-শো ছিয়াশি ……………………………………………………………… এক। পৃথিবীতে আপনি যাকে একেবারে ভেতর থেকে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসতে পারবেন, তাকে এক বার, শুধু এক বার সামান্য ছুঁয়ে দেখতে পারার মতন সুখ আর কোনোকিছুতে নেই। এর নাম প্রেম, আর ভালোবাসাহীন ছোঁয়ার নাম কাম। পলক না ফেলে তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকার মতন এত সৌন্দর্য পৃথিবীর কোনো গোলাপেও বুঝি নেই। ভীষণ রকমের ভালোবাসার কারও কণ্ঠস্বর তার চোখের ভাষা বুঝে শুনে দেখুন, অত মধুর সুর শোনার পর দুনিয়ার সবচাইতে সুরেলা গানগুলোকেও ফিকে মনে হবে। বিশ্বাস করুন, যাকে ভেতর থেকে একবার ভালোবাসতে পারবেন, তার পরনের ছিঁড়ে-যাওয়া পুরোনো পোশাকের ঘ্রাণটাও পৃথিবীর সবচেয়ে দামি পারফিউমটার চেয়েও বেশি সুগন্ধময় লাগবে। তার ব্যবহৃত পোশাক বুকের মধ্যে জড়িয়ে রাখতে খুব মন চাইবে। শুধু একবার কাউকে ভেতর থেকে ভালোবেসেই দেখুন, বুঝে যাবেন, হাজার মাইল দূরে থেকেও হৃৎপিণ্ডের খুব কাছাকাছি থাকা যায়, একপলকের দূরত্বে গেলেও প্রাণটা হারিয়ে যাবার মতন ভীষণ যন্ত্রণা হয়। এক বার, শুধু এক বার ভুলক্রমে হলেও কাউকে একদম ভেতর থেকে ভাংচুর করে ভালোবেসে ফেলার পর দেখবেন, এমন সুখের যন্ত্রণা পৃথিবীতে বুঝি আর কোথাও নেই। যন্ত্রণার সুখ পাওয়া যায় কেবল তিন জায়গায়: সঙ্গমে, প্রেমে, জন্মদানে। দুই। পৃথিবীর সবচাইতে বিরক্তিকর মানুষটির দুটি বৈশিষ্ট্য: মাত্র পনেরো মিনিটের কথা সে বলে কমপক্ষে দেড় ঘণ্টা ধরে। মুখ ফুটে না বললে সে বুঝতেই পারে না যে, সামনের লোকটি তার এই বাচালতায় বিরক্ত হচ্ছে। আপনি জীবনে কী হাতিঘোড়া মেরেছেন কিংবা কোন কোন মহারথীর সাথে আপনার পরিচয় আছে, এ ধরনের বাজে গল্প না মেরে এবং অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ের অবতারণা না করে অল্প কথায় আসল কথাটি বলে বিদেয় হতে শিখুন। সময়ের চেয়ে দামি আর কী আছে! বাচাল লোকের পাল্লায় পড়লে একদম পাগল পাগল লাগে! তিন। Good girls go to heaven, bad girls bring heaven to you. Dear good girls, stay away and safe. চার। আমি এ জীবনে কখনও কাউকে থেকে যাবার জন্য জোর করিনি। জোর করে কাউকে আটকে রাখা যায় না। যাকে জোর করতে হয়, সে তো চলেই গেছে; না গেলে জোর করতে হতো না। যে গেছেই, তাকে জোর করে কী হয়? ভালোবাসা কখনও জোর বা অনুরোধ করে হয় না। পাঁচ। You must know very well what you are paid for and do everything accordingly. ছয়। মানুষ যেখানে শান্তি পায়, সেখানেই বেশি সময়ের জন্য থাকতে চায়। অথচ জীবনের খুব অল্প সময়ই মানুষ শান্তির উৎসের কাছাকাছি থাকতে পারে। এই অপারগতায় কারও কিছু এসে যায় না। এর চেয়ে বড়ো অসহায়ত্ব আর কী আছে! আমরা অসুস্থ মানুষের যত্ন নিতে জানি; বিষণ্ন মানুষের যত্ন নেওয়া দূরে থাক, বিষণ্নতার ব্যাপারটিই বুঝতে শিখিনি। সাত। আপনার পরিবারেও আপনার অবস্থান একটা গাই গরুর চাইতে বেশি কিছু নয়। দুধ দিলে আদর পাবেন। দুধ দেওয়া বন্ধ তো আদরও বন্ধ। আপনার শান্তির পরোয়া এখানে কেউই করে না। আট। 'জাওয়ান' দেখলাম। না, একটু ভুল হলো...'জাওয়ান' উপভোগ করলাম। কেমন লাগল? দু-ভাবে বলি: এক। যদি জিজ্ঞেস করেন, সিনেপ্লেক্সে আগামীকাল কোন মুভিটা দেখতে চান, তবে আমার উত্তর হবে: জাওয়ান। দুই। ভাবতে ভীষণ ভালো লাগে, শাহরুখ খান এবং সুশান্ত পালের জন্মতারিখ একই: ২ নভেম্বর। হি ইজ দ্য লাস্ট সুপারস্টার! (আপনারা বিসিএস ক্যাডারকে স্টার ভাবেন! না, মানে, ঠিক আছে!) হলে গিয়ে মুভি দেখতে বলবেন না। বরং এমন মুভি বানান, যে-মুভির টিকেট পেতেই কষ্ট হয়ে যায়। আওয়ার টাইম ইজ মোর প্রেশাস দ্যান দ্য টিকেট। ভালো মুভির জয় হোক। নয়। স্কেলিটন ফুল। বৃষ্টি নামলে আমার এই ফুলটার কথা মনে পড়ে। আপনি এই ফুলের যতই যত্ন নিন না কেন, সে তার আসল রূপ মেলে ধরবে কেবল বৃষ্টির ছোঁয়া পেলেই। এক বৃষ্টি বাদে আর কিছুই তার রূপ ফোটাতে জানে না। বৃষ্টির জল পড়ামাত্রই ফুলের সমস্ত রং স্বচ্ছতায় মিলিয়ে যায়। প্রকৃতির এ এক আশ্চর্য জাদু। এক বৃষ্টিই পারে এ ফুলকে ঠিকভাবে জাগাতে। পৃথিবীর আর কিছুই এ ফুলকে এমন করে স্পর্শ করতে পারে না। যে-কোনো জলেই এ ফুলের চলে না, বৃষ্টির জল লাগে। বৃদ্ধি আর পূর্ণতা যে এক নয়! ঠিক তেমনি তোমাকে ছাড়া আমার নিজেকে অসম্পূর্ণ মনে হয়। তুমি নেই মানেই আমি আমার মধ্যে নেই। আমি পুরো পৃথিবীর সাথে থেকেও শুধু তোমার সাথে থাকি। যেন তুমিই আমি, আমিই তুমি। কেবল তোমার সাথেই আমি আমাকে আমার মতো করে খুঁজে পাই। এক তোমার সামনেই নিজেকে মেলে ধরতে পারি সকল কুণ্ঠা ঝেড়ে ফেলে। তাই তুমি ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ। দশ। ধরো, তুমি কাউকে ভীষণ অপছন্দ করো। সে ফোন করলে তোমার বিরক্ত লাগে, তার প্রত্যেকটা কথা তোমার কাছে অসহ্য মনে হয়। সে তোমার সামনে এলে তুমি অস্বস্তি অনুভব করো, কিন্তু সে তোমার পরিবারের কোনো সদস্য হওয়ায় তাকে তুমি সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলতে পারছ না। তুমি সবসময়ই তার কাছ থেকে একহাজার মাইল দূরে থাকতে চাইলেও সে তোমাকে খুঁচিয়ে যাচ্ছে সারাক্ষণ তার সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য। ধরো, তুমি তাকে জীবনে অনেকভাবে হেল্প করেছ, কিন্তু সে ওসব কখনও স্বীকার তো করেই না, বরং তোমার কানের কাছে সারাক্ষণই নানান অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়—তার এটা নেই, ওটা কম পড়ে গেছে, এসব বলে আর বলতেই থাকে। তুমি তাকে কখনোই বকাঝকা করে রাগ দেখিয়ে কথা বলো না, কারণ তুমি তাকে এতটাই ঘৃণা করে ফেলেছ যে, তাকে তোমার কোনো বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতেও আর ইচ্ছে হয় না। মোটকথা, তুমি তার কিংবা তাদের মতো মতলববাজ মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকতে চাও। সেক্ষেত্রে তুমি কীভাবে চলবে? কী করে নিজেকে এমন মতলববাজ লোকজনের হাত থেকে নিরাপদ রাখবে? ধরো, তারা এমন ক্যাটাগরির মানুষ যে, তোমার জীবন-ক্যারিয়ার সব কিছু ধ্বংস করে ছাড়বে নিজের স্বার্থের জন্য। পরিবারের ভেতর যদি এ ধরনের সদস্যই বেশি হয়, তাহলে এই সম্পর্কগুলো কীভাবে মেইনটেইন করবে তুমি? এখন দিনের পর দিন তাদেরকে এড়িয়ে চলার জন্য তো আর সব কিছু থেকে নিজেকে ডিটাচড করে রাখা যায় না; তোমাকে ফোন অন রাখতেই হবে, মেসেজ-মেইল চেক করতেই হবে, কাজের জন্য অন্যদের সাথেও যোগাযোগ রাখতেই হবে, কিন্তু শুধুমাত্র এদের জন্য তুমি নিজেকে কিছুতেই এগিয়ে নিতে পারছ না, কোনো পথেই এরা তোমাকে এগুতে দিচ্ছে না, পেছনে থেকে বারবার আটকে ধরছে। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবে? নিজের জীবনটা শেষ হয়ে যাওয়া থেকে উদ্ধার করতে কীভাবে কোন পথে চলবে? এগারো। বাঙালি সংকর জাতি হইয়াই চরম ধরাডা খাইসে। অহন একটা বিয়া করতে গেলেও শ্যাম-রাখি-না-কুল-রাখি অবস্থা হয়া যায়। চিরঅশান্তির এপিসোডটাও শান্তিতে শুরু করা যায় না! লও ঠ্যালা! আপ্নে ধর্মীয় বিশ্বাসের জায়গাটা পুরা ঠিক রাইখা আপ্নের ধর্মালয়ে গিয়া জনাকয়েক মাইনষের সামনে বিয়া করবেন? কইরা দেখেন না! দেখবেন, আপ্নের কমিউনিটি কইব, আপ্নে অতিরিক্ত ঢং করতেসেন। সবই যখন করতেসেন, তাইলে বিয়াডা এম্নে ক্যান? ঘটা কইরা অনুষ্ঠান কইরা করলেই তো অয়! টাকা আপ্নের, ডিসিশন সবার! আবার আপ্নে ঘটা কইরা সমাজের তথাকথিত চেনাশোনা মানুষজন নিয়া আমোদফুর্তিতে বিয়া করবেন? তাইলেই কাম সারসে! আবার আরেক কমিউনিটি আইসা হাজির হইবো! বয়ান ছাড়বো…আপ্নে কেমুন ধর্মপ্রাণ মানুষ! (জোর কইরা মাইনষেরে ধর্মপ্রাণ বানানোর অত্যাচার এদেশে কমন কাহিনি।) অহন আপ্নেই কন, সংকর জাতি না অইলে আইজক্যা আপ্নের এই দশা অইতোনি? আপ্নে বাঁচবেনও কনফিউশনে, মরবেনও কনফিউশনে। আহা! বাঙালি আজকাল বিয়াডাও শান্তিতে করবার পারে না! বিয়ার বাইদ্য হুনলেই দ্যাশহুদ্দা জ্ঞানীব্যক্তি ভইর্যা ভইর্যা জ্ঞান দিতে হান্দায়া যায়! জ্ঞানের ঠ্যালায় জান যায়! অন্য মাইনষের বিয়া নিয়া আমাগো মইধ্যে যে পরিমাণ উত্তেজনা, তার লগে তুলনা চলে একমাত্র যৌন উত্তেজনার! ভাবনা: নয়-শো সাতাশি ……………………………………………………………… এক। নিরাশায় বাঁচার চেয়ে বরং আশায় মরাও ভালো। দুই। আমার পাশ দিয়ে যখন কোনো গাড়ি যায়, আমি ভাবি কী, তুই মনে হয় আছিস ওর ভেতরে! তুই হয়তো দেখতে পেলি আমাকে...আর আমি এটা ঠিক এমন করেই ভেবে গেলাম যে, তুই দেখতে পেয়েছিস, হেসেছিস। কেমন জানি ফুর্তি ফুর্তি লাগে, মনটা নাচে... তুই একটা ফুর্তি ফুর্তি স্বস্তি রে! তোকে দেখতে ইচ্ছে করে, তাই মনের চোখে যেভাবে খুশি দেখে নিই। তোকে পাইনি ভালোই হয়েছে। পেয়ে গেলে সবাই হারিয়ে ফেলে রে! তোকে পাইনি বলেই তো এত ফুর্তি ফুর্তি লাগে। তুই আমাকে খুব ফুল কিনে দিতিস, মনে আছে? ফুলগুলি সব শুকিয়ে গেছে; তবু দ্যাখ, তুই আজও কেমন টাটকা হয়ে রয়ে গেছিস! মানুষ ফুল দিয়ে বুঝি এমন ফুল হয়ে যায় রে? তিন। প্রশ্ন: বিশ্বাস কাকে বলে? উত্তর: "দেখেই ডিলিট করে দিব।" বলা সত্ত্বেও, দেখার পর ডিলিট না করে রেখে দিলে যা ভাঙা হয়, তার নামই বিশ্বাস। চার। চলো, দু-জন মিলে আমাদের অতীতটা নতুন করে সৃষ্টি করি। পাঁচ। তার সাথে থাকাই সবচাইতে কঠিন, যে আপনাকে মরতেও দেবে না, বাঁচতেও দেবে না। ছয়। সময়কে সবচাইতে ভালোভাবে ব্যবহার করতে চাইলে এই একটা জিনিস বুঝতে পারাই যথেষ্ট: সময় নষ্ট করা এবং সময় খরচ করার মধ্যকার পার্থক্য। আমরা সময় নষ্ট করার সময় ভাবি, সময় খরচ করছি; আর সময় খরচ করার সময় ভাবি, সময় নষ্ট করছি। ভাবনার এই দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারলে একই সময়ে বাকিদের তুলনায় বেশি 'কাজের কাজ' করা সম্ভব। সাত। আমি তোমার জন্য কাঁদি না, আমি তোমার কারণে কাঁদি। আট। কখনও ভুল মানুষকে বিরক্ত করতে নেই। নয়। কারও সাথে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইলে তাকে বিয়ে করুন। দশ। "আপনাকে আমি সম্মান করি।" এই কথার মানে যদি হয় এই: আপনি অমুক কাজ করবেন, আপনি তমুক কাজ করবেন না, আপনি আমাকে এই ভাবে এবং ওই ভাবে সময় দিয়ে হেল্প করবেন, ইত্যাদি ইত্যাদি---তবে আমি আপনাকে বলব, এটাকে সম্মান বলে না, প্রত্যাশা বলে। যে আপনাকে চেনে না, নিতান্তই বেআক্কেল না হলে আপনি কখনোই তার কাছ থেকে বিনা কারণে কিছু প্রত্যাশা করতে পারেন না। যার সময়ের দাম আছে, সে কখনোই একজন অপরিচিত লোককে বিনা কারণে কোয়ালিটি টাইম দেয় না। সম্মান চাই না, মাফ চাই। এগারো। যাকে ভালোবাসেন, তার সাথে সম্পর্ক খারাপ করার চাইতে বরং চুপচাপ সরে আসা ভালো। সম্পর্ক খারাপ করলে ভালোবাসাও হারাবেন, মানুষটাকেও হারাবেন; আর বিচ্ছেদ ঘটালে দুটোই সারাজীবন আপনার অধিকারে থাকবে। বারো। ভালোবাসায় শান্তি থাকতেও পারে, না-ও থাকতে পারে; কিন্তু শান্তিতে অবশ্যই ভালোবাসা আছে। তেরো। আমার জন্য ভেবো না, আমি এখন আর কাঁদছি না। পারলে আমার আত্মার জন্য একটু দোয়া কোরো, ওর কান্না থামছেই না। আমাকে অভিশাপ দিলে দাও, তবু আমার আত্মাকে অভিশাপ দিয়ো না---ওর যে কোনো দোষ নেই! চৌদ্দ। লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে যে-সব জায়গা থেকে সরে আসতে হয়েছে, প্রতিদিনই একটু একটু করে নিজেকে প্রস্তুত করুন যেন সে-সব জায়গায় একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেন। পনেরো। তাহলে কি সেটাই ভালোবাসা, যেখানে যত্নের সাথে যন্ত্রণা ফ্রি? ষোলো। কিছু মানুষ বড়ো অদ্ভুত। ওঁদের মেইল দিলে ফোন করে বলতে হয়, ভাই, মেইলটা একটু চেক করুন; হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠালে ফোন করে বলতে হয়, ভাই, হোয়াটসঅ্যাপটা একটু চেক করুন। সতেরো। আপনার সব টাকাই একটি শেয়ারে বিনিয়োগ করবেন না। আপনার সবটা হৃদয় এক জনকেই দিয়ে বসে থাকবেন না। এমনটা করলে ধরা খাবেন। কারও সাথে চা খাবেন, কারও সাথে টা; কাউকে চুমু খাবেন, কাউকেবা পুরোটা। আঠারো। The best way to enjoy the money you earn is not to marry. The best way to enjoy the money you don't earn is to marry. উনিশ। পরামর্শের প্রয়োজন হলে যিনি আপনাকে চিনলেও আপনার দ্বারস্থ হতেন না, কখনোই তাঁকে গায়ে পড়ে পরামর্শ দিতে যাবেন না। মানুষ এতে খুবই বিরক্ত হয়। বিশ। এক মূর্তি, অনেক দর্শন। একুশ। স্ত্রীরা স্বামীদের ভালোবাসে। স্বামীরা স্ত্রীদের ভয় পায়। স্ত্রীরা কেন ভালোবাসে? কারণ, ভালোবাসা মেয়েদের স্বভাব। স্বামীরা কেন ভয় পায়? কারণ, মেয়েরা ভয়কেই ভালোবাসা ভাবে। তাহলে ছেলেরা ভালোবাসে কাকে? শান্তিকে---তা যেখান থেকেই আসুক না কেন! মেয়েরা বুঝি অশান্তিকে ভালোবাসে তাহলে? একদমই না; ওরা ছেলেদের গলা টিপে ধরে এবং এটাকেই ভালোবাসা মনে করে। ছেলেরা কেন তবুও তেমন কিছু বলে না? অশান্তির ভয়ে। অশান্তিতে বাঁচার চেয়ে শান্তিতে মরা সহজ। বিয়ে করা মহাপাপ। এই পাপের শাস্তি থেকে কারও মুক্তি নেই। বাইশ। তোমার পাশের মানুষটিকে বাঁচতে দাও। হঠাৎ হারিয়ে ফেললে হয়তো আফসোস তুমি করবে না, কিন্তু মৃত্যুর আগে তাঁর তো বাঁচার অধিকার রয়েছে, তাই না? বাঁচো এবং বাঁচতে দাও। মৃত্যুর আগেই যেন তোমার পাশের মানুষটা জানতে পারে, তুমি অমানুষ নও। একজন ভদ্রমহিলাকে চিনি, যিনি তাঁর স্বামীর সাথে সবসময়ই দুর্ব্যবহার করেছেন, সারাক্ষণই জীবন নিয়ে অভিযোগ করে করে স্বামীর কান ঝালাপালা করে দিয়েছেন, অথচ এখন মৃত স্বামীর কথা ভেবে ভেবে কান্নাকাটি করেন! দাবি করেন, তিনি স্বামীকে ভালোবাসেন। বেচারা স্বামীর বাঁচতেই কষ্ট হতো এই ভদ্রমহিলার ভালোবাসার পরাকাষ্ঠায়! হারিয়ে ফেলার পর কেঁদে কী হয়? তেইশ। পৃথিবীর মোটামুটি সব কিছু নিয়েই যে-ব্যক্তি অসন্তুষ্ট এবং সারাক্ষণই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অভিযোগ করে আর করতেই থাকে---সে নিজেও ভালো থাকে না, অন্যদেরও ভালো থাকতে দেয় না। এমন কারও সাথে থাকা মৃত্যুর সমান। চব্বিশ। বাঙালি স্বামীর অবস্থা মুরগির চেয়েও খারাপ। একটা মুরগিকে মাত্র এক বারই জবাই করা যায়, কিন্তু একজন বাঙালি স্বামীকে তার স্ত্রী চাইলেই প্রতিদিনই নৃশংসভাবে জবাই করতে পারে। বাঙালি স্বামী একই ভুলের শাস্তি পায় মোটামুটি সারাজীবনই। বাঙালি স্ত্রী এই জ্বালা থেকে মুক্ত, কেননা স্ত্রীর ভুল মনে রাখাটা বাঙালি স্বামীর জন্য খুব জরুরি কিছু নয়। মেয়েরা সব মনে রাখতে পারে; যা মনে রাখা দরকার, তা-ই কেবল মনে রাখতে পারে না। বাংলাদেশে স্বামী হওয়ার চাইতে মুরগি হওয়া সহজ এবং অধিক লাভজনক।