ভাঙনের পক্ষে

প্রচণ্ড দ্বন্দ্ব আর তীব্র মতানৈক্য থেকে বাঁচতে ডিভোর্সের মধ্য দিয়ে দু-জনের মধ্যে দূরত্ব বাড়ানোর পথ বন্ধ করে মুভ-অন করাটা খারাপ কিছু নয়। খারাপ হলো মানিয়ে নেবার নাম করে অশান্তিকে বাড়তে দিয়ে দু-জন মানুষ প্রচণ্ড অসুখী হয়েও একসাথে থেকে যাওয়া।

৫০/৬০ বা আরও বেশি বছর বয়সেও পার্টনারের অবর্তমানে একাকিত্ব থেকে বাঁচতে সন্তানসন্ততি থাকার পরও আবার বিয়ে করাটা খারাপ কিছু নয়। খারাপ হলো সমাজের ভয়ে, সন্তানসন্ততির ভয়ে, লোকে কী বলবে—তার ভয়ে একটা সুন্দর জীবনকে একাকিত্বে নরকযন্ত্রণা ভোগ করিয়ে করিয়ে নিজেকে কষ্ট দেওয়াটা।

ব্যক্তিগত কারণ কিংবা সামর্থ্যের অভাবে বিয়ে না করাটা ভুল কিছু নয়। বরং ভুল হলো ব্যক্তিগত কারণ কিংবা অসামর্থ্যকে আমলে না নিয়ে লোকের চাপে বিয়ে করে নতুন মানুষটার জীবনকে নরক বানিয়ে দেওয়াটা।

প্রতিদিন প্রতিদিন ঝগড়া, বিবাদ, অপমান সহ্য করে করেও একটা টক্সিক সম্পর্ককে পাঁচ-দশ বছর বা একযুগ টেনে নিয়ে কিছু বছরের পূর্তিতে সেলিব্রেশন করাটা কোনো বাহাদুরি নয়; বরং একটা টক্সিক সম্পর্ক ভেঙে দিয়ে অশান্তি থেকে বের হয়ে নিজেকে স্বস্তি দেওয়াটাই বাহাদুরি।

সম্পর্ক, বিয়ে কিংবা সমাজ, সব কিছুর ঊর্দ্ধে উঠে নিজের শান্তিকে ফার্স্ট প্রায়োরিটিতে রাখাটাই বরং নিজের প্রতি নিজের প্রকৃত সুবিচার।

লোকে কী বলবে, তমুকেরা কী ভাববে, এত কিছু পরোয়া করে নিজেকে নিজে দিনের পর দিন কষ্ট দেবার সুযোগ তৈরি করে দেওয়াটাই বরং নিজের প্রতি করা সবচেয়ে বড়ো অপরাধ। শুধু অন্যকে সুবিচার দিলে হয় না, নিজের প্রতি সুবিচারও কখনো কখনো নিজেকেই করতে হয়। নিজেকে নিজে বাঁচানোর চেষ্টা না করলে মৃত্যুই একমাত্র গন্তব্য।

জীবন একটাই—এই একটাই জীবনে একটু সহজ হয়ে বাঁচুন, অন্যের কথা ভাবার চেয়ে বরং কিছু ক্ষেত্রে নিজের কথাটাই আগে ভাবুন।
যেখানে অশান্তি থাকবে, সেখানে সম্মান থাকলেও সরে আসুন; যেখানে সুখ থাকবে, সেখানে অসম্মান থাকলেও সেখানেই হাঁটু গেড়ে বসে পড়ুন। কারণ একটাই—পিঁপড়ার মতন ক্ষীণ-ক্ষুদ্র জীবন আমাদের, অ-সুখ নিয়ে এক-শো বছর বাঁচার চেয়ে বরং সুখ নিয়ে এক-দুই বছর স্বস্তিতে বাঁচি!