বোকা কুকুর

আমাদের গ্রামের বাড়িতে অনেক দিন আগে তিনটা কুকুর সবসময় থাকত। বিশেষ করে আমার দাদু ওদের খুব যত্ন করত। এরপর তিনটার মধ্যে দুইটার খবর জানি না; ওরা কী করে কই জানি চলে গেল, তবে একটা কুকুর রয়ে গিয়েছিল। তাই ওকে খুব ভালো করে এখনও মনে আছে। ওর সব কিছুই মনে আছে।

দাদু যখন মারা গেল ২০০৮ সালে, তখন কুকুরটা একপাশে বসে ছিল শান্ত হয়ে। আর কীভাবে কীভাবে যেন তাকাচ্ছিল...আহারে! দেখে মনে হচ্ছিল, ওর কী যেন একটা চলে গেল, চলে গেল... এমন একধরনের তাড়না দেখেছি ওর মধ্যে। পরে দাদুকে যখন নিয়ে যায় শ্মশানে, তখন কুকুরটাকেও সবার সঙ্গে যেতে দেখি। ওখানেও এক‌ইভাবেই একপাশে চুপচাপ বসে ছিল। আহা, ওর দু-চোখে কী যে মায়া জমা হয়ে ছিল দাদুর জন্য!

শ্মশানের সব কাজশেষে যখন বাড়িতে ফিরে আসে সবাই, তখন কুকুরটা আর ফেরেনি। কই যে গেছে, জানি না। পরের দিন, দাদু যে সময়ে খেত, ওই সময়ে, আমার পিসি কুকুরটাকে মনে করে খুঁজছিল। আমিও ভেবেছি, ও মনে হয় আছেই কোথাও বাড়িতে; হয়তো মন খারাপ, তাই কোথাও-না-কোথাও চুপচাপ পড়ে আছে।

পরে পিসি বাবা-কাকু'কে ব্যাপারটা জানায়। বাবা, কাকু, পিসি আর আমি মিলে ওকে তন্নতন্ন করে খুঁজছিলাম খেতে দেবো বলে। দাদু যখন খেত, ও দাদুর পাশেই বসে খেত। আবার খাওয়াশেষে দাদু কিছু খাবার রেখে দিত; পাড়ায় আরও দুইটা কি তিনটা কুকুর ছিল, ওরা আবার এর মতো দাদুর অত কাছে কাছে থাকত না। ওরা খাওয়ার সময় ডাক দিলে খেয়ে আবার চলে যেত। ওরা কেমন যেন ড্যাম-কেয়ার স্টাইলে চলত; খায় আর ঘুরে বেড়ায়।

অনেক খুঁজেও খুঁজে না পেয়ে বাবা আবার বাইক নিয়ে শ্মশানের ওদিকে যায়। (শ্মশান আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরে।) বাবা খোঁজ নেয় শ্মশানের আশেপাশের বাড়িতে; পরে ওকে আমরা আর কখনও পাইনি।

দাদুর মৃত্যুর পর আমার দিদিমা অনেক বছর বেঁচে ছিল, কিন্তু দাদুর কুকুরটা এক দিন‌ও থাকতে পারল না। কুকুরগুলি এমন বোকা হয় কেন?