বেলাক্ষয়ের লেটার-বক্স / প্রথম অংশ

 চিঠি-১
-----------------


মানুষ যখন কোনও কিছু অতিরিক্ত অনুভব করে, তখন সে একপ্রকার অনুভূতিশূন্য হয়ে যায়। আমি ভালো আছি। আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা কোরো না। আমি ভালো থাকব। যতবার আমি তোমাকে অনুভব করি, ততবারই বুঝি, সে কতটা লাকি যে তোমাকে পেয়েছে। সেই ভাগ্যটা নিয়ে আমি কেন এলাম না? আজ আর বলতে চাই না, ভালোবাসি। বললে কী হয়, বলো? বললেই সবটা বোঝানো যায় কখনও? তুমি এসব আমার চেয়ে ভালো জানো। তুমি এমন একজন মানুষ, যাকে আমি সব সময় মনে মনে খুঁজেছি। আজ পেলাম এমন একজন মানুষকে, যাকে আমি সত্যি সত্যি চাই। এমন একজন মানুষ, যাকে পেলে সব কিছুতেই ছাড় দেওয়া যায়। যদি পেতাম তোমাকে সারাজীবনের জন্য, তখন কী হতো? আমি সত্যিই জানি না। আমি কিচ্ছু জানি না। আজকে আমি ভীষণ ক্লান্ত। স্রষ্টার কাছে চাইতে চাইতে আজ আর আমার কিছুই চাইতে ইচ্ছে হয় না। আমি হয়তো কখনও কিছু চাওয়ার মতো করে চাইনি, তাই পাইনি যা চেয়েছি। আমার চাওয়ায় হয়তো কোনও ত্রুটি থেকে যাচ্ছে। আমি কিছু জানি না। তোমাকে পাব কি না, কখনও অমন করে জানি না, কিন্তু যতটুকু চেয়েছি, তাতে আর কিছুই চাই না এই জীবনের কাছ থেকে।


তুমি আমার কোনও গন্তব্য নও, কিন্তু তোমাকে নিয়ে পুরো একটাজীবন চোখের পলকে পার করে দেওয়া যায়। তুমি এমন কেউ, তুমি এমন কিছুই। আমি ভীষণ চাইছি তোমাকে, তুমি কি বোঝো সে কথা? জানো, আজকে সারাদিন আমি তোমার সাথে কথা বলিনি! তুমি হয়তো খেয়ালই করোনি, কিন্তু আমি এভাবে থাকতে পারি না। আমি জানি না কী করব, কিন্তু তুমি আমার প্রতিটি লোমের সাথে মিশে আছ, আমি জানি না আমি কোন দিকে যাব, ভালো লাগছে না আমার কিছুই। তোমার সাথে কথা না বলে এভাবে থাকলে হয়তো আমি আরও অসুস্থ হয়ে যাব, কিন্তু এছাড়া আমি আর কী করব? আমি তো কখনও তোমাকে কাছে পাওয়া যাকে বলে, সেভাবে পাব না। আমি কোন দিকে যাব, আমকে একটু বলবে? আমার মনে হচ্ছে, এই মুহূর্তেই মরে যাই। আর কিছু ভালো লাগে না আমার। নিজের কাছ থেকে যদি পালিয়ে বাঁচতে পারতাম! আমার দম আটকে আসছে, কিন্তু আমি কিছু বলতেও পারছি না, আমি কিছু সহ্য করতেও পারছি না। আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।


চিঠি-২
---------------
তুমি রাত জেগে কী করো? এই কয়টা দিন একটু রেস্ট নাও না, প্লিজ! লিখতে হলে লিখবে দিনে। আর যাকে চাও তুমি, তাকেই ভালোবাসো! বলব না কিছুই আমি আর! আমি শুধু তাকেই বলব, যে আমার বকা শুনতে চায়।


এই লোক! শোনেন আপনি আমাকে? জ্বালাচ্ছেন অনেক বেশিই! তোমার সাথে ঝগড়া করে ঘুমাতে গেলাম, এখন দেখি, স্বপ্নেও তুমি! তুমি একটা যাচ্ছেতাই! দেখি, আমার বাসার ছাদে তুমি। বিকেলবেলা ছাদে উঠেছি। দেখি, তুমি দোলনায় বসে আছ আর লিখছ। কী যে রাগ উঠছিল তোমাকে দেখে! আবার মনে মনে আমি ভীষণ খুশিও! ভাবছিলাম, আজ ওকে একটু কাছে পাব!


আমার মনটা কেমন জানি করছে। তাই তোমাকে জ্বালাচ্ছি। সরি বিরক্ত করার জন্য। আমি আসলে চাইছি, তুমি আমার সবটুকু জানো। অথচ তুমি আমাকে কিছুই জিজ্ঞেস করছ না! আমি চাইছি, তুমি আমাকে তোমার গায়ের সব শক্তি দিয়ে মারো, যেন সারাশরীর থেকে রক্ত বের হয়, ঠোঁট ফুলে যায়, পিঠে দাগ পড়ে যায়, ব্যথায় কোঁকাতে থাকি। আমার চোখ অন্ধ হয়ে যাক, হাতব্যথায় মরে যাই, পিঠে দাগ পড়ে যাক, সমস্ত শরীরে তোমার হাত চলুক। তুমি প্রচুর আঘাত করো আমাকে। আমার শত ভুলের জন্যে, আমার শত বেয়াদবির জন্যে, তোমাকে একদিনও কম ভালোবাসার জন্যে, তোমার সাথে খারাপ ব্যবহারের জন্যে, তোমাকে জাজ করার জন্যে…সব কিছুর জন্য তুমি আঘাত করো আমাকে। তুমি আমাকে বারবার আঘাত করো, মেরে তক্তা বানিয়ে দাও, তুলে আছাড় মারো বা রক্তাক্ত করে ফেলো। যা খুশি হয় হোক আমার। দিনশেষে এই তুমিই আমাকে সুস্থ করে তুলো। আমার সব আঘাতের জায়গায় মলম সব তুমিই দিয়ে দাও। কেউ দেখবে না, কেউ জানবে না। আমি শুধু জানব, তুমি ছুঁয়ে দিয়েছ।


তুমি কেন কিছুই জানতে চাইছ না? আমার কিছুই? যদি আমি ভুল করে ফেলি খুব বড়ো, তুমি খুশি হবে? আমি চাইছি তুমি আমাকে আটকে রাখো তোমার সব শক্তি দিয়ে। যেন কেউ আমাকে নিতে না পারে, যেন কেউ তার মিষ্টি কথায় আমাকে ভোলাতে না পারে। আমার জীবনে শেষপর্যন্ত তুমিই থেকে যাও। যদি একবার বলো, আমি শুধুই তোমার, আমি সত্যি সত্যিই আর কারও হব না। তুমি কেন চাইছ না আমাকে? আমি চুপ করে থাকব সব সময়। কিছুই বলব না তোমাকে। আমি শুধুই তোমাকে পাশে চাই, আর কাউকেই না। তুমি বোঝো তো সেটা। তবে এভাবে ছেড়ে দিচ্ছ কেন? যদি এই হাত অন্য কেউ ধরে, তুমি খুশি হবে? যদি এই কপালে অন্য কেউ চুমু দেয়, তোমার ভালো লাগবে? বলো! চুপ থাকছ কেন এত?


যেদিন প্রথমবার দেখা হয়েছিল, মনে আছে সেই দিনের কথা? তোমার হাত আমার হাত ছুঁয়েছে। সেই তুমিই মুখে তুলে চিকেন-পপকর্ন খাইয়ে দিলে জোর করে। আমি বারবার বলছিলাম, দেখো, আমাদের পরিচিত কেউ দেখে ফেলতে পারে। কেউ যদি দেখে, তুমি আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছ, তা হলে কী বলবে! তুমি বলেছিলে, যা খুশি বলুক। আমার অ্যাঞ্জেলকে আমি খাইয়ে দেবো, তাতে কার কী! এবং, তুমি একের পর এক মুখে তুলে খাইয়ে দিলে। আর ঠোঁটে যে সস লেগেছিল, সেটাও খুব সুন্দর করে মুছে দিলে। সেদিন তুমি অনেক অনেক আদর করেছ। আমাকে এত আদর করো কেন তুমি? আমার বুঝি ইচ্ছে করে না তোমাকে আদর করতে? হুম্‌?


সেদিন তোমার চোখে অনেকক্ষণ ডুবে ছিলাম। আমি এতক্ষণ ডুবে ছিলাম যে আমার কোনও হুঁশই ছিল না। বাসার যাবার পর বুঝেছিলাম, অনেক সর্বনাশ করে ফেলেছ তুমি আমার! সেদিন দেখা হবার আগে সকালে ফোন দিয়েছিলে তুমি। বলেছিলে, দুপুরে যেন তোমার সাথে খাই কেএফসিতে। গ্রিন রোডের ওখানে। হাতে যেন সময় নিয়ে আসি। আমি রাজি হলাম তোমার কথায়। এর মাঝেই তুমি একটা কথা বলেছিলে, যেটা আজও আমার কানে বাজে! সেদিন তুমি বলেছিলে, ‘দেখো, পৃথিবীতে আমার মায়ের পরে যদি কাউকে বসাতে হয়, তবে আমি তোমাকে বসাবো। তুমি সেই মানুষটি, যে কোনও রকমের স্বার্থ ছাড়াই আমার ভালো চায়, যে আমার কাছ থেকে কখনও কিছু চায়নি, দেখাও করতে চায়নি, আমার কাছ থেকে কখনও কোনও কিছুর আশা ছাড়াই, তুমি আমার ভালো চাও। তাই আমি আমার মায়ের পরে তোমার জায়গাই রাখব। আমার বউও আমার ভালো চাইবে, তবুও তার একটা স্বার্থ সেখানে থাকবেই। যেহেতু আমি তার স্বামী, সেহেতু সে ওই কারণেই আমার ভালো চাইবে, কিন্তু তুমি কোনও কিছুর আশা না করেই আমার ভালো চাও। আজকের এই কথাগুলো তুমি সময় এবং দিনসহ খাতায় লিখে রেখো।’


বিশ্বাস করো, ওইদিন তোমার কাছ থেকে এই কথাগুলো শুনে আমি পাগলের মতো কেঁদেছি তুমি ফোন রাখার পর। তুমি আমাকে এত বড়ো জায়গা দিয়ে দিলে? মায়ের পরে আমি? এটাই তো আমার জীবনের সবচাইতে বড়ো গিফট। এরপর আর কী-ইবা বলার থাকে! তোমার ওইদিনের কথায় আমি অনেক কেঁদেছি। তুমি অনেক বড়ো সম্মান আমাকে দিয়েছ। শুধু একটু কম ভালোবাসো, এই আরকি!


এই, শোনো না, আমাকে রেখে দাও না তোমার বুকের কাছে। তোমাকে জ্বালাব না, বকব না, মারবও না, শুধু ভালোবাসব। অনেক অনেক ভালোবাসব…খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে তোমাকে জড়িয়ে ধরে! জানো, আজকে দেখলাম পথে হলো দেরি…সুচিত্রা এবং উত্তমকুমারের। সুচিত্রা সেন উত্তমকুমারকে ভালোবাসতে বাসতে শেষে পাগলের মতোই হয়ে গিয়েছিলেন। শেষে উত্তমকুমারই ভালোবাসা দিয়ে তাঁকে সুস্থ করে তুলেছেন। কত সৌভাগ্য, বলো, এরকম ভালোবাসা পাওয়া! আর আমার জন আমাকে ভালোই বাসে না! কী কপাল আমার! আমার সব ছিল, আছে, শুধু প্রিয় মানুষের ভালোবাসার কমতি। যদি তুই আমাকে ভালোবাসিস, আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী হব। বিল গেটস আর মুসা বিন শমসের আমার কাছে হেরে যাবে তখন। ভালোবাসে না আমাকে মানুষটা একটুও!


অনেকগুলো বছর হলো ভালোবাসি তোমাকে। আমার তোমাকে হারানোর ভয় যেমন থাকে, তেমনি তোমাকে যদি একদিন কম ভালোবাসি, তবে নিজের সাথেই, মনে হয়, কোনও অন্যায় হচ্ছে। আমাদের সময় করে ভালোবাসা হয়নি, বলাও হয়নি অনেক কিছু, তোমাকে কিছু বলতে গিয়েও পিছু সরেছি বার বার। অসংখ্যবার। কেউ কেউ জানে তোমার প্রতি আমার কেমন টান, ভালোবাসা। যেমন আমার বান্ধবী মিতু জানে তোমাকে আমি কীরকম ভালোবাসি। তার একটাই কথা, আজকালকার যুগে এরকম ভালোবাসা আর দেখিনি। আমাকে অনেক ছেলেই পছন্দ করে, ভালোবাসে, বিয়ের প্রস্তাব দেয়। আমার কিছুতেই ভালো লাগে না। তুমি বলবে নিশ্চয়ই, বিয়ে করো, সুখী হও।…এটাই তো তোমাদের কাজ! আচ্ছা, সুখটা কি মনের, না কি দেহের? এটার উত্তর নিজের কাছেই রেখো।


আমি কখনও নামাজে বসে জীবনসঙ্গী হিসেবে তোমাকে চাইনি সৃষ্টিকর্তার কাছে। আমি শুধু চেয়েছি, তোমার যাকে ভালো লাগে, তুমি যেন তাকে পাও। তোমার সুখটাই আমার সুখ। আজকাল খুব রাগ ওঠে নিজের উপর! আচ্ছা, কেন চাইনি তোমাকে নিজের মতো করে? আমি যদি চাইতাম স্রষ্টার কাছে, তবে এই আমিই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুখী আর কপালওয়ালা মানুষ হতাম। সেই সাথে ধনীও।…তোমাকে সত্যি রাগে বা অবহেলায় রাখা যায় না! তোমাকে রাখতেই হয় ভালোবাসায়, আদরে আর খুব যত্ন করে মনের খুব ভেতরে।


এতদিন নিজেকে সংযত করে রেখেছি। এখন আর পারি না। তোমার আমার মাঝে এত দেয়াল কেন? এই যে দেখা করো মানুষের সাথে। কফিশপে বা অন্য কোথাও। তোমার কখনও মনে হয়নি আমার কথা? এই যে একজন তোমার কাছে কিছুই চায়নি, কোনও ফোনকল বা মেসেজ দেওয়ার বা দেখা করার ইচ্ছে হয়নি সে মানুষটার সাথে? আমি এতই জঘন্য দেখতে? তোমার ভালোই লাগে না আমাকে? আচ্ছা। থাকো তাদের নিয়ে। দেখা করো। নিজের শহরের মানুষদের সাথে। ওরাই তো আপন।


তবুও বলছি, শোনো, যদি কখনও খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে, আমার কাছে চলে এসো। যদি কখনও চোখদুটো একটু বিশ্রাম দিতে চায়, চলে এসো আমার কাছে। যদি লিখতে লিখতে হাতটা ব্যথা করে, চলে এসো আমার কাছে। যদি ওই পিঠব্যথাটা আবার ওঠে, কারও কাছে খুব যেতে ইচ্ছে করে, চলে এসো আমার কাছে। যদি প্রত্যেকদিনের জীবন অসহ্য লাগে, তখনও এসো আমার কাছে। যদি খুব মাথাব্যথা করে, চলে এসো, মাথায় হাত বুলিয়ে দেবো। অসুখ হলেও চলে এসো, অসুখ যদি ছোঁয়াচেও হয়, তবুও এসো। আমি ভয় পাই না, কেননা ভালোবাসা-অসুখেই আমি আক্রান্ত, বাকি সব অসুখই আমার কাছে তুচ্ছ। যদি খুব নিরিবিলি থাকতে মন চায়, তখনও এসো আমার কাছে। যদি সবকিছু থেকে পালাতে মন চায়, তখনও এসো আমার কাছে, আমি আমার বুকের মধ্যে তোমাকে লুকিয়ে রাখব। তুমি যখন চাও, তখন এসো। যেভাবে চাও, সেভাবে এসো। তুমি এসো…আমাকে পাবে সব সময়ই। বিনিময়ে কখনও কিছুই দাবি করব না। তুমি নিশ্চিন্ত থেকো। আগেও কোনও দাবি ছিল না। খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে তোমাকে, খুব জড়িয়ে ধরে কান্না করতে ইচ্ছে করছে।


চিঠি-৩
------------------
এই পাঁচ বছরে, জন্মদিনে আপনি দুইবার দুই জন্মদিনে আমাকে ফোন করেছিলেন। এখন অবশ্য পাঁচ বছর না, ছয় বছর হবে এই জুন মাসে। আপনার সাথে আমার বছরে ৩৬৫ দিনের মাঝে এই একদিনই কথা হয়। এছাড়া বাকি ৩৬৪ দিন কেউ কাউকে ফোন দিই না। কোনও অভিযোগও নেই ওটা নিয়ে। ঈদ, পূজা, ভালোবাসা-দিবস, বসন্ত, পহেলা-বৈশাখ, থার্টিফার্স্ট-নাইট…কখনওই কথা হয় না। জানেন, আমি না আপনার সব কিছুতেই অভ্যস্ত ছিলাম। আপনি আমাকে দেখতে পারেন না, এটা জানার পরও আপনাকে ভালোবাসতাম। কখনও কোনও দাবি রেখে ভালো আমি আপনাকে বাসি না। আমার মেসেজ অনেক সময় একমাসের উপর আনসিন অবস্থায় পড়ে থাকত। আমি মুখে কিছু বলিনি তা-ও। শুধু চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়েছে। নিজে কষ্ট পেয়েছি, কিন্তু বিনিময়ে আপনার কাছে কখনও নালিশ করিনি।


আমি আপনার সব কিছুতেই অভ্যস্ত ছিলাম। আপনার অবহেলায়, আপনার কড়াকথায়…আরও অনেক কিছু। আমি ধরেই নিয়েছিলাম, এটাই আমার কপাল। একটা মেয়ে বিয়ের পর বিয়ে খারাপ হলে মেনে নেয়। ধরে নেয়, এটাই তার সংসার, এখানেই থাকতে হবে। বাঁচতে হবে, কাউকে কিছু বলা যাবে না। চুপ করে সব সহ্য করে নেয়।…আমার আপনার সাথে বিয়ে হয়নি, সংসারও হয়নি। তবুও আমি না হাসিমুখে সব মেনে নিয়ে অনেকটা বছর থেকেছি। আপনার জন্মদিনে আমার খুব ফোন করতে ইচ্ছে করে, কিন্তু আমি করি না। আপনি যদি বিরক্ত হন, সেকথা ভেবে। কিংবা আপনার বউ যদি রাগ করে, এটাও ভাবি। তাই আপনার কণ্ঠ আমার আর শোনা হয় না।


আমার অ্যান্ড্রয়েড ফোন নিয়েছি মাত্র আড়াই বছর হবে। আমার ছোট চাচা আমাকে গিফট করেছে। বাবা আমার উপর একটু রেগে ছিলেন শুধু একটা বিষয়ে, আমি কেন বিয়ে করি না, সে কারণে। ভদ্রভাবে চলেছি, বাবা-মায়ের সব কথা শুনেছি। শুধু বিয়ে কেন করি না, এই নিয়ে বাবার রাগ। এই রাগের কারণে তিনি আমাকে মোবাইল কিনে দেননি। হাসি পায় বাবার ছেলেমানুষির কথা ভাবলে। যে মানুষ ড্রেস কিনতে দশ হাজার টাকা অনায়সেই দিয়ে দেন, তিনি মোবাইল-কেনার টাকা দেন না। আমারও জেদ, আমি আব্বুকে দিয়েই ফোন কিনে ছাড়ব।


যা-ই হোক, এরপর জেদের কথা ভুলে গিয়েছি। পুরাতন সেট নিয়েই কাজ চালাই। আপনার প্রতিটি পোস্ট পড়া, কমেন্ট করা, আপনাকে প্রতিদিন দেখা,…মানে ছবিতে। আমি আপনার আবৃত্তি কখনও দেখিনি, শুনিনি। আপনার ভয়েস কেমন, তা আমি সঠিক বলতে পারব না। আমার ফ্রেন্ড একবার বলেছিল, ওঁর কণ্ঠটা শোন আমার মোবাইলে, আমার মোবাইল তো অ্যান্ড্রয়েড। আমি তাকে বলেছিলাম, না, শুনব না। যেদিন মোবাইল কিনতে পারব নিজে, সেদিন শুনব। আর দেখা যদি হয়, তবে শুনব সামনে থেকে। হ্যাঁ, অন্য একজনের মোবাইল দিয়ে আপনার কণ্ঠ শোনার ইচ্ছে ছিল না আমার। আমার আত্মসম্মানবোধই এখানে বড়ো। নিজের যা আছে, তাতেই খুশি থাকা ভালো। এখন আড়াই বছরের উপর হবে অ্যান্ড্রয়েড ফোন ইউজ করি। তবুও আপনাকে শুনি না। ইউটিউবে আপনার আবৃত্তির ভিডিও দেখি না। আপনাকে সেই প্রথমদিনের মতো নতুন করে রাখতেই ভালো লাগে। আপনাকে যদি বেশি শুনলে পুরাতন হয়ে যান, সেই ভয়ে দূরে রাখি। আপনাকে আমি আপনার মতো করেই রাখি! আপনি যেভাবে চান আরকি! আমি আজ কেন এতগুলো কথা বলছি, আপনি বুঝতে পারছেন? আমি আজকে আপনার কণ্ঠের কথা বলছি। যা আমি শুনিইনি! বাকি মেয়েদের মতো ফোন পাওয়ারও সৌভাগ্য আমার হয়নি।


আপনাকে আমি একদিনই শুনতে পাই, শুধু আমার জন্মদিনে। দেখেছেন আপনি, কত বড়ো সৌভাগ্য আমার! ভেবেছেন কখনও? এই যে এই মেয়েটা, আপনাকে যে পাগলের মতো ভালোবাসে, সে কখনওই আপনাকে কোনও কিছু নিয়ে অভিযোগ করেনি। আপনার কাছে কোনও প্রত্যাশাও নেই তার। তবু জানেন, আজ না ভেবেছিলাম আপনার ফোন পাব ঘুম ভাঙতেই। পরে বেলা যতই যায়, ততই বুঝেছি, আমি না আসলে অনেক বোকা। মানুষের কত কাজ, কত লেখালেখি করতে হয়, কত মানুষের মেসেজ দেখতে হয়, কত জনের আবার আবদারও থাকে প্রতিদিন ছবি তুলে পাঠাতে। এইসব আসলে আমার বুঝতে অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমি আর কখনওই আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করব না।


হ্যাঁ, আপনি ফোন করেছিলেন। দিনের শেষে বারোটা বাজার চৌদ্দ মিনিট আগে। তিনবার। আমি আপনার ফোন ধরিনি। কী দরকার! এই সময়টুকু আপনি আপনার প্রিয়জনদের দেবেন। আমার কিছুই লাগবে না আপনার কাছ থেকে। আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন। আপনাকে ছয় বছর ধরে ভালোবাসার জন্য মাফ চাইছি। আর আজকে এত কথা বলেছি শুধুই একটা কথা বোঝানোর জন্য, সেটা হচ্ছে, আপনার কণ্ঠ আমার কখনও শোনা হয় না। এখন তো আরও হবে না।


আজ সকাল থেকে অনেক কেঁদেছি। বাবা থাকলে কত ভালো হতো, মাথায় হাত রেখে দোয়া করতেন। হাতে কিছু টাকা দিতেন। আমার করা রান্না খেতে খেতে বলতেন, ‘তোমার কেক তো মা ভালোই হয়, তোমার মায়ের কাছ থেকে ভুনাখিচুড়িটা শিখে নিয়ো।’…ভেবেছি আর শুধু চোখের জল পড়েছে। আমার কথা বলার মতো বয়ফ্রেন্ড নেই, কাছের কেউ নেই, প্রিয় কোনও মানুষ নেই। কেউ নেই আমার। অনেকেই আছে, কিন্তু নিজের কেউ নেই। কী অদ্ভুতভাবে আমি সময় পার করে দিচ্ছি। কাউকেই লাগছে না। দিন দিন শক্ত হচ্ছি। আপনার কাছে গিয়ে বাকি মেয়েদের মতো কিছুই বলছি না। আপনাকে অনেক বিরক্ত করে ফেলেছি। আমার উচিত হয়নি এইসব করা। আপনাকে এই কিছুদিন বিরক্ত করার জন্য আমার খারাপ লেগেছে। সত্যিই আমি লজ্জিত। মাফ করে দিন, প্লিজ। রাত অনেক হলো, অথচ আমার ঘুম নেই। সারাদিন খেটেছি খুব, শরীর ভালো নেই, অসুস্থ। এখন যদি চাই আপনার ভয়েস শুনতে, আমি পাব না আপনাকে। আমি চাইছি না আপনাকে। আপনি শিওর থাকেন।


তোমার স্ত্রী এবং আমি, দুজনেরই ভালোবাসার মানুষ একই। একজন তোমাকে সম্পূর্ণ পেয়ে ভয়ংকর হয়েছে, আর একজন তোমাকে না পেয়ে ভয়ংকর হয়েছে। পার্থক্য বোঝো? পাওয়া আর না পাওয়ার মাঝখানের পার্থক্যটা? বুঝবে কী করে, বলো! তুমি আমার মতো করে চাওনি আমাকে, তাই ওটা বোঝা তোমার পক্ষে একটু কঠিনই। বেশি পেলে যেমন মানুষ নষ্ট হয়, কম পেলেও তা-ই। তোমার স্ত্রী তোমার সাথে ভয়ংকর, তোমাকে জ্বালাতে জ্বালাতে শেষ করে দেয়। আমিও তা-ই করি, কেননা…ওই যে বললাম, ভালোবাসি! কিন্তু একটু ভাবো তো, আমি কি তোমাকে খুব অশান্তিতে রাখছি? সত্যিই? আমি তো তোমার কোথাও নেই। কেন আমাকে ভুল বোঝো তবে? আর আমি তো তোমাকে কখনও কোনও ব্যাপারে জোর করিনি। কেন এটা বোঝো না তুমি? আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ভালো করে খেয়াল করে দেখো তো। সেখানে ভালোবাসা, না অন্য কিছু দেখতে পাও? আমার খুব ইচ্ছে, তোমার একটা ছবি আমার রুমে বড়ো করে টাঙিয়ে রাখার। কিন্তু উপায় নেই। কাজটা করা যাবে না। আমি তোমাকে ভালোবাসি, আমার বুড়া লোকটা! আমাকে মাফ করে দিয়ো। আর এই শেষবেলায় কিছু বোলো না, দেখছই তো কী অবস্থা চারিদিকে! মরেই তো যাব!


চিঠি-৪
----------------------
সম্ভবত এটাই আমার পক্ষ থেকে শেষ ভালোবাসার চিঠি। আর দেবো না। যদি ভুল করে তোমাকে লিখেও ফেলি, তবে সেটা লিখে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলব, তবুও তোমার হাতে তা পৌঁছবে না।


আমি তোমাকে খুব যন্ত্রণায় রাখি, তাই না, বলো? এটাই তো তোমার বক্তব্য, যেটা ইদানীং আমার শুনতে হচ্ছে। আমার না অনেক কিছু শুনে শুনে এখন অভ্যেস হয়ে গেছে! আমি তোমার অবহেলা আর খারাপ ব্যবহারে অভ্যস্ত এখন। সেই সাথে তোমার ভালোবাসা না পাওয়াতেও অভ্যেস হয়ে গেছে।


তোমার সাথে আমার প্রেম হয়নি। দুইজন লাগে তো প্রেম করতে! একতরফা প্রেম হয় নাকি! তবে বলা যেতেই পারে, আমাদের মাঝে প্রেম নেই, ভালোবাসা আছে। আর যে ভালোবাসা আছে, সেটাও শুধু আমার পক্ষ থেকেই। কখনও এই ভালোবাসার খোঁজখবর বা যত্ন নেওয়া তোমার হয়নি। তুমি কিছুই করোনি। আমার একার পক্ষে এতদূর আসা অনেক কঠিনই, যেখানে প্রাপ্তির খাতা ছিল শূন্য। আর সেখানেই কিনা আমি শুধুই অবহেলা, অভিযোগ আর বদনামই পেয়ে গেলাম! আমার কোনও ভালো দিক নেই। আমি হচ্ছি দুনিয়ার সবচেয়ে খারাপ মানুষ। বড়ো অপরাধী। আচ্ছা, আমার অপরাধটা কী, বলতে পারো? তোমাকে ভালোবেসেছিলাম, এটাই তো অপরাধ, তাই না? না কি তোমাকে জাজ করেছি, এটাই অপরাধ? ও আচ্ছা, আমি তোমাকে ইদানীং একটু বেশিই কথা বলছি। সরি।


এখন একটু থামছি। আর শোনো, বলি, এখন থেকে সাত-আট মাস আগের কনভারসেশনগুলো একটু লক্ষ করলে দেখতে পাবে, সেখানে তোমাকে আমি কতটুকু জাজ করেছিলাম। সেখানে আমার প্রতি তোমার কোনও অভিযোগ নেই। তবে কি সাত-আট মাস আগে তুমি আমাকে ভালোবাসতে? মোটেও না। ভুল করেও না। আমি যদি ধরেও নিই, আমি গত সাত মাস ধরে তোমাকে খুব জ্বালাচ্ছি, তবে বলতে তো হবে, তোমাকে আমি কোথায়, কীভাবে জ্বালাচ্ছি! এর আগে তো আমি কখনওই এইসব জাজমেন্ট বা বাড়তিকথা কিছু বলিনি তোমাকে। তা হলে তুমি তখন কেন আমার গুণগুলো দেখোনি? গত পাঁচ বছরে তোমাকে আমার চুপ করে ভালোবেসে যাওয়াটা কেন তোমার চোখে পড়েনি? কেন আজ তুমি এই কয়েক মাসের কয়েকটা মেসেজ পড়েই আমাকে আর আমার ভালোবাসাকে তুচ্ছ করে দিচ্ছ?


আমার তো বছরে একটা দিনই তোমার সাথে কথা হয়, তা-ও আমার জন্মদিনের দিন। এছাড়া আর কথা হয় না। আমারও ফোন দেওয়া হয় না তোমাকে। মনে হয়, যদি বিরক্ত হও! আমার তোমার সাথে দেখাও হয় না। আমার যে কিছুই হয় না তোমার সাথে। আমি তো সব অবহেলা আর অভিযোগ মাথা পেতেই নিচ্ছি। জানি না, আমার মতো অপরাধ দুনিয়াতে কেউ করে কি না। আমি সত্যিই বিশাল বড়ো অপরাধ করে ফেলেছি ভালোবেসে। তাই এত শাস্তি আমার। তবে তোমার জন্য খুশির একটা সংবাদ হচ্ছে, আমি আর তোমাকে চিঠি, মেসেজ, কথা কিছুই পাঠাব না, বলব না। তুমি যেখানেই শান্তি আর স্বস্তি পাও, সেখানেই থাকো। যারা তোমার ভালোবাসার মানুষ, তাদের নিয়েই থাকো। আমার কিচ্ছু যায় আসে না। এখন তো আরও আসে না। তুমি বললে তোমার স্ত্রীর কথা। আমরা দুজন নাকি একই। সামান্য পার্থক্য। দুজনেই নাকি নিজেকে নির্ভুল মনে করি। আচ্ছা, তোমার বউয়ের সাথে তুমি থেকেছ, তাকে তুমি একটু হলেও চিনো। কিন্তু আমার সাথে তো তুমি থাকোইনি, তা হলে আমার নামে অভিযোগ দাও কীভাবে? আমাকে তো তুমি চিনোইনি। সময়ও কাটাওনি আমার সাথে। ফোনেও তেমন কথা হয়নি আমাদের, প্রেমও হয়নি। একজনকে চিনতে গেলে সারাটা জীবন লাগে। অথচ তুমি আমার গত তিন মাসের কিছু মেসেজে আমাকে জাজ করে ফেললে!


এত দিন তো ভালো ছিলাম, তখন কি ভালোবাসতে পেরেছিলে? না, পারোনি। কী যেন বলো আমাকে নিয়ে তুমি!…আমি দেখতে ফরসা সুন্দরী, মহিলাদের মতো, ক্ষমতাশালী…আরও কী কী যেন! আবার আমি নাকি ডেঞ্জারাস। কে নাকি কী বলেছে তোমাকে…আমি খারাপ, এই সেই।


জানো, আমি না খুব ভালো করেই জানি, কে কী লাগিয়েছে তোমাকে আমার নামে, আর সেটা ধরেছি দেখেই আমাকে তুমি এতগুলো কথা শোনাতে পেরেছ। আচ্ছা, আমি তো তোমার কারও সাথে করা কনভারসেশন দেখেছি, যদি এটা বলি, তখন কী বলবে? আমি কখনও তোমার কোনও খারাপ দিক দেখলেও সেটাকেও কবর দিয়েই ভালোবেসে গেছি। আমার কখনওই কোনও অভিযোগ ছিল না। কখনওই বলিনি, তুমি মানুষ হিসেবে খারাপ। একটা মানুষের সব দিক ভালো হয় না, তাই বলে একটা মানুষ সম্পূর্ণ খারাপ কী করে হয়! আমার বলার মতো একটা কথাই ছিল---তুমি আমাকে ভালোবাসোনি, সময় দাওনি। অথচ এই তুমিই, যে কিনা কখনও আমাকে ভালোবাসোনি, সেই মানুষটাই আমাকে অনেক বড়ো অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিল। আজকে আমি বাকরুদ্ধ। আমার নিজেকে সরিয়ে ফেলার সময় চলে এসেছে। তাই আজ এত বড়ো চিঠি লেখা। এই কথাগুলো যখন লিখছি, তখন আমি পাগলের মতো শুধু কেঁদেই যাচ্ছি। এ যে কী কষ্ট ভালোবাসার! আমার আগে জানা ছিল না। আমার অনেক বড়ো অপরাধ হয়ে গেছে। মাফ করে দিয়ো।


আমি সত্যিই তোমাকে অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি! আজ দেখো, এমন এক জায়গায় তুমি আমাকে নিয়ে এসেছ, যেখান থেকে আমাকে ফিরে যেতে হচ্ছে। কারণ তুমি যখন বলেই বসেছ, আমি অশান্তিতে রাখি তোমাকে, অত্যাচার করি, এখন তা হলে আমার বিদায় নেওয়া ছাড়া আর পথ নেই। কারণ তোমার সুখের জন্য দোয়াই আমি করে গেছি সারাজীবন ধরে।


আমাদের পরস্পরকে কথা দেওয়া-নেওয়া হয়নি, তবুও অনেকটা সময় কেটে গেছে পরস্পরের সাথে। আমাদের ধর্ম কি আমাদের মাঝে বড়ো বাধা? আমার বেলায় মোটেও তা নয়। আমি তোমাকে ঠিকই বিয়ে করতে পারতাম যদি তুমি আমাকে ভালোবাসতে। কিন্তু তুমি তো তোমার ধর্মের বাইরের কাউকে ভালোই বাসোনি, আর বিয়ে তো দূরের কথা। আমাকে আর কী ভালোবাসবে, আমি তো ভালো না! তবে এখন ভালোদের নিয়েই থাকো। আমাকে আর পাবে না। আচ্ছা শোনো, যদি আমার বড়ো কোনও অসুখ হয়, আর না বাঁচি, তবে তো ভালোই হলো। তোমাকে বিরক্ত করার একজন মানুষ কমে গেল। আচ্ছা, যদি এই শেষমুহূর্তে কিছু চাই, তুমি আমাকে দিবে? একটা গিফট যদি চাই? তুমি তো আমাকে তেমন কিছুই দাওনি। না ভালোবাসা, না সময়, না ফোনকল। কিছুই না। যা-ই হোক, তোমার কাছ থেকে আমার কিছুই নেওয়ার ইচ্ছে নেই। তবুও একটা জিনিস চাইব। দিবে আমাকে?


তোমার ব্যক্তিগত বিষয়ে বলার ইচ্ছে আমার নেই। তবুও বলছি যদি বেঁচে না থাকি, তাই। তোমার স্ত্রী আমার বোনের মতো। তার অপরাধ যদি বড়ো হয়ে থাকে, তবে তুমি তার শাস্তিটা তুমি আমাকে দিয়ো। আমার বোনটাকে মাফ করে দিয়ো, প্লিজ। তাকে ভালোবেসো। তুমি এটা করলেই আমার গিফট পাওয়া হয়ে যাবে। এটাই আমার গিফট, যেটা চাইছিলাম তোমার কাছে।


তোমাকে আমি সবই বলি। সব মানে একদম সব। আর তোমার দোষগুলোও আমি তোমার কাছেই বলি। এটা নিয়ে বাইরে কারও সাথেই কোনও আলোচনা হয় না। তোমার আমার ঝগড়া ইনবক্সে হবে, দরকার হলে একরুমের ভেতর হবে। বাইরের মানুষ কেন জানবে সেটা? আমার এই ঝগড়ার জন্য কেউ যদি তোমাকে কটুকথা বলে, তবে সেটা শুনতে আমার মোটেও ভালো লাগবে না। আমি তোমার সাথে লড়তে পারব, কিন্তু বাইরে থেকে কেউ আঘাত করলে সেই আঘাত আমিই সবার আগে বুক পেতে নিব।


কেন এই শেষসময়ে ভুল বুঝলে? কেন? কেন মনে করলে, তোমার কাছ থেকে আমি সব কিছু চেয়ে নিব? কেন বললে তোমার পক্ষে এর বাইরে কিছুই করা সম্ভব না? কী চেয়েছি, বলো? আমি তোমাকে বারবার বলেছি, খুলেই বলেছি, আমি তোমার লেখায় কোনও মেয়েকে সহ্য করতে পারি না। একদমই না। এর মানে এই না যে তোমার লেখা আমি পছন্দ করি না। ভালো করে মনে করে দেখো, কিছুদিন আগেও যখন মুভির রিভিউ নিয়ে পোস্ট দিতে, তখনও ইনবক্সে বলেছিলাম, তুমি কবিতা লিখতে পারো না? তোমার আর জীবনানন্দ দাশের কবিতা আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। তোমার বিয়ের পনেরো দিন পর তোমার সাথে যখন কথা হয়, তখন বলেছিলাম, ‘লেখালেখি তুমি ছেড়ো না। কিছু হলেও প্রতিদিনই লিখো। এ, বি, সি, ডি হলেও লিখো।’ তুমি হেসেছিলে আমার কথা শুনে। তুমি লেখা ছেড়ে দিলে তো আমি ঝগড়া করব তোমার সাথে। তোমার লেখার জন্যেই তো অনেকটা বেশি ভালোবাসি তোমাকে…ওহ্‌ সরি, বাসতাম। আমি তোমার পাশে থাকলেও তোমার লেখালেখি যেন শান্তিতে হয়, সেই চেষ্টাই করতাম। সত্যিই, প্রিয়!


মেয়েরা না আসলেই ভালো না! বিশেষ করে আজকালকার মেয়েরা। আগের মানুষ খাঁটি ছিল। আজকাল সব ক্ষেত্রেই ভেজাল। এই কারণে আমি তোমার পাশে মেয়েদের সহ্য কম করতে পারি, তোমার লেখায়ও। আমার না এই একটা জায়গায় ভয়! বুঝেছ তুমি? তুমি যদি এখন কাউকে ভালোও বেসে ফেলো, আমার কোনও আপত্তি নেই। আর থাকবেও কেন! তুমি আমার কে হও, বলো? আমার তো কোনও অধিকার নেই। তবে কী বলব আমি! কিন্তু আমার ভয় একটা জায়গায়, সেটা হচ্ছে, তোমার উপর কোনও আঘাত যেন না আসে। কেউ যদি কোনও মেয়েকে তোমার পিছনে লাগিয়ে দিয়ে তোমার ক্ষতি করার চেষ্টা করে, তখন? তুমি দেখো না আজকাল ক্রাইমপেট্রোলে কী সব দেখায়! যা-ই হোক, ভালো চিন্তাই করি তোমাকে নিয়ে, কিন্তু মনে রেখো, পৃথিবীর যত যুদ্ধ আর ঝগড়া, সব কিছুর মূলেই কিন্তু এই মেয়েরা। তাই এদের এত কাছে আসতে দিয়ো না।


দেখো, আমরা যখন মার্কেট থেকে শোপিস কিনি, তখন সেটার জায়গা আমাদের ড্রইংরুমের শোকেসে হয়। শোপিসকে কিন্তু কেউই বেডরুমের বিছানায় রাখে না। কিছু জিনিস শোভাবর্ধনকারী। কিন্তু ওই সমস্ত জিনিস শুধু শোভাই বর্ধন করে, বাস্তবে তেমন একটা কাজে লাগে না। মাছি দেখবে রাস্তার পাশে বা যে-কোনও জায়গায় খোলা-খাবারেই বসে। ঢাকা-খাবারে মাছি কোনও দিনই বসে না। কথাগুলো এমনিতেই বললাম। আমার মনে হলো, তাই। আমার চাওয়া একটাই, তোমাকে সেইফ দেখা। তোমাকে হাসিখুশি দেখা। তোমার ঘরে সুখ, শান্তি দেখা। তুমি তো সবই বোঝো, আমি আর কী বলব!


জান, কলিজা, সোনা, বিশ্বাস, নিঃশ্বাস, বাবুইপাখি, ও গো-টা, আমার বুড়ালোক, আমার পৃথিবী, আমার ভালোবাসা…শোনো, ভালোবাসি বা বেসেছিলাম কখনও। ভালো থেকো, এটা বলব না, কারণ আমি বুঝে গেছি, আমাকে ছাড়া তুমি বিশাল ভালো থাকবে। আমি চলে গেলেই তোমার অনেক খুশি লাগবে, তোমাকে জাজ করার কেউ থাকবে না, সন্দেহ করারও কেউ নেই…তবে একটা প্রশ্ন থাকল তোমার কাছে---সব কিছুর সামনে বা পিছনে একটাই কারণ ছিল, আর সেটা ছিল ভালোবাসা। তবে তুমি কেন টানটাকে না দেখে শুধু আমার রাগ আর কথাটাকেই প্রধান করে দেখলে? কেন?... উত্তর দিতে হবে না।


যদি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাই, তবে সময় মনে হয় আর পাব না। অনেক কথাই বলার ছিল। কিন্তু তুমি যখন মুক্তি চাইছ, তখন মুক্তিই দিচ্ছি। আমার যে অনেক কথাই বাকি। বলা হলো না অনেক কিছু। মোবাইলে চার্জও নেই। আমি যাচ্ছি। তুমি শান্তিতে থাকো।


ইতি
তোমার অপ্রিয় মানুষ


চিঠি-৫
----------------------


এই, আছ? শুনছ?
চিঠি লিখব না বলেছিলাম। লিখছি না তো। তোমাকে ভালোবাসতে চাইছি একটু দাবি নিয়েই। মেসেঞ্জার চেক করোনি কেন? থাক, আর কোনও দিনই চেক করতে হবে না। আমি আর আসব না ভালোবাসতে। জানো, একটা খবর দিতে এলাম। আমার শহরেও না অসুখটা প্রবেশ করেছে। এখন আমার পালা আক্রান্ত হবার। তাই এই শেষমুহূর্তে ভালোবাসা জানাতে এসেছি।


এই, তুমি ঠিক আছ? ভুঁড়ি কি কমেছে, সোনা? থাক, এখন কমিয়ো না। ফিট থাকো। খাও প্রচুর। গরম জিনিস বেশি খাও। ঘুমটা ঠিকমতো ঘুমাও। একটু রেস্ট নাও। আর কী বলব, বলো তো? সামনে থাকলে সময় করে তোমার প্রতি খেয়াল রাখা যেত। এখন তো সামনে নেই, আর অধিকারও নেই। আচ্ছা, ভালোবাসার এত জ্বালা কেন? পৃথিবীর সুন্দরতম বিষয় হচ্ছে ভালোবাসা। তবে এত কষ্ট কেন! এই যে বিধাতা আমার মনে তোমার জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা রেখে দিয়েছেন, অথচ দেখো, এই তুমিই কিন্তু আমার কাছে নেই। কেন? তুমি কই আছ, বলতে পারো? আমি বলছি, তুমি আমার সবটা জুড়ে রয়েই গেছ। ঠিক আগে যেমনটা ছিলে। তুমি কোথাও নেই, কিন্তু তুমি সবখানে।


এই দেখো, খুব কাঁদছি আমি। কিছু লিখতে পারছি না। এই সোনা, দেখো না, এমন কেন লাগছে? তুমি একটু আসবে? বসবে আমার সামনে? তোমার কোলে মাথা রেখে কিছুক্ষণ কাঁদতে ইচ্ছে করছে। ভালোবেসো না। এই শেষমুহূর্তে ভালোবাসতে হবেও না। শুধু ভুল না বুঝো, তাতেই চলবে। আমার মোবাইলের স্ক্রিন আমার চোখের পানি দিয়ে ভরে গেছে। সৃষ্টিকর্তার কসম! তুমি সামনে থাকলে দেখতে কী যে কষ্ট হচ্ছে তোমাকে লিখতে! এই বুড়ালোক, কেন আমাকে বুকে টেনে নিলে না? আমি কি বুকে থাকলেও তোমাকে জ্বালাতন করতাম বেশি? জানো, তোমাকে পেলে আমি অনেকটুকু সুস্থ হয়ে যেতাম। আমি তো বলেছি আগেই, আমার অসুখ তুমি, সেই অসুখের মেডিসিনও তুমি। আমার একপৃথিবী প্রশ্ন তুমি, সেই প্রশ্নগুলোর জবাব তুমি। আমার শুধু একটাই তুমি। আমার তুমিই তুমি। আমার গোটা পৃথিবী তুমি।


জান, তুমি কেন ভালোবাসি কথাটা একবারও বললে না? কেন এত বছরে একবারও শোনার সৌভাগ্য হয়নি আমার! কেন আমার সাথেই এইরকম হয়? কেন এত অভিযোগ রেখে দিলে মনের কোণে? কেন কেউ একজন কী না কী বলেছে, সেটা ধরে নিয়েই আমার ভালোবাসাটাকেই ছোট করলে! কেন আমার ভালোবাসাটা জিততে পারেনি তোমার কাছে? কেন একটাবারও মেসেজ দাওনি? কেন কখনও ফোন দিয়ে কথা বলোনি? কেন ঢাকায় আমাদের দেখা হয় না ঘনঘন? কেন জান, কেন? জান, বলো না। আমি আর কখনও তোমাকে বিরক্ত করব না, জাজ করব না, শুধু কিছু বলে দাও…থাক তোমাকে কষ্ট করে কিছুই বলতে হবে না, কিছুই লিখতে হবে না। তোমার জীবনে অনেক মানুষ আছে। তাদের নিয়েই ভালো থাকবে, জানি সেটা। একটা চিঠি দিয়ো নতুন বছরে, এটা বলেছিলাম তোমাকে। তুমি দাওনি। যা-ই হোক, এখন মৃত্যুর ভিড়ে ঢুকে গিয়েছি। এখন আর কিচ্ছু নিব না, কিচ্ছু শুনবও না। যদি আমি না থাকি, তুমি শান্তিতে থাকবে, সেটা জানি। কারণ, তুমি বললেই তো, আমি আর তোমার বউ নাকি একই রকম। তোমার বউকে ছাড়া তো তুমি থাকতে পারবে না, কিন্তু আমাকে ছাড়া ঠিকই পারবে। বরং খুশিও হবে আমি না থাকলে।


জানো, এই যে তুমি শান্তি শান্তি করো না? বলো না, যেখানে শান্তি আছে, সেখানে যাবে, সে যদি বেশ্যাও হয়, তার কাছেও। জানো? একটা মানুষের কাছে যাচ্ছ, শান্তি পাচ্ছ, হঠাৎ কিছু সময় পর দেখবে, ওর কাছেও শান্তি পাচ্ছ না। শান্তি জিনিসটাই হচ্ছে তোমার নিজের উপরে। তুমি যেখানে যেভাবে মানিয়ে নিবে, সেভাবেই হয়ে যায়। তোমাকে কোনও কিছু নিয়েই আজ কিছুই বলতে ইচ্ছে করছে না। শুধু আর শুধুই ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। আমরা কি পারতাম না এই শেষমুহূর্তে কিছুকাল দুজন দুজনের হাত ধরে থেকে যেতে? ওই যে তুমি ধরেছিলে, এরপর সেই হাত কেউ ধরেনি। সত্যিই আমার হাত অনেক তুলতুলে, আমার বান্ধবীরা হ্যান্ডশেক করলে তা-ই বলে। বলে, তোর জামাই কোনও দিনই তোর হাত ছাড়বে না।


আচ্ছা জান, তুমি কেন তাকে নিয়ে বলে ফেললে যে আমি তার প্রেমে পড়েছি? কেন উনি কি পড়তে পারেন না? না কি সবাই তোমার মতো, আমি ফরসা সুন্দরী বলে আমাকে ভালোবাসবে না? ওই মানুষটা কেমন যে আমি বলে বোঝাতে পারব না। তবে বলতে পারব, উনি আমার সাথে ভালো ব্যবহারই করেছেন বেশিরভাগ সময়। ওঁর সাথে আমার কিছুই নেই। জাস্ট ফ্রেন্ডশিপ। আর কিছুই না। আর ওঁর কথা আমি তোমাকে অনেকবার বলেছিলাম, তোমার মনে নেই। আমি সব কিছুই তোমার কাছে বলি, কিন্তু তোমার খেয়াল থাকে না। ওঁর ব্যক্তিগত লাইফ নিয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না। আর সেটা বলাও ঠিক হবে না, আর একজনের জীবন যেহেতু। আমি সব সময় ওঁর আর আপুর মিল আর সুখ, শান্তি চেয়েছি। আমি বারবার ওঁকে বলেওছি। উনি একটা সময় পর গিয়ে আমাকে বলেছেন, তুমি অদ্ভুত একটা মেয়ে। এত ভালো মেয়ে আমি খুব কম দেখি আজকাল। তোমাকে আমার জীবনে পেলে আমার জীবনটা অনেক গোছানো আর সুন্দর হতো। মানুষটা মেধাবী, ব্যবহার সামনে থেকে অনেক অনেক ভালো। দেশের প্রতি তাঁর অনেক টান, তিনি বেশ চুপচাপ, এই তো। ওঁকে নিয়ে আর কী বলব! আমরা কেউ এত কথাও বলি না কারও সাথে।


একটা মানুষের সাথে যখন মিশি, আমি তখন ধরেই নিই যে সবার ভেতরে খারাপ কিছু দিক থাকবে, আর এটা মেনে নিয়েই চলতে হবে। কারণ আমরা কেউই ফেরেশতা না। সবাই মানুষ। যদি কারও খারাপ দিক বের হয়ে যায়, তবে আমি মনে মনে ভীষণ খুশি হই। কেন, জানো? আমার তখন বুঝতে সুবিধা হয়ে যায় যে উনি ঠিক আছেন। যেহেতু খারাপ আর ভালো মিলিয়ে মানুষ, তাই। আর একটা মানুষের যদি সব দিকই দেখো ভালো, তবে ধরে নিয়ো, নিঃসন্দেহে ওই ব্যক্তিটাই সবচাইতে ভয়ানক, কারণ একটা মানুষের সব দিক ভালো হয় না। আমরা ফেরেশতা না। আচ্ছা, বাদ দিই এইসব কথা। মোবাইলে চার্জও নেই বেশি। তোমাকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে খুব। ইচ্ছে করছে, এই কিছুদিন রোজ রাগ করি, রোজ কথা বলি, রোজ আদর করি, রোজ একসাথে থাকি, সারারাত কথা বলি, আর অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি।


শোনো, আমি কিন্তু অনেক পুরাতন, অতএব আমার মতো ভালোবাসা আর কেউই দিতে পারবে না। এত সুন্দর করে কেউ ভালোবাসে আজকাল? বলো? তা-ও একতরফাভাবে কতকাল বেসে গেলাম। তুমি কোথাও ছিলে না। আমার সংসারের সব জায়গায় তুমি থেকে গেছ, অথচ তুমি এর কিছুই জানো না। তোমার আমার একটা সংসার আছে, সেটা জানো? না, জানো না। আমাদের সংসারটা চলেই আমার নীতিতে। যেদিন থেকে তুমি আসবে, সেদিন থেকে তোমার কথাতেই চলবে সব। এই সোনা, এই জান, খুব ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। এই যে এই শেষসময়ে তোমাকেই ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে। বারবার। এই বুড়ালোক, আমি চলে যাচ্ছি। তোমাকে শান্তি আর স্বস্তির কাছে রেখে যাচ্ছি। তুমি আর আমাকে পাবে না। ভালো থেকো। জানি, আমাকে ছাড়া ভালোই থাকবে। তোমার তো কত লোকই আছে…বাবুই, চড়ুই…আরও কী কী যেন…


এই পাজি! শেষ একটা কথা…ভালোবাসি অনেক বেশি! ভালোবাসি তোমায় বেশি। ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি…অনেক বেশিই বাসি, জান, বুড়ালোক…কিন্তু আপনি বুঝলেনই না। ভালোবাসি, সত্যিই বাসি, মিথ্যাও তোমাকেই বাসি। তুই আমার বিশ্রী রকমের ভালোবাসা, আমার বিশ্রী রকমের অভ্যেস। আমার জানটা!


শুভ সকাল, আমার পুরো পৃথিবী! আমার সকাল অনেক আগেই হয়েছে সেই পাখির কিচিরমিচিরের সাথে। আবার ঘুম, আবার সকাল। অস্থির লাগছে খুব। ভোরবেলায় ঘুম ভাঙল, তখন তোমার কথা মনে পড়েছে, আবার সকাল থেকেই তুমি মাথায়, মনে গেঁথে বসে আছ। তুমি আসলে একটা পচা বুড়ালোক। নেই, আবার আছও সব জায়গায়। একতরফা ভালোবাসা অনেক শক্তিশালী হয়। হারানো কঠিন। আবার এই আমি যদি কখনও ভেবে বসি, আর বাসব না ভালো, তবে শেষ এই ভালোবাসা। তুমি চাইছ তো তোমার নিজেকে শান্তিতে রাখার জন্য, আর তাই আমি যেন দূরে সরে যাই। আচ্ছা, সৃষ্টিকর্তা যদি তোমার এই দোয়া কবুল করে নেয়, তখন অনেক ভালো হবে, তাই না, বলো? ধরো, সৃষ্টিকর্তা আমাকেই নিয়ে নিল কোনও ভাইরাস দিয়ে। তখন তোমার শান্তিটা চিরদিনের জন্য হয়ে যাবে। খুব মজা হবে তখন। কেউ তোমাকে বিরক্ত করবে না আর।


আচ্ছা, একটা কথা বলি, কিছু মনে কোরো না। আমি জানি, তুমি আমার কথা মনে রাখো না। কিছু হই না যে, তাই। আমাকে এত খারাপ ভেবো না। তুমি যে মানুষটা নিয়ে আমাকে সন্দেহ করো, সে মানুষটা সত্যিই আমার ভালো একজন বন্ধু, এর বেশি কিছুই না। আমার ভালোবাসা মানেই তুমি, সেটা আগেও ছিলে, এখনও আছ। তোমার পাশে অন্য কাউকে দেখলে যেমন রাগ উঠে, তার পাশে কাউকে দেখলে তো রাগ উঠে না, কেন, বলো তো? চোখ বন্ধ করলেই যদি তুমি আসো, কই, সে তো এত সহজে আসে না। তোমার সুখ আর শান্তির জন্য আমার অনেক দূরে সরে যেতে হচ্ছে। তুমি চাইছও তা-ই। যাচ্ছি, তবুও তুমি শান্তিতে থাকো। ভালোবাসি আমার রাগি মানুষটাকে, এর বেশি তো কিছুই জানার নেই, ছিলও না কখনও। এর চাইতে বড়ো সত্যও কিছু নেই। ভালোবাসি।