বিধিলিপির রকমফের

যে মানুষটিকে ভালোবেসেছেন, কিংবা যার জন্য জীবনে প্রথম সত্যিকার অর্থে ভালোবাসা শব্দটির প্রতি একটু হলেও বিশ্বাসী হয়েছেন, বা ভালোবাসা শব্দের অস্তিত্বকে অনুভব করতে শিখেছেন; এককথায়, যার জন্য আপনি সত্যিই ভালোবাসতে শিখেছেন, সে মানুষটিই আপনাকে ভালোবাসে না।
---এটা মেনে নেওয়াটা অনেক কষ্টকর।


কিংবা সে মানুষটি আপনাকে ভালোবাসার নামে আপনার সাথে প্রতারণা করেছে, এটা ভাবাটাও প্রচণ্ড যন্ত্রণার।


কিংবা সে মানুষটি আপনাকে ভালো তো বাসেই না, বরং নিজের স্বার্থউদ্ধার করতে ভালোবাসার নামে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করছে, এটা রীতিমতো জঘন্য একটা অভিজ্ঞতা।


কিংবা সে মানুষটি হয়তো আপনাকে ভালোবাসে, কিন্তু মিথ্যের আশ্রয় নিয়ে বা কোনও একটা অনৈতিকতার ছায়ায় সেটা আপনাকে পরে জানানো হলো। তখন একটা হতবিহ্বল অবস্থার সৃষ্টি হয়, এবং যে কষ্টটা হয়, তা থেকে যায় প্রায়ই অপ্রকাশ্য।


কিংবা সে মানুষটি আপনাকে কোনও দিনই একেবারে নিজের করে গ্রহণ করবে না বা কাপুরুষের মতো লুকিয়ে চুরিয়ে, এমনি চাতুর্যের সাথে আপনাকে ভালোবাসবে। এমন একটা পরিস্থিতি প্রতারণার চাইতেও ভয়ংকর।


কিংবা সে মানুষটি আপনাকে কদিন, ভালোবাসার স্বর্গসুখ কী, তা বুঝিয়ে দেবার পর, আপনাকে ছেড়ে হঠাৎই বিনা কারণে চলে গেল। সেক্ষেত্রে সেই একাকিত্ব মেনে নেওয়াটা বড্ড কঠিন হয়।


কিংবা সে মানুষটিও আপনাকে সত্যিই ভালোবাসে। কিন্তু নিয়তি আপনাদের এক হতে দেয়নি, এখনও দিচ্ছে না। সেক্ষেত্রে হার মেনে নিতে মন চায় জীবনের কাছে, বা অনেকে হার মেনেও নেয়, বা তারপরও অনেকে বেঁচে থাকে আশায় আশায়। অনেকে অনেকসময় অনেক ভালোভাবে বেঁচে থাকে। কখনও এই ভালোথাকা হয় একপাক্ষিক, কখনওবা দ্বিপাক্ষিক। তবে তার মানে এ নয়, তাদের বা তার ভালোবাসাটা মিথ্যে ছিল। এটা নিছকই নিয়তি। এর আর কোনও ব্যাখ্যা হয় না।


এ তো গেল একরকম ব্যাপার।


আবার কখনও যদি এমন হয়, সে মানুষটি আপনাকে তার ভালোবাসায় অভ্যস্ত করে ফেলার পর, এখন থেকেও না-থাকার ভূমিকা পালন করছে; যার কাছে আপনার থাকা না-থাকা দুই-ই সমান; আপনি রাস্তার এককোণে লাশ হয়ে পড়ে থাকলেও হয়তো সে এখন ফিরেও তাকাবে না; সে এমন কেউ, যার কথা খুব প্রয়োজন হলেও আপনি কাউকেই বলতে পারবেন না; যাকে ভালোবাসেন, এ সামান্য কথাটাও কাউকে জানাতে পারবেন না; যার কাছে আপনার কোনও অনুভূতিরই কোনও মূল্য নেই; বরং আপনি শুধুই ব্যবহার্য এক পুতুল, যাকে ইচ্ছে হলেই ছুড়ে ফেলে দেওয়া যায়, আবার ইচ্ছে হলে তুলে এনে খেলা করা যায়, যে অন্য মানুষের সামনে আপনাকে অপরিচিত, অবজ্ঞার ও বিরক্তির পাত্র বা পাত্রী কিংবা এমনকি দোষী বানাতেও একমুহূর্তও ভাববে না, যাকে আপনি এটুকুও বলে বোঝাতে পারবেন না যে, আপনার পক্ষে তাকে বাদে অন্য কাউকেই গ্রহণ করা কিংবা ভাবা কোনওমতেই সম্ভব হচ্ছে না, যার কাছে সততা নেই আপনাকে ন্যূনতমও ভালোবাসার, যে বিন্দুমাত্রও অনুশোচিত নয় তার সাম্প্রতিক কার্যকলাপের জন্য, যে আপনাকে বুঝতেই চাইল না কখনও, শেষমেশ বরং আপনাকেই উলটো দোষী বানিয়ে চলে গেল, এবং এরকমভাবে আরও অনেক কিছু ঘটল…


---সে মানুষটার অনুপস্থিতির অসীম একাকিত্ব মেনে যদিওবা নেওয়া যায়, তবু অসহায়ের মতো নিরুপায় হয়েও তার স্থানে অন্য কাউকে গ্রহণ করাটা যে কতটা নিতান্ত বাধ্যতা বা মৃত্যুযন্ত্রণা বা অসহায়ত্ব, সেটা বলে বোঝানো যায় না।


এরপর যদি আপনার জীবনে আবার এমন হয়, তবে সেদিন আপনি যে মরে গিয়ে পালাবেন, সে সুযোগটাও নেই। তবে জ্যান্তলাশ হয়ে পরিপক্বভাবে ভালো থাকবার অভিনয় করে আর ভালো রাখবার গুরুদায়িত্ব পালন করে বেঁচে আপনাকে থাকতেই হয়!


আর যদি কেউ পরবর্তীতে দেবদূতের মতো এসে আপনাকে অদ্ভুতভাবে বাঁচিয়ে তোলে, সেক্ষেত্রে আপনি সৃষ্টিকর্তার মহত্ত্ব প্রত্যক্ষ করবেন।


আর যদি আরও বড়ো কোনও নরপিশাচ আপনাকে ছিঁড়ে কুঁড়ে খেতে আপনার জীবনে আসে, তবে সেক্ষেত্রে…না থাক, কিছু না বলি! কারণ তখন যে কী হবে, তা বলার মতো কোনও বাক্য বা সাহস আমার বোধভাণ্ডারে সত্যিই নেই!