বার্ধক্যের সৌন্দর্য

প্রতিটি বয়সের নিজস্ব সৌন্দর্য আছে।
বয়স বাড়লে মানুষ অনেককিছুই আর আগের মতো করতে পারে না। দৌড়ঝাঁপ, ছোটাছুটি, হ‌ইচ‌ই কমতে থাকে, মানুষ ধীরে ধীরে অনেক কাজেই উৎসাহ ও উদ্যম হারিয়ে ফেলে। এতে মনখারাপের কিছু নেই।

এবং, এটা হ‌ওয়াটাই স্বাভাবিক। এই সত্যকে মেনে নিলে নিজের প্রতি বিতৃষ্ণা কমে যায়, মনের শক্তি বাড়ে। সময়ের চেয়ে বড়ো সিদ্ধান্তদাতা আর কে আছে? সবাইকেই সময়ের হাতে সময়ের সিদ্ধান্তকে ছেড়ে দিতে হয়। ছাড়তে না পারলে নিজের মনের দ্রোহে নিজেকেই নিঃশেষ হয়ে যেতে দেখতে হয়।

বয়স বাড়লে অভিজ্ঞতা বাড়ে। যৌবনে যা ঠেকে শিখতে হয়, বার্ধক্যে তা থেকে নিজেকে সহজেই দূরে রাখা যায়। এতে সময় বাঁচে, উটকো ঝামেলা কমে। ফেলে-আসা দিনগুলির দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেলে বলতে ইচ্ছে করে, যা হয়েছে, ভালোই তো হয়েছে। আর‌ও খারাপ কিছুও তো হতে পারত! পড়েছি বলেই তো আজ‌ও দাঁড়িয়ে আছি।

বার্ধক্যের প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে প্রত্যাশাহীনতায়। বয়সের ভারে যতটা, প্রত্যাশার ভারে মানুষ ততোধিক ন্যুব্জ হয়ে পড়ে। বার্ধক্যের দিনগুলিতে যাপনের ঐশ্বর্য ও সৌন্দর্য নিয়ে বাঁচতে চাইলে বার্ধক্যের আগেই জীবনের বাকি দিনগুলির জন্য যথেষ্ট পরিমাণে সঞ্চয় রেখে দিতে হয় নিজের নামেই, যেন কার‌ও কাঁধে ভর করে বাঁচতে না হয়। সন্তানের কাছ থেকে যে বাৎসল্যসুখ পাওয়া যায়, সেটুক‌ই যথেষ্ট প্রাপ্তি; তার বাইরে আর কোনও প্রত্যাশা না রাখাই জ্ঞানীর কাজ। পরের সন্তানের কাঁধে চেপে চিতায়‌ও ওঠা যায়, কিন্তু নিজের সন্তানের কাঁধে চেপে কষ্টে বাঁচা দায়!