সেদিন আমার বইয়ের সংগ্রহের ছবি দিয়েছিলাম। অনুরোধ করেছিলাম, আমার বইয়ের নামগুলি যদি কেউ একসাথে জড়ো করে দিতেন……..জানি, এ খুবই কষ্টের কাজ! এও জানি, লিস্টটা ফেসবুকে নোট করে রাখলে অনেকেরই উপকার হত। কারও-কারও তো করার কথা! নিজের জন্যই! আমি আমার আগের জীবনে যেমন ছিলাম, তেমন থাকলে আমি নিজেই করতাম; নিজের জন্যই! হায় ব্যস্ততা! হায় আফসোস!!
দুজনকে পেয়েছি, যারা কাজটা করছে। নাহ, ভুল হল, তারা তিনজন।
প্রথমজন আমার খুব ভাল বন্ধু। অনেক বড় মানসিকতার একজন মানুষ। আমি একটা ডট দিলেও, ওটার মধ্য থেকে একটা অর্থ খুঁজে বের করে নেয়!! আমার পুরনো অনেক ইংরেজিতে লেখা পোস্টের কমেন্টগুলিকেও সে একসাথে জড়ো করেছে! (একটা সময়ে শুধু ইংরেজিতে লিখতাম।) “সুশান্ত, তোমার কমেন্টগুলিও অনেক ভাল। এখন আর কমেন্ট কর না কেন?” ওর নাম বলা যাবে না, কারণ ও এটা নিশ্চিতভাবেই পছন্দ করবে না। ও কিছু বইয়ের তালিকা করে আমাকে পাঠিয়েছে। আরও পাঠাবে। ওকে ধন্যবাদ দেয়াতে খুব রাগ করে বলেছে, “সুশান্ত, এই থ্যাংকসটা এখনও তোমার বন্ধু হয়নি, হবে-হবে করছে, এমন কারও জন্য জমিয়ে রাখো, কেমন?”
দ্বিতীয়জন, আমার এক ছোটভাই। ওকে আপনি করে বলাতে খুব অভিমান করে সেটা তুইয়ে নিয়ে এসেছে। ব্যাটার ধৈর্য আছে বলতে হবে! খুব গুছিয়ে-গুছিয়ে ক্যাটাগোরাইজ করে ওয়ার্ড / এক্সেল / পিডিএফ ফাইলে তৈরি করছে, যথেষ্ট সময় নিয়ে। ও নিঃসন্দেহে পড়ুয়া মানুষ, নাহলে এ কঠিন কাজটি করার ভালোবাসা আসত না। “কীরে! এটা কেন করছিস? নিজের জন্যই? নাকি, বইয়ের জন্য?” “ভাইয়া, এটা কী বললেন? আমি কোনও বই পাওয়ার জন্য কাজটা করছি না……আপনাকে আমার খুব ভাল লাগে……আর আমার কোন ভাইবোন নেই।” ……….. মুগ্ধ হয়ে গেছি এটা শুনে! এই পাগ্লা আমার ফ্রেন্ডলিস্টেই ছিল না!
পাগলটা আরও কী বলে শুনুন, “ভাইয়া, ট্যাগ করলে ছোট ভাই বলে কইরেন……. ছোট ভাই বড় ভাইয়ের জন্য তো কাজ করতেই পারে। না হয় কিছু মানুষ আছে অনেক খারাপ। আমাকে পাগল মনে করবে……ভাইয়া, আমি শুধু আপনার জন্য কাজ করব, ওদের জন্য না।”
কত মানুষ যে নীরবে ভালোবাসে!! যদি জানতাম! ………… কিছু ভালোবাসা না-চাইতেও পাওয়া হয়ে যায় বলেই পৃথিবীটা এখনও সুন্দর!!
তৃতীয়জন!! আহা…………..!!
এ নিষ্ঠুর পৃথিবীর নিয়ম হল, এখানে কবিতার মতন সুন্দর কোনো মেয়ে কবিতা ভালোবাসে না। যারা ভালোবাসে, তারা আমার নয়। এটাই নির্মম সত্য।
জীবনে এখনও শিখে উঠতে পারলাম না, কোন কথায় মেয়েরা শেষ পর্যন্ত অখুশি হয় না। আহা! ট্র্যাজেডি!!
পড়ুয়া মেয়ে একটু অহংকারী হবে না কেন? এটা বোঝার মতো বয়স হল না এখনও! দুঃখ দুঃখ!!
একটা সম্পূর্ণ অপরিচিত মেয়ে কোনও স্বার্থ ছাড়াই একটা ফেভার করছে (হোক নিজের জন্যই, তবুও…….), এটাই তো একটা বিশাল ঘটনা! এ জীবনে এখনও কোনও মেয়ের কাছ থেকে ফেভার নেয়ার আর্টটা শিখে উঠতে পারলাম না। আমার চাইতে কোনো বড় গর্দভের খোঁজ কেউ কোথাও পেলে একটা মিসডকল দিয়েন ভাই, আমি নিজ দায়িত্বেই কলব্যাক করে জেনে নেবো।
“আমি লিস্টটা করছি। ভাববেন না, আপনার জন্য; নিজের জন্যই করছি। আপনাকে এক কপি দেবো। তবে আপনি…………..”
………… এই মধুর প্রতিশ্রুতির সমাপ্তি ঘটে গেল, আমারই মূর্খতায়: এত তবেটবে শুনতে ভাল লাগছে না। লাগবে না আমার। আপনি একটা মহিলা-টিকটিকি। থাকেন নিজের মতন। লিস্ট ধুয়ে পানি খান।
মেয়েরা কেউ কথা রাখে না …………. হায়! উনি রেখেছেন!!
এ দুঃখ কই রাখি? ……………. অতএব, ফেসবুকেই রাখলাম। ক্ষীণ আশা মনে, যদি মহোদয়ার …………. থাক, আর কিছু না বলি! অন্যের স্ত্রীর জন্য দুঃখ বাড়িয়ে কী লাভ?
সবাই বলে, প্রিয়জনকে বই উপহার দিন৷ আমি বলি, বই উপহার দিয়ে প্রিয়জন হোন৷
পুনশ্চ। বই কেনা, বই পড়া, বই সংগ্রহ, বই কিনে দেয়া, ইত্যাদি ব্যাপার নিয়ে আমার আরও অনেক লেখা আছে। অন্য কোনও নোটে সেগুলি রেখে দেয়ার ইচ্ছে থাকল।