প্রিয় কিছু প্রায়শ্চিত্ত

১। পৃথিবী ঘোরলাগা চাহনিতে আমার চোখে চোখ রাখে। আমি জিজ্ঞেস করি, “হে পৃথিবী, তুমি পর্যন্ত নেশার আড়ালে বেদনা লুকিয়ে রাখো!”




২। তোমার অশ্রুতে নাইতে নেমে গঙ্গাস্নান করেছি!




৩। কত কষ্ট হয় তোমাকে ছাড়া থাকতে, বাঁচতে, খাবার গিলতে…
তুমি টেরই পাও না, তোমার ছোঁয়া পাইনি বলে আমি সেই কবে থেকেই অসুস্থ।
তুমি কিছুই জানো না।
এটাই বোধ হয় কাউকে বছরের পর বছর ভালোবেসে যাবার কাফফারা!




৪। আমার নিজের সাথেই তো নিজের কোনো দুশমনি নেই, আর তুমি কিনা বলো তোমার সাথে…!




৫। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও এই আমি অপেক্ষা করব,
শেষ ইচ্ছে, আর একবার তোমার হাতটা ধরব।




৬। একপৃথিবীসমান কবিতার বই উৎসর্গ করলাম তোমার নামে,
অন্য প্রান্তে বসে যে-কেউ একদিন কিনে ফেলবে ঠিক পানির দামে!




৭। আমাকে দেওয়া তোমার অপমান, অবহেলা আর আঘাত আছে যত,
যত্ন করে জমিয়েছি; এই ক্ষতগুলো যে একান্তই আমার ব্যক্তিগত!




৮। ভাবছ, আহা, মেয়েটাকে এ দফায় শেষ করে দিলাম এক্কেবারে!
আরে বোকা, শেষ করে না দিলে কেউ কি নতুন করে শুরু করতে পারে?




৯। যে-প্রেমিকা শান্ত, স্থির হয়ে বুকের সমস্ত অভিমান জলাঞ্জলি দিল,
শুনে রাখো, মেয়েটা আর কেউ হয় না এখন, যে এককালে তোমার প্রেমিকা ছিল!




১০। পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার সাহসও আমার আছে, তবু নতুন করে ভালোবাসার সাহসটা আর নেই।




১১। কেন জড়িয়ে ফেলব নিজেকে তোমার সাথে?
আমি তো অলকানন্দার মতো স্বাধীন,
কেনই-বা রাখতে যাব মাথা তোমার কাঁধে?
তুমি যে পুরুষের মতো পরাধীন!




১২। আমি যে-বেদনা লুকিয়ে রেখেছি, তোমরা সেটাকেই স্বাধীনতা বলো!




১৩।
: তোমার কি অনেক কষ্ট?
: তা জানি না, কিন্তু কতটা আঘাত পেলে এইটুকু বয়সে একটা মানুষ পৃথিবীর সব কিছু সম্পর্কে নির্লিপ্ত হতে পারে, সেটা দিয়ে তুমি অনুমান করে নিতে পারো।




১৪। কেউ বলতে পারো, আমি এমন কী অপরাধ করেছি যে, আমার মনের কথা শোনার জন্য পৃথিবীতে অন্তত একটা মানুষও নেই!?




১৫। চোখের ডাক্তার ভুল দেখেছেন আমায়, কিংবা মেশিনে ভুল আছে—
প্রেসক্রিপশনে লেখা: “তার চোখের দৃষ্টি এমনিতেই বদলে যায়।”...(যে নাকি ভালোবাসে!)




১৬। রাতারাতি এমন এক পৃথিবী কী করে তৈরি হয়ে গেল, যেখানে নিঃশ্বাস নিতেও টাকা লাগে!




১৭। এরকম বৃষ্টিতেই শাড়ি পরে কাদা-কাদা হয়ে আনন্দ করতে চাইত ইরা।
এ বছর সে কবরে শুয়ে; বৃষ্টি ইরাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে হয়তো, ইরা বৃষ্টিকে ছুঁতে পারছে না।




১৮। শেষ একটা বার তার বুকে মাথা রাখার বিনিময়ে…
আমি আমার সমস্তটা আকাশ বেচে দিতে রাজি।




১৯। দম ফেলার সুযোগ নেই আমার, কারণ নিঃশ্বাস নেবার মতন কঠিন কাজটাই কয়েক বছর ধরে করে যাচ্ছি!




২০। আমি শুধুই তোমার, আর তুমি কিনা তার কাছাকাছি!
তোমার অবহেলায় গা এলিয়েই তো এই আমি বেঁচে আছি!




২১। বুকভরা এত বেদনা যে, পাতা ভরে লিখতেও পারি না। দু-চারটে অক্ষর লিখেই থেমে যেতে হয়।




২২। একটা লাইন লিখতে
দুটো কলম ভেঙে,
একটা বিকেল পেতে
কয়েক-শো রাত জেগে…
কী পেলাম আমি,
তা তো জানি না!
তুমি ভালোবাসো,
সেটা কিন্তু মানি না।




২৩।
: তুমি কখনও কাউকে ভালোবাসো না কেন?
: আমার অবহেলা আর উপেক্ষাই তো কত মানুষের জীবন বদলে দিল! আর তুমি বলছ ভালোবাসার কথা?




২৪। মানুষের সম্পর্কগুলোও কত আজব! যে-মানুষটা একসময় পৃথিবী ছিল, তাকে শত্রু বানিয়ে ফেলতে দু-দণ্ড সময়ও লাগে না!




২৫। স্বপ্নের মেহফিলে এমন এক গালিচায় আমি বসেছিলাম যে,
চিন্তার গভীরতা ছিল যদিও সমুদ্রের সমান, তবু মুখে কিছু বলতে গিয়ে চুপ করে গেলাম।




২৬।
: বাঁচতে চাইছ না কেন?
: অনেক বেঁচেছি।
: কারও প্রতি অভিমান?
: ভুলে গেছি।
: কান্না?
: শেষ করে ফেলেছি।
: আমার স্মৃতি?
: মুছে ফেলেছি।
: দোহাই লাগে, তবুও মৃত্যু চেয়ো না।
: তুমি তো মৃতের সাথেই কথা বলছ।




২৭।
: মানুষ কীসব বলে, তুমি কি কিছুই শুনতে পাও না?
: আমি নিজের মনের কথাই ঠিক করে শুনতে পাই না, আর অন্যের কথা তো…!




২৮।
: লিখে-টিখেই কাটিয়ে দেবে নাকি সারাজীবন?
: লেখকের জীবন তো আর সবার মতন ‘কেটে যায়’ না; লেখককে একইসাথে মৃত্যুর স্বাদ নেওয়া আর নরকবাস পৃথিবীতে বসেই করে যেতে হয়। এটাই তো লিখতে পারার প্রায়শ্চিত্ত।