আমার সমস্তটা জুড়ে ও এখনও বিচরণ করে, খেলা করে, কথা বলে, কী যে সুন্দর করে হাসে... সত্যি বলছি!
ওর আল্ট্রাসনোগ্রাফির ছবিটা রেখে দিয়েছি, ওর প্রথম ছবি কী করে ফেলি, বলো? দশ দিন পর ওর ছয় মাস হবে, আমি ওকে আবার উইশ করব, ওর জন্য চকলেট কিনব, ওকে অনেক চুমু দিব, আর বলব, তোকে তোর বাবা কামড় দিতে বারণ করেছে, তাই কামড় দিব না।
চোখ বন্ধ করলে আমি ওর নরম আঙুল আর ছোটো শরীরটার স্পর্শ অনুভব করতে পারি। এ যে কেমন যন্ত্রণাদায়ক সুখের অনুভূতি, হয়তো আমি কখনোই তোমাকে বোঝাতে পারব না, সে ভাষার জন্মই হয়নি আজও, কিন্তু আমি জানি, তুমি ওকে অনুভব করো মাঝে-সাঝে হলেও...
তোমার মনে আছে, তুমি বলেছিলে, ছয় মাসের সময় আমরা বাবুনির জন্মদিনের কেক কাটব, তোমার ছুটি না থাকলেও ছুটি নিয়ে ঢাকা আসবে?
পম্পি, একটা ব্যাপার কি তুমি জানো? বাবু কখন তোমার কাছ থেকে আমার শরীরে এসেছে? তুমি জানো না, আমি জানি। ওই মুহূর্তটা মনে হলে আমি এখনও প্রচণ্ডভাবে শিহরিত হই, ওই সময় তোমার মুখ দিয়ে বের হওয়া প্রতিটা শব্দ এখনও আমার কানে বাজে।
আমি সুখের ওই মুহূর্তগুলো আজ অবধি একটা মুহূর্তের জন্যও ভুলে থাকতে পারিনি, কখনও পারব না। আমার প্রথম মা হবার স্মৃতি না হোক মধুর, তবু তো আমি মা হয়েছিলাম। তুমি ওর আব্বু। না জানল এই দুনিয়া, তুমি আমি তো জানি, এটাই আমাদের পরিবার। আমি আমার পরিবারকে ভালোবাসি। যে পরিবারে তুমি আর আমার বাবুনিটা আছে। আমার এই পরিবারটাই আমার গোটা জীবন।
জানো, মাঝে মাঝে শুধু একটাই ভয় করে খুব... ঈশ্বর যদি রাগ করে ওকে আমার কাছে ভবিষ্যতে আর না পাঠায়, আমি বেঁচে থাকব কী করে, বলো তো?! তখন আমি স্বাভাবিকভাবে বাঁচতেই পারব না যে! যে এসে ফিরে চলে গেল, সে যদি আর কখনোই ফিরে না আসে, তখন কী হবে?!
তুমি কষ্ট পেয়ো না। আমি জানি, অতটা খারাপ বাবা তুমি নও।
তোমাকে একরাতে পাগলের মতো দেখতে চেয়েছিলাম, মনে আছে? স্কাইপিতে কথা বলেছিলাম। মনে আছে, কারণটা কী ছিল? ওইদিনই কারও লেখায় প্রথমবার পড়েছিলাম, "Abortion means, you are the mother of a dead child." পড়ে বুকফেটে কান্না এসেছিল। নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছিল।
আমি এখনও বিশ্বাস করি, ও আছে, ও আবার আসবে... নিশ্চয়ই আসবে, অনেক খুশি নিয়ে আসবে। তখন পুরো দুনিয়াকে দেখাব আমার ছোট্ট ডলটাকে... ওর গায়ের গন্ধ লেগে থাকবে আমার সারাশরীরে... এই আশায় আমি বেঁচে আছি।
শুভ সকাল, সোনা।
তুমি ওর ভাল বাবা না হলে আমি কি এত ভালোবাসতে পারতাম তোমাকে? মনে হয় না... আমি ওই লেখাটা এখন পর্যন্ত কতবার পড়েছি, আমি নিজেই জানি না, এর আগে গুগলে এরকম কিছু গল্প পড়েছিলাম, হাউমাউ করে কান্না করেছিলাম; গতকাল যখন তোমার লেখা পড়ছিলাম, বিশ্বাস করো, আমার কোনও রাগক্ষোভ কাজ করছিল না তোমার প্রতি, তুমি আমার সাথে অন্তত পশুর মতো আচরণ তো করোনি।
আমার কষ্ট হচ্ছিল, এখনও হয়, মাঝে মাঝে খুব তীব্রভাবে হয়! তখন তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে... কী ভেবে জানো? আমার মনে হয়, বাবুর সাথে তোমার অনেক দিন কথা হয়নি, তাই ওর মন খারাপ, সেজন্য আমারও কষ্ট হচ্ছে। তোমার সাথে কথা বলার সময় আমার সবসময়ই মনে হয়, ও শুনছে, কথা বলছে... ও তোমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসছে...
লেখাটা বার বার পড়েছি এ কারণে যে, তুমি আমার বলা অনেক কথাই ভুলে যাওনি, যেগুলো লেখায় ছিল। আমি পড়েছি, কেঁদেছি, তবু ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছি বার বার... অনেক না-বলা অনুভূতি তুমি নিজেই বুঝে নেবার চেষ্টা করেছ... করবেই তো... তুমি যে ওর বাবা!
ও তোমাকে ভালোবাসে... আমিও বাসি... কারণ, ও আমার মধ্যেই বাস করে, তুমিও করো। একই জায়গায় পাশাপাশি থেকে তো রাগ করে বসে থাকা যায় না, তাই না?
কখনও কখনও দূরে কোথাও পালাতে ইচ্ছে করে তোমাকে নিয়ে... এমন কোথাও, যেখানে কেউই আমাদের চেনে না, যেখানে কেউই আমাদের নাম জানে না।