পিএটিসি ডায়েরি: ৮ ফেব্রুয়ারি


ডেটলাইন ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

এই সাড়ে পাঁচটার শীতের ভোরে যাদেরকে জাগতে হয় না, তারা পৃথিবীর সবচাইতে সুখী মানুষ। আমাদের সুখ নেই, চুরি হয়ে গেছে, কেউ যেন ভুলিয়ে-ভালিয়ে আমাদের ক্যাডার বানিয়ে এই শীতে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছে। আমরা ভাবছি, এই বেশ ভালো আছি। ওরা ভাবছে, এই বেশ ঘুমিয়ে আছি। কয়েকটা ঝাঁকরা গাছ শাদা শাদা বকুল ফুলে ছেয়ে আকাশ হয়ে গেছে। ওই ফুলগুলো আর ফুল নেই যেন, ওরা সবাই তারা হয়ে ফুটে আছে। ওদের একটু ছুঁয়ে দেখতে লাইন থেকে একটু দৌড়ে এগিয়ে গেলাম, লাইন ততক্ষণে দূরে সরে গেছে। ইন্সট্রাক্টর হাঁকলেন, “আপনি ওখানে কী করেন? লাইনে যান।” কেউ ফুল দেয় না যাকে, তার কি ফুল ছোঁয়াও পাপ? ঘর নেই যার, তার ঘরের বাইরে থাকাটাকেও কেউ সহজভাবে নেয় না।

কুয়াশা-ঢাকা মাঠের ওপারের পার্কটায় রাতের প্রহরী ল্যাম্পপোস্টের আলো দেখা যায়। কিছুক্ষণ ওদিকটায় তাকিয়ে থাকলে একটা সরু রাস্তা চোখে পড়ে, ওটাও কুয়াশায় ঘেরা। পাশের সারি সারি ভূতুড়ে গাছগুলো মাথা নুয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওদেরকে দেখাচ্ছে ‘লর্ড অব দ্য রিংস’-এর টানা-ঘোমটা-পরা মাথা নুয়ে দাঁড়িয়ে-থাকা শাদা শাদা ভূতের মতন। একটু দূরে দূরে দু-একটা আলোর ফোয়ারা কুয়াশাধোঁয়ার সাথে মিশে কী এক অপরূপ ইন্দ্রজাল মেলে ধরছে। মনে হচ্ছে, ওটা রাজশাহী ভার্সিটির ক্যাম্পাসের প্যারিস রোড। কুয়াশার সাথে ল্যাম্পপোস্টের আলোর সঙ্গমে শুধুই হেঁটে যেতে ইচ্ছে হয়, আর সব কিছুকে ভালোবাসতে ইচ্ছে হয়। একা কিংবা একলা। ওই ওদিকটায় মাটির ঘরের সামনে কাটা কাটা সুপারি গাছের সজ্জা। মনে হচ্ছে, রাজপ্রাসাদের সামনে পাহারায়-থাকা প্রহরীদের গর্দান গেছে; নিথর দেহটা তবুও দাঁড়িয়ে আছে। এতটাই লয়্যালটি, মৃত্যুর পরেও! তাই সন্দেহ হয়, ওরা ঠায় দাঁড়িয়ে অভিশাপ দিচ্ছে নিশ্চয়ই!

ওপরের কালোআবছা পাতার ফাঁকে ফাঁকে ভোররাতের চাঁদের শেষ উঁকিঝুঁকি। পাখির কিচিরমিচিরে ওটা ঘুম ঘুম চোখে আমাদের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সদ্যফোটা ফুলকপির ক্ষেতের সাথে ভোরের মিতালি চলছে। এই শীতে ঘি-ভাতের সাথে মায়ের হাতের বেগুনভাজা, আর আলু-ফুলকপির ডালনা। আহা আহা! এই শীত শুধু খেয়ে-ঘুমিয়ে কাটানোর শীত। কিন্তু কী ভাবছি এসব! একটানা পাগলাঘণ্টার ডাকে যাদের ঘুম ভাঙে প্রতিদিন, তাদের মনে যে এসব ভাবনা আসতে নেই!

সব সিনিয়রেরই ধারণা, ‘পদাধিকারবলে’ উনি আপনার চাইতে বেশি বোঝেন। কেউ কেউ তো রীতিমতো সব ক্রেডিট-টেডিট নিজেই নিয়ে বসে থাকেন। অফিসের বসই সব কিছু করেন। সব কৃতিত্ব ওঁর একার। কোনো এক পাবলিক ভার্সিটির ভিসি মহোদয় ভার্সিটির সব কাজের কৃতিত্ব নিজের বলে জাহির করতে পছন্দ করতেন। ক্যাম্পাসে যখন কুকুরগুলো বাচ্চা দিল, তখন সবাই বলে বেড়াচ্ছিল, অল ক্রেডিট গৌজ টু ভিসি! এসব এমনিতেই বলছি, মানে কথার কথা। কথার উলটোপিঠের কথা না কিন্তু! এখন, কথা হলো, তা-ই যদি হবে, তবে ক্লাসের ব্রেকে যখন কফি-কর্নারে বসে আছি, তখনই-বা কেন এসব মাথায় ঘুরপাক খাবে? আমি তো এখানটায় বসি মাথা একেবারে ফাঁকা রেখে দিয়ে কোনোদিকেই না তাকিয়ে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে কেমন লাগে, সেটা দেখতে। পিএটিসি’র কফি-কর্নারের কর্নার একটা নয়, কয়েকটা। আমি যেখানটায় বসি, ওখানটায় লোকজন একটু কম বসে।

আমি বসি কফিশপে, মানে যেখানে নেসক্যাফের কাগুজে কাপগুলোর ওপরটা ভরে ওঠে উষ্ণ ধোঁয়ায়, সেখানটায়। এদিকটায় সরাসরি রোদ পাওয়া যায় না। তবুও এদিকেই বসি। এদিকে বসে বসে কফিতে চুমুক দিতে দিতে গাছগুলোকে দেখা যায়। গাছগুলো আমার বড়ো আদরের। রোদে গাছের ছায়া নেচে নেচে ওঠে। যত্ন করে সাজিয়ে লাগানো কাঁঠাল-পেয়ারা-জামরুল-হরিতকি গাছের পাশে শ্বেতচন্দন, পাতাবাহার আর থুজার মেলা। অর্কিডের ফাঁকে ফাঁকে উইপিং দেবদারুর পাতাগুলো দুপুরের নরোম রোদে ভেজা-ভেজা শরীরে কাঁদতে থাকে। এখান থেকে কত-কী যে চোখে পড়ে! করিডোরে বিচিত্র সব মানুষ হেঁটে চলে; কেউ-বা হেঁটে হেঁটে চলে, কেউ কেউ গান গায়, শিস দেয়। ওদের দেখে আমিও গুনগুন করি, পৃথিবীর গান আকাশ কী মনে রাখে...একদৃষ্টিতে কোথায় যেন তাকিয়ে থাকি। নিজেকে মনে হতে থাকে পাখির পালকের মতোই নির্ভার। রাজ্যের পাখিরা ডেকে যায়। এমন এক রোদভাঙা বিকেলের শুরুতে কার্জন হলের সামনে দুরুদুরু বুকে প্রেমিক এক-শো একটি টকটকে লাল গোলাপ হাতে প্রেমিকাকে বলেছিল, “ভালোবাসি।” প্রেমিকা কী বলেছিল? বলেছিল, “দাঁড়াও, আগে গোলাপগুলো গুনে দেখি।”

একটা বেসুরো কথা মনে পড়ছে। আমি যখন ব্যাচ করে স্টুডেন্ট পড়াতাম, তখন ওদেরকে টেস্টপেপারস সলভ করাতাম। প্রতিদিন গাদায়-গাদায় পড়া দিতাম, পড়া ধরতাম আর না পারলে খুব পেটাতাম। একদিন একটা অবজেক্টিভ জিজ্ঞেস করলাম। “প্রেমিকার পিতার কাছে প্রেমিকের পত্র”—এটা কোন ধরনের পত্র? অপশন দিলাম, ব্যক্তিগত পত্র, আবেদন পত্র...বেশিরভাগই উত্তর দিল, আবেদন পত্র, স্যার...

আজ পিএটিসি’তে পারভেজ স্যারের শেষ কর্মদিবস ছিল। উনি ক্লাসে আমাদের কাছ থেকে ভেজা-ভেজা চোখে বিদায় নিয়ে গেলেন। স্যারের পোস্টিং হয়েছে যশোরে। কেমন জানি খারাপ খারাপ লাগছিল। উনি ছিলেন আমাদের কোর্স কো-অর্ডিনেটর। ওঁকে পেয়েছি এক মাসের কিছু কম সময়ের জন্য। এই সময়ে ওঁর ব্যক্তিত্ব, চমৎকার ঢঙে কথা বলা, ম্যানেজিং স্কিল, স্মার্টনেস এসব দেখে মুগ্ধ হয়েছি। সময়ের প্রয়োজনেই খুব রাগী রাগী চোখ করে রাখতেন; কিন্তু মনটা ভালো ছিল। কাগজেকলমে কারও কোনো ক্ষতি করেননি। আমরা বেশিরভাগই ওঁকে মনে রাখবো। আসলে একটা লোক কি হার্ভার্ড-স্ট্যানফোর্ড কিংবা এমআইটি থেকে পিএইচডি করে এল, না কি কিছুই করল না, এতে কারও কিছুই এসে যায় না। আমাদেরকে এই জীবনটা দেওয়া হয়েছে বড়ো বড়ো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করার জন্য নয়, সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য। আপনি অনেক বড়ো মানুষ হতে পারেন, কিন্তু এতে কার কী এসে যায়? দিনের শেষে আপনার সাথে কথা বলে, মিশে অন্যদের কী অনুভূতি হলো, সেটুকুই শুধু থেকে যায়, টিকে থাকে। লোকে আপনাকে মনে রাখবে কি মনে রাখবে না, সেটা নির্ভর করে আপনি মনে রাখার মতো কিছু করেছেন কি না সেটার উপরে। আপনার সামাজিক অবস্থান, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত অবস্থান…এসবে আপনার নিজের অনেক কিছু এসে গেলেও অন্য কারও আসলেই কিছু এসে যায় না।

আমাকে যদি ঠিক এই মুহূর্তে আমার ভালোলাগা কারও কথা মনে করতে বলেন, তবে আমার মনে পড়বে শুধু তাদেরই কথা, যারা আমার কষ্টের সময়ে আমাকে বলছিল, “হারিয়ে যেয়ো না, তুমি পারবে।”; যখন হাত বাড়ালে শুধুই শূন্যতা এসে ভিড় করত, তখন যারা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলেছিল, “ভয় পেয়ো না, আমি তো আছি।”; যাদের একটি কথাও আমার জীবনে খুব ছোটো কোনো কাজেও লেগেছিল; যাদের দেখে আমার মনে হয়েছিল, জীবনের অর্থ খোঁজার আগেই হারিয়ে যাওয়া কিছুতেই নয়, আমিও ভালোভাবে বাঁচব; যাদের দেখে বিশ্বাস করতে শিখেছিলাম, আমি কিছুতেই এই পৃথিবীতে অনাহূত হয়ে বেঁচে নেই। চাকরি করার সময় আমার মাথায় থাকে এইটুকুই, আমার অবসরগ্রহণের পর আমাকে কেউই মনে রাখবে না। এই ধরুন, চাকরি করতে করতেই যদি কখনো হুট করে মরে-টরে যাই, তবে তো ওখানেই সব শেষ। কাছের মানুষ ছাড়া আমার মৃত্যুর দিনটাও তো কারুরই মাথায় থাকবে না। আমার মৃত্যুর পর কেউ মনে রাখুক আর না-ই রাখুক, অন্তত এটা যেন না বলে, যাক বাবা, বাঁচা গেল, আপদটা গেছে!

আমরা কেউই তো সারাজীবনের জন্য অফিসার নই। আবার অন্যরা কেউই তো সারাজীবনের জন্য নোবডি নয়। আমি মাথায় রাখি, আমি এমন কী করেছি যে লোকে আমাকে মৃত্যুর পরেও মনে রাখবে? লোকে মনে রাখে ওঁর চলার পথে আমি কতটুকু সহানুভূতির হাত বাড়ালাম, শুধু এইটুকুই। আমি উচ্চশিক্ষিত, অনেক উঁচু আসনে অধিষ্ঠিত, অতি সুদর্শন, এসবে কার কী? আমাদের ডিনারে যাবার সময় নেমব্যাজ পরে যেতে হয়। আমি ভুলে একদিন নেমব্যাজ না পরেই চলে গিয়েছিলাম। পারভেজ স্যার সেটা দেখেও আমাকে কিছুই বলেননি। এতে নিয়মের কিছুটা লঙ্ঘন হয়েছে, এটা ঠিক, কিন্তু এতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চয়ই হুমকির মুখে পড়েনি কিংবা ওঁকে এমন কোনো কিছু করতে হয়নি, যেটার জন্য ওঁকে বিব্রত হতে হবে। নিয়মের মধ্যে থেকে কঠোর হওয়াটা আপনার দায়িত্ব। এটা লোকে কেন মনে রাখবে? একটু নিয়ম ভেঙে নমনীয় হলে যদি কেউ বেঁচে যায়, সেটাই মানুষ হিসেবে আপনার অর্জন। আপনি যেমন স্রষ্টার কাছ থেকে আপনার কৃতকাজের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেন, সেরকম ছোটোখাটো ক্ষমা যদি আপনি অন্যকে করতে না পারেন, তবে স্রষ্টা নিশ্চয়ই আপনাকে ক্ষমা করবেন না এবং আপনার কৃতকর্মের শাস্তি আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন। কাউকে ফাঁদে ফেলার সুযোগ আপনি হয়তো দিনে এক-শো’টা পাবেন, কিন্তু কাউকে একটু আনুকূল্য দেখিয়ে বিপদ থেকে উদ্ধার করার সুযোগ এক-শো দিনেও একটা পাবেন কি না সন্দেহ। আপনি শতভাগ অনমনীয় হলে আপনিও শতভাগ অনমনীয় আচরণই পাবেন।

অনেক পণ্ডিতি করে ফেললাম। ক্ষমা করবেন। এখন কিছু অপণ্ডিতি করে ব্যালেন্স আনি, কেমন? আজ সন্ধেয় দেখলাম, পাবলিক কালকের পরীক্ষার জন্য পড়াশোনা করতে করতে পাগল হয়ে যাচ্ছে; বেশিরভাগই নোট আর শিট নিয়ে বসে গেছে। এর আগে লাইব্রেরিতে বসে রেফারেন্স বই ঘেঁটেছে, ইন্টারনেট, উইকিপিডিয়া-বাংলাপিডিয়া ঘেঁটে-টেটে যে-নোটগুলো রেডি করেছে, সেগুলোর ফোর্থ টাইম রিভিশন চলছে। কেউ কেউ ক্যাফেটেরিয়া থেকে বের হয়ে ডরমেটরিতে ফেরার পথে করিডোরে হাঁটতে হাঁটতে শিট পড়ছে। একজনকে দেখলাম, করিডোরে ঝোলানো অর্কিডের টবের সাথে ধাক্কা খেল। ইসস্‌! টবটা ভাঙেনি তো! খেয়াল করে দেখলাম, অর্কিডের কোনো ক্ষতি হয়েছে কি না! ওই ভদ্রমহিলা ভবিষ্যতেও পরীক্ষার পূর্বসন্ধেয় অর্কিডের সাথে ধাক্কা খাবেন, শুধু এজন্য হলেও তো ওই অর্কিডটার বেঁচে থাকা দরকার! কফি খাওয়ার সময় একজনের চোখ ছিল শিটের দিকে। অসাবধানতায় কিছু কফি ছলাৎ করে শিটের ওপরে পড়ল। একজনকে দেখলাম, রাতে খাওয়ার টেবিলে পাশে শিট রেখে ভাত খাচ্ছে। শুধু এই দৃশ্য দেখার জন্যও তো ডিনার করতে আসা যায়! কালকের পরীক্ষার সিলেবাস: মডিউল ১। যখন এসব দেখছি, আমি তখন পর্যন্ত জানিই না ‘মডিউল ১’-এ আদৌ কী আছে।

ডরমেটরিতে ফিরলাম। ‘মডিউল ১’-এর সিলেবাস দেখলাম। দেখে মনে হলো, শুধু ইংরেজি ভাষায় বাক্যরচনা করতে জানলে এই পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব। তখনই ডিসিশন নিলাম, একেবারে কিছুই না পড়ে পরীক্ষা দেবো। দেখিই-না কী হয়! অবশ্য এই ব্যাপারটা আমার জন্য নতুন কিছু নয়। আমি জীবনে অসংখ্য পরীক্ষা এভাবেই দিয়েছি এবং কখনো কখনো পাশ করেছি। জীবনটা তো আর কোনো ইউজার-ম্যানুয়েল নিয়ে আসেনি। একটু ইচ্ছেমতো কাটিয়ে দেখিই-না কী হয়! তার উপরে এই পরীক্ষা দিতে জাস্ট কমনসেন্স ছাড়া আর কিছুই দরকার নেই—ওটা তো একটুখানি আছেই! ভাবলাম, এই সুযোগ হাতছাড়া করাটা ঠিক হবে না। ইউটিউবে উত্তম-তনুজা’র মুভি দেখতে বসে গেলাম। তখন ফেইসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। শেয়ার করছি:

কাল পিএটিসি'তে একটা একজাম আছে।
পড়ছি না।
পড়বও না।
পড়লে কী হবে?
পাশ হবে।
সে তো জীবনে অনেক করেছি! পাশ হলে কী হয়?
রাজকুমারীকে পাওয়া যায়?
কই, যায় না তো! সব পাশ না-করার দল রাজকুমারীদের পেয়ে-টেয়ে বসে আছে। এখন বুঝি, মা-বাবা'রা বানিয়ে বানিয়ে সব মিথ্যে-টিথ্যে বলত! আর না, বড়ো হয়ে গেছি তো!

রাজকুমারীদের পেতে পাশ করতে হয় না, 'তোমাকে চাই, সত্যিই চাই!' এটা বলতে হয়, বোঝাতে হয়। রাজকুমারীরা ভালোবাসা বোঝে, ভালো রেজাল্ট বোঝে না। যতসব বেকুবের দল ওদের পেতে পড়ে-টড়ে খেটে মরে। ধ্যৎ!!

পড়লে পাশ করা যায়। না পড়লেও পাশ করা যায়।
পড়লেই যে পাশ করা যায়, তা নয়। পাশ করতে হলে পড়া যাবে না, এ-ও নয়।
পাশ করলেই রাজকুমারীকে পাওয়া যায় না। পাশ না করলেই যে রাজকুমারীকে পাওয়া যায়, তা-ও নয়।

পড়তে কষ্ট হয় তো! কষ্ট করলে কী হয়? কাঁচকলা হয়। তাই আমার এই না-পড়াতেই আনন্দ...

পড়ো, বড়ো হও। বড়ো হয়ে কী হবে? বড়ো হয়ে কখন কোথায় হয়েছেটাই-বা কী! তুমি বড়ো হবার খুশিতে ঘোড়া আরেকটা ডিম বেশি পাড়বে। আহা কী আনন্দ আকাশে-বাতাসে!...যত্তসব!

তো? ওসব পড়ে-টড়ে কী হবে?
কিচ্ছু হবে না, কোনোদিন হয়ওনি।
কিন্তু রাজকুমারীকে যে আমার চাই-ই চাই! তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার রাজকুমারীকে চাই...
কীভাবে পাবো?
নাহ্‌! পাওয়া যাবে না।
যাবে না? শিওর?
তাই তো মনে হয়!
তোমার মাথা! পেয়ে গেলাম তো...ইউটিউবে ঘুরতেই...কত সহজেই।

একলা রুমে রাজকুমারী'-কে নিয়ে আছি আর বলছি, তনুজা, তোমায় ভালোবাসি।
ভেবে দেখলাম, এই রাজকুমারীরাই ভালো, কখনোই ছেড়ে চলে যায় না, ইউটিউবেই থাকে! ওদের কাছে রাখতে অভিমান ভাঙানোর বিদ্যে জানতে হয় না, শুধু ইন্টারনেটের বিল দেবার পয়সা পকেটে থাকতে হয়।
ধুত্তোরি ছাই! এই বেশ ভালো আছি!!

ও আচ্ছা, ভালো কথা। আজ নাকি প্রপোজ ডে? আমার একটা পুরোনো স্ট্যাটাস আবার দিতে ইচ্ছে করছে। দিই, কেমন?

আজ ৮ ফেব্রুয়ারি৷ মহান প্রপোজ ডে৷ এই দিনটি একটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ দিন৷ আজ থেকে সাত বছর আগে আজকের এই দিনে আমার শ্রদ্ধেয় প্রজেক্ট সুপারভাইজার সাকী কাউসার স্যারকে আমি একবুক আশা নিয়ে প্রপোজ করেছিলাম; আই মিন, থিসিসের প্রপোজাল পেপার সাবমিট করেছিলাম৷ স্যার যথারীতি আমাকে রিফিউজ করেছিলেন৷ সেই থেকে শুরু৷ এখনও রিফিউজড হয়েই চলেছি৷ রিফিউজড হতে হতে এখন আমি ক্লান্ত...

কেউ বোধ হয় চেয়েছিল, আমি ওকে প্রপোজ করি; গল্প-সিনেমার মতো করে৷ আজকের এই দিন আসার আগেই সে চলে গেল৷ আহা! সাকী স্যার-কা আফটার-ইফেক্ট! সাত বছর পরেও!! মনে আছে, স্যারের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে বাটা-অ্যাপেক্স সু-য়ের তলা ক্ষয় করে করে অবশেষে লোহার জুতো পরে প্রজেক্ট কমপ্লিট করি৷ হায়! এখন আমার আর লোহার জুতো নেই, হারিয়ে গেছে৷

হিল্লোলদার মতো করে বলতে ইচ্ছে হয়...সুখে থাকো, বলতে ইচ্ছে করে না। তারপরও ভালো থেকো।

গতকাল ছিল গোলাপ দিবস৷ সে উপলক্ষ্যে গত পরশুই এক সুন্দরী আমাকে ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে রিমুভ করে দেয়৷ সে হয়তো বুঝে গিয়েছিল, গোলাপ-রজনীগন্ধার যত্ন নিলেও আমি মূলত মালী, প্রেমিক নই৷ আজ গোলাপ দিবসে শুধুই ফুলের ব্যাপারী হতে ইচ্ছে করে; হৃদয় না মিলুক, কিছু পয়সা অন্তত মিলত৷

হে ঈশ্বর! আমাকে পৃথিবীতে পাঠালেই যদি, ভালোবাসার মতো আরেকটু হ্যান্ডসাম করে কেন পাঠালে না? সুন্দরীকে এত মেধা দিলেই যদি, আমাকে ভালোবাসার একটু সুবুদ্ধি কেন দিলে না? কেন কেন কেন???

‘থ্রি ইডিয়টস’ তো দেখেছেন, না? যে-বই থেকে ওটা বানানো হয়েছে, সেটির নাম ‘ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান’, চেতন ভগতের লেখা। জে ডব্লিও ইয়াগান পরামর্শ দিয়েছেন, “Never judge the book by its movie”. আমি ওঁর সাথে অনেকটাই একমত। চেতন ভগতের বইটি বেশি ভালো, না কি রাজকুমার হিরানির মুভিটি বেশি ভালো, আমি সে তর্কে যাব না, তবে যাঁরা বইটি এখনও পড়েননি, তাঁদেরকে বলছি, বইটি পড়ে দেখুন। হয়তো-বা আপনার জীবনের সুন্দর কিছু মুহূর্ত হবে…যে-মুহূর্তগুলোতে বইটি পড়বেন, সেগুলো। পড়লে, পড়ার পর আপনার অনুভূতিটি আমার সাথে ইনবক্সে শেয়ার করতে পারেন। চেতন ভগত নতুন ব্যাচের এমবিএ স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্যে ভারতের পুনের সিমবায়োসিস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে ২০০৮ সালের ২৪ জুলাই তারিখে যে-স্পিচটা দিয়েছিলেন, সেটি থেকে আমার নিজের খুব পছন্দের কিছু অংশ শেয়ার করে আমার আজকের লেখাটা শেষ করছি:

Most of us are from middle class families. To us, having material landmarks is success and rightly so. When you have grown up where money constraints force everyday choices, financial freedom is a big achievement. But it isn't the purpose of life. If that was the case, Mr Ambani would not show up for work. Shah Rukh Khan would stay at home and not dance anymore. Steve Jobs won’t be working hard to make a better iPhone, as he sold Pixar for billions of dollars already. Why do they do it? What makes them come to work every day? They do it because it makes them happy. They do it because it makes them feel alive. Just getting better from current levels feels good. If you study hard, you can improve your rank. If you make an effort to interact with people, you will do better in interviews. If you practice, your cricket will get better. You may also know that you cannot become Tendulkar, yet. But you can get to the next level. Striving for that next level is important.
……………………………………………………………………………………………………………..

One last thing about nurturing the spark – don’t take life seriously. One of my yoga teachers used to make students laugh during classes. One student asked him if these jokes would take away something from the yoga practice. The teacher said–don’t be serious, be sincere. This quote has defined my work ever since. Whether it’s my writing, my job, my relationships or any of my goals. I get thousands of opinions on my writing every day. There is heaps of praise, there is intense criticism. If I take it all seriously, how will I write? Or rather, how will I live? Life is not to be taken seriously, as we are really temporary here. We are like a prepaid card with limited validity. If we are lucky, we may last another 50 years. And 50 years is just 2,500 weekends. Do we really need to get so worked up? It’s OK, bunk a few classes, goof up a few interviews, fall in love. We are people, not programmed devices.