পিএটিসি ডায়েরি: ১৫ ফেব্রুয়ারি (২)



ডেটলাইন ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ (২য় অংশ)

আজ লাঞ্চের পর ২ ঘণ্টার একটা সেশন আছে; পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন আর শুদ্ধাচারের উপর। ভাবতেই প্রচণ্ড মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। শিষ্টাচার আর শুদ্ধাচারের উপর এত ক্লাস, সেশন, সেমিনার নেবার অন্তর্নিহিত মানেটা কী? ওরা কি ধরেই নিয়েছে, আমরা ‘অতি অশিষ্ট, আই মিন, বেয়াদব’?! লাঞ্চ সেরে ডরমিটরিতে ব্যাগ রেখে আসতে যাচ্ছি। সেশন শুরু হবে আড়াইটায়, অডিটোরিয়ামে গিয়ে উপস্থিত হতে হবে ২:১০টার মধ্যেই। যাবার সময় খেয়াল করলাম এক জায়গায় লেখা: ডানে মৌচাক। সাবধান! ঢিল ছুড়বেন না।

ডরমেটরিতে আসার পথে আমবাগানের ঠিক পাশেই একটা পিলারের গায়ে ওপরের কথাটা সেঁটে দেওয়া। কথাটা পড়ে ডানের আমবাগানে নেমে 'ঢিল না ছোড়ার জন্য' অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করেও মৌচাকের দেখা মিলল না।

রুমে গেলাম, ব্যাগ রাখলাম, বের হয়ে গেলাম। অডিটোরিয়ামে যাবার পথে গোলাপবাগানে প্রতিদিনের মতো চোখে পড়ল, একটা গোলাপের প্রজাতির নাম: Abal Rose. এর উচ্চারণ অ্যাবল রোজ। পোলাপান তো আর ওটাকে কিছুতেই অ্যাবল রোজ ডাকে না। কী বলে ডাকে তবে? থাক, না বলি। কথা কিছু কিছু বুঝে নিতে হয়…

অডিটোরিয়ামের বাইরে, গেটে, ভেতরে অসংখ্য লাল-নীল বেলুন দিয়ে সাজানো। এত বেলুন একসাথে দেখলে বড়ো হয়ে যাবার আফসোসটা তীব্র হয়ে ওঠে। সেসব দিনের কথা মনে হতে থাকে, যখন একটা বেলুনের জন্য কাঁদতাম। একটা বেলুন কিনে দিলে পৃথিবীর সব ঐশ্বর্যকে গুডবাই বলে দেবার সারল্য ছিল মনে। যে-সময়ের চারআনার লাল বেলুনটা ছিল এ সময়ের র‍্যাডোর রিস্টওয়াচটার চাইতেও দামি। যে-সময়ে ‘দ্য রেড বেলুন’ শর্ট ফিল্মের সেই ছোট্ট ছেলেটির মতো সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে একটা লাল বেলুন হঠাৎ-পাওয়াকে মনে হতো পৃথিবীর সবচাইতে আশ্চর্য গুপ্তধনটি হাতের মুঠোয় পেয়ে যাওয়া। অডিটোরিয়ামে বসে বসে বেলুনের মেলায় ভাসছি আর সমস্ত শরীরমনকে কী এক অদ্ভুত মায়াজাদুতে আচ্ছন্ন করে রেখে মাথায় বেজেই চলেছে ১৯৭৩ সালের ক্ল্যাসিক মুভি জেরেমি’র অদ্ভুত রকমের নেশা-ধরানো শান্তস্নিগ্ধ গান, দ্য আওয়ারগ্লাস সং: ব্লু বেলুন...
I have a blue balloon, a happy tune
DREAMS enough to last me, all through the afternoon.
……………………………………………....
Before the rivers run dry.
Before the last SAD good-bye
Let us be kind to one another.
We can try...
So don't just throw your love about
It's not too late to find out
Before the sand has all run out, of the hourglass
…………………………………………………………..
Before the rivers run dry, before the last sad goodbye
Let us be kind to one another, we can try...

দেয়ালে দেয়ালে গোলাপ-অর্কিড-গ্ল্যাডিওলা-রজনীগন্ধার গুচ্ছ গুচ্ছ সাজ। সাথে পত্রপল্লবের বিচিত্র-বাহারি ঢঙের মজলিসি আয়োজন। প্যাঁচানো বেতের ডালায় ফুলপাতা সাজিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে দরোজাগুলোতে। বড়ো বড়ো টবে রংবেরঙের ফুলের জলসাঘর জেগেছে যেন। জরির সুতোর কারুকাজ পুরো কক্ষটাকে ঘিরে রেখেছে। মেঝেতে আড়াআড়ি করে রেড কার্পেট বিছানো। রঙিন কাগজের অরিগ্যামিতে আজকের অডিটোরিয়াম ঝলমল করছে। কার্পেটের লালিমায় ধুলোর পরত ফেলে শশব্যস্ত কর্মকর্তাদের ছোটাছুটি চলছেই।

মেয়েরা খুব চমৎকারভাবে সাজুগুজু করে এসেছে। লাল-সবুজ-শাদা-হলুদ-নীল রঙের শাড়িতে ওদেরকে সত্যিই অপূর্ব দেখাচ্ছে। শুধুই তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। ভাবছি, ঈশ্বর ছেলেদের গড়ার সময় কী দায়সারাভাবেই-না গড়ে দিয়েছেন! আর ওদেরকে থরে-বিথরে সকল সৌন্দর্য দিয়ে হাতে অনেক সময় নিয়ে সাজিয়েছেন। আচ্ছা, ওরা এত দ্রুত রুমে গিয়ে শাড়ি বদলে এল কীভাবে? ওদের পাঁচ মিনিট বুঝি মাত্র পাঁচ মিনিটেই হয়? ক্যামনে কী?! ‘মনে বুঝিলাম, ইহারা অন্য জাতের (মেয়ে)মানুষ...’

আমাদের সাথে অডিটোরিয়ামে আরও আছেন বিটিআরসি, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী-সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। অনেকেই মোবাইলে ছবি তুলছে। ছবি তোলার সময় সবাই ভাবে, এই মুহূর্তে তাকেই পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর দেখাচ্ছে। ছবি মনের মতো না হলে ও ধরেই নেবে, ছবিটা যে তুলেছে, এটা তার দোষ। স্রষ্টার কার্পণ্য আর সৃষ্টির ক্রোধের আগুনে পুড়ে ছারখার হতে থাকে অসহায় ফটোগ্রাফার।

একটা ব্যাপার দেখলাম। ধরুন, আপনি হাঁটার সময় আপনার সিনিয়র কাউকে খেয়াল করলেন। হাসলেন, সালাম দিলেন, কুশল বিনিময় করলেন। যদি এতে কিছুমাত্র ভুল হয়, তবে ওঁর সকল রাগ এসে পড়বে আপনার উপর। অথচ আপনি যদি কৌশলে ওঁর সামনাসামনি পড়া থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিতেন কিংবা মাথা নিচু করে এমনভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে চলে যেতেন যেন আপনি ওঁকে দেখেনইনি, তবে কিছুই হতো না। যে করে, তার ভুল হয়; যে করে না, তার তো কোনো ভুলই নেই। আমরা ট্যাক্স ফাঁকি ধরি যাঁরা ট্যাক্স দেন, তাঁদের। যাঁরা ট্যাক্স দেনই না, তাঁদের সাতখুন মাফ!

‘সৃষ্টির তীরে’ কবিতায় জীবনানন্দ আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, “পৃথিবীতে নেই কোনো বিশুদ্ধ চাকুরি।” আমি বিশ্বাস করি, এর চাইতে বড়ো সত্য আর হয় না। ‘ভালো চাকরি’, এটা হলো অক্সিমোরোনের সবচাইতে চমৎকার উদাহরণ। আমি খুব অসহায়ভাবে দেখেছি, চাকরি, ভেঙে বললে, আমলাতন্ত্র ও নয়-আমলাতন্ত্র দুই-ই মূলত তৈলতন্ত্র। চাপাবাজি আর তেলবাজির কালচারমুক্ত কোনো চাকরি নেই বলেই চাকরিতে যারা হিপোক্রিসি করতে পারে না, আত্মসম্মান বিকিয়ে দিয়ে তেল দিতে পারে না, তারা চিরকালই পিছিয়ে পড়ে থাকে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর ‘তৈল’ প্রবন্ধ থেকে কিছু কথা শেয়ার করতে ইচ্ছে করছে:

“যে তৈল দিতে পারে, সে সর্বশক্তিমান, কিন্তু তৈল দিলেই হয় না। দিবার পাত্র আছে, সময় আছে, কৌশল আছে।

তৈল দ্বারা অগ্নি পর্যন্ত বশতাপন্ন হয়। অগ্নিতে অল্প তৈল দিয়া সমস্ত রাত্রি ঘরে আবদ্ধ রাখা যায়। কিন্তু সে তৈল মূর্তিমান।

কে যে তৈল দিবার পাত্র নয়, তাহা বলা যায় না। পুঁটে তেলি হইতে লাটসাহেব পর্যন্ত তৈল দিবার পাত্র। তৈল এমন জিনিস নয় যে, নষ্ট হয়। একবার দিয়া রাখিলে নিশ্চয়ই কোনো-না-কোনো ফল ফলিবে। কিন্তু তথাপি যাহার নিকট উপস্থিত কাজ আদায় করিতে হইবে, সে-ই তৈলনিষেধের প্রধান পাত্র। সময়—যে সময়েই হউক, তৈল দিয়া রাখিলেই কাজ হইবে। কিন্তু উপযুক্ত সময়ে অল্প তৈলে অধিক কাজ হয়।

ব্যক্তিবিশেষে তৈলের গুণতারতাম্য অনেক আছে। নিষ্কৃত্রিম তৈল পাওয়া অতি দুর্লভ। কিন্তু তৈলের এমনই একটি আশ্চর্য সম্মিলনীশক্তি আছে যে, তাহাতে উহা অন্য সকল পদার্থের গুণই আত্নসাৎ করিতে পারে। যাহার বিদ্যা আছে, তাহার তৈল আমার তৈল হইতে মূল্যবান। বিদ্যার উপর যাহার বুদ্ধি আছে, তাহারটা আরও মূল্যবান। তাহার উপর যদি ধন থাকে, তবে তাহার প্রতি বিন্দুর মূল্য লক্ষ টাকা। কিন্তু তৈল না থাকিলে তাহার বুদ্ধি থাকুক, হাজার বিদ্যা থাকুক, হাজার ধন থাকুক, কেহই টের পায় না।

তৈল দিবার প্রবৃত্তি স্বাভাবিক। এ প্রবৃত্তি সকলেরই আছে এবং সুবিধামতো আপন গৃহে ও আপন দলে সকলেই ইহা প্রয়োগ করিয়া থাকে, কিন্তু অনেকে এত অধিক স্বার্থপর, বাহিরের লোককে তৈল দিতে পারে না। তৈলদান প্রবৃত্তি স্বাভাবিক হইলেও উহাতে কৃতকার্য হওয়া অদৃষ্টসাপেক্ষ।”

এসব পড়ি, ভাবি আর নিজেকে খুব বেমানান মনে হতে থাকে। এসব ভাবছি, হঠাৎ দেখি হাততালির শব্দ। বড়ো হলরুমে দুটো জিনিস সংক্রামক: হাততালি আর কাশি। দেখলাম, তালি দেবার ব্যাপারে কেউ কেউ অতিউৎসাহী; কারণে-অকারণে বক্তৃতার মাঝখানেই বিরক্তিকরভাবে তালি দেয়।

আজকের এই অনুষ্ঠানে সুন্দর একটা সারপ্রাইজ ছিল। পিএটিসি’তে ট্রেনিং চলাকালীন যাঁদের যাঁদের জন্মদিন আছে, তাঁদেরকে আজ একটা করে ছোট্ট ফুলের ব্যুকেই দেওয়া হলো। আবার তাঁদের মধ্যে যাঁরা জন্মতারিখ অনুযায়ী জুনিয়রমোস্ট, বিভিন্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামের এমন ৮-১০ জনকে সবার সামনে ডেকে কেক কাটা হলো। আমরা সবাই সমস্বরে ‘হ্যাপি বার্থডে’-র গ্রিটিং সংটা গাইলাম। রেক্টর স্যার এবং অন্যান্য সিনিয়র স্যার, পিএটিসি’র কোর্স ডিউরেশনে যাঁদের বার্থডে, তাঁদেরকে কেক তুলে খাইয়ে দিলেন, ওঁদের হাত থেকে নিজেরাও খেলেন। এই দৃশ্য দেখে আমরা সবাই আনন্দে হাসছিলাম। It really feels like a family! ট্রেনিংয়ের সময় তো আর বাসার মতো করে প্রিয় মানুষগুলোর সাথে জন্মদিন উদ্‌যাপন করা যাবে না, তাই এই মন-ভালো-করে-দেওয়া সারপ্রাইজ অ্যারেঞ্জমেন্ট। অডিটোরিয়ামের ভেতরের প্রশান্ত হাসিখুশি মুখের ভিড়ে গাঁথা আনন্দ-বেদনার কাব্যে সকল ক্লান্তি মুহূর্তেই দূর হয়ে গেল। খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনও ছিল। নিজের কাছে, ‘লাঞ্চের পর পর হাপুসহুপুস করে গোগ্রাসে ‘খাব না’।’ বলে যে-শপথ করেছিলাম, সেটা, বরাবরের মতোই, ভেঙে ফেলে টিফিন আর কফি খেলাম। আমি প্রায় সময়ই নিজের কাছেই একটু অপরিচিত। ভাবলাম, মানুষ কম খাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেই প্রতিজ্ঞা ভেঙে ফেলে পেট পুরে খাওয়ার জন্য। যার জীবনে কোনো হৈমন্তী নেই, সে এই ধরনের অদ্ভুত আপ্তবাক্য বানাতেই পারে! আজকের এই চমৎকার প্ল্যানটার জন্য পিএটিসি’কে ধন্যবাদ। সুন্দর কিছু করতে গেলে শিশুর সারল্য লাগে; সবাই যেভাবে করে ভাবে না, সেভাবে করে ভাববার মতো পাগলামি লাগে; নিজের আবেগের প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসা আর শ্রদ্ধাবোধ লাগে।

আজ একটা মজার ব্যাপার ঘটল। আমরা যে-অনলাইন ফরমটা পূরণ করেছিলাম, তা অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করেছিল কার জন্মদিন কবে, আর সেভাবে করেই কোর্স চলাকালীন যাঁদের জন্মদিন, তাঁদেরকে ফুল দেওয়া হয়েছে। পঞ্চাশোর্ধ একজন সিনিয়র কর্মকর্তা কোনোক্রমে ভুলে বাদ গিয়েছিলেন। উনি এটার জন্য অনেক অভিমান করে বসেছিলেন। উনি ওঁর নিজের চারপাশে মৃদু গুঞ্জনও তুলে দিলেন। অবশেষে এটা কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত হয় এবং সবার সামনে ওঁকে ডেকে ফুল দিয়ে দাঁড়িয়ে ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ’ গেয়ে জন্মদিনের সম্ভাষণ জানানো হয়। এই অভিবাদন পেয়ে এই প্রবীণ কর্মকর্তার সে কী খুশি! এই দৃশ্য দেখে আমি খুশিতে মনে মনে অনেক হেসেছি আর ভাবছিলাম, “আহ্‌! জন্মদিন মানুষকে বড্ড ছেলেমানুষ করে দেয়।” তাই বলছি, ভুল করেও, জন্মদিন পালন করাটাকে কেউই কখনোই আদিখ্যেতা ভাববেন না। জন্মদিনে হেসে উঠুন, ধন্যবাদ জানান ঈশ্বরকে, আশেপাশের সবাইকে। ভাবুন তো, আপনাকে বাঁচিয়ে না রাখলে তো আর এই পৃথিবীর তেমন কিছু অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেত না। আরও একটা বছর বেঁচে রইলেন, এটাই সবচাইতে আনন্দের আর বিস্ময়ের ব্যাপার। রেইনার মারিয়া রিলকে ১৯০৮ সালে একটা চিঠিতে লিখছেন, It must be immense, this silence, in which sounds and movements have room, and if one thinks that along with all this the presence of the distant sea also resounds, perhaps as the innermost note in this prehistoric harmony, then one can only wish that you are trustingly and patiently letting the magnificent solitude work upon you, this solitude which can no longer be erased from your life; which, in everything that is in store for you to experience and to do, will act as an anonymous influence, continuously and gently decisive, rather as the blood of our ancestors incessantly moves in us and combines with our own to form the unique, unrepeatable being that we are at every turning of our life. এই magnificent solitude-এ ডুবে বেঁচে থাকাটা পরম আনন্দের, সৌভাগ্যের।

India Wins Freedom বইটি মৌলানা আবুল কালাম আজাদের আত্নজীবনীমূলক রচনা হলেও অনেক পণ্ডিত মনে করেন, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি অত্যন্ত নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য দলিল এই বই। লেখকের মৃত্যুর পর ৩০ বছর ধরে বইটির পাণ্ডুলিপি সিলগালা অবস্থায় রক্ষিত ছিল কলকাতার ন্যাশনাল লাইব্রেরি এবং দিল্লির ন্যাশনাল আর্কাইভসে। এই বইয়ের বেশ কিছু অংশ উর্দুতে লেখার পর সেগুলো ইংরেজিতে অনুবাদ করে দিয়েছিলেন প্রফেসর হুমায়ূন কবির। ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮ তারিখে মৌলানা আজাদের মৃত্যুর পর তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ীই প্রফেসর কবির এই বইয়ের প্রকাশক ওরিয়েন্ট লংম্যানের সাথে এক চুক্তিতে সই করেন এবং চুক্তি অনুযায়ীই ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৮ তারিখে বইটি প্রকাশিত হয়। ৩০ বছর এই বইটি আলোর মুখ দেখেনি। আমাদের ক্লাসগুলোতে বিভিন্ন স্যার যে যে বিষয় নিয়ে পড়ান, সেগুলোর হ্যান্ডআউট আমাদের মাঝে দেওয়া হয়। আমি সেগুলো অতিযত্ন করে, যে-ব্যাগটা নিয়ে ক্লাসে যাই, সেটাতে ঢুকিয়ে রাখি এবং ক্লাসে কিংবা রুমে ফিরে কখনোই খুলেও দেখি না। আবার আলসেমির কারণে সেগুলোকে মডিউল-ওয়াইজ আলাদাও করা হয় না, আবার পরীক্ষার আগেও উলটেপালটে দেখা হয় না। ওগুলো ওভাবে করেই ব্যাগের ভেতরে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। আমি নিজের সাথে নিজেই ডিড করেছি, ৬ মাস ফুরোবার আগে ওগুলো খুলেও দেখব না।

আগামীকাল মডার্ন অফিস ম্যানেজমেন্ট মডিউলের উপর পরীক্ষা আছে। পড়াশোনার কিছুই করছি না। বসে বসে এই নোটটা লিখছি শুধু। আমি মনে মনে ধরেই নিয়েছি, কালকের পরীক্ষাটা না পড়েও দেওয়া যাবে। কীসব নথি ব্যবস্থাপনা আর সরকারি পত্র-টত্র লেখার পরীক্ষা। চাকরিতে এসব কাজ তো হাতেকলমে অনেক করেছি। বানিয়ে বানিয়ে যা পারি এবং যা পারি না, তা-ই লিখে দেবো।

ঘড়িতে রাত ১:৩৭টা। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে লিখছি। এখন ঘুমিয়ে পড়ব। আগামীকাল আরেকবার দেখে কোনো কিছু এডিট-টেডিট করতে হলে করে পোস্ট করে দেবো।