নিজেকে যত্নে রাখো

 

 নিজের যত্ন নাও। কেন নেবে? নিজেকে ভালো রাখো। কেন রাখবে? বলছি, খেয়াল করে শোনো...
 তোমার চারপাশের সবাই যাতে ভালো থাকে, তার জন্য তুমি যেমনি ভাবো, তেমনি নিজেকে ভালো রাখার কথাটাও মাথায় রেখো। ভুল করেও ভুলে যেয়ো না এটা। যদি নিজেকে ভালো রাখতে গিয়ে কিছু মানুষকে খুশি করতে না-ও পারো, তবু নিজেকে ভালো রেখো। নিজেকে ভালো না রাখলে, একদিন কাউকেই ভালো রাখতে আর পারবে না।
  
 তুমি কী কী জয় করেছ, লোকে দেখবে, বাহবা দেবে। সময় করে তুমি নিজেও দেখো, মনে করে নিজেকে একটু হাততালিও দিয়ো, কেমন? খুব ছোটো ছোটো জিনিসেও মানুষ ভীষণ খুশি হয়ে ওঠে। তুমি যা যা করতে পেরেছ কিংবা করতে পারো, তা যতই ছোটো হোক না কেন, তোমারই তো করা, তাই না? উদ্‌যাপন করতে শেখো। এইটুকুও করতে না পারলে বাঁচবে কী করে, বলো? বাঁচা সহজ নয়, বাঁচাকে সহজ করতে হয়।
  
 চোখের সামনে ডেডলাইন দেখলে খুব ভয় লাগে, তাই না, বলো? লাগবেই তো, সবারই লাগে ওরকম। যারা ওই ডেডলাইনটা সেট করেছে, তারাও জানে এইসব ব্যাপার। মাঝে মাঝে একটু থেমো, বুকভরে দম নিয়ো। সব দম ফুরিয়ে ফেললে দৌড়োবে কীভাবে? নিজেকে একটু সময় দাও, কফির মগটা হাতে বাইরের দিকে একটু তাকিয়ে দেখো, আকাশটা অনেক সুন্দর। নীলের ফাঁকে ফাঁকে মেঘের টুকরোও পাবে। ভালো লাগবে দেখতে।
  
 প্রায়ই দেখবে, তোমার চারিদিকে খুব হইচই। ওরকম থাকেই! আমরা মানুষ তো, তাই থাকে। শান্ত মানুষের আশেপাশে অশান্ত মানুষেরা হইচই করে। এটা ওদের একটা খেলা। তোমার মনের মতো হবে কি সব কিছু? হবে না তো! ওইটুকু মেনে নিয়েই আমাদের কাজ করতে হয়। অত হট্টগোল থেকে নিজেকে একটু সরিয়ে রাখো, নিজের ভাবনাগুলি সাজাও, এবং খুব মন দিয়ে খোঁজো, কোথায় গেলে ও কী করলে একটু শান্তি পাবে। জীবনে যদি শান্তি না পাও, তবে পুরো পৃথিবী পেয়ে গেলেও-বা কী লাভ হবে, বলো? মনে রেখো, এ জীবনে শান্তির উপরে কিছু নেই। মানুষ ভালোবাসা না পেলে কাঁদে, কিন্তু মরে না; শান্তি না পেলে ঠিকই একদিন নিজে নিজেই মরে যায়।
  
 যাদের ভালো লাগে, ওদের কথা যেমনি শোনো; ঠিক তেমনি তোমাকে যাদের ভালো লাগে, ওদেরও তোমার কথা শুনতে দিয়ো। দেখবে, ভালো লাগছে। হৃদয়টাকে উজাড় করে দিয়ে কথা বলো, কথা শোনো। নইলে নিঃশ্বাস আটকে আসবে তো! ওরকম দমবন্ধ আলো-হাওয়ায় মানুষ সহজে বাঁচে না।
  
 প্রতিটি দিনই তোমার হবে না। প্রতিদিনই তুমি ছক্কা পেটাতে পারবে না, মাঝে মাঝে শূন্য রানেও আউট হয়ে ফিরে যেতে হবে। তবু খেলতে থেকো। খেলা থেকে সরে যাবার নামই যে হেরে যাওয়া, বোঝো না? হারকেও আলিঙ্গন করতে শিখে নিয়ো। না শিখলে অনেক কাঁদতে হবে। মানুষ কি আর সবসময়ই জেতে? যে খেলায় তুমি জেতো আর জিততেই থাকো, সে খেলা তোমাকে টানে কি কখনও? একটু ভাবো তো! ভালো খেলোয়াড় তো সে-ই, যে তার খারাপ দিনগুলিকেও সহজভাবে মেনে নিতে জানে। যে-দিনটা তোমার নয়, সেই দিনটার কথা ভেবে ভেবে অমন মন খারাপ করে থাকলে ভালো দিনগুলির দেখা পাবে কী করে?
  
 সবাই তোমাকে পছন্দ করবে না, মেনে নাও। এক শয়তান বাদে আর কেউই সবার প্রিয় হতে পারে না। মনে রেখো, নিজেকে নিয়ে তুমি যা ভাবো, তা, তোমাকে নিয়ে অন্যরা যা ভাবে, তার চাইতে অনেক বেশি জরুরি। এটাকে কাজে লাগাও। কাজে লাগাতে চাইলে নিজের সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করো। কোনও ভুল ধারণা কিংবা মিথ্যে আত্মতৃপ্তিকে পাত্তা দিয়ো না। ওসব তোমাকে শেষ করে দেবে। আহত যদি হতেই হয়, লোকের আঘাতে হয়ো না, নিজের আঘাতেই হও। নিজেকে ক্রমাগত আঘাত করতে করতে গড়ে তোলো। দেখবে, বাঁচতে তোমার আর অতটা খারাপ লাগছে না!