নয় রংমশাল, নয় আয়না

ঘরটা যদি তোমার পূর্ণই ছিল, তবে কেন ডাকলে আমায়?
তবে কেন চাইলে বাঁধতে ভালোবাসার নতুন আরেকটি ঘর?
সে রঙিন যাত্রায় ছিল না কি গো রঙিন কিছুই?
এই যে তুমি রঙের মাঝেও আরেকটা রঙ খুঁজেই গেছ…
গোধূলির যে রঙ আর ঊষার যে রঙ, দুটোই যে আলাদা,
তবু রঙ কি নয় সেসব, বলো?
যে নৃত্য দেখে আর যে নৃত্য করে, ওদের দুজনেই কি নৃত্য ভালোবাসে না?


তুমি নাহয় খুঁজেছিলে ধূসর রঙের ঘুড়ি, কিন্তু পেয়ে গেছ টকটকে লালরঙা একখানি,
কিন্তু যে রঙের ঘুড়িই তুমি কেনো, শেষমেশ সে তো তোমার আকাশেই উড়বে…!
তোমার ঘরটি নাহয় হলোই ছোটো,
কিংবা তোমার চাহিদার তুলনায় কিছুটা বড়োও হতে পারে,
যা-ই হোক তা, তবু সে যে তোমারই ঘর!


কোথায় খুঁজছ মাপ, তোমার মাপের?
খুঁজছ বুঝি পোশাক, তোমার ধাঁচের?
আগে থেকে পারা যায় কি জানতে,
ঠিক কোন কাপড়টি ধোবার পরে ছড়াবে না রং?
আচ্ছা, মানুষ ঘরে থেকেও কেন আরেকটি ঘর খুঁজতে থাকে, বলতে পারো?
যে জন তোমার ঘর কিনেছে, এতটাই কি সে বাজে, বলো…যে
ঘরটা তাকে ছাড়তেই হবে?


খোলা একটি ছাদ, চারপাশে তার উঁচু দেয়ালের সারি,
রোদে বৃষ্টিতে ঝড়ে পুড়ছে অবিরত ঘরের মানুষ,
অথচ বাইরে থেকে দেখতে গেলে বলবে সবাই,
'দেখো, কী সাবধানী লোক,
এঁটেছে দেয়াল চারিধারে তার!'
অথচ কে জানে…
তার ভেতরের মানুষটা যে পুড়ছে রোজই ছাদহীন একটি ঘরে?


পুড়ছে মানুষ!
মানুষ, সে তো রোজই পোড়ে!
মানুষ মশাল!
আমরা সেইসব মানুষ-আগুন।


আমি শূন্যতা দিয়ে ঢাকি শূন্যতাকে,
অপূর্ণতায় নিয়েছি খুঁজে পূর্ণতা যত,
হৃদয় কতটা শূন্য হয়ে আছে, জানতে যদি পারো কখনও,
তবে হৃদয় দিয়েই হৃদয় খনন কোরো!


কেউ কি জানে, হতে চলেছে কী…এই জীবনের মানে?
প্রতি মুহূর্তে বদলায় এ জীবন,
মুহূর্ত থেকে মুহূর্তে ছোটে মুহূর্তের তাড়নায়,
শূন্যতা কিংবা পূর্ণতা কিছুই পায় না কি সে?


আজ তোমার আমার মাঝখানে এই যে বিশাল এক শূন্যতা,
তুমি আমি দুদিকে চলে গেলে আমাদের মাঝে আর কী পড়ে থাকে, বলো?
এক বিস্তীর্ণ শূন্যতা ছাড়া আর কী-ইবা পড়ে থাকার কথা?
তোমার প্রস্থানে আমি তোমার সাথে সেই শূন্যতায় কথা ছড়াই,
আমার নীরবতা তোমাকে আরও টানে কি আমার কাছে?
নীরবতার মানেই কি তবে কথা থেমে যাওয়া…শুধু?
শূন্যতার মানেই কি কিছুই পড়ে না থাকা?


কত কত বার পাশ কেটে গেছি দুজন দুজনকে,
তবু কখনও আমাদের অনুভূতিগুলো পালিয়ে কি গেছে ভেতর থেকে?
কোথায় আছে সেই অনুভবেরা?
তোমারটুকু আমার কাছে আর নেই কি তবে?
আমার সবটুকু জুড়েই যে তুমি, সে কি পেরেছ ভুলতে?


আরেকটি হৃদয় পোড়া এখনও বাকি।
গতকাল যেটি পুড়ে গেল, সেটি তোমার ছিল,
তোমার কাছে বাঁধা হৃদয়টি আজ পুড়ে গেল।
এখন আরও একটি হৃদয় পড়ে আছে এই হৃদয়ের মাঝে,
আলাদা করে দেখো, দেখতে পাবে,
সেটিও হচ্ছে তৈরি নিজেই নিজেকে পোড়াবে বলে,
এই হৃদয়টি পুড়ে গেলে পোড়ার আর কিছুই থাকে না বাকি!
যা পোড়ার, বরং তা পুড়ুক আগেই,
পোড়ার যখন আর অবশিষ্ট থাকবে না কিছুই,
নিজেকে নাহয় সাজাব তখন রংমশালে।


আমার আঙুল তোমার আঙুলে না পেল ঠাঁই,
এমন একটা মস্ত বড়ো দ্বীপ, বলো, একা কী করে সামলাই?
হতে যদি এই মনের ডাকপিয়ন,
আহা, ফিসফিসিয়ে বলতে যদি জনে জনে---
একলা একটি মেয়ে,
তবু দেখো, কেমন করে একলা পরান সব সামলে নিতে জানে!


হতে চেয়েছিলাম আয়না তোমার,
রোজ নিত্যনতুন সাজে যখন দাঁড়াতে এসে সামনে আমার,
সেই সাজপোশাক দেখবার বড্ড সাধ ছিল মনে!
অতঃপর তোমার আয়না হলাম!
অথচ কোথা থেকে যেন হঠাৎই উড়ে-আসা অচেনা এক হাওয়ায়,
সাথে সাথেই বাতিটা নিভিয়েই দিয়ে গেল!