নতুন জীবনের প্রার্থনায়

হৃদয়ের নিভৃত স্থানে, অন্তরতর অন্তরতম হয়ে, তুমি রয়েছ। তোমার বিশ্বরূপ বিদায় করে দিয়ে, কেবল অন্ধকারের আশ্রয়রূপে তুমি প্রকাশ পাচ্ছ। এখানে আমি তোমায় হৃদয়ে ধারণ করতে চাই। এই ধারণাতে হৃদয় গলে যায়। এই ধারণাতে অতুল আনন্দের উদয় হয়। এই ধারণা স্থায়ীভাবে পাবার জন্যে আমি সারাজীবন আকাঙ্ক্ষা করেছি, সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি, কিন্তু আমি তার অধিকারী হতে পারিনি।




আমার সারাজীবনের সাধনা ব্যর্থ হয়েছে, সিদ্ধিলাভ হয়নি, এই ব্যথা নিয়ে আমি দেহত্যাগ করতে চাই না। এই সিদ্ধিই একমাত্র শান্তিপ্রদ, আর কিছুতে শান্তি নেই, তা তুমি আমাকে সারাজীবন বলেছ। তোমার চিন্তায়, তোমার প্রসঙ্গে, তোমার কথা বলতে গিয়ে, লিখতে গিয়ে আমার সাময়িক আনন্দ হয়েছে, কিন্তু স্থায়ী শান্তি হয়নি। আমার অবশিষ্ট জীবনে আমি অন্য কিছুতে শান্তি পাবো না, শান্তি পাবার চেষ্টাও করব না। তোমাকে প্রেমের সাথে হৃদয়ে ধারণ করা সম্বন্ধে আমি নিরাশ হইনি। সিদ্ধিলাভে অসংখ্য বার অসমর্থ হয়েও আশা করছি, সিদ্ধি এখনও পেতে পারি।




তোমার প্রেমব্যস্ততার কথা ভেবে আমি অনেক সময় গলে যাই বটে, তোমার সান্নিধ্য বোধ করি, তোমার প্রেম অনুভব করি। আমি আজকাল সে ভাবনা বেশি ভাবতে চাই না। তাতে ক্ষণিক আনন্দ পেয়েও, তোমার সান্নিধ্য অনুভব করেও দেখেছি, এই ভাবনাতে তোমার সঙ্গে আমার দূরত্ব ঘোচে না। কাজকর্মের ভিড়ে, তোমার বিচিত্র বিশ্বরূপের মধ্যে তোমাকে হারিয়ে ফেলি। যখন কোনও কাজ নেই, রূপ-রস-স্পর্শাদির বেশি প্রকাশ নেই, যেখানে আমি নির্জন, নিঃসঙ্গ, সেখানে তোমাকে প্রাণরূপে, আত্মারূপে, আমার প্রেমিক আর প্রিয়রূপে অনুভব করলেই তোমাকে আর হারাব না, তোমার সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হবে, প্রতিবারে তোমাকে চেষ্টা-চরিত্র করে নিকটে আনতে হবে না, এই উদ্দেশ্যেই এই নিভৃত সাধন চেষ্টা করছিলাম।




অপেক্ষাকৃত নতুন বলেই কি আমি এই সাধনে এগোতে পারছি না? এই নতুন চেষ্টায় তোমার আশ্বাস চাই। আমাকে নিরাশ কোরো না। আমাকে বিনষ্ট হতে দিয়ো না। আমার আগেকার সমুদয় চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে, এ আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। তোমার রাজ্যে, তোমার বিধানে, কোনও চেষ্টাই তো নিষ্ফল হয় না। এই তো তুমি নিজেই আমাকে চেষ্টা করাচ্ছ। ব্যর্থতাবোধের মধ্যেও, নিরাশার মধ্যেও তুমি রয়েছ। আমার চিরসঙ্গী তুমি, আমার আকাঙ্ক্ষা তুমি, আমার চেষ্টা তুমি, আমার প্রাণের ব্যথা তুমি, ব্যথার উপশম তুমি। আমার অহংকারমূলক সমুদয় চেষ্টার ব্যর্থতা প্রমাণ করে তুমি আমাকে দীনভাবে, অসহায়ভাবে, অনন্যশরণ হয়ে তোমার নিকট ব্যাকুল প্রার্থনা করতে সমর্থ করো। যা-কিছু নিজের মনে করি, তা প্রশ্বাসরূপে ফেলে দিই। তোমার কৃপা নিশ্বাসরূপে আমার ভিতরে প্রবেশ করে আমাকে নবজীবন দিক, তোমাতে জীবিত করুক।