তোমার প্রাক্তনকে নিয়ে দুটো কথা

 অন্য এক মেয়েকে পেয়ে সে তোমাকে ছেড়ে চলে গেছে?
  
 চিন্তা কোরো না। একদিন সে তোমাকে ঠিকই টেক্সট পাঠাবে। জিজ্ঞেস করবে, তুমি কেমন আছ; বলবে, সে আজও তোমাকে মিস করে; পুরনো স্মৃতিগুলির কথা মনে করিয়ে দেবে এবং খুব করে চেষ্টা করবে যাতে তোমার মধ্যে পুরনো প্রেমটা জেগে ওঠে। এমনকী এ-ও হতে পারে, সে বলেই ফেলবে, 'আমি সত্যিই সেসময় ভুল করেছিলাম। ভুলটা না করলে জীবন আজ অনেক সুন্দর হতো।'
  
 কেন বলবে সে এত কিছু? কেননা সে চাইবে, তুমি আবারও তার কথা ভাবো, তাকে তোমার জীবনে আসতে দাও, তার সঙ্গে দেখা করো, তোমাদের আবার যোগাযোগ হোক। কেন চাইবে? এর উত্তরটা বেশ জটিল। মানুষ চায়, মানুষ চাইতে ভালোবাসে। দেরি হয়ে যাবার পর মানুষ বুঝতে পারে। মানুষ বড্ড দেরি করে চায়!
  
 তোমার সেদিন অনেক ভালো লাগবে। এক এক করে তোমার মনে পড়ে যাবে, একদিন তুমি তাকে নিয়ে কত সুন্দর সুন্দর দিন কাটিয়েছ! তোমাদের দু-জনের কী সুখের একটা জীবন ছিল! তাকে তখন কতই-না ভালোবাসতে, ভালো রাখতে! তখন তো তার জন্য পুরো পৃথিবীকে ছেড়ে দিতেও প্রস্তুত ছিলে! এতদিন পর সে আবার ফিরে এল! এতদিন পর সে তার ভুলটা বুঝতে পারল! অদ্ভুত!
  
 তবে একইসঙ্গে, তোমার খুব স্পষ্ট করেই মনে এসে যাবে, এখন তুমি তাকে কতটা ঘৃণা করো! তোমার আরও মনে পড়বে, একদিন সে তোমাকে কতটা আঘাত করেছিল, তার জীবন থেকে তোমাকে কুকুরের মতো দূর-দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছিল! বিনা দোষেই সেদিন তোমাকে কতটা কাঁদতে হয়েছিল, রক্তাক্ত হতে হয়েছিল। এই মানুষটার কারণেই সেদিন তোমার নিঃশ্বাস নিতে পর্যন্ত কষ্ট হতো! সবই একটা একটা করে মনে পড়ে যাবে তোমার। পড়বেই! তুমি যে কষ্ট পেয়েছ! যে কষ্ট দেয়, তার কিছু মনে না থাকলেও, যে কষ্ট পায়, তার ঠিকই সব মনে থাকে।
  
 সত্যিই অনেক যন্ত্রণার বিনিময়ে তুমি আজকের এই সুস্থতার জায়গায় আসতে পেরেছ! তার আঘাতগুলির জবাবে তাকে তুমি পালটা-আঘাত করোনি ঠিকই, তবে তার মানে এ-ও নয় যে, আজ তুমি, এত কিছুর পরও, এত দুঃসহ স্মৃতির ভার বয়ে চলেও...তার টেক্সটের রিপ্লাইয়ে প্রেমময় কিছু লিখে পাঠাবে। আসলে তুমি তাকে আদৌ কিছু লিখে পাঠাবে না। ভুল করেও না! তুমি চুপচাপ ওর টেক্সট দেখবে, তাচ্ছিল্যমাখা শূন্যদৃষ্টি ছুড়ে ছুড়ে হাসবে।
  
 ভালোবাসার মানুষটি আঘাত না দিলে তখন মনের মধ্যে ভালোবাসা থাকলেও, আত্মসম্মানবোধ কখনও কখনও থাকে না। তবে ভালোবাসার মানুষটি আঘাত দিলে তখন মনের মধ্যে ভালোবাসা টিকে থাকুক না থাকুক, আত্মসম্মানবোধটা অবশ্যই থাকে।
  
 আজ তুমি জেনে গেছ, ভালোবাসা দেখানোর চাইতে শান্তি ও সম্মান নিয়ে বাঁচা-বাড়া অনেক অনেক বড়ো ব্যাপার। পাশে রাজা না থাকলেও রানি হয়ে মাথা উঁচু রেখে দিব্যি বাঁচা যায়, যদি রানির মতন বেঁচে থাকাটা শিখে নেওয়া যায়। তুমি আজ তা শিখে নিয়েছ। অমন এক সাইকোপ্যাথ-টক্সিক ছদ্মরাজা তোমার পাশে নেই বলেই আজ তুমি খুব ভালো আছ।
 হ্যাঁ, সে তোমাকে এখনও মিস করে, কিন্তু তোমাকে সে আর কখনও বিরক্ত করবে না। দীর্ঘসময় ধরে তোমার কাছে নিজেকে ভালো প্রমাণ করার চেষ্টা করতে করতে সে আজ ক্লান্ত। অনেক দিন ধরে তোমাকে খুশি রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টাটা সে করে গেছে। তোমার মন পাবার জন্য যা যা করা তার পক্ষে সম্ভব, বহুকাল ধরে সে তা-ই তা-ই করে গেছে নিরলসভাবে।
  
 তবে আজ, তোমার জন্য অতটা করার পেছনে কোনও কারণ আর খুঁজে পায় না সে। আজ সে আগের মতো ততটা পরোয়া করেও আর চলে না। তোমার জন্য, তোমাকে রেখে দেবার জন্য যুদ্ধ করার একটিও মানে তার কাছে আজ আর নেই।
  
 তোমার প্রতিটি ভুল ও অবহেলা আজ তাকে এই জায়গাতে নিয়ে এসেছে। তোমার সমস্ত দোষত্রুটি সহ্য করতে করতে আজ সে বুঝতে পেরেছে, তুমি তার জন্য সঠিক মানুষ নও। তার মনটা তুমি আজ অবধি যত বার ভেঙে দিয়েছ, আজ তার তত বারই মনে হয় আর হতেই থাকে, ফিরে তাকাবার সত্যিই কিছু নেই। একই ভুলের কাছে আর কত বার ফেরা যায়!
  
 তাই আজ আর আশা করে বসে থেকো না যে, আগের মতোই সব কিছু ভুলে সে তোমার কাছে ছুটে আসবেই। তোমার জন্য তার মনের মধ্যে থাকা সমস্ত প্রেম-ভালোবাসার কাছে সে শুধু চুপচাপ হার মেনেই যাবে, এমন প্রত্যাশা এখুনিই মন থেকে ঝেড়ে ফেলো। আজও তোমাকে ভালোবেসে বেসে সে আগের মতো ক্রমাগত আহত ও রাক্তাক্ত হতে থাকবে, মন থেকে এই দুরাশাকে বিদেয় করে দাও।
  
 মানুষ ভুল থেকেই শেখে। সে-ও শিখেছে। নিজেকে সে অসংখ্য বার বলেছে, 'আমার সব শেষ!' নিজেকে সে অসংখ্য বার বলেছে, 'আমি আর সহ্য করতে পারছি না!' নিজেকে সে অসংখ্য বার বলেছে, 'আমি তবে বাঁচব কী নিয়ে!?' আজ সে নিজেকে বলতে শিখেছে, 'আমার সবে তো শুরু!' আজ সে নিজেকে বলতে শিখেছে, 'আমি আরও সহ্য করতে পারব।' আজ সে নিজেকে বলতে শিখেছে, 'আমি তবু বাঁচব এ নিয়েই!'
  
 সে জানে, একা একা থাকা সহজ নয়। সে এ-ও জানে, তোমার সঙ্গে থাকা আরও কঠিন। যদি এমন কারও সঙ্গেই বাঁচতে হয়, যার সঙ্গে বাঁচলে প্রতিটি মুহূর্তেই মনে হয়, 'এর চাইতে বরং একা বাঁচলেই ভালো থাকতাম!', তবে অমন কারও সঙ্গে বাঁচার চাইতে একাকিত্বে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়াটা অনেক অনেক শান্তির।
  
 সে জানে, সব কিছু পেছনে ফেলে রেখে সামনের দিকে এগোতে তার খুব কষ্ট হবে। সে এ-ও জানে, এখানে এভাবে থেকে গেলে শেষমেশ তাকে মরতেই হবে। যে মানুষটা চায় না, সে থেকে যাক, তার কাছ থেকে প্রতি মুহূর্তে পাওয়া অতটা অপমান সহ্য করার চাইতে একা একা আহত হওয়াও অনেক অনেক সুখের।
  
 সে জানে, এখন সে হয়তো আর কাউকেই ভালোবাসতে পারবে না। সে এ-ও জানে, ভালোবেসে এমন অবিরত পুড়তে থাকার চাইতে ভালোবাসা অনুভব করতে না পারাও অনেক স্বস্তির। যে মানুষটা সত্যিই তার ভালোবাসাকে দাম দেবে, তার মূল্যটা বুঝতে পারবে, তাকে নিয়েই জীবনে সুখী হতে চাইবে, সে মানুষের দেখা যদি কখনও সে পেয়ে যায়, তবে সেদিন সে আবারও প্রেমে পড়বে, ভালোবাসবে। আর দেখা না পেলে নিজের সঙ্গে নিজেকে নিয়েই তৃপ্তিতে বেঁচে থাকবে।