তিন টুকরো সত্যি



এক। ‘আমি বড়ো হয়ে ওরকম একজন হতে চাই।’ কিংবা ‘তুই চেষ্টা করলেই তার মতন বড়ো মানুষ হতে পারবি।’ আমাদের আশেপাশে এরকম খুবই অল্প সংখ্যক মানুষ আছেন, যাঁদের দেখে আমরা বলি, ‘আহা, তাঁদের মতন কেউ একজন যদি হতে পারতাম!’ এর বিপরীতে এমন কিছু মানুষও আছেন, যাঁদের দেখিয়ে বাবা-মা বলেন, ‘তুই তো অমুকের মতন খারাপ হয়ে যাচ্ছিস!’ কিংবা কিছু ছোটো বাচ্চাও বলে, ‘আমাকে সবাই তমুকের মতন খারাপ ভাবে, আমি বড়ো হয়ে আর যা-ই হোক, ওর মতন কেউ হতে চাই না।’


সত্যিই, অবাক লাগে এমন মানুষদের দেখলে, যারা শুধু নামেমাত্রই মানুষ। কিছু কিছু সময়, এই ধরনের বাজে লোকজন নিজেরাও জানে যে তাদেরকে ‘খারাপের আদর্শ’ বলে মানা হয়। তবুও দেখবেন, তাদের একটুও লজ্জা লাগে না, কারও কথা তাদের গায়েও লাগে না। তারা আগেও যেমন ছিল, এখনও তেমন আছে, সামনেও তেমনই থাকবে। নিজেদেরকে তারা কখনও বদলানোর কথা ভাবেই না। আবার তাদের মধ্যে আরও এক কাঠি সরেস কেউ কেউ আছে, যারা ওসব কথা হেসেই উড়িয়ে দেয়। বলে, ‘পারলে আমার মতন খারাপ হয়ে দেখাও তো!’ এসব মানুষজন নিজেদের নোংরামো নিয়ে পর্যন্ত গর্ব করে!


খুবই দুঃখজনক সত্য হচ্ছে, অনেকের বাবা-মা’ও এই খারাপ মানুষের তালিকায় আছে। তারা তাদের জীবদ্দশায় এতই বাজে কাজ করে যায় যে তাদের মৃত্যুর পর মনে মনে তাদের সন্তানসহ আরও অনেক মানুষ খুশি হয়, কিংবা মনে মনে বলে, ‘সে মরলেই বেঁচে যাই!’ উদাহরণ দিই। এমন অনেক মানুষ আছে, যারা জীবিতাবস্থায় এতই ধার/ঋণ করে যে, ওরা বেঁচে থাকা অবস্থায়ও এসবের কারণে নিজের সন্তান বা আত্মীয়স্বজনদের কথা শুনতে হয়, আর মরে গেলে তো অনেক বেশিই শুনতে হয়। এরা মরে গিয়েও স্বস্তি দেয় না, দেখা যায়, ওদের ধার শোধ করার মতো রোজগারই ওদের ফ্যামিলির কেউ করে না। এরকম একজন মানুষের জন্য অন্তত পরের তিন প্রজন্মকে কথা শুনতে হয়।


দুই। কোনও পুরুষ যদি মুখে বলে যে সে একজন নারীর মন পুরোপুরি বোঝে, তাহলে হয় সে কোনও মহাপুরুষ, নয়তো সে একটা মিথ্যুক, কারণ একজন নারী নিজেই তো নিজেকে পুরোপুরিভাবে বোঝে না। মেয়েরা যে কী চায়, কেন চায়; কী বলে, কেন বলে; কী করে, কেন করে; কী ভাবে, কেন ভাবে---এসবের কিছুই ওরা নিজেরাও জানে না। একজন পুরুষের মানসিক পরিপক্বতা তখনই আসে, যখন থেকে সে একজন নারীর সব কথাকেই সিরিয়াসলি নেওয়া বন্ধ করে দেয়।


তিন। আপনার নিজের অপরিপক্বতা বা পাগলামো, হুটহাট বিনা কারণে রেগে-যাওয়া, সন্দেহ-করা, সময় কম দিয়ে দিয়েই তাকে অভ্যস্ত করা, ইত্যাদির পেছনের কারণ হিসেবে আপনার পার্টনারকে আপনি বোঝান যে এসব পাগলামো খুবই কিউট ব্যাপার, এগুলোকেই তো প্রেম বলে। আহা! আর সেই আপনার পার্টনারই একটু পাগলামো করলে আপনি তাকে খুবই কিউট তরিকায় ‘সাইকো’ বলেন, কিংবা সরাসরি তাকে ‘পাগল’ই বলেন। ভাই রে, আপনার লজ্জাও নাই? না কি শুধু আপনার আবেগই আবেগ, তারটা না?