জোসনার শরীরে আন্ধার

প্রিয় সুমন,


সেই যে অজুহাত দেখাইয়া ছাইড়া গেলা, ওর কাছে অহন ভালা আছ তো?
তারে কি আমার মতন বাবুই কইয়া ডাহো, না কি নতুন কোনো নাম দিছো?


তুমি তো কইছিলা, আমার লগে তোমার এক্‌খান টুকটুকে রাঙা সংসার হইব, আমাগো সংসারের জানলা ভাইঙা জোসনার আলো হুরমুর কইরা ঢুইকা পড়ব, মধ্যরাইতে তুমি গান ধরবা… ‘আমার সারাদেহ খেয়ো গো মাটি…’ আর আমি তোমার কোলে মাথা রাইখা গান হুনতে হুনতে ঘুমাইয়া পড়মু।


মনে পড়ে, জান, ওইসব কথা?


আচ্ছা, তোমার কি মনে আছে আমাগো মাইয়াডার কথা, যারে তুমি আদর কইরা সোনাই ডাকতা? হেরে জন্মাইতে দিলা না ক্যান গো?


আমারে আম্মা আম্মা কইরা ত্যক্ত বানাইত আর তোমারে আব্বা আব্বা কইয়া জ্বালাইয়া মারত। তুমি আইলে দৌড়াইয়া গিয়া তোমার কোলে উইঠা তোমারে জড়াইয়া ধইরা সারা মুখে আর গালে চুমুতে চুমুতে ভরাইয়া দিত।


তুমি প্রায়ই কইতা, মাইয়ারে পাইয়া তুমি আমারে ভুইলা যাইবা। আমি গোস্‌সা কইরা কইতাম, যাও তো যাও, আমারে ভুলা এত সোজা না! অথচ দ্যাহো, কত্ত সহজে ভুইলা গেলা, ভুলার লাইগা মাইয়াডারেও লাগে নাই, ছাইড়া গেলা আমার না-হওয়া গোটা এক্‌খান ঘরসংসার আর আমাগো মাইয়াডারেও!


আচ্ছা সুমন, তোমারে কী নামে ডাকতাম মনে আছে? সোনাইর বাপ! আমার সোনাইর বাপডা কই জানি হারাইয়া গেছে!


সোনাই না জন্মাইয়াও কত মায়া রাইখা গেল। তাই না, কও?


সত্যি কইরা কও তো, নতুন মানুষ তোমারে আমার মতন কইরা ভালোবাসে? সেই মানুষডারও কি সোনাইর মতন কেউ আছে? তুমি ঘরে ঢুকলে তোমারে বুকের লগে শক্ত কইরা সে-ও কি জড়াইয়া ধইরা রাখে? সে-ও কি তুমি চইলা যাবার সময় তোমার পা জড়াইয়া ধইরা কাইন্দা দেয়? সে-ও কি কান্‌তে কান্‌তে তোমার বুক ভাসাইয়া দেয়?


সুমন! ও সুমন! আমারে ছাইড়া গেলা ক্যান গো? ছাইড়াই যদি যাইবা, তাইলে এত মায়া লাগাইয়া ক্যান গেলা?


তোমার লাইগা মনডা যত পোড়ায়, তার চাইতে হাজারগুণ বেশি পোড়ায় আমার আদরের মাইয়াডার লাইগা। আহারে কী মায়াই না রাইখা গেল মাইয়াডা! এত জ্বালা তুমি ক্যান রাইখা গ্যাসো এই কলিজাডায়!


আমার ভেতর বাহির, আমার ঘর সংসার, আমার যত যা-কিছু, সব কিছু পুইড়া ছারখার গো সোনাইর বাপ, সবই ছারখার!


আমি নিজেরে চাইয়া চাইয়া দেহি আর ভাবি, মানুষ আসলেই কঠিন কিসিমের বেহাইয়া চিজ, এত সহজে মরে না! ভালা থাইকো তুমি!