জেনে-শুনেই ভুল!

 কিছু মানুষ আছে, যারা তোমার জীবনটাকে পুরোপুরি শেষ করে দিতে পারে।
  
 ওরা তোমাকে সত্যি সত্যি ভালোও বাসে না, আবার নিজের জীবন থেকে তোমাকে যেতে দিতেও চায় না।
  
 দু-হাত উজাড় করে তুমি ওদের যত দেবে, ওদের কাছে তোমার কদরটা উলটো তত কমবে।
 যে মুহূর্তে তুমি ওদের জীবন থেকে জোর করে হলেও সরে যেতে চাইবে, ঠিক তখনই ওরা তোমাকে এতটাই ভালোবাসবে, এতটাই যত্নে রাখবে, এতটাই ক্ষমা চাইবে যে, সব ভুলে আবার তুমি ফিরে আসবে। শুধু ফিরেই আসবে না, রীতিমতো অনুশোচনায় ভুগবে এটা ভেবে, কেন ছেড়ে যেতে চেয়েছিলে! নিজেকে বোঝাবে, তুমি নিজেই ভুল বুঝেছিলে। ভাববে, ভুল তো মানুষেরই হয়, দিই না একটা সুযোগ! দেখবে, সব বুঝেও তুমি অবোধের মতন আচরণ করছ।
  
 এরকম হতেই থাকবে। যত বারই তুমি চলে যাবার সিদ্ধান্ত নেবে, তত বারই তুমি অবাক হয়ে দেখবে, ওরা ওইসব কথাবার্তাই বলছে, যেগুলি শোনার জন্য তুমি মনে মনে অপেক্ষা করছিলে। তুমি নিজেই নিজের মনে নিজের জন্য ফাঁদ পেতে রাখো। তুমি নির্বোধ নও, তুমি ভালোবাসো। তুমি অধীর, ব্যাকুল, অবোধ...শুধুই তোমার ভালোবাসার মানুষটির বেলায়। তোমার এই চেহারা কেবলই তার জন্য, বাকি পুরো পৃথিবী তোমার অন্য চেহারাই চেনে।
  
 মানুষ না জেনে ভুল কমই করে, বরং জেনে-বুঝেই ভুল বেশি করে; বিশেষ করে, যখন সে প্রেমে পড়ে।
  
 তুমি যখন একটা সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে যেতে চাও, তখন যদি সে তোমাকে বড়ো বড়ো কথা শোনায়, জোর করে ধরে রাখতে চায়, তবে এর নাম ভালোবাসা নয়, এর নাম জেদ। সে ভাবে, সে হেরে যাচ্ছে। হেরে যেতে কে চায়, বলো!? তোমাকে ক্রমাগত খুন করে করে হলেও সে নিজেকে জয়ী দেখতে চায়।
  
 তুমি ছেড়ে যেতে চাইলে যদি কেউ হঠাৎ করেই তোমাকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে, মধুর আচরণ করে, তোমাকে মাথায় করে রাখে, তবে এসবের নাম ভালোবাসা নয়, এসব শুধুই তোমাকে কৌশলে ধরে রাখার চেষ্টা। সে জানে, এরকম করলে তুমি গলে যাবে, থেকে যাবে, ফাঁদে পা দেবে। আগেও দিয়েছ, তাই সে জানে এসব।
  
 হাত থেকে খেলনা কেড়ে নিলে যেমনি শিশু কাঁদে, ঠিক তেমনি, ওরকম একটা সম্পর্ক ভেঙে দিতে চাইলেও মানুষ কাঁদে, যে সম্পর্কটাকে সে তার নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতে পারে। সম্পর্কের দাম দিতে সবাই জানে না, কিছু মানুষ সম্পর্ককে কেবলই ব্যবহার করতে জানে।
 তার কান্না দেখে ভুল করেও ভেবে বোসো না, সে ভুল বুঝতে পেরে কাঁদছে, ভালোবেসে কাঁদছে। তুমিই বলো, তোমার মতন একটা বিশ্বস্ত গাধা আরেক পিস সে কোথায় পাবে!?
  
 মনে রেখো, কেউ মুখে কী বলে, তার চাইতে জরুরি হলো, সে কাজে কী দেখায়। যদি তার আচরণে মনে হয়, সে তোমার জন্য ভুল মানুষ; যদি অনুভব করো, সে তোমার জন্য ভুল মানুষ; যদি তার বিভিন্ন দিক দেখে মনে হয়, সে তোমার জন্য ভুল মানুষ; তবে দেরি হয়ে যাবার আগেই নিজেকে বাঁচাও। তার সকল মনভোলানো কথা ও মেকি চেষ্টাকে উপেক্ষা করে ওই সম্পর্কটি থেকে সরে আসো। থাকলেই মরবে!
  
 বেশিরভাগ মানুষ জানেই না, ভালোবাসা কী, প্রেম কেমন হয়। সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষটি পাশে থাকলে কতটা অপার স্বর্গীয় অনুভব এসে ভর করে মনে ও শরীরে, তা খুব কম মানুষই জানতে পারে। ভালোবাসার মানেটাকে শুধুই কাম, ইন্দ্রিয়সুখ, সারাক্ষণই ফোনটা কানে গুঁজে রাখা, উঠতে বসতে কিছুই অনুভব না করেও 'আই লাভ ইউ' বলা, হারিয়ে ফেলার ভয়ে অস্থির হয়ে থেকে তার মনমতো অভিনয় করে করে চলা, এইসবকেই লোকে ভালোবাসা হিসেবে ধরে নিয়েছে।
 ভালোবাসা জানার কিংবা বোঝার জিনিস নয়, অনুভব করার জিনিস। যৌনতাযাপনের পর যে চুমু এবং আলিঙ্গন, সেখানে হিসেবি কৃতজ্ঞতা থাকে, ভালোবাসা নয়। যার সঙ্গে থাকলে নিজেকে নিরাপদ মনে হয় না, নিজের মনের শক্তিটা বেড়ে যায় না, নিজের সকল দুঃখ ও ক্লান্তি ভুলে থাকা যায় না, বেঁচে থাকতে সত্যি সত্যি ভালো লাগে না, তার সঙ্গে আপনার যে সম্পর্ক, সেটা কিছুতেই ভালোবাসার কোনও সম্পর্ক নয়।
  
 সম্পর্কের যে সুতোটাকে বাইরে থেকে দেখলে ভালোবাসা মনে হয়, তা প্রকৃতপক্ষে অভ্যস্ততা, টান, মায়া, বাধ্যতা, অভিনয় কিংবা মেনে-নেওয়া। সেখানে হাসির আড়ালে অনেক কষ্ট লুকোনো, অনেক অসহায়ত্ব লুকোনো, অনেক চাপাকান্না লুকোনো। বাইরে থেকে দেখে ওসব কিচ্ছু বোঝা যায় না।
 ভালোবাসা মানে কাউকে বদলে ফেলতে চাওয়া নয়, বরং তাকে তার মতো করেই গ্রহণ করতে জানা। কারও ভালো দিকগুলি দেখে তার সঙ্গে থেকে যাওয়া নয়, বরং তার খারাপ দিকগুলিসহই তাকে মেনে নিতে রাজি থাকার নামই ভালোবাসা। ভালোবাসলে মানুষ নিজেকে ভালোবাসার মানুষের মনের মতো করে বদলে ফেলে, কেননা সে কোনোভাবেই তাকে হারাতে চায় না।
  
 ভালোবাসার শুরুটা হয় মোহ থেকে, বিস্তৃতিটা হয় অভ্যাস থেকে, যাপনটা হয় বন্ধুত্ব থেকে। ভালোবাসাহীন বন্ধুত্ব সহজেই টিকে থাকে, কিন্তু বন্ধুত্বহীন ভালোবাসা কখনওই টেকে না।