ক্যারিয়ার আড্ডা @ শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (৫ম অংশ)

বিসিএস প্রিলি নিয়ে…….

১০ম থেকে ৩৫তম বিসিএস, ২-৩টা জব সল্যুশন কিনে পিএসসি’র নন-ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নগুলো (সম্ভব হলে, অন্ততঃ ২৫০-৩০০ সেট) বুঝে বুঝে solve করে ফেলুন। দাগিয়ে দাগিয়ে রিভিশন দেবেন অন্তত ২-৩ বার। Read the mind of the question setter, not the mind of the guidebook writer. পেপার, ইন্টারনেট আর রেফারেন্স বই ভালভাবে দেখতে হবে।

দুই সেট রিটেনের গাইড বই কিনে আগের বছরের প্রশ্নগুলো আর সাজেশন পড়ে ফেলুন। যে টপিকগুলো প্রিলির সাথে মিলে সেগুলো সিলেবাস ধরে পড়ে শেষ করে ফেলুন। এতে করে আপনার রিটেনের অর্ধেক পড়া হয়ে যাবে। রেফারেন্স পড়ার সময় আদৌ বইটি পড়ার দরকার আছে কিনা, সেটা বুঝে পড়ুন। রিটেনের শতকরা ৬০ ভাগের বেশি পড়া প্রিলির সাথে মিলে যায়।

বেশিরভাগ স্টুডেন্টই প্রথমে রেফারেন্স বই পড়ে, পরে প্রশ্ন সলভ করা শুরু করে। এখানে ২টা সমস্যা আছে।

এক। বেশি বেশি প্রশ্ন সলভ করার সময় পাওয়া যায় না। যত বেশি প্রশ্ন সলভ করবেন, ততই লাভ।

দুই। রেফারেন্স বইগুলোর বেশিরভাগ অংশই বিসিএস পরীক্ষার জন্যে কাজে লাগে না, অথচ পুরো বই পড়তে গিয়ে সময় নষ্ট হয় এবং বিসিএস নিয়ে অহেতুক ভীতি তৈরি হয়। তাছাড়া অতকিছু মনে রাখার দরকারও নেই।

তাই, উল্টো পথে হাঁটুন। আমিও তা-ই করেছিলাম। একটা প্রশ্নকে আরো ৩টি প্রশ্নের সূতিকাগার বানান। রেফারেন্স বই উল্টাতে কষ্ট হয়, এটা ঠিক। কিন্তু কষ্ট করে এই কষ্টটা করতে পারলে আপনার প্রিলি আর রিটেন দুটোতেই লাভ হবে, এটা আরো বেশি ঠিক।

প্রিলির জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, আজকের বিশ্ব, অর্থনৈতিক সমীক্ষা টাইপের বইপত্র পড়া বাদ দিন৷ একেবারেই সাম্প্রতিক বিষয় থেকে প্রিলিতে প্রশ্ন আসে বড়জোর ৫-৬টা, যেগুলো শুধু ওই বইগুলোতেই পাওয়া যায়৷ এরমধ্যে অন্তত ২টা পেপারটেপার প’ড়ে আনসার করা যায়৷ বাকি ৪টাকে মাফ করে দিলে কী হয়?! এই ৪ মার্কসের এ্যাতো পেইন কোন দুঃখে পাব্লিক নেয়, আমার মাথায় আসে না৷ আসলে, ওই যন্ত্রণাদায়ক বইগুলো পড়লে নিজের কাছে কেমন জানি পড়ছি পড়ছি মনে হয়৷ এটা অতি উচ্চমার্গীয় ফাঁকিবাজির পর্যায়ে পড়ে৷ পড়ার অভিনয় নয়, পড়ুন।

একটা ফ্যাক্ট শেয়ার করি৷ কিছু কঠিন প্রশ্ন থাকে যেগুলো বার বার পড়লেও মনে থাকে না৷ সেগুলো মনে রাখার চেষ্টা বাদ দিন৷ কারণ এই ধরণের একটি প্রশ্ন আরো কয়েকটি সহজ প্রশ্নকে মাথা থেকে বের করে দেয়৷ প্রিলিমিনারি হাইয়েস্ট মার্কস্ পাওয়ার পরীক্ষা নয়, স্রেফ কাট-অফ মার্কস পেয়ে পাস করার পরীক্ষা৷ আপনি ১৯০ পেয়ে প্রিলি পাস করা যে কথা ৯০ পেয়ে প্রিলি পাস করা একই কথা। অপ্রয়োজনীয় মার্কসের বাড়তি শ্রম রিটেনের প্রিপারেশন নেয়ার পেছনে দিন, কাজে লাগবে। কে কী পারে সেটা নিয়ে কম ভাবুন। আপনি যা পারেন সেটার চাইতে অন্যরা যা পারে, সেটা শেষ পর্যন্ত বেশি কাজে আসবে, এরকমটা নাও হতে পারে। মনে রাখবেন, কঠিন প্রশ্নেও ১ নম্বর, সহজ প্রশ্নেও ১ নম্বর।

প্রিপারেশন নিচ্ছি নিচ্ছি—নিজেকে এবং অন্য সবাইকে এটা বোঝানোর চাইতে সত্যি সত্যি প্রিপারেশন নেয়া ভালো। ‘প্রিপারেশন প্রিপারেশন ভাব, প্রিপারেশনের অভাব।’ কম্পিটিটিভ এক্সামের প্রিপারেশন নেয়ার ক্ষেত্রে এটা হয়। অনেক পরিশ্রম করে ফেল করার চাইতে, বুঝেশুনে পরিশ্রম করে পাস করা ভালো। আপনাকে প্রত্যেকটা segment-এ খুব ভালো কিংবা মোটামুটি ভালো করতে হবে। কাজেই preparation নেয়ার সময় আপনি যা পারেন, শুধু সেটার উপরেই পুরো effort দেয়া যাবে না। আমার টেকনিক হল, আমি যা পারি সেটার বেশিবেশি যত্ন নিই, যাতে অন্যদের চাইতে অনেকবেশি সুবিধা আমি সেটাতে নিতে পারি। তবে তার আগে দেখে নিই, যেটা বেশি পারি, সেটা আদৌ সুবিধা নেয়ার মতো কিছু কিনা। ধরুন, ক্লিনটনের ওয়াইফের বান্ধবীর পোষা কুকুরের নামও আপনার মুখস্থ, কিন্তু আমার নানার একটা কালো কুকুর ছিল’কে ইংলিশে লিখেন, My grandfather was a black dog……… কোনো কাজ হবে না।

প্রথমবারের কাজ ভালো হয় না? কে বললো একথা? আমি প্রথমবারে ক্যাডার হয়েছি। এরকম আরো অসংখ্য নজির আছে। পথের পাঁচালি (বিভূতি ও সত্যজিৎ), নাগরিক, The 400 Blows কিংবা Wuthering Heights, The Catcher in the Rye, To Kill a Mockingbird, The Kite Runner-এর গল্প। বিসিএস পরীক্ষার মতো বিরক্তিকর পরীক্ষা আরেকবার দিতে হবে, এটা ভাবতে ভয় লাগে না? শুধু এইজন্যেই তো পড়াশোনা করা যায়। সবার মতো আপনাকেও বারবার বিসিএস দিতে হবে কেনো? তবে এখানে luck favour করা না-করার কিছু ব্যাপারও ঘটে। যারা ক্যাডার হয়, তারা একই সাথে যোগ্য ও সৌভাগ্যবান।

অনেকেই বলবে, আমার তো অমুক অমুক প্রশ্ন পড়া শেষ! ব্যাপারটাকে সহজভাবে নিন৷ আপনার আগে কেউ কাজ শেষ করলেই যে শেষ হাসিটা উনিই হাসবেন—এমন তো কোন কথা নেই৷ আর কেউ আপনার চাইতে বেশি পড়াশোনা করলে সেটা তো আর আপনার দোষ না। আমি বিসিএস পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুতি শুরু করতে গিয়ে দেখলাম, অনেকের অনেককিছু পড়া শেষ। 3 Idiots তো দেখেছেন। বন্ধুর খারাপ রেজাল্টে যতোটা মন খারাপ হয়, বন্ধুর ভালো রেজাল্টে তার চেয়ে বেশি মেজাজ খারাপ হয়। যখন দেখলাম, আমি অন্যদের তুলনায় বলতে গেলে কিছুই পারি না, তখন আমি ২টা কাজ করলাম।

এক। বোঝার চেষ্টা করলাম, ওরা যা পারে, সেটা পারাটা আদৌ দরকার কিনা?

দুই। ওদের সাথে নিজেকে কম্পেয়ার করা বন্ধ করে গতকালকের আমি’র সাথে আজকের আমি’কে কম্পেয়ার করা শুরু করলাম।

গ্রুপ স্টাডি করা কতোটুকু দরকার? এটা আপনার অভ্যেসের উপর নির্ভর করে। আমার নিজের এই অভ্যেস ছিলো না। আমি গ্রুপ স্টাডি করতাম না ২টা কারণে।

এক। যখন দেখতাম, সবাই অনেককিছু পারে, যেগুলোর কিছুই আমি পারি না, তখন মনমেজাজ খারাপ হতো। আমি পারি না, এটা ভাবতে ভালো লাগে না। The Pursuit of Happyness এর ডায়লগটা মনে আছে তো? আপনি পারেন না, সবার কাছ থেকে এটা শুনে, বুঝে আপনার কী লাভ? সবাই এটা বললে তো আর আপনি বেশি পারতে শুরু করবেন না, বরং আপনার বেশি পারার ইচ্ছেটা কমে যেতে পারে।

দুই। সবার সাথে পড়লে বেশি বেশি গল্প করতে ইচ্ছে করতো, আর মনে হতো, ওরা যেটা করছে সেটা ঠিক, আমার নিজেরটা ভুল। অন্ধ অনুকরণ করতে ভালো লাগে না।

মাঝে মাঝে পড়তে ইচ্ছে করবে না, আমারও করত না৷ সারাক্ষণ পড়তে ইচ্ছে করাটা মানসিক সুস্থতার লক্ষণ না৷ Why so serious? Job for Life, not Life for Job. বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে, এমন তো নয়! আপনার রিজিক আগে থেকেই ঠিক করা আছে। কতোকিছুই তো করার আছে! তাই, ব্রেক নিন, পড়াকে ছুটি দিন৷ মাঝেমধ্যেই৷ রুমের দরোজাজানালা বন্ধ করে ফুল ভলিয়্যুমে মিউজিক ছেড়ে সব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে নাচুন! ইচ্ছেমতো গলা ফাটান! কী আছে আর জীবনে! দু’দিন পড়া হলো না বলে মন খারাপ করে আরো দু’দিন নষ্ট করার তো কোনো মানে হয়না৷ ভুল না করে শিখেছে কে কোথায় কবে? অনুশোচনা করার সময় কোথায়? আপনি তো আর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভুলটি করে বসেননি! আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মানুষটিও নন!

Viva: the art of selling yourself

BCS + IBA

Have a look!! (ভিডিও ক্লিপ)

আসলে ভাইভা এক্জামের কোনো প্যাটার্নই নাই। ভাইভার মার্কস্ ম্যাটার করে, এধরণের ভাইভা আমি দিয়েছি এপর্যন্ত ২ জায়গায়। আইবিএ ভাইভা আর বিসিএস ভাইভা। আইবিএ’র ভাইভা বোর্ডে ছিলাম ১৮-২০ মিনিট, বিসিএস-এ ৪-৫ মিনিট। কতক্ষণ ওখানে রাখলো, কী জিজ্ঞেস করলো, কী কী পারলাম, কী কী পারলাম না, এগুলো অতটা মুখ্য নয় যতটা ভাবা হয়। অলস্ ওয়েল দ্যাট এন্ডস্ ওয়েল।

আমার মনে হয়েছে, ভাইভা ব্যাপারটা যতটা অবজেকটিভ, তার চেয়ে অনেক বেশি সাবজেকটিভ। আমাদের অভিজ্ঞতা কী বলে? কাউকে কাউকে দেখলে কথা বলতেও হিসাব করে বলতে হয়। আবার কাউকে কাউকে দেখলে কষে দুইটা চড় মারতে ইচ্ছা করে। মারতে না পারলে কেমন যেনো অস্বস্তি লাগে। ভাইভা দেয়ার সময় মাথায় রাখবেন, আপনাকে চাকরি দিতে কেউ বাধ্য নন। আপনি অপরিহার্যও নন। ভাইভাতে ভালো করার জন্যে প্রিপারেশন থেকে প্রিপেয়ার্ডনেসটাই বেশি জরুরি। প্র্যাকটিস তো সবাই-ই করে, তবুও সেঞ্চুরিটা কিন্তু টেন্ডুলকারের ঝুলিতেই যায়। সেইদিনটা আপনার কিনা সেটা অনেকটাই আপনার ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়।

আপনি কী জানেন তার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ আমার ইমপ্রেশন কী হলো আপনার জানার সম্পর্কে। সাধারণত একজন ব্যক্তিকে দেখার প্রথম ২০ সেকেন্ডের মধ্যে তার সম্পর্কে একটা ইম্প্রেশন জন্মে, সেটা ইতিবাচকও হতে পারে, নেতিবাচকও হতে পারে। এটাকে কাজে লাগান। You will never get a second chance to make the first impression. সবাইকে দেখলে সবকিছু বলা যায় না, বলতে ইচ্ছেও করে না। কাউকে কাউকে দেখলে তাজমহল কীভাবে প্রেমের সাক্ষর বহন করে চলেছে, সেটা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে; আবার কাউকে কাউকে দেখলে তাজমহলের ইটের সংখ্যা জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে। কারো কারো অ্যাপিয়ারেন্স অ্যাটিচিউড দেখলে পদ্মা নদীর দৈর্ঘ্য জিজ্ঞেস ক’রতে ইচ্ছা করে, আবার কারো কারো কাছ থেকে পদ্মার বুকে নৌকায় ভাসতে ভাসতে চাঁদের আলো ছুঁয়ে দেখার গল্প শুনতে ইচ্ছে করে। কিংবা পদ্মাপাড়ে প্রেমিকার হাত ধ’রে হাঁটবার গল্প। অথবা অন্য কোনোকিছু, যা বলতে কিছু জানতে হয় না, অথচ সবকিছুই জানিয়ে দেয়া যায় খুব সহজে। Sell yourself. অন্য একজনকে না দিয়ে আপনাকে কেনো চাকরিটা দিলে ভালো হয়, সেই ব্যাপারে উনাদেরকে convince করুন। Wipro’র example. BCS Foreign Affairs-এর ভাইভার ২টা examples.

যাঁরা ভাইভা বোর্ডে থাকেন, তাঁরা সত্যিই অনেক বেশি এক্সপেরিএন্সড আর এক্সপার্ট। উনারা খুব ভালো করেই বোঝেন আপনি কী বলছেন, কী লুকাচ্ছেন। Cheating is an art. Catch me if you can! A clever man knows how to cheat, an intelligent man knows how to make others let him cheat. আমাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো সাহিত্য থেকে! কেনো?

এক্সপেরিয়েন্স বলে, ভাইভাতে ভালো করার অন্ততঃ একশো টেকনিক আছে যেগুলোর একটাও কাজ করে না৷ যা সঞ্চয় করবেন, তার চেয়ে বেশি কাজে লাগবে যা সঞ্চয়ে আছে৷ আপনি যেরকম, সেটাকেই সুন্দরভাবে উপস্থাপন করুন। আত্মবিশ্বাস ভেঙে দেয় কিংবা আপনাকে আপনার মতো থাকতে দেয় না, এমন কিছু শুনবেন না, করবেন না৷ Be yourself. Be natural.

সিভিল সার্ভিসে একটাই Rule: Obey or Leave! অন্যান্য চাকরিতেও, What is, is the rule; not, what should be. আপনাকে বিপ্লব ঘটানোর জন্যে চাকরি দেয়া হবে না। আপনি যেমন মানসিকতারই হোন না কেনো, আপনি এটা প্রমাণ করুন যে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনের সাথে আপনি মানিয়ে নিতে পারবেন। ভাইভা বোর্ডে যারা থাকেন, তাঁরা কিন্তু ওইসময়ের জন্যে আপনার বস। আপনি কোনোভাবেই আপনার বসের চাইতে স্মার্ট নন। বসের সাথে কোনোধরণের মান-অভিমান করা যাবে না। সকল মান-অভিমান জমিয়ে রাখুন আপনার প্রিয়তম কিংবা প্রিয়তমার জন্যে।

ভাইভা বোর্ডে যে যে ব্যাপারগুলো দেখা হয় বলে আমার কাছে মনে হয়েছে —

Positive Attitude

Body Language

Mental Maturity

Ready Wit

Thought Clarity

Decent Appearance

Etiquette

Commonsense

Cool Temperament

English Fluency

Situation Handling Capability

Analytical Skill

নার্ভাসনেস থাকবে না, এটা হয় না৷ থাকবেই৷ ওটা কাটানোর কিছুটা দায়িত্ব সিচ্যুয়েশনের উপরে ছেড়ে দিন৷ আমার ক্ষেত্রে নার্ভাসনেস আমাকে ভালো মার্কস পেতে হেল্প করেছিলো। ঘটনাটা বলি। BCS Police’এর ভাইভার আরেকটা ঘটনা। A knife kills. Well, a knife saves too!

ভাইভা বোর্ডে আপনার সাথে যদি দুর্ব্যবহার করা হয়, তাহলে সেটাকে পারসনালি নেয়ার কিছু নাই। এখানে যা কিছুই করা হয়, প্রত্যেকটার পেছনে উদ্দেশ্য থাকে আপনাকে judge করা। BCS Admin’এর ভাইভার ঘটনা।

ভাইভা’র সময় আই কনট্যাক্ট রাখুন৷ অন্য দিকে তাকিয়ে কথা বলা কোনো কাজের কথা না৷ তাছাড়া, স্যারদের ইনস্ট্যান্ট এক্সপ্রেশন জানতেও এটা জরুরি।

বিসিএস পররাষ্ট্র ফার্স্ট চয়েস থাকলেই যে ভাইভা ইংলিশে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। ফরেনের অনেকেই ৫০% এর বেশি বাংলায় ভাইভা দিয়ে ক্যাডার হয়েছে। আমার ফার্স্ট চয়েস ছিলো কাস্টমস, অথচ আমার ৮৫ ভাগ ভাইভা হয়েছে ইংলিশে।

ভাইভা দিতে যাওয়ার সময় কিংবা ভাইভা দিতে ঢোকার আগমুহূর্তে ভাইভা নিয়ে পড়াশোনা না করাই ভালো। এতে নার্ভাসনেস বাড়ে। ভাইভা দেয়ার পর যারা ক্যাডার হতে পারেন, তাদের সাথে, যারা ক্যাডার হতে পারেন না, তাদের পার্থক্য সবচে’ বেশি—ভাগ্যে!

যারা আগে ভাইভা দিয়েছেন, উনাদের সাথে কথা বলুন, কী কী টাইপের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়, সেটা সম্পর্কে একটা ফেয়ার আইডিয়া নিন। সবাই যেভাবে বলে, সেভাবে না বলে একটু ভিন্নভাবে উত্তরটা নিজের মধ্যে সাজিয়ে নিন। Presentation matters! Try to read the mind of the interviewer. আপনি কী বলতে চাচ্ছেন, তার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হল, উনারা যা শুনতে চাচ্ছেন, আপনি সেটা বলতে পারলেন কিনা। আপনি কী বললেন, সেটা নয়, আপনি সেই কথাটা কীভাবে বললেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ। Hiding is an art. ইউফেমিজম্ শিখুন৷ যেমন ধরুন, যদি আপনাকে আপনার নিজের একটা দুর্বল দিক সম্পর্কে বলতে বলা হয়, তবে আপনি এমনভাবে উত্তরটা দেবেন যাতে এটা আপনার সম্পর্কে খুব বেশি নেতিবাচক কিছু না দেখায়। (আমাকে আইবিএ’তে এটা জিজ্ঞেস করেছিলো) কিংবা, বাংলাদেশের কিছু সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করলে এমন কিছু বলার চেষ্টা করবেন, যেগুলো সমাধানে ইতিমধ্যেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নিজের ফ্যামিলি, আগের জব, ক্যারিয়ার প্রসপেক্ট ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ইতিবাচকভাবে বলার চেষ্টা করুন। যদি দেখেন, হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলছেন, একটু থেমে থেমে ভেবে আস্তেধীরে উত্তর দিন। কথা বলার সময় হাত-ঘাড়-চোখ দৃষ্টিকটুভাবে নাড়াবেন না।

যদি কোনো প্রশ্ন উত্তর দেয়ার মাঝখানে অন্য কেউ প্রশ্ন করেন, তাহলে যিনি প্রথমে প্রশ্ন করেছেন, উনার পারমিশন নিয়ে পরের প্রশ্নটার উত্তর দিতে হবে।

মাঝে মাঝে Ted Talks শুনতে পারেন, Youtube সহ অনেক সাইটে দেয়া জব ইন্টারভিউগুলো শুনতে পারেন। বিটিভির রাত ১০টার ইংরেজি সংবাদ শুনতে পারেন। CNN, Al Jazeera শুনুন। সাবটাইটেল অন করে American accent এর মুভিগুলো দেখতে পারেন। কোনো বন্ধুর সাথে মাঝে মাঝে ইংলিশে কনভারসেশন প্র্যাকটিস করতে পারেন। তবে ভুলেও এমন কোনো পণ্ডিতের সাথে এই কাজটা করবেন না, যে শুধু ভুলই ধরিয়ে দেয়। ও বেশি জানে, এটা জেনে-বুঝে আপনার কী লাভ?

আপনার ভাইভার ডেটের আগের ১ সপ্তাহের কয়েকটা পেপারে নিয়মিত চোখ রাখুন। সাম্প্রতিক বিষয়, মুক্তিযুদ্ধ, নিজের সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখুন।

মাঝে মাঝে স্মার্টনেস না দেখানোটাই স্মার্টনেস৷ আপনাকে দেখার পর যে ফার্স্ট ইম্প্রেশন তৈরী হয়, সেটার উপর আপনার ভাইভার প্যাটার্ন অনেকটাই নির্ভর করে৷ নিজেকে gentleman/ lady হিসেবে উপস্থাপন করুন।

ভাইভা বোর্ডে কোনো বিষয় নিয়েই তর্ক করবেন না। Boss is always right! মানিক বড়? নাকি, বঙ্কিম বড়? আমার নিজের গল্প। বসের সাথে অনেক কায়দা করে টেনিস খেলায় হারার গল্প।

যেকোনো ভাইভা এক্সামে ২ ধরণের প্রশ্ন থাকে।

Informative

Non-informative

সাধারণত ২য় ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার স্টাইলের উপর স্যারদের বেশি emphasis থাকে। ভাইভাতে এরকম কিছু নেই যে, এতোটা পারলাম, এতো মার্কস দেয়া হবে, মানে ভাইভাতে কোনো segmented marking হয় না; বরং overall performance-এর উপর নম্বর দেয়া হয়। আপনি অনেক প্রশ্নের উত্তর করতে পারলেই যে অনেক মার্কস পাবেন, এমন নয়।

ইংলিশে উত্তর দেয়ার সময় যদি আপনার কোনো কথায় কোনো ভুল খেয়াল করেন, তাহলে থেমে গিয়ে সেটাকে শুধরে দেয়ার দরকার নাই। কথা হচ্ছে তীরের মতো, একবার ছুটে গেলে সেটাকে থামাতে গেলে হাত রক্তাক্ত হবে। হয়তো বা, স্যাররা আপনার ভুলটা খেয়ালই করেননি। কী দরকার আপনি নিজ থেকে বলে দেয়ার? লোকে ইংরেজি না পারার কারণে যতোটা ভুল করে তার চেয়ে বেশি ভুল করে ইংরেজিতে কথা বলতে পারবো না, এই ভয়ের কারণে। যতোটুকু সম্ভব, কথায় আঞ্চলিকতা পরিহার করুন।

সিভিল সার্ভিস, আপনার সাবজেক্ট, ক্যাডারের ফার্স্ট আর সেকেন্ড চয়েস সম্পর্কে ফেয়ার আইডিয়া রাখুন৷ আপনি কেন চাকরিটা চাইছেন, সেটার উত্তর রেডি রাখবেন। IBA’র ক্ষেত্রে আপনি কেনো MBA করতে চাইছেন, সেটার উত্তর রেডি রাখবেন। ঠিক উত্তর দেয়ার চাইতে উত্তর ঠিকভাবে দেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।

কী জানেন না, সেটা নিয়ে অত ভাববেন না৷ হয়তো আপনাকে ওটা জিজ্ঞেসই করা হবে না৷ Focus on your strength, not on your weakness. আর যদি জিজ্ঞেস করেই ফেলে, আর আপনি উত্তর দিতে পারলেন না, তাতে কী হয়েছে? প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য ভাইভাতে বেশি মার্কস্ বরাদ্দ থাকলে অনেক Parrot-type’য়ের লোকজন চাকরি পেতো৷

নিজেকে উৎসাহী শ্রোতা হিসেবে দেখান৷ চেহারায় একটা ভদ্র ভদ্র টাইপের ভাব ফুটিয়ে তুলুন, যাতে আপনাকে বকা দিতেই কষ্ট লাগে৷ এটা সত্যিই কাজে দেয়৷

ঢোকার সময় হাসিমুখে সালাম এবং বের হয়ে যাওয়ার সময় হাসিমুখে ধন্যবাদ এবং সালাম দিতে ভুলে যাবেন না। আপনার সাথে দেখা হওয়ার সময় এবং আপনি বিদায় নেয়ার সময় আপনার সম্পর্কে ধারণা জন্মে। ইন্টারনেটে non-informative questions নিয়ে প্রিপারেশন নিয়ে রাখতে পারেন। যেমনঃ Imagine You।.. Inquiries About Your Personal Life… মাঝে মাঝে অন্যকেউ হয়ে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করতে পারেন। Imagine yourself as that person you’ve always dreamt being of.

আড্ডা শেষ হোক গল্পে ……..

প্রথম গল্প:

একটা কাক গাছের উঁচু ডালে কোন কাজ না করে অলসভাবে বসে ছিল৷ ঠিক সে সময়ে ওই পথ দিয়ে এক খরগোশ যাচ্ছিলো৷ খরগোশ কাককে জিজ্ঞেস করল, “আচ্ছা ভাই, আমিও কি তোমার মতো কোন কাজ না করে এই গাছের নীচে বসে থাকতে পারি?” কাক বলল, “নিশ্চয়ই পারো!” খরগোশ তা-ই করল৷

কিছুক্ষণ পর সেই পথ দিয়ে এক শেয়াল যাচ্ছিল৷ শেয়াল খরগোশটাকে বসে থাকতে দেখে খপ্ করে ধরে খেয়ে ফেলল৷

এই গল্পের lesson কি? lesson হলো, যখন আপনি এতটা উঁচু আসনে বসে আছেন যে, কেউ আপনাকে ছুঁতে পারবে না, তখন আপনি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন৷ তবে, এর আগে পরিশ্রম করে আপনাকে সেই আসনে বসার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে৷ ভাবুন, আপনারা এখন কোন আসনটাতে বসে আছেন৷

দ্বিতীয় গল্প:

শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে একটা ছোট্ট পাখি সাইবেরিয়া ছেড়ে যাচ্ছিল৷ হঠাৎ পাখিটা জমে গিয়ে বরফের টুকরোর মতন টপ্ করে মাটিতে পড়ে গেল৷ বেশ কিছু সময় পড়ে সেই পথ দিয়ে একটা গরু হেঁটে যাওয়ার সময় পাখিটার উপর মলত্যাগ করল৷ কিছুক্ষণ পর গোবরের উষ্ণতায় পাখির গায়ের সমস্ত বরফ ঝরে গেল৷ পাখিটা তখন খুশীতে গান গাইতে শুরু করল৷ কাছেই একটা বেড়াল বসেছিল৷ গান শুনে বেড়ালটা গোবর থেকে পাখিটাকে বের করে খেয়ে ফেলল৷

এই গল্পের lesson গুলো কি কি?

প্রথম lesson হলো, Not everyone who drops shit on you is your enemy. এর মানে হল, যারা আমাদের উপরে ময়লা ছিটিয়ে দেয় অর্থাৎ আমাদের বকা-ঝকা করেন, তাদের সবাই কিন্তু আমাদের শত্রু নন; অনেকেই আমাদের ভালো চান৷ এই দলে আছেন, আমাদের বাবা-মা, সিনিয়ররা, স্যাররা৷

দ্বিতীয় lesson হলো, Not everyone who gets you out of shit is your friend. এর মানে হল, অনেকেই আছেন যাঁরা আমাদের বিপদ থেকে মুক্ত করার কথা বলে হাত বাড়িয়ে দিয়ে আরো বড় বিপদে ফেলে দেন৷ এই দলে আছেন, আমাদের আশে-পাশের সেইসব মহাপণ্ডিত ব্যক্তিরা, যাঁরা বলেন, “বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে আর কি হবে? তার চেয়ে অন্য কিছু কর৷” অথবা বলেন, “তোমাকে দিয়ে বিসিএস হবেনা৷”আমি মনে করি, If you cannot help a person to do something, you have no right to demoralize him/her saying that he/she cannot do it.

আমার মনে হয়, তৃতীয় lesson টাই সবচেয়ে important. সেটি হলো, When you are in the shit, always keep your mouth shut!! এর মানে হল, যখন আপনি বিপদে আছেন, তখন সবসময় আপনার মুখ বন্ধ রাখবেন৷ Success talks the loudest. Success can buy silence. আপনার সাফল্য সবার মুখ বন্ধ করে দিতে পারে৷ তাই, নিজের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিন; অন্যদের প্রতি নয়৷

শেষ হইয়াও হইল না শেষ

The Friendship Rule :

বস্! ‘ব্লক’ বাটনটা এখানে!!

সাঙ্ক কস্টের গল্প : (একটা গল্পের মাধ্যমে বিষয়টি বললাম।)

Let it GO!! (ভিডিও ক্লিপ)

(একজন সুখী ক্লিনারের সাফল্যের গল্প বললাম।)

no easy day, the only easy day was yesterday

Good Luck!

প্রশ্নোত্তর পর্ব

সবাইকে ধন্যবাদ