কেউ কথা বলতে না চাইলে

 কেউ আপনার সাথে কথা বলতে না চাইলে জোর করে তার সাথে কথা বলবেন না। সে যদি আপনার সবচাইতে কাছের মানুষটিও হয়, তা-ও তাকে ফোনের পর ফোন করে যাওয়ার কোনও মানে হয় না। আপনি যাকে এখনও কাছের ভাবেন, সে হয়তো আপনাকে এখন আর তার কাছের কেউ ভাবে না। আপনি যাকে প্রিয় ভাবেন, সে হয়তো আপনাকে প্রিয় আর ভাবে না। মানুষ বদলায়, মেনে নিন। এই বদলকে মেনে নিয়ে নিজেকেও বদলে ফেলুন। জোর করে সঙ্গম হয় না, ধর্ষণ হয়। জোর করে ভালোবাসা হয় না, অভিনয় হয়। যার মন থেকে আপনার প্রতি প্রেমটা আর আসে না, তাকে জোর করে আপনার প্রেমকে মেনে নিতে বাধ্য করাটা চরম নির্বুদ্ধিতা।
  
 আপনি যার কাছে নিজের জায়গাটুকু হারিয়ে ফেলেছেন, তার কাছে নিজের সম্মানটুকুও হারিয়ে ফেলবেন না। ওইটুকুও চলে গেলে একটা মানুষের আর কীই-বা অবশিষ্ট থাকে! আপনার কলটা যখন তার সেলফোনে ভেসে ওঠে বার বার, তখন সে হয়তো মনে মনে ভাবে, 'কী বিরক্তিকর! কী বিরক্তিকর!' নিজেকে অনাকাঙ্ক্ষিত বানিয়ে ফেলাটা আপনার হাতে না থাকলেও নিজেকে বিরক্তিকর বানিয়ে না ফেলাটা পুরোপুরিই আপনার হাতে। কাছের মানুষ হয়, আজীবনের মানুষ বলে কিছু হয় না। কাছের বন্ধু হয়, আজীবনের বন্ধু বলে কিছু হয় না। কাউকে জোর করে আজীবনের মানুষ বানানো যায় না। ওরকম কিছু করার চেষ্টা করার অর্থই হলো, নিজের জীবনকে বিষিয়ে তোলা।
  
 প্রত্যেকেরই নিজস্ব পছন্দ ও অপছন্দ রয়েছে। আপনি জোর করে কারও পছন্দের তালিকায় ঢুকতে চাওয়ার মানেই হচ্ছে, তার কাছে আপনার আত্মসম্মানবোধটাকে বিকিয়ে দেওয়া। আপনার সাথে কথা না বলেই যার দিন দিব্যি কেটে যায়, তার সাথে জোর করে হলেও কথা বলতে হবে কেন? এটাকে ভালোবাসা বলে না, টানও বলে না, ছ্যাঁচড়ামি বলে। আপনি তাকে ভালোবাসেন তো ভালো কথা, তাই বলে আপনাকেও কি তার ভালোবাসতেই হবে? ভালোবাসা ব্যাপারটাই এমন, যাকে উভয়মুখী বিক্রিয়া হতেই হয় না। ভালো সে বাসত বলেই কি আজীবনই ভালোবেসে যেতে হবে? বাই দ্য ওয়ে, ভালো সে বাসত কি আগে? আর ইউ শিওর? মেনে নিলাম, হ্যাঁ, ভালো সে বাসত। তাই বলে কি ভালো সারাজীবনই বাসতে হবে? বলতে পারেন, প্রকৃত ভালোবাসা কখনও হারিয়ে যায় না। তার ভালোবাসাটা যে প্রকৃত ছিল, তা আপনি জানলেন কী করে?
  
 কেউ আপনার ফোন ধরতে না চাইলেও তাকে টানা ফোন করে যাওয়াটাকে ভালোবাসা বলে না, কমনসেন্সের অভাব বলে। যখন কেউ আপনাকে ব্লক করে দেয়, তখন নতুন সিমকার্ড জোগাড় করে সেখান থেকে তাকে ফোন দেওয়ার নাম আজাইরা ফাজলামি। যে আপনাকে বার বার ব্লক করে দিচ্ছে, যে আপনার উপর এতটাই বিরক্ত, তার সাথেও এরকম ফাতরামি করে যাওয়ার কী মানে? মন বেশি উচাটন হলে মনটাকে ধরে একটা থাপ্পড় মারুন। থাপ্পড়টা জোরে মারবেন যাতে মনের সবকটা দাঁত খুলে পড়ে যায়। যে থাকতে চায় না আর, তাকে নিয়ে এরকম টানাটানি করার কী আছে? একদম চুপ হয়ে যান। কারও সাথে কথা বলবেন না, ঘুমানো বইপড়া মুভিদেখা ইত্যাদি বাদে কোনও ফালতু কাজ করবেন না, মোবাইলটা অফ করে দূরে ফেলে রাখুন। এরকম পুরোপুরি চুপ হয়ে যাওয়াটা দুই ক্ষেত্রে ভালো ফল দেয়: রেগে গেলে ও অস্থির লাগলে। বিশ্বাস না হলে ট্রাই করে দেখতে পারেন।
  
  
 যে আপনাকে একসময় ভালোবাসত, সে এখন আর আপনাকে পাত্তা দেয় না। এর মানে কী? নিশ্চয়ই তার ভালোবাসায় কোনও একটি স্বার্থ বা শর্ত ছিল। স্বার্থ হাসিল, বান্দা উধাও! এই সহজ জিনিসটা বুঝতে রকেট-সায়েন্টিস্ট হতে হয় না। ঠান্ডা মাথায় ভাবুন, উত্তর পেয়ে যাবেন। এমনও হতে পারে, সে আপনাকে ভালো এখনও বাসে, কিন্তু আপনার যন্ত্রণায় কিংবা কোনও পরিস্থিতির কারণে সম্পর্কটি সে আর রাখতে চাইছে না। সে আর থাকতে চাইছে না। কেউ একটা সম্পর্ক রাখবে কি রাখবে না, তা নির্ধারণ করতে তার ইচ্ছেটুকুই এনাফ! তাকে জোর করে রাখতে চাওয়ার মানেই হচ্ছে নিজের সম্মানটা তার কাছে কমিয়ে ফেলা।
  
 একজন ভুল মানুষের জন্য কাঁদতে কাঁদতে নিজের চোখদুটোকে অন্ধ করে ফেলবেন না। হয়তোবা সেই চোখদুটো কোনও এক মানুষের কাছে ভীষণ প্রিয় যে আপনাকে ডিজার্ভ করে। নিজেকে সেই মানুষটির জন্য ভালো রাখুন। যার চোখে সে রানির মতন, মেয়েরা তাকে পাত্তাই দেয় না; অথচ যার কাছে সে দাসীরও নিচে, মেয়েরা তার পেছন পেছন ঘুরে। ছেলেদের মধ্যেও একই ধরনের আচরণ দেখা যায়। আমার মনে হয়, মানুষ আসলে এমন কিছু দুঃখ পেতেই জন্মে, যে দুঃখগুলি তার নিজের আশ্রয়ে ও প্রশ্রয়ে তৈরি।
  
 হ্যাঁ, যদি এমন হতো, ভালোবাসার মানুষটার সামনে নিজের সম্মান কমিয়ে হলেও আপনি তার মন বা মতকে আপনার দিকে ফেরাতে পারছেন, তাহলে একটা কথা ছিল। তা যদি না হয়, তবে তাকে তার মতো ভালো থাকতে দিন। নিজেও নিজের মতো ভালোথাকার বুদ্ধি বের করুন। বুদ্ধি বের হচ্ছে না? সারাদিন একটা ভুল মানুষকে নিয়ে ভেবে ভেবে মাথাটা খারাপ করে রাখলে বুদ্ধি বের হবে কীভাবে? সে চলে গেছে বলে পাগল পাগল লাগছে? খোঁজ নিয়ে দেখুন, সে হয়তো কাউকে কাউকে বলে বেড়াচ্ছে, ‘দ্যাখ দ্যাখ! আমার জন্য সে কেমন পাগল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে!’ মানুষ খুব চেষ্টা করেও যার চোখে প্রিয় হতে পারে না, তার চোখে পাগল হয়ে যায়, আর তখন বাকিদের চোখে ছাগল হয়ে যায়।
  
 কাউকে চিনতে আপনার ভুল হয়েছিল বলেই কি জীবনটা ভুলে ভুলে কাটিয়ে দিতে হবে? বরং আপনি সৌভাগ্যবান যে অনেক দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই আপনি এমন একজনের কাছ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে আনতে পেরেছেন যে আপনার ইমোশনেরই দাম দেয় না। যে আপনার ইমোশনের দাম দেয় না, সে আপনার মনের মানুষ হওয়ার যোগ্যতাই রাখে না। আজ আপনি জানতে পারলেন, সে আপনার ইমোশন নিয়ে এতদিন খেলে এসেছে। জানার পর আপনি কী করছেন? নিজের ইমোশনকে তার মতন একটা মানুষের কাছে আরও খেলো-হালকা-সস্তা করে দিচ্ছেন! সে আগেও মজা লুটেছে, এখনও মজা লুটছে! এর জন্য দায়ী কে? আপনি, আপনি, আপনি!
  
 আপনি একটা কুকুর পালতেন। সে কুকুরটি অন্য ঘরে বেশি খাবার ও আরাম দেখেও আপনাকে ছেড়ে যায়নি।
 আপনি একটা মানুষ পালতেন। সে মানুষটি অন্য ঘরে বেশি খাবার ও আরাম না দেখেও আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে।
 ভেবে দেখুন, আপনার সেই মানুষটির মানসিক অবস্থান একটা কুকুরেরও নিচে! এরকম একটা মানুষের জন্য এই যে দিন-রাত কান্নাকাটি করে চলেছেন, আপনার নিজের অবস্থানটি কোথায়?