কিছু মুহূর্ত মুহূর্তে থেমে থাকে

 
প্রিয় পাখি, কোথায় তুমি? আমার এখান থেকে কতটা পথ দূরে? আমি যে চাইলেও তোমাকে ছুঁয়ে দেখতে পারি না, মনভরে আদর করতে পারি না। আমার কেবলই মনে হয়, আর কয়েকটা দিন যে করেই হোক বাঁচি, তোমাকে দেখতে পাব! তোমার আদরে, তোমার ভালোবাসায়, নিজেকে আরও কয়েকটা দিন ভালো থাকতে, সুখে থাকতে দেখতে ইচ্ছে হয় ভীষণ। তোমার বুকের উষ্ণতা মিস করি, তোমার পাগলকরা ভালোবাসা, তোমার দেওয়া প্রতিটি যন্ত্রণা মিস করি। তোমার কাছে থাকতে চাওয়ার এই ব্যাকুলতাটুকু সঙ্গে নিয়ে আরও কিছু দিন বাঁচতে চাই। জানি না কী হবে, কী হতে চলেছে, জানি না। কেবলই অপেক্ষা আর একবুক আশা নিয়ে ছিলাম এতটা দিন। এতদিন নিজেকে এই সান্ত্বনাটুকু দিয়ে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে রেখেছিলাম যে, বেঁচে থাকলে কোনও না কোনও দিন তো পাব তোমাকে। এখন সেই সময়, যে সময় মরে যেতে ভয় হয়, এমন একটা সময় মরে যেতে ইচ্ছে করে না। আমার জীবন সম্পর্কে তুমি বেশ জানো, আমার অজস্র রাত নির্ঘুম গেছে, আর অজস্র দিন কেটেছে চাপা ক্ষোভে। চারপাশের মানুষের দেওয়া আঘাত, দুর্ব্যবহার, অবহেলা, স্বার্থান্বেষী মনোভাব আমাকে খুব পুড়িয়েছে অজস্র মুহূর্ত। এত দীর্ঘকাল আমি ভালো থাকিনি, বরং যেন-তেনভাবে বাঁচাকেই জীবন ভেবে পথ চলতে শুরু করেছিলাম। সব সময় মানসিকভাবে তৈরি ছিলাম, যেকোনও সময় মৃত্যু এসে নিয়ে যাবে। এই নির্ভার দেহটির প্রাণের মায়ায় বাঁধার কেউ থাকবে না, এটাই ভাবতাম। কিছুটা স্বস্তি ছিল এ নিয়ে যে মৃত্যুর পর এমন কেউ থাকবে না, যে আমাকে ভেবে মন খারাপ করে থাকবে।


আজ আমার সেই ঐশ্বর্য আছে। আজ আমার ব্যথায় ব্যথিত হবার মানুষ আছে। আজ আমাকে একটু মমতা দিয়ে কাছে টানার মানুষ আছে, আজ আমার ভীষণ ভালোবেসে অধিকার নিয়ে বকে দেবার কেউ আছে, আজকে একজনের বকাঝকা শোনার জন্যেও হলেও বাঁচার তেষ্টা পায়, আজকে আমি আমার অজস্র অপারগতা, অজস্র না পাওয়া নিয়ে হলেও কেবল একজনের জন্যে বাঁচতে চাই। অজস্র কাল, অজস্র মুহূর্ত পেরিয়ে, হাজারো আঁধার রাতের তারা ডিঙিয়ে আজ আমি কেবল একটা মানুষকেই ভালোবেসে বাঁচতে চাই। অজস্র মুহূর্ত মৃত্যুকে তুচ্ছ একটা ঘটনা ভেবেই বেঁচেছি, আমি অনেক তাড়াতাড়িই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব---এতকাল এটাকেই সত্য বলে মেনে নিয়ে চলেছি। ভেবেছিলাম, একদিন তো যেতেই হবে সব ছেড়ে, আগে গেলেই বরং ভালো। শুধু একটিই চাওয়া ছিল স্রষ্টার কাছে, মৃত্যুর যন্ত্রণাটুকু যেন টের না পাই। সেই কঠিন বাস্তবকে আজ আমার ভয় করে। আজ মৃত্যু আমাকে ইশারা করলে আমি লুকিয়ে থাকতে চাই, পালিয়ে বাঁচার পথ খুঁজি। আজ একটুকরো জীবন নিয়েও, একচিলতে আশা নিয়েও বাঁচতে ইচ্ছে করে, বিশ্বাস করো, ভীষণ ইচ্ছে করে।


কতদিন তোমাকে দেখিনি, কতকাল তোমার স্পর্শে, তোমার গন্ধে অনুভূতিশূন্য হই না। তবুও এতকাল এ আশাটুকুই বাঁচিয়ে রেখেছিলাম যে, বেঁচে যদি থাকি, তোমাকে পেতেও তো পারি। কিন্তু আজ মৃত্যুভয় আমাকে সে আশাটুকু নিয়ে বাঁচার বিলাসিতাটুকুও কেড়ে নিয়েছে। নিজেকে নিজের কাছে অপরাধী করে তুলেছি আমি। এতটা বছর এতগুলো মুহূর্ত গেল, কেন তোমাকে জানালাম না ভালোবাসার কথাটুকু? সেই তো ঠিকই গেলাম অবশেষে থাকতে না পেরে! নিজেকে বেঁধে রাখতে না পেরে ঠিকই ছুটে চলে গেলাম তোমার কাছে। তোমার ভালোবাসার আশ্রয়ে আশ্রিত হতে তো গেলামই! তা হলে কেন এতকাল নিজেকে কষ্ট দিলাম?


আমি তো ভালো ছিলাম না কখনওই, তা হলে কেন যাইনি আগ বাড়িয়ে? ভালোবাসার দায়টুকু তো আমারই বেশি। আমার ইগো আমাকে তোমার কাছে থেকে দূরে সরিয়ে রেখে আমাকে কষ্ট দিয়েছে। আমার ব্যথার নখ আমারই বুকআঁচড়ে দগদগে ক্ষত সৃষ্টি করেছে, তবুও বুঝতে দিইনি কাউকেই, আমি যে কতটা কষ্ট পাচ্ছি! সেই কষ্ট তো ঠিকই পেলাম। তুমি কি ফিরিয়ে দিতে যদি হাতদুটো কিছু সময় আগে পাততাম? যদি আরও কিছুদিন আগে বেহায়া হতাম তো কী ক্ষতি ছিল? আরও কিছু আগে তা হলে একটু বেঁচে নিতাম নাহয় আমিও…ওদেরই মতো? আমার কি বাঁচার অধিকার ছিল না, আমার কি আরও একটু ভালোথাকার অধিকার ছিল না? তা হলে কেন অযথা নিজেকে কষ্ট দিয়েছি? কেন নিজেই ঠকিয়েছি নিজেকে? কেন যাইনি ভালোবাসার আবদার নিয়ে একটু সুখে থাকার দাবি জানাতে? যদি দিতে ফিরিয়ে, যদি তাড়িয়ে দিতে, নাহয় তা-ই হতো। তাও তো তখন নিজেকে ঠিক বুঝিয়ে নিতাম, আমি গিয়েছি এবং চেষ্টা করেছি। আমি কী দিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দিই? নিজের অহংবোধে আজ নিজেকেই নিজে নিজে শেষ করেছি আমি। আমার ছোট্ট তীরে কেবলই তোমার শূন্যতা।


তুমি আজকাল অনেক অনেক ভালোবাসো আমাকে, তোমার ভালোবাসাটা আসলে বর্ণনা করার মতো কিছু না। এই যেমন, প্রতিদিনই তো খাচ্ছি, প্রতিদিনই তো বেঁচে থাকছি, মরে তো আর যাচ্ছি না, সুতরাং এই অমুক অমুক পাওয়াটা বিশেষ কিছু নয় হয়তো, মনে মনে এইসবই ভেবে থাকি আমরা। তার পর জীবনটাকে, বাঁচাটাকে টেকেন-ফর-গ্রান্টেড ধরে বাঁচতে বাঁচতে মৃত্যু এসে যখনই আমাদের দোরে কড়া নাড়ে, তখনই কেবল টের পাই, কী ভীষণ কী তীব্র একটা পাওয়া এই মানবজীবনটা!...আমার কাছে তোমার ভালোবাসাটা ঠিক এমনই। তুমি খুব যত্ন কর আজকাল আমার, দূর থেকে যা যা পারা যায়, সবই কর তুমি। তুমি খুঁজে খুঁজে সময় নিয়ে আমাকে আমার পছন্দের বইগুলো পাঠাচ্ছ। আমার একটা ল্যাপটপের দীর্ঘদিনের শখ ছিল এবং তার দরকারও ছিল, কিন্তু কিছুতেই কিনে উঠতে পারছিলাম না। আমি আশা করিনি, আমি ওটা চাইওনি তোমার কাছে, তবু তুমি ঠিকই কিনে দিলে। জানো, ল্যাপটপটা বাসায় আনার পর যখন তোমাকে দেখাবার জন্য ছবি তুলছিলাম, তখন এত আনন্দ হচ্ছিল যে, আমি কান্না থামিয়ে রাখতে পারিনি। যদিও যেকোনও বিলাসী বস্তুই আমার কাছে মূল্যহীন, কিন্তু এটা ছিল দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষার বস্তু।


আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাইনি। আসলে ধন্যবাদ দেবার যোগ্যতা, অথবা ধন্যবাদের যোগ্য সব ভাষাই, তোমার বেলায়, আমার কাছে ভীষণ অযোগ্য। আমি কেন দেবো তোমাকে ধন্যবাদ? তুমি যখনই এটাকে তোমার দায়িত্ব ভেবেছ, আমি তখনই এটাকে আমার অধিকার ভেবে নিয়েছি। আমার চারপাশে অনেক গাছ ছিল এতদিন, গাছের ছায়াও ছিল বেশ, কিন্তু সে গাছের ছায়ায় আমার জায়গা হয়নি ছিটেফোঁটাও, কেন যেন আমার বেলাতেই সব কিছু কম পড়ে যেত। আমি দেখতাম, ওদের কার কার কী কী লাগবে, যদিও আজ পর্যন্ত ওদের কাউকেই আমার সেরাটা দিয়েও খুশি করতে পারিনি। আর যখন ওদের জন্য নিজের অধিকারটুকু, নিজের প্রয়োজনটুকু ছেড়ে দিতাম, তখন নিজের কাছে নিজেকে ভীষণ মহৎ মনে হতো, জানো? আর সুযোগ পেলে অমন মহৎ হতে কে না চাইবে? আমি আসলে সব সময় আমার স্রষ্টার কাছে হাত তুলে চেয়ে চেয়ে সামনে এগোনর শক্তি সঞ্চয় করে হেঁটেছি। আমি জানতাম, আমি সব সময় জানতাম, আমার মাথার ছাদ নড়বড়ে, আমার পায়ের নিচের মাটি আলগা। আমার স্রষ্টার সাহায্য ছাড়া, বিশ্বাস করো, আমি আর এক পা-ও এগুতে পারতাম না।


গাছ কিন্তু অনেকই থাকে, সব গাছ ছায়া দেয় না। তুমি আমাকে এটা সেটা দিয়ে পাগল করে রাখ, কিছুদিন তোমার উপহারের বহরের নিচে দম আটকে হাঁসফাঁস করতে থাকি, তার পর…তোমার শূন্যতা আবার আমাকে জাপটে ধরে। ভয় হয়, ভীষণ ভয় হয়। এতদিন ভয় পেতাম কী করতে কী করে বসব, তার পর তুমি রেগে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে! তখনও মৃত্যুর ভয়টা ওভাবে ভেবে দেখতে বাধ্য হইনি। অথচ আজ মনে হয়, আজ ভয় হয়…মৃত্যুর আগে কি শেষবারের মতো হলেও তোমার স্পর্শটা পাব না? তোমার সাথে কত রাগ দেখাই, অভিযোগ করি, ভীষণ অভিমানে থেকে মুখগোমড়া করে কথা না বলে তোমাকে কষ্ট দেবার উদ্দেশ্যেই বসে থাকি, কিন্তু তার চেয়ে বেশি কষ্ট নিজে পাই। তুমি এটা বুঝতে পার? আজ মনে হয়, আজ বুঝতে বাকি নেই যে, ওই সময়টুকুও বৃথাই বরবাদ গেছে। জানো, আজকে থেকে তুমি আমাকে যত খুশি বকো, যত খুশি আমাকে সময় না দিয়ে ব্যস্ত থাকো অন্য কাজে, অন্য কোথাও আরও গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য থাকো, তবু আমি অভিযোগ তুলব না, অভিমান করে মুখফুলিয়ে বসে থাকব না। আমি রাগব না, আমি চলে যেতে চাইব না, আমি তোমার সব কিছু মেনে নেব।


আজ আমার সময় অনেক অনেক অল্প। যেটুকু সময় আছে, যেটুকু সময় পাই, আমি তোমাকে ভালোবাসব শুধুই। তুমি আমাকে যতটা তীব্রভাবে স্পর্শ কর, আদর করে দাও, ঠিক ততটা তীব্রতা নিয়ে আমাকে বোকো আজকে থেকে। আমাকে তোমার যা খুশি, যা যা ইচ্ছে হয় বোলো, যা যা ইচ্ছে হয় কোরো। উঠতে-বসতে আমার সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম যে ভুলগুলো হয়, সেগুলোও একটা একটা করে ধরিয়ে দাও, আমাকে শাস্তি দাও, আমাকে লজ্জা দাও, আমি তবুও কিচ্ছু বলব না। আমি তোমার সবটা নিয়েই তোমাকে চাই আজকে। আমার তোমার সবটাই চাই। যে কটা দিন বেঁচে আছি, তোমার সবটুকু নিয়ে বেঁচে যেতে চাই। এই আশাটুকু তোমার চোখে অনেক ক্ষুদ্র হতে পারে, কিন্তু আমার কাছে এটাই সারাজীবনের পাওয়া। কখনও ভুলেও ভেবে নিয়ো না যে, তুমি আমার আগে চলে যাবে। আমি তা হলে রোজ-কিয়ামতের দিন আমার স্রষ্টার কাছে বিচার চাইব। আমার স্রষ্টাকে বলব, এই মানুষটি আমাকে কথা দিয়েছিল, আমরা একসঙ্গে বাঁচব, কিন্তু এই মানুষটি আমাকে কথা দিয়ে কথা রাখেনি। আমি শেষবিচারের দিন তোমার বিচার চাইব। এই পৃথিবীতে তুমি ছাড়া আর কোন মানুষটা কেবলই আমার, বলো?


আমাকে একলা রেখে চলে যাবে কার কাছে? বরং আমি যদি আগে চলে যাই, তুমি ঠিকই একটা না একটা অজুহাতে বেঁচে থাকতে পারবে। আমার যে সব অজুহাত কেবলই তুমি। এতদিন আমি একবুক কষ্ট আর ক্ষোভ নিয়ে কাঁদতাম, কিন্তু আজ আমি আনন্দে আন্দোলিত হয়ে কাঁদি। কান্না ঠিকই আছে, কেবল উৎস আর কারণ বদলে গেছে। তুমি ভেবো না, আমাকে ছেড়ে আগে চলে গেলেই বেঁচে যাবে। আমাকে ছেড়ে কোথাও কি তুমি ভালো থাকবে? একআকাশ তারা এতটা কাল আমি একা একা দেখতাম, আজকে তুমি পাশে না থাকলেও যখনই যা-কিছু দেখি, তোমাকে সব কিছুতে অনুভব করি। আজ আমার চোখে সব কিছু স্বচ্ছ, সুন্দর, কোমল, নরম। আমার বন্ধদুয়ারে আজ আমার আর একলা লাগে না। আজ আমার কথায় কথায় মরে যেতে মন চায় না। মানুষের জীবনে হিসেবগুলো কত দ্রুত বদলায়! আমি বেশ থাকি আজকাল, তোমাকে নিয়ে। আমি হয়তো কোনও পার্থিব সফলতা পাইনি, কিন্তু আমি যে তোমাকে পেয়েছি, এটাকে তুমি কী বলবে? আর একটা জিনিস জানো? আমার তোমাকে এখানে, এই পৃথিবীতে একলা ফেলে রেখে যেতে ভয় করে, যদি তোমার দম বন্ধ হয়ে আসে কখনও? যদি তুমি কষ্ট পাও কখনও আবার? তখন তোমাকে কে সামলাবে? আমার মতো এতটা আদর দিয়ে কেউ কি পারবে কাছে টেনে নিতে? যদি পারে তা হলে আর চিন্তা নেই, কিন্তু যদি না পারে, তবে কার ভরসায় রেখে যাব তোমাকে, একা? আমি তোমাকে কষ্ট পেতে দেখতে পারব না। জেনো, একসময় বেলাও ফুরিয়ে আসতে পারে, কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা যেকোনও অজুহাতে বেঁচে থাকেই।


আচ্ছা, তোমাকে আগের কিছু চিঠি দিই? অভিমানে, কষ্টে এই মনে যা এসেছে নানান সময়ে, তা-ই লিখে ফেলেছি, সেসব চিঠি…না-পাঠানো কিছু চিঠি…দিই?


কেমন আছ তুমি? এখন আর জানতে দিতে চাও না বা নিজেও জানতে চাও না…! চাইবেই-বা কেন…? আমি তো তোমার কেউ নই! কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ত থাক এখন, তাই না? পরিবার নিয়েও? এখন আর একা একা রাত জাগতে হয় না…বেশ সকালেই ঘুম থেকে উঠে পড়! দায়িত্ব তো পালন করে যাচ্ছ, কিন্তু ভেতরের তুমিটাকে কেমন রেখেছ, বলো তো? বড্ড মনে পড়ে তোমাকে…মাঝে মাঝে অনেক বেশি! কতটা বেশি, কোনও দিনই হয়তো তা বুঝবে না! লেখালেখি কর না কেন আর? বুঝলাম, আমি তোমার কেউ নই। তাই অবহেলাটা অনায়াসেই করতে পার, কিন্তু লেখালেখি তো তোমার অনেক বেশি আপন আর প্রিয়! তাকেও এমন অবহেলা কেন?


জানো, তোমাকে যখন বেশি মনে পড়ে, তখন একা একা চোখ বন্ধ করে তোমার সাথে কথা বলি। সেই তুমিটা চুপ থেকে এড়িয়ে যায় না আমাকে তোমার মতো। বারবার তোমার হাসিমুখটা মনে পড়ে। তোমার হয়তো আমার কিছুই মনেও নেই! আগে জানতাম, ছেলেরাই মেয়েদের হাসির প্রেমে পড়ে, এখন উল্টোটাও বুঝলাম নিজেকে দিয়ে। আজ সমরেশের একটা ইন্টার্ভিউ দেখলাম। উনি রবিঠাকুরকে ওঁর ঈশ্বর মানেন, আর তাঁর লেখাগুলোকে ধর্মগ্রন্থের মতো করেই পড়েন। একই হোমো স্যাপিয়েনস, অথচ কত ঈশ্বর, কত ধরনের বিশ্বাস! ওসব নিয়েও আবার কতকিছু!


এই দেখো আমার কাণ্ডটা! বেয়াদবের মতো শুধু ‘সমরেশ’ বলে ফেললাম! আরে বাবা, সে তো আমার ফ্রেন্ড লাগে না! বেহায়ার সাথে সাথে বেয়াদবও হয়ে গেলাম! আর কয়েকটা বিশেষণ যোগ করে দিয়ো তো আমার সাথে! তাহলে মার্কেটিংয়ের ফোরপি-আর-সেভেনএস থিওরির মতো কিছু একটা হয়ে যাবে। ছোটবেলাটা ভালো ছিল। কেন যে বড় হতে হয়! আবার প্রেমেও পড়তে হয়! আর তোমার মতো কঠিন মানুষকে ভালোবাসলে তো কথাই নেই! বাবু, এমনি করে দূরে সরিয়ে রাখ কেন আমায়? তোমার কাছে তো কিছু চাইনি, শুধু ভালোবাসতে দিয়ো সারাজীবন, তাতেই হবে! সেটাও কেন কেড়ে নিতে চাও, বলো? অবহেলা কিংবা যোগাযোগহীনতার এতটা সাধ্য নেই যে আমার উত্তমকুমারকে ভুলিয়ে দিবে! অনেক বেশি ভালো থাকবে তুমি, তাতে আমারও ভালো লাগবে! ঈশ্বর যেন সবসময় তোমায় ভালো রাখেন! ভালোবাসি!


কেমন আছে তুমি? হয়তো-বা ভুলেই গিয়েছ আমায়, তাই না? যাওয়াটাই তো স্বাভাবিক! হাম আপকে হ্যয় ক্যৌন? কবিতা লিখ না আর? ফেসবুকও চালাই না ইদানীং, তুমি লিখ কি না, তাও জানি না। দিনগুলো বড্ড তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছে, আর চিন্তাভাবনাগুলোও কমপ্লিকেটেড হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কাজগুলো আর এগোচ্ছে না। তুমিও দূরে সরে যাচ্ছ ইচ্ছে করেই, তাই না? যাকে হারাতে চাই না, সে যদি এমন করে, কেমনটা লাগে? একসময় ভেবেছিলাম, আর কাউকে হয়তো ভালোবাসতে পারব না, কিন্তু সব জেনেশুনেও দ্বিতীয়বার ঝাঁপ দিলাম তোমাতে! প্রথমবার তো আগুনও ছিল না, কী যে ছিল নিজেও জানি না। সবাই বলে, আমি নাকি ভালোবাসতে জানি না, শুধু জানি, অহংকার দেখাতে। তোমারও কি মন হয়, আমি ভালোবাসতে জানি না? এমনিও তো একাই ছিলাম, তার উপর আবার শূন্য করে দিলে কেন? আত্মসম্মানটুকুও ছাড়লে না! যে আমি কোনও দিনই কারও বিন্দুমাত্র অবহেলা দেখলে আর তার দিকে ফিরেও তাকাইনি, সেই আমিই তোমার জন্য…


সত্যি করে বলো তো, আমি কি তোমার কাছে কিছুই নই? জোর করে তো কেউ কোনও সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখতে পারে না গো! আমি দূরে সরে গেলে কি তুমি খুব ভালো থাকবে? বলো না প্লিজ! তা হলে তোমাকে আর কোনও দিনই জ্বালাব না! আমি ভালোবাসি, এটা আমার সমস্যা, তোমার তো না! কিছু পাওয়ার জন্য তো তোমায় ভালোবাসিনি। তুমি ভালো থাকবে, এটুকুই তো শুধু চেয়েছি! এগারো বছর বয়স থেকে একাথাকা শিখে গিয়েছি; চাইনি, তবুও শিখতে হয়েছে। হাতেগোনা কয়েকজনকেই শুধু বৃত্তে ঢুকতে দিয়েছি, আর যাকে বৃত্তের কেন্দ্রে রেখেছি, তার জন্য তো সবই করতে পারি! ভালো থেকো অনেক। ভালোবাসি! নজরুলের লাইন মনে আসছে…


তোমার বুকে স্থান কোথা গো এ দূর-বিরহীর,
কাজ কি জেনে?- তল কেবা পায় অতল জলধির।
গোপন তুমি আস্‌লে নেমে
কাব্যে আমার, আমার প্রেমে,
এই-সে সুখে থাক্‌বে বেঁচে, কাজ কি দেখে তীর?
দূরের পাখী-গান গেয়ে যাই, না-ই বাঁধিলাম নীড়!


বিদায় যেদিন নেবো সেদিন নাই-বা পেলাম দান,
মনে আমায় ক’রবে না ক’-সেই তো মনে স্থান!
যে-দিন আমায় ভুলতে গিয়ে
কর্‌বে মনে, সে-দিন প্রিয়ে
ভোলার মাঝে উঠবে বেঁচে, সেই তো আমার প্রাণ!
না-ইবা পেলাম, চেয়ে গেলাম, গেয়ে গেলাম গান!


তুমি কি ঠিক করেছ আর কখনও কথা বলবে না আমার সাথে? আমার সত্যিই অনেক বেশি কষ্ট হয়। তুমি কোনও দিনই বুঝবে না। যদি তোমার মতো সহজে সবকিছু ভুলে যেতে পারতাম…আসলে যার ব্যথা, শুধু সে-ই বোঝে! যার জন্যে ব্যথা, সে কীভাবে বুঝবে! ভালোবাসলে তাকে যত পার আঘাত দাও, নিয়ম কি এটাই? তোমার নিয়ম? ভালোটা যে বাসছে, তারই তো দোষ! তুমি তো মহান, জ্ঞানী, সুবক্তা, সুপুরুষ…হাত বাড়ালেই কত মানুষ চারপাশে, চাইলেই কতজনের জীবনের প্রথম…কেউ হওয়াও কোনও ব্যাপারই না! সামান্য কেউ দূরে বসে দিনের পর দিন কষ্টে পুড়লে তোমার কী এসে যায়? কাউকে পোড়ানোর সময় কারও মনে থাকে না, নিজে পুড়লে কেমন লাগে! নিজের সাময়িক সন্তুষ্টি আর একজনের সারাজীবনের হাহাকার! কত সহজ জীবন! কতটা সহজভাবে বাস্তবতায় বাস করি আমরা, কতটা সহজে ঢেকে ফেলি দুর্ভেদ্য আবরণে নিজেদের! কত সুখী সম্পর্ক আমাদের সবার! আমরা কত সত্যবাদী, ন্যায়বান, চরিত্রবান, বিশ্বাসী…আর বাকিরা? ওরা তো বোঝেই না মহত্ত্ব যে কী!


জীবনে আঘাতের কি কমতি ছিল? সেটাকে বাড়ানোর দায়িত্বটা নিয়ে নিলে! কাল্পনিক কষ্টের চিত্র থেকে যে কষ্টের অনুভূতিগুলো বেশি তীব্র হয়, সেটা কি তুমি কখনও বোঝোনি? যার পায়ের অর্ঘ্য হিসেবে পড়ে থাকতে চাইলাম, সে-ই অবজ্ঞায় মাড়িয়ে গেল! হায়, আমার দেবতা! আচ্ছা, এমনিতেই একটা কথা বলি। তুমি জানো, তোমার প্রতি টান, ভালোবাসা, রাগ, সম্মান যা-কিছুই আছে, তার সবকিছুই আমি তোমার সামনে মেলে ধরি। কিছু ভালোবাসার কথা বলি। আর প্লিজ, আমার ভালোবাসাটাকে দয়া করে ফান হিসেবে নিয়ো না। বাকিরা তোমার সাথে কীরকম, কে কী করল, কে আমার চাইতে তোমার বেশি খোঁজ নিল…এইসব দেখার সময় সত্যিই আমার নেই। আমি একটা জিনিস মাথায় সেট করে নিয়েছি, সেটা হচ্ছে, নিজে বাঁচলে বাপের নাম। তুমি সবকিছুকে, আবারও বলছি, ফান হিসেবে নিয়ো না। তুমি আমাকে ভালো না-ই বাসতে পার, কিন্তু আমার ভালোবাসা নিয়ে সন্দেহের কিছুই নেই। আসলে কী জানো, এই জিনিসটা না অনেক সময় ধরে আস্তে আস্তে তৈরি হয়েছে। হুটহাট করে না। তা হলে বুঝো, ভালোবাসাটা আসলে কী!


দেখো, কিছু চিরন্তন সত্যিকথা অনেকবারই শুনতে ইচ্ছে করে তোমার কাছ থেকে, এই যেমন …ভালোবাসি…কথাটা। আমার কান পাগল হয়ে আছে ওই কথাটা শুনার জন্য গত ৫ বছর ধরে। কিন্তু আমি যদি দেখি, ভালোবাসাটার সত্যিই কোনও মানে তোমার কাছে নেই, তা হলে না শুনাই ভালো। ভালোবাসার ক্ষেত্রে, প্রিয়মানুষটার কাছে…আমরা যেন বাচ্চা! তুমি সত্যিই জানো না, আমি সত্যিই তোমাকে ভয়ানক রকমের ভালোবাসি। আমার ঈশ্বরের নামে শপথ করে বলছি, তোমাকে আমি সত্যিই অনেক ভালোবাসি। কতটা, তা যদি তুমি দেখতে পেতে, তোমার নিজেরই হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যেত। আর সত্যিই তুমি এই ভালোবাসা দেখলে ভয় পাবে।


তোমাকে একবার কী যেন বলেছিলাম, তুমি আমার কথায় আঘাত পেয়েছিলে। আমি তখনই সাথে সাথে চাকু দিয়ে হাত কেটে ফেলেছিলাম। আমার মাথায় তখন ওই বিষয়টাই কাজ করছিল যে আমার হাত কী করে আমার প্রিয়মানুষকে কষ্ট দেয়! কথাটা মুখ দিয়ে বললেও হাতের উপরেই কেন রাগটা ঝাড়লাম, মনে নেই! যা-ই হোক, হাতটা ট্রিটমেন্ট করে সারিয়ে ফেলেছি, তবে বাকি কাহিনিটা কেউ জানে না। শুনো, তোমার ঘরে যে তোমার বউ, সে তোমাকে ভালোবাসে, কেননা তুমি তার জীবনসাথী, তার বাচ্চার বাবা, তার ভালোবাসার মানুষ। এই সবগুলোর পিছনেই একটা করে কারণ থেকে যাচ্ছে। আচ্ছা, সে তোমাকে বিয়ের আগে থেকেই ভালোবাসে, এটা ধরে যদি নিই, তবুও তো বলতে হয়, সে তোমাকে পাবার জন্য বা তোমার ভালোবাসা পেয়েছে বলেই তোমাকে ভালোবাসে। মানুষ চায়ই প্রিয় মানুষকে কাছে পেতে। সেটা অন্যায় কিছু না। আমি কখনও, সত্যি করেই বলছি, বিয়ে, প্রেম, ভালোবাসা কিছুই তোমার কাছ থেকে চাইনি। মন থেকেও আশা করিনি। এখন না…কী একটা জানি হয়েছে, জানো, তোমার প্রতি টান খুব বেড়ে গেছে। আর সেটা আমাকে দিন দিন পাগল করে দিচ্ছে। সিরিয়াসলিই!


আজ তুমি পোস্টে বললে না পালানোর কথা? সত্যিই তা-ই! আমার এখন ইচ্ছেও করে ওইটা। কই যাই তোমাকে নিয়ে, যেখানে শুধু তুমি আর আমি থাকব! আর আমাদের মতো ভালোবাসতে জানা কিছু মানুষ থাকবে। আমরা দুইজন একজন আর একজনের সঙ্গী হব। লিখার সঙ্গী, কথাবলার সঙ্গী এবং সবশেষে জীবনসঙ্গী। আমাদের সংসারে টাকাপয়সার প্রাচুর্যের চাইতে ভালোবাসার প্রাচুর্যটাই থাকবে বেশি। একটা মেয়েও হোক তোমার আমার! ঠিক তোমার মতো ভালো মানুষ হবে আমাদের মেয়েটা। আর আমার মতো ভালোবাসতে জানবে। তাকে আমি বলব, তোমার বাবার মতো হও। ভালো মনের একজন মানুষ হও। আমাদের মেয়েটা হিংসা, রাজনীতি, ধর্মের বাড়াবাড়ি, এইসব না শিখে অন্তত ভালো একজন মানুষ হয়ে উঠুক। এইসব ভাবতে থাকি। বেশিদিন হয়নি, এই কিছুদিন ধরে ভাবছি। তুমি তো জানোই, আমি তোমার লেখা পছন্দ করি। আর আমি চাইও তোমার লেখার হাত যেন চলতেই থাকে। এটার জন্য যদি সারাজীবন তোমার পাশেও থাকতে হয়, তুমি আমাকে পাবে।


শুনো না, কিছু কথা বলি। ভালোবাসি, সেটা যে কত বেশি, তা আমি নিজেও জানি না। না-ই বাসো ভালো, তবুও প্লিজ আমার ভালোবাসা নিয়ে হেসো না। শুনো, আর একটা কথা বলি, অনেক ভালোবাসি আমার এই বুড়া ভুঁড়িওয়ালা লোকটাকে। তুমি বুঝই না তোমাকে আমি কত্ত পছন্দ করি। বুঝোই যদি, তা হলে কেন আমার রাগটাকেই শুধু দেখ? আমি কি সবার সাথে রাগ করতে পারি, বলো? আমার অসুখ তুমি, আমার মেডিসিন তুমি! আমার সকল প্রশ্ন তুমি, সেইসব প্রশ্নের জবাবও তুমি।


তুমি আমার লাস্ট কবিতাটা পড়েছিলে? কেন পড়োনি? সবাই পড়েছে তো! অনেকে লাইকও দিয়েছে। এক তোমারই সময় হয় না পড়ার। অথচ কবিতাটা এক তোমারই জন্যে। অনেক চিঠি লিখতে ইচ্ছে করছে তোমাকে। আমার রাতজাগার অভ্যেস নেই। সত্যিই নেই। তবে সেটা যদি তোমার জন্যে হয়, তবে সারাজীবনও নির্ঘুম কাটাতে রাজি আছি। শর্ত একটাই---পাশে তোমাকে চাই। আমার তোমাকেই চাই! আমার আর কিচ্ছু চাই না। আমার শুধু একটা ‘তুমি’ চাই। আজকাল অনেক ব্যস্ত থাকো, না? আর ওই মেয়েগুলো কে, যাদের নিয়ে লিখ? আচ্ছা, ওরা তোমাকে ইনবক্সে অনেক কথা লিখে পাঠায়, তাই না? তুমি একটুও বিরক্ত হও না? তবে কি শুধু আমার বেলায়ই সব বিরক্তি? তুমি একটু ভেবে দেখেছ? তুমি আমাকে সব দিক থেকে কীভাবে সরিয়ে দিচ্ছ? কেন এরকম করছ? আমি কিছু বলতে পারি না। বললেই তুমি বল, আমি কথা ধরি বা তোমাকে জাজ করি। তুমি নিজেই দেখো, সময় তোমার সত্যিই থাকছে আমার জন্য? আগে ছিল কখনও? আমি ঠান্ডামাথায় জিজ্ঞেস করছি। উত্তরটা দেবে একটু? সত্যিই কি তোমাকে ঘন ঘন ‘আই লাভ ইউ’ বা ‘জান জান’ বলে মাথা খেয়ে ফেলেছি? এতগুলো বছরে তো পারিনি। আমি পারি না অনেক কিছুই। আর আমি সত্যিই অনেক লাজুক। তুমি সামনে থাকলে দেখতে, আমি লক্ষ্মীমেয়ের মতো মাথা নিচু করে বসে থাকতাম আর জ্বি, হ্যাঁ, হুঁ এতটুকুই বলতাম।


তোমার মনে আছে, একদিন সকালবেলায় তোমার মোবাইলে মেসেজ দিয়েছিলাম? ‘ভালোবাসি অনেক বেশিই’ এই লাইনটা লিখেছিলাম। এটা তখন দিয়েছিলাম, যখন আমার বেস্টফ্রেন্ডটি রোড অ্যাকসিডেন্টে মারা যাবার পর এক মাস হয়েছিল। এটা ছিল আমার ভেতর থেকে একটা তীব্র আর্তনাদ। আমি না সত্যিই পারছিলাম না নিজেকে আটকাতে। আর না পেরে টেক্সট করেছিলাম তোমাকে। মানুষ অসহায় হয়ে পড়লে কাকে মনে করে, বোঝ তুমি? সেদিন সন্ধ্যায় বলেছিলে, তুমি আমার কথা সারাদিন ভেবে একটা কবিতা লিখেছ। অন্য আলোয় আয়নাযাপন। যদিও এখানে অন্য কারও উপস্থিতি ছিল মনে হয়েছে আমার। প্রেমের কবিতা বড় অদ্ভুত জিনিস। কবিতাতে মেয়েটির জন্য যা বলা হয়, তা মোটামুটি যেকোনও নারীকেই বলে দেওয়া যায়!


আমি কখনও তোমাকে কিছুই বলতে পারিনি। দেখতে দেখতে অনেক কিছুই হয়ে গেল। তোমার বিয়ে, বাচ্চা, আরও কত কী! আমি কখনওই তোমাকে আমার মনের কিছুই বলতে পারিনি। তোমার সময় ছিল না, তা নয়। সময় তো ছিলই, সময় তো থাকেই, তবে তা ছিল কেবলই তোমার পছন্দের মানুষদের জন্য। আমার বেলায় এত কঠোর কেন ছিলে? আজও ঠিক ওরকমই রয়ে গেছ। খুব লাভ হয়তো হয়েছে তোমার আমাকে নিজের কাছ থেকে দূরে রেখে। মানুষের কত ধরনের যে লাভ থাকে! আচ্ছা, ওদের যে ফোন কর, খোঁজ নাও, বকা দাও…এইসব করে খুব ভালো লাগে, না? ভালো তো লাগবেই, তোমার প্রিয় যে ওরা! সব ব্যারিকেড তো কেবলই আমার বেলায়! তোমার লেখাগুলি পড়লেই অনেককিছু মিলে যায়। তুমি ওর সাথে দেখা করেছ কি না, তুমি ওকে ফোন করেছ কি না…আরও কত কী! আমি জানি না, সে কে। তবে আমি এইসব ভাবি।


গতকালকের কবিতাটা কাকে নিয়ে লিখেছ? নিশ্চয়ই তোমার প্রেমিকাদের কেউ হবে। ওই যে কবিতাটা…ছেঁড়া চিরকুট…না কী যেন শেষের অংশটা! মনে করতে পারছি না ঠিক। আমি তোমাকে পাইনি কখনও, আর পাবার আশাও করি না। তুমি তাদের নিয়েই থাকবে, যারা তোমার প্রিয়। ভুল করেও তুমি আমার নাম মনে রাখবে না। কেনই-বা রাখবে, বলো? আমাকে যে দেখতেই পার না তুমি! আচ্ছা, তোমাকে তো কিছুই বলা হয়নি। লজ্জায় অনেক কিছুই বলতে পারিনি। এখন আর কী বলব, কাকে বলব! বললেই-বা কী! এখন এমনও হতে পারে, তুমি আমার লেখা পছন্দ কর, আমাকে নয়। কিন্তু জানো, আমি তো গোটা তুমিকেই ভালোবাসি। আমি ১৫ দিন ছিলাম না। তুমি মিস করেছিলে আমাকে? মনে হয় না। তুমি হয়তো খেয়ালই করোনি যে আমি তোমার ফ্রেন্ডলিস্টে নেই, মিসকরা তো অনেক দূরের কথা!


কিন্তু, কেন আমায় মনে রাখো না? আমি তো তোমাকে কখনও কোনও সমস্যা বা আমার নিজের জন্যে দরকারি কিছুর কথা বলিনি। বাকিদের মতো এক্সের কথা বলে বলে তোমার মাথা খাইনি। অবশ্য আমার এক্স, ওয়াই, জেড কোনও কালেই ছিল না, এখনও নেই। আমার সবকিছু এক তোমাতেই আটকে ছিল। এখনও আছে। তোমার মনে আছে, প্রথম দেখা-হবার দিন? তোমার ওই হাত ছুঁয়ে গিয়েছিল আমাকে! আমার তো এখনও তোমার স্পর্শ লেগে আছে। মনে আছে, সেইদিন তোমার মুখের খুব কাছে আমার মুখটা নিয়ে শুধু তোমার ওই চোখে চোখ রেখে ডুবে গিয়েছিলাম অনেকক্ষণের জন্য? হঠাৎ ওয়েটার এসে বলে, স্যার, আপনাদের কফি! শুনে আমি আচমকাতে চোখ সরাই তোমার চোখের উপর থেকে। সেদিন তোমার নিঃশ্বাস পড়ছিল আমার উপর। মনে আছে? না, বোধহয়। থাকবেই-বা কী করে? আমাকে তো আর মনে রাখোনি! ওইদিন না তোমার চোখ এত কাছ থেকে দেখে, আর অনেকক্ষণ তোমার দিকে তাকিয়ে থেকে ভেতরে খুব কষ্টই পেয়েছিলাম। তুমি আমার নও, আর কোনও দিনই ওভাবে সকাল বিকাল বা মনখারাপের সময় ওই চোখে ডুবে যেতে পারব না। ওই চোখে, যেখানে রয়েছে আমার স্বর্গের সুখ, আমার গোটা পৃথিবী, সেই চোখের মালিকের কাছেই এই জীবনে আমার থাকা হলো না।


এই, তুমি সত্যিই এমন কেন? খুব খুব পাগল করে ছাড়ছ! এতদিন এসবের কিছুই বলতে পারিনি। আর এখন বলতে না পারার জন্য মরে যাচ্ছি। তুমি জেগে আছ? নাকি কারও সাথে চ্যাটিংয়ে বিজি? এই এই এই! আমার ‘ওগো’টা! শুনছ? ঘুম হয়ে আসো না আমার দুচোখে! তুমি আমার ভালোলাগার মানুষ, ভালোবাসার মানুষ, অনেক বছরের অনুভূতির মানুষ। তুমিই আমার সবকিছু! সবকিছু মানে সবকিছুই! যেহেতু বলেছি, তুমি আমার পৃথিবী, বোঝই তো পৃথিবীর মানে। অবশ্য, আমার মনে হয়, তুমি আমাকে কম বুঝ বা কম বুঝতে চাও। আমি চলে যাই? আমি আর কী করতে পারি? আমি ঘুমিয়ে পড়বই তো! তোমার মতো কি কথাবলার অনেক মানুষ আছে আমার?


একটা ব্যবসা শুরু করেছিলাম, কিন্তু ওটার পেছনে তত একটা সময় দিচ্ছি না। অথচ যদি দিই, তা হলে আমিই এগিয়ে যেতে পারব সবার আগে। আমার কিছুই করতে কেন ভালো লাগছে না, আমি নিজেও ধরতে পারছি না। এদিকে আম্মুর চোখের অবস্থা ভালো না। চোখের অপারেশন করাতে হবে, চোখে ছানি পড়েছে। আমি কেমন যে আছি, কীভাবে বলি! জানি না। সত্যিই জানি না! আচ্ছা, তোমাকে একটা কথা বলি তাকে নিয়ে? ওই যে সেদিন ফোনে যার কথা বলেছিলাম তোমার কাছে…বলি, কেমন?


তার সাথে আমার যখন কথা হয়েছিল, তখন সে আমাকে তোমার নাম ধরে বলেছিল, ‘আচ্ছা, অমুক তোমার ফ্রেন্ড না? তোমার এই যে মন খারাপ থাকে, তা সে তো শুনেছি অনেকের মন ভালো করে দেয়, অনেকের কাউন্সেলিংও নাকি সে করে, শুনেছি। তোমার যে মন খারাপ, সে কিছু বলে না?’ আমি তখন বলেছিলাম ওকে, ‘দেখুন, কারও মন খারাপ থাকলে তার দায়িত্ব কেউ নিতে পারে না। আর মন ভালো করে দেবার দায়িত্ব তো ওঁর নয়। আর আমি ওঁর কাছের কেউ না। আমরা জাস্ট ফেসবুক ফ্রেন্ড। এই তো!’ তখন সে বলেছিল, ‘না না, আমার কাছে যা মনে হয়েছে, আমি তোমাকে বলেছি। আর দেখো বিভা, তুমি একটা অ্যানজেল। অ্যানজেলদের কখনও মন খারাপ করে থাকতে নেই।’


জানো, তার ওইদিনের ওই কথাগুলি আমাকে একটা জিনিস বুঝিয়েছে, আর সেটা হলো, প্রান্তর সময় আছে কারও ব্রেকআপের কথা শুনার, কারও ভালোলাগার কথা শুনার, কারও ডিপ্রেশনের কথা শুনার। কিন্তু তার কখনও সময় হয়নি বিভার কথা শুনার। ব্যাপারটা তো ভালোই! আমি পরে নিজেই ভাবলাম। তাই তো! আমি বরাবরই আছি তোমার ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিস্টে, আর কোথাও আমি থাকিনি কখনও। জানো, তাকে না আমি বলেছি আমি আমার কথা। বলেছি, আমি একজনকে খুব ভালোবাসি। পাঁচ বছর ধরে বেসে আসছি। ওঁকে যতটা ভালোবাসি, তেমনি করে আমি কাউকেই ভালোবাসতে পারব না। তখন সে কী বলেছে, জানো? বলেছে, মানুষটার নাম কী? আমি তাকে বলেছি, আচ্ছা, আপনি কি নাম বললেই চিনবেন? দেশের সবাইকে চেনেন আপনি? তখন সে বলে, তো নাম শুনলে সমস্যা কী? আমি বলেছি, প্লিজ, নামটা জানতে চাইবেন না। তখন সে বলল, তুমি যাকে ভালোবাস, সে অনেক অনেক লাকি একটা মানুষ আমার মতে, কেননা সে তোমার ভালোবাসা পেয়েছে। আমি তখন তাকে বলেছিলাম, কিন্তু আমি যাকে ভালোবাসি, সেই মানুষটা আমাকে ভালোবাসে না। সে আমাকে পছন্দই করে না!


সে অনেকক্ষণ চুপ করে ছিল আমার কথা শুনে।


তুমি যে স্ট্যাটাসটা দিয়েছ, ওটাতে অনেক সুন্দর কথা বলেছ। আমাকে সময় দিতে হবে না। আমি কখনওই তোমার পাশে ছিলাম না, তাই দিয়ো না সময়। সাবধানে থেকো, প্রিয়। আমার সময় লাগবে না, কিচ্ছু লাগবে না আমার। এই যে তোমায় লিখি, না লিখে পারি না বলেই লিখি। মনের কথাগুলো বের হয়ে আসে মাঝে মাঝে, তোমাকে বলতে তো আর পারি না, তাই লিখতে হয়। তবে আমি তোমাকে আর বিরক্ত করব না কখনও, বলেছি তো! কিন্তু তুমি কি জানো একটা কথা?...প্রায় ৬ বছর হবে। খুব আস্তে আস্তে তুমি বিশ্রীভাবে আমার সাথে জড়িয়ে গেছ না চাইতেও। না, তুমি কোথাও ছিলে না, কিন্তু তুমিই জড়িয়ে ছিলে সবখানে। আমার ভালোবাসা আমি তালাবন্ধ করে রেখেছি এখন। ৩৬৫ দিন আর ২৪ ঘণ্টা করে হিসেব করে দেখো তো ৫ বছরে কত দিন আর কত ঘণ্টা হয়? এই এত দীর্ঘ সময়েও তুমি কখনও সময় বোঝোনি, তুমি কখনও আমায় বোঝোনি। থাকো তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষদের নিয়ে। বেসেছিলাম কাউকে কখনও ভালো, আজ এতটুকুই জানি শুধু।


তোমাকে একদিন আমি কিডন্যাপ করে ফেলব। এর পর অনেক মজা হবে। তোমার গফরা সব কেঁদে বুক ভাসাবে তখন।…নাহ্‌ থাক! তুমি তো আমাকে দেখতেই পার না! পরে দেখা যাবে, ওদের জন্য উল্টো তুমিই কেঁদে কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিচ্ছ! তোমাকে কখনও ছুঁয়েদেখা হয়নি আমার। তুমি খুব সুন্দর করে তোমার প্রিয়জনকে ছুঁয়েফেলার অধিকার দাও। তুমি আমার বেলায় কেন এত কঠোর ছিলে! এভাবে তো না করলেও পারতে তুমি! তুমি তাকেই রাখো সবচে কাছে যে তোমায় রাখে সবচে দূরে! নতুন মানুষ দেখলে ভাবো, ওকে একটু কাছে টেনে নিই! অথচ দেখো, একদিন আমিও নতুন মানুষই ছিলাম, তবুও কখনওই তোমার কাছে ঘেঁষতে পারিনি। কখনও নিজের কষ্টের ছিটেফোঁটাও যেন তোমার ঘাড়ে না পড়ে, সেটাই মাথায় ছিল সব সময়ই। তুমি সত্যিই অনেক কিছু পার! দিন যত যাচ্ছে, আমার এখন অনেক কিছুই বিশ্বাস হয়। তা যাক গিয়ে! সেটা দিয়ে আর তোমার কী করার আছে, বলো!


তোমার যাদের ভালো লাগে, তাদের সাথে দেখা করো, ফোন করো, ঘুরতে যাও। ব্যাপার নাহ্‌! এইসব নিয়ে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাব, সেই রকম তো আর আমি না। তবে একটা সময় পরে গিয়ে আমার যদি কখনও মনে হয়, তোমার রুচি বলতে কিছু নেই, সেই দিন তোমার কথা ভেবে খুব কষ্ট হবে। হুম্‌, আমি তোমাকে এখন আর ভালোবাসি না। বাসলে রাগ করতাম, জাজ করতাম, বিরক্ত করতাম। কিছুই তো করি না আর! তোমাকে তোমার মতোই থাকতে দেওয়াই আমার কাজ, আমার মনে যা আগেও ছিল।


চোখের জল বিনিয়োগ করে কেউ কাউকে আপন করে নিতে পারি না। কিন্তু যাকে ভালোবাসি, তার ভালোর জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে কেঁদেছি। অনেক অনেক কেঁদেছি। তুমি বিশ্বাস করবে কি না, জানি না। ভাইয়া আমাকে নিয়ে সব সময় বলে, আমি অনেক শক্ত মেয়ে। আর দেখো, এই শক্ত মেয়েটাই কিনা দিনের পর দিন তোমাকে নিয়ে কেঁদে কেঁদে চোখ ভাসিয়ে দিয়েছে। তার পরও আমি কিন্তু কখনওই তোমাকে জ্বালাইনি। এটা তুমিও স্বীকার করতে বাধ্য। তোমাকে আমি ভালোবেসেছি, এর মানে এই না, তোমাকে ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল বা তোমার কাছে কান্নাকাটি করে তোমার মন আদায় করতে হবে। ইদানীং কিছু মেয়ের তোমাকে লেখা মেসেজ পড়ে খুব লজ্জা লাগছে। মানুষ কীভাবে একজনকে ছেড়ে আবার তাড়াতাড়ি আর একজনকে ধরে ফেলতে চায়! কীভাবে ভালোবাসা এত দ্রুত রঙ বদলায়! ভাবছ, আমি এত সব জানি কী করে? ভাবতে থাকো, তবে জানতে চেয়ো না।


তুমি যদি হঠাৎ কোনও কারণে এদেরকে সময় দিতে না পার, এরা তো পাগল হয়ে যাবে! কাউকে অভ্যাস বানানোর আগে বুঝে নিতে হয়, আমরা কেউই দুনিয়ায় চিরদিন থাকব না। তাই এই দুইদিনের দুনিয়ায় আবেগটাকে কমিয়ে কীভাবে ভালোভাবে নিজে বাঁচা যায়, সেটাই ভাবা ভালো। তোমার মনে আছে, তোমার এক আত্মীয়ের বিয়ের আগে তুমি একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলে ২০১৫-তে না কবে যেন! খুবই স্যাড টাইপের স্ট্যাটাস ছিল ওটা। কী যেন স্ট্যাটাসটা…লেখাটা অবিকল মনে নেই, তবে স্যাড টাইপেরই ছিল। আমি না তখন সাথে সাথে তোমাকে ইনবক্সে নক দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোমার কি সত্যিই মন খারাপ? তুমি বললে, হুম্‌!


ওইটুকুই! আর কিছুই নয়। কী যে কষ্ট লেগেছিল জেনে, তা বলার বাইরে। পরের দিন সকালে ভিক্ষুক এসেছে বাসায়। টাকা দিলাম। টাকা দেওয়ার পর উনি বলছেন, মা, অনেকদিন হয়, গরুর মাংস দিয়ে ভাত খাইনি। আমাকে মাংস দিয়ে খাওয়াবে একদিন? আমরা তো কিনতে পারি না। আমি বললাম, হুম্‌ খাওয়াব। ফ্রিজে রান্নাকরা তরকারি আছে। আপনি বসেন, গরম করে নিয়ে আসি। উনি বসলেন, আর ওঁকে মাংস, ডাল আর মাছভাজা দিয়ে খেতে দিলাম। ওঁর যেন খারাপ না লাগে, তাই ওঁর সাথে আমিও মাটিতে পিঁড়ি পেতে বসলাম। ওঁকে ঘরে নিয়ে বসানো যাচ্ছিল না। উনি কোনওভাবেই ঘরের ভেতরে যাবেন না।


ওঁর খাওয়া শেষ হলো। দেখলাম, খাওয়া শেষ করে উনি দুইহাত তুলে দোয়া করছেন আমার জন্য। উনি দোয়াতে বলছেন, এই মেয়ের উছিলায় আল্লাহ তুমি আমাকে অনেকদিন পর ভালো-মন্দ কিছু খাওয়ালে। এই মেয়ের ভালো করো, আল্লাহ! আমার না সঙ্গে সঙ্গে তোমার কথা মনে পড়ে গেল। তুমি বলেছিলে গতরাতে, তোমার মন ভালো নেই। জানো, আমি না ওঁকে বলেই ফেলেছি, দাদি, আমার খুব প্রিয় একজন মানুষের জন্য একটু দোয়া করে দিবেন? আল্লাহ তো মুরুব্বিদের দোয়া শুনেন। ওমা! দেখি, উনি না আবার মোনাজাত ধরলেন এবং বললেন দোয়ায়, আল্লাহ, এই মেয়ে যার জন্য দোয়া চাইছে, তার তুমি ভালো করো। তাকে সুস্থ রাখো, তার সকল মনের ইচ্ছে পূরণ করে দাও। উনি অনেক খুশি গরুর মাংস দিয়ে খেতে পেরে!


এখন ওঁর কথা বলি তোমাকে। ওঁর বয়স কত, জানো? নব্বইয়ের কাছাকাছি। হাঁটতে পারেন না, কানে কম শুনেন, লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটেন। কী করবে বলো, ওঁর স্বামীর মৃত্যুর পর ওঁর দেবররা ওঁকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। উনার এক ছেলে আর এক মেয়ে। ছেলে মায়ের খোঁজ নেয় না। বিয়ে করে বউকে নিয়ে দূরে থাকে। ওঁর সাথে মেয়ে আর মেয়ের বাচ্চা, মানে ওঁর নাতি। নাতিটা মাদ্রাসায় পড়ে। ওঁর মেয়ে মানুষের বাসায় কাজ করে অল্প কিছু পায়, সেটা দিয়ে ওঁদের ভালোভাবে চলে না। মেয়ের জামাই আর এক জায়গায় বিয়ে করে আর খোঁজখবর নেয় না ওঁর মেয়ের। ওঁর এই নব্বইয়ের কাছাকাছি বা তারও বেশি বয়সে ভিক্ষাকরাটাকে আমার মেনে নিতে কষ্ট হয়। কিছু সাহায্য করতে পারলে করি, আর যেদিন করতে না পারি, সেদিন ওঁর কথা শুনি অনেক সময় নিয়ে। এতে করে কী হয়, ওঁর কষ্টটা কিছুটা হলেও হালকা হয়। আমার সামর্থ্য অল্প। এর বেশি আমি করতে পারি না।


ওঁর ছবি আছে। আমি তোমাকে পাঠাব। এখন উনি বেঁচে আছেন কি না, আমি জানি না। দুই বছর ধরে উনি আর আসেন না ভিক্ষা নিতে। শুনেছি, ওরা কোন গ্রামে নাকি চলে গেছে। শহরে কোথাও থাকার জায়গা পাচ্ছে না। এইভাবেই কিছু মানুষ চলে যায় আমাদের জীবন থেকে। একদিন আমিও চলে যাব আকাশের তারা হয়ে। তখন কি তুমি আমার কথা মনে করবে? আমার তো মনে হয় না। কারণ তোমার মন এত বড় না যে ওই মনে তুমি আমাকে রেখে দিবে।


আমি যে প্রান্তকে ভালোবাসি বা বাসতাম, সেটা তুমি না। সে কোথায় হারিয়েছে, বলতে পার? আমি তাকেই খুঁজছি! আমি তাকেই ভালোবাসতে চাইছি। আমি তাকেই জড়িয়ে ধরে আমার সুখ-দুঃখের সব কথা বলতে চাইছি। আমার ওই প্রান্তটাকে যদি বলতাম, আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই, তবে সে অবশ্যই দেখা করত আমার সাথে। যেভাবে সে দেখা করেছিল আমার সাথে কেএফসি’তে। তার রুচি অনেক ভালো আমার জানামতে। আচ্ছা। তুমি কি সেই প্রান্তকে খুঁজে দিতে পারবে আমার জন্য?


আর একটা কথা। তুমি এখন কোথায় আছ, আমি পুরোপুরি জানি না। সেদিন তোমার কাছে ঠিকানা চাইলাম। দিলে না কেন? আমি যদি তোমায় কিছু পাঠাতে চাই, তবে কোন ঠিকানায় পাঠাব? না কি তোমার ঠিকানা আমাকে দেওয়া বারণ? কাকে দিয়েছ ওটা? বিশেষ কাউকে? দাও দাও, ওকেই সব দাও! তোমার নিজেকেও দিয়ে দাও। তোমার জন্য আমার বিন্দুমাত্রও ভালোবাসা আর নেই। সব মরে গেছে।


এই তুই জানিস না? তুই আমার বিশ্রী রকমের ভালোবাসা! এতদিন তিল তিল করে গড়েওঠা ভালোবাসাটাকে এইভাবে হত্যা করে ফেলে কেউ? ওই বুকে আমি ছাড়া অন্য কেউ থাকে কী করে? ওটা আমার জায়গা না? তা হলে কই আমার জায়গা? অন্য কারও বুকে? ঠিক আছে, তা হলে আসব না আর তোর বুকে!


সাবধানে থেকো। কারও জন্য ভালো থেকো। কেউ একজন অপেক্ষায় আছে তোমার, কেউ একজনের ভালোবাসা এখনও শেষ হয়ে যায়নি, কেউ একজন তোমার বুকে মাথা রেখে কাঁদবে বলে অনেক কান্না জমিয়ে রেখেছে, কেউ একজন শুধু তুমি ছোঁবে বলে নিজেকে অন্য কাউকে ছুঁতে দেয়নি, কেউ একজন এখনও বিয়ে করেনি শুধু তোমায় ভালোবাসবে বলে, কেউ একজন বছরের ৩৬৫ দিনই মনে মনে তোমার অপেক্ষায় আছে তুমি আসবে তাই, কেউ একজন খোঁপায় বেলিফুল গোঁজেনি তুমি বেলিফুল নিয়ে আসবে বলে, কেউ একজন হাতটা ধরতে দেয়নি কাউকেই এই ৫ বছরে ওটা তুমি আবারও ধরবে বলে, এই ঠোঁটে ঠোঁট কেউ রাখেনি শুধু তুমি রাখবে বলে।


এই আমার বুড়া লোক! তুমি জানো না, তোমার এই বাজে অ্যানজেলটা আরও বাজে হয়ে যাচ্ছে তুমি আসছ না তাই! আমি বিশ্বাস করে আছি, মৃত্যুর আগে অন্তত একটাবার তোমার ভালোবাসা পাব! যত আঘাত আছে দাও, যত গালি আছে দাও, যত ব্যথা আছে দাও, যত মারতে চাও মারো…আমার সবকিছুতেই যে শুধুই তোমার অধিকার!


কেউ একজন সত্যিই তোমার অপেক্ষায় আছে…


তুমি যখন সেদিন জানতে চাইলে, আমি তাকে ভালোবাসি কি না, আমি চুপ ছিলাম, কিছু বলিনি। আমি তোমাকে পাল্টা প্রশ্ন করেছিলাম, তোমার লেখায়ও তো বোঝা যায়, তুমি কাউকে ভালোবাস, কারও সাথে সকাল বিকাল থাকো! তুমি উত্তরে বলেছিলে, না। অথচ উত্তরটা কী, সেটা বিধাতাই ভালো জানেন!


আচ্ছা, তুমি তো লিখ অনেক আগে থেকে। তোমার লেখা তো আমি আজ থেকে পড়ি না, বহুআগে থেকে পড়ি। কিছুটা হলেও তো চিনি তোমাকে, তাই না? না কি এটাও বলে বসবে যে আমি তোমাকে কিছুই চিনি না? তুমি বলছ, আমি বদলে গেছি! তা আমার বদলানোর পেছনের কারণটা খুঁজে দেখলে না? না কি দোষটাই সবার আগে খুঁজে বের করলে? জানো, মানুষ না অবহেলায় বদলে যায়! একটা মানুষের কাছ থেকে যদি তুমি প্রতিনিয়ত অবহেলা আর উদাসীনতা পাও, তুমি অবশ্যই বদলে যাবে। যাবেই! এটাই নিয়ম! কেউই এর বাইরে না।


তুমি আমার কথা মানবে না তো? বলছি, শুনো। ধরো, গাছ লাগালে খুব যত্ন করে। কিন্তু সেই গাছের কখনও খেয়াল রাখলে না। তা হলে সেই গাছটা কতটুকুই আর বাড়বে, বলো? তুমি হয়তো এখন বলবে, অনেক গাছই তো বেড়ে ওঠে অযত্নে, অবহেলায়। হ্যাঁ, ঠিক আছে। শুনে রাখো, ওই গাছগুলো কেউ লাগায় না। ওই গাছগুলো কেউ ভালোবেসে লাগায় না। ওই গাছগুলো, বেশিরভাগই দেখবে, নিজ থেকেই জন্ম নেয়, অযত্নে বড় হয়ে ওঠে এবং একসময়, শেষও হয় অবহেলায়, অযত্নে। অনেক আগাছাও এইভাবে জন্মে যায়, আবার এইভাবে শেষও হয়ে যায়। কিন্তু মানুষের বেলায় এমন হয় না। মানুষ এর ব্যতিক্রম। মানুষ ভালোবাসা না পেয়ে বেশিদিন থাকতে পারে না, ভালোভাবে বাঁচতে পারে না। ভালবাসাহীন হয়ে কে বাঁচতে চায়, বলো? তবু আমি আজও বেঁচে আছি তোমার ভালোবাসা ছাড়া। একটু ভেবে দেখো তো, কতটা যন্ত্রণা মাথায় রেখে আমায় ঘুমাতে যেতে হয় প্রতিরাতে!


আচ্ছা, তোমার লেখায় ইদানীং লক্ষ্য করছি, অন্য কারও আনাগোনা। আমি যদি ধরেই নিই, লেখক হিসেবে তুমি একটা কাল্পনিক চরিত্রই দাঁড় করিয়েছ সবার সামনে, তবে আমার ভুল হবে। না, তুমি এইবার কাল্পনিক কিছু দাঁড় করাওনি। সব-ই মিলে যাচ্ছে তোমার সাথে, তোমার পরিবারের সাথে। তুমি আমাকে এইবেলা প্লিজ বোলো না যেন আমি তোমাকে জাজ করছি। আমি আমার ধারণাটা বলে ফেলছি, আর কিছু নয়। আমি মনে রাখি না কিছুই। তোমাকে নিয়ে বাজে চিন্তা থাকলেও বলে ফেলি। কী করব, বলো?


এখন আসো, ২৭তম বিসিএস-এর সেই পুলিশমানুষটা কে নিয়ে। তুমি জানতে চেয়েছ, আমি তাকে ভালোবাসি কি না! প্রান্ত, তুমি কাউকে ভালোবাস? পাল্টা প্রশ্ন থাকল। তুমি বলেছ, তুমি নাকি আমার লেখায় ইদানীং অন্য কাউকে পাচ্ছ। হ্যাঁ, ঠিকই বলেছ তুমি। দুইটা লেখা দিয়েছিলাম শুধু তাকে নিয়ে। আচ্ছা, আর একটা পাল্টাপ্রশ্ন থাকল তোমার কাছে। তোমার লেখায় ইদানীং কে থাকছে? কোন মেয়েটা? ওই যে চুলে কালার করে, সেই মেয়েটা? না কি যে জন তোমার সবচে দূরে, সেজন তোমার সবচে কাছে…ওই মানুষটা? এরা কারা? কাল্পনিক? ‘বাবুই’ নামে কে ডাকে তোমাকে? থাকুক কিছু বাধ্যতার দাবি…কাকে নিয়ে লেখা? কে তোমাকে ফোন করে ওয়েটিংয়ে পেলে মাথা গরম করে ফেলে? কার বকা তোমাকে শুনতে হয়? বলো তো এসব!


তোমাকে তো এইভাবে কখনও বকিনি আমি। তোমাকে তো এইভাবে ফোনও দিইনি। তোমাকে তো তোমার মতো থাকতে দিয়েছিলাম। কেন বুঝলে না? আমার চুপ-থাকাটা দেখেই কেন ধরে নিলে, আমার ভালোবাসা কমে গেছে? আমি তো আমার প্রান্তকে চিনি। আমার প্রান্ত যদি কাউকে ভালোবেসে থাকে, তবে বাসবে। আমি আগেও কিছুই বলিনি, এখনও বলব না। আর তোমাকে নিয়ে তো বছর বছর লিখেই গেছি। কবিতা, গান, আরও কত চিঠি। ডাইরি। সেদিন পেলাম ২০১৮-তে তোমাকে নিয়ে লেখা কিছু কবিতা। জানো, আমার অনেক ধৈর্য! কিন্তু তোমার পাশে আমি কাউকে সহ্য করতে পারি না। ইদানীং এটা বেশি বেড়ে গেছে। আমি কী করব?


প্রান্ত, এমন একটা সময়ে আমরা চলে এসেছি, আর বাঁচব কি না, সেটারই তো কোনও গ্যারান্টি নেই। মৃত্যু এক সুন্দর জিনিস। এর মত সুন্দর বিদায় আর হয় না। তোমার কাছ থেকে যদি সত্যিই চলে যাই, তুমি কান্না তো করবেই না, মনে মনে আরও বলবে, যাক বাবা! যে মানুষটা বেশি জাজ করত, সেই মানুষটা চলে গেছে। ভালোই হয়েছে, এখন আর কেউ বিরক্ত করবে না। আমাকে ভালো না বাসার জন্য যে কেঁদে ভাসাবে, তেমন মানুষ তো আর তুমি নও!


দেখো, আমি অনেক জেদি। তবু এই জেদি মেয়েটা তোমাকে জিতিয়েই দেয় বারবার। তুমি ঢাকায় গিয়ে বলেছিলে, তুমি আমার সাথে একা দেখা করতে চাও না। দেখো, এই কথা শোনার পর আমি তোমার সাথে দেখাই করিনি। তোমাকে জিতিয়ে দিয়েছি। এখন একটা প্রশ্ন থাকল---এর পর কি তুমি কোনও মেয়ের সাথে একা দেখা করোনি? তোমার নিজের শহরে? কারও সাথেই না? বুকে হাত রেখে নিজের মনের কাছে নিজেই উত্তরটা দিয়ো, প্লিজ। তোমার লেখায় বোঝা যায়, কারও সাথে তোমার রোজ দেখা হয়, আর সে থাকে তোমার শহরেই। তোমার আশেপাশেই থাকে। এইবারও বললে, আমি জাজ করে ফেলছি বেশি! এর পর? দেখলেই তো, সরে এসেছি! পরিবর্তনটা বুঝতে পারছ? সত্যিই সরে এসেছি কিন্তু!


আচ্ছা, এই মুহূর্তে আমি এসব কেন বলছি! সেইবার যে বিদায় নিয়েছিলাম ১৫ দিনের জন্য, কিছু বলেছিলাম কি? না কি চুপ করে দূরে সরে গিয়েছিলাম? আমার ভুল হয়ে গেছে তোমাকে আবার নককরা। কিন্তু জানো, সেদিন রাতে তোমাকে নিয়ে স্বপ্নদেখার পর আমি সত্যিই নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। তুমি ওভাবে কাঁদছিলে, আমি সত্যিই ভয় পেয়ে গেছি তোমার কান্না দেখে। তাই সাথে সাথেই নক দিই। তোমার মন খারাপ থাকলে আমি প্রতিবারই বুঝি, কিন্তু কিছু বলি না তোমাকে। আমি চাই, প্রতিবার তুমি নিজ থেকে কিছু বলো বা সবটুকু বলো। আমি তো আছিই তোমার জন্য, তোমার কাছে। বলতে এত দ্বিধা কেন?


ইদানীং আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, তুমি ভালো নেই। সত্যিই তুমি ভালো নেই। কী হয়েছে? বলবে আমাকে? না কি আমাকে বলা যাবে না? আমি এই দিনের জন্য তো অপেক্ষা করিনি। তোমাকে কষ্টে দেখব, এটা তো আমার ধারণায় ছিল না। একটু ধৈর্য ধরবে? শুধু একটু! যেভাবে আমি তোমায় ভালোবেসে ৫ বছর পার করে দিয়েছি, সেইভাবে। না, তোমার ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে না। সব এর বহু আগেই ঠিক হয়ে হবে। জীবনটা খুব ছোট, জানো? এত কষ্ট পুষে রেখো না মনে।


শুনো, সেদিন এত রাগ করেছিলে, আমার ইচ্ছে করছিল, তোমার ঘরে চলে আসি। আর সামনে বসে তোমার বকা খাই। আহা, তুমিই তো বকাটা দেবে, আর কে দেবে, বলো? তুমি কী সুন্দর বলে ফেললে, আমি বিচার দেবো তোমার নামে কার কাছে যেন! সত্যিই তুমি আমায় চিনতে পারোনি। তুমি যদি আমাকে মারতেও, তবুও আমি কাউকে কিছুই বলতাম না। এটা আমাদের দুজনের বিষয়, তাই। আমার তোমাকে ভালো লাগে, তাই। তোমার আমার কথা বাকিরা জানবে কেন? হুহ্‌! আমার ভালোবাসা কি এতই সস্তা যে মানুষের মুখে মুখে আলোচনা হবে আমাদের সবকিছু নিয়ে? আমার ভালোবাসার মানুষটা যদি একটুও বুঝত আমার মনের কথা, তা হলে কী যে ভালো হতো!


তুমি ওইদিন অনেক কিছু বলে ফেললে। আমার নামে শুনেছ, আমি নাকি ভালো না, আরও কী কী যেন! জানো, আমি অনেক আগে থেকেই জানি, একদিন এই ধরনের কথা শুনতে হবে আমাকে। তাই আমি প্রস্তুত ছিলাম। যে মানুষটা তোমাকে এসব বলেছেন আমার সম্পর্কে, আমি জানি না সে কে। তবে তার জন্য মন থেকে দোয়া রইল, আল্লাহ ওঁর মঙ্গল করুক। ব্যাপার না! তবে একটা কথা কী জানো, যার নাম আছে, বদনাম কিন্তু তারই আছে! মাথায় রেখো কথাটা! গাছের সবচাইতে মিষ্টিফলটাতেই কিন্তু পাখি ঠোকরায়! আচ্ছা, আমি কোথাও দাবি করেছি, আমি ভালো? বলিনি তো কোথাও! এখন যে ব্যক্তি আমার দোষ তোমার কাছে বলতে পারে, সে তোমার দোষও আর একজনের কাছে ঠিকই বলতে পারবে। যা-ই হোক, এইসব নিয়ে চিন্তা করার মানেই হলো নিজেকে অসুস্থ করে ফেলা।


তোমার সাথে মিশবার সময় আমি যদি দেখি, তোমার মাঝে মানুষকে ভালোবাসার মতো সবচেয়ে বড় গুণটা আর নেই, তা হলে আমি তোমার কাছ থেকে দূরে সরে যাব। কেন? বলছি, শোনো। আমরা তো চারপাশের মানুষ নিয়েই থাকি। আর যদি মানুষকে ভালো না বেসে তার দোষই ধরি কেবল, তা হলে তো বাঁচা কঠিন। অনেক অনেক কঠিন! আর এই টাইপের মানুষের সাথে যদি তুমি মিশতে থাকো, তা হলে দেখবে, তোমার ভালো গুণগুলো খারাপে পরিণত হচ্ছে। তুমি নিজেও বুঝতে পারবে না, সে তোমার মনে কী অবলীলায় সন্দেহর একটা বীজ বপন করে দিল!


কিন্তু জান, আমি তোমার কোনও দোষ ধরিনি। আমি আমার কিছু মনের কথা বলেছি তোমার কাছে। আমি যেদিন থেকে তোমাকে ভালোবাসা শুরু করেছি, সেদিন থেকেই মনের মধ্যে একটা কবর রচনা করে রেখেছি, যেটাতে শুধুই তোমার দোষগুলো আমি মাটিচাপা দিই। এ না করলে কাউকে ভালোবাসা সম্ভব নয়।


আচ্ছা, আমাদের কি আর দেখা হবে না? তোমার বুকে মাথা রেখে কান্না করব কখন? কখন তোমাকে সব কথা বলব? আমি অনেক বছর ধরে ক্লান্ত। সত্যিই ক্লান্ত। এবার যদি মৃত্যু আসেই, তবে বড্ড বেশি বেঁচে যাই!


তোমার মনে আমার জন্য জায়গা হয়নি কখনওই।
অথচ আমার মনের রাজ্যে সব জায়গারই রাজা তুমি!
ভুলতে গিয়েও পারিনি আমি, করেছি শুধুই তোমায় স্মরণ!
ভালোবাসি, বাসব আজও!
…জেনে রেখো একথা…যদি এইবার আসেও মরণ।