কষ্টজীবী মানুষ

খেয়াল করলে দেখবেন, আসলে কেউই তার নিজের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট নয়।

যে লোকটি সকাল থেকে রাত অবধি চাকরি করে, প্রতিদিন সকালে ঘুমঘুম চোখে বিছানা ছাড়তে ছাড়তে ভাবে, চাকরিটা যদি ছেড়ে দিতে পারতাম, বাঁচার জন্য একটু অবসর পেতাম! পড়ুয়া কেউ হয়তো ভাবে, আহা, রবীন্দ্রনাথ পড়ার জন্য ছোট্ট করে একটা জীবন পেতাম!

যে লোকটির চাকরি নেই, সে সারাদিন বিছানায় অলস শুয়ে শুয়ে বিরক্ত হয়ে ভাবে, একটা যদি চাকরি পেতাম, সময়টা ব্যস্ততায় ব্যস্ততায় চমৎকার কেটে যেত। পড়ুয়া কেউ হয়তো ভাবে, আহা, রবীন্দ্রনাথ পড়ার জন্য ছোট্ট হলেও একটা চাকরি পেতাম!

পরিজন নিয়ে বাস করছে যে লোক, পারিবারিক অশান্তিতে সে রোজই পরিবার থেকে দূরে কোথাও ছুটে পালানোর জন্য হাঁসফাঁস করে।

পরিবার ছেড়ে যে লোকটি দূরে বাস করছে, সে পরিজনদের কাছে ছুটে যেতে রোজই উদ্‌গ্রিব হয়ে ওঠে।

সম্পর্কের বাঁধন থেকে যে লোকটি বেরোতেই পারছে না, সে সিঙ্গেল কাউকে দেখে আফসোস করে করে ভাবে, সিঙ্গেল লাইফ ইজ দ্য বেস্ট!

যে লোকটি কোনও সম্পর্কে জড়াতেই পারেনি, সে এনগেজড লোকটিকে দেখে হা হুতাশ করতে করতে ভাবে, ইসস্, কী সুন্দর জীবন ওদের!

কেউই আসলে নিজের জায়গাটা নিয়ে শান্তিতে নেই। যে যা-ই পেয়েছে, যার কাছে যা-ই আছে, তার সব কিছু নিয়েই সবাই পুরোদমে অসুখী, অসন্তুষ্ট।

গুরু আইয়ুব বাচ্চুর মতো করে বলি...আসলে কেউ সুখী নয়।
এ পৃথিবীতে এর চাইতে বড়ো সত্য বুঝি আর নেই!

আমরা সবাই একেকটা বৃত্তে বাঁধা পড়েছি। কেউই তার নিজের বৃত্ত নিয়ে খুশি নয়। সবাই-ই অন্যের বৃত্তের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

শতভাগ সুখে আছে কেবলই রাস্তার উদাম পাগলটা। তার হারানোর ভয় নেই, প্রাপ্তির অসুখ নেই, জ্বালানোরও কেউ নেই।

সে দুঃখেও হাসে, আনন্দেও হাসে। তার পুরো অস্তিত্বেই মুঠোয় মুঠোয় সুখ ছড়ানো। যার ভাবনা যত অল্প, তার সুখ তত বেশি।

আর আমরা? আমরা শান্তিতেও সুখে নেই, সুখেও শান্তিতে নেই। দিনশেষে, আমাদের একটাই পরিচয়: আমরা সবাই কষ্টজীবী মানুষ।